৬১ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৪ নভেম্বর, ২০২৩ / ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০
গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতি - ক্ষণিকের স্বস্তি
বিশেষ সংবাদদাতাঃ গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের আঘাতে চরম বিপর্যস্ত গাজায় অবশেষে সাময়িক সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা হলো। ইজরায়েলি হানায় প্রায় ১৪ হাজার প্যালেস্তাইনবাসীর মৃত্যুর পর গাজায় মাত্র চারদিনের জন্য যুদ্ধ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইজরায়েলের সরকার এবং হামাসের মধ্যে চুক্তি হয়েছে যে, অপহৃত ইজরায়েলিদের মধ্যে ৫০ জনকে ফেরত পাঠাবে হামাস এবং তার বিনিময়ে দেড়শো জন প্যালেস্তিনীয় বন্দি যাদের অধিকাংশই মহিলা এবং নাবালক-নাবালিকা তাদেরকে মুক্ত করবে ইজরায়েল। গত প্রায় দেড়মাস ধরে চলা ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘাতের ফলে গাজায় যেভাবে নির্বিচারে আবাসন-স্কুল-হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করে, সেগুলিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে ইজরায়েল এবং ত্রাণ পৌঁছানোয় বাধা সৃষ্টি করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক, আলাপ-আলোচনা চলছিল। এরই ফলস্বরূপ সাময়িক যুদ্ধবিরামের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কাতার, মিশরের মতো দেশগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। মাত্র চারদিনের এই যুদ্ধবিরতির ফলে কতটা ত্রাণ পৌঁছানো যাবে তার দিকে সকলেরই নজর থাকবে। তবে চীন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইয়োরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, ভারত, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ এই সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছে। যদিও ইজরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসকে নিশ্চিহ্ন না করা এবং সব অপহৃতকে মুক্ত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে চারদিনের সাময়িক বিরতির পর আবার ধ্বংস, মৃত্যু, হাহাকার দেখবে বিশ্ব। অন্যদিকে প্যালেস্তাইন অথরিটির পক্ষ থেকে এই সাময়িক সংঘর্ষ বিরতিকে সাধুবাদ জানিয়ে ইজরায়েলের যুদ্ধ আগ্রাসন রুখতে যথাযথ পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে, যা প্যালেস্তাইনের জনগণের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুনিশ্চিত করবে। ইরানের বিদেশমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন যে, এই সাময়িক যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়বে। এরই মাঝে জানা গিয়েছে দক্ষিণ লেবাননে ইজরায়েলের বোমাবর্ষণে একজন হিজবুল্লাহ সাংসদের ছেলে সহ বেশ কয়েকজন হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত হয়েছেন। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, নারী ও শিশুদের এহেন মৃত্যু একেবারেই মেনে নেওয়া যায়না এবং দুই রাষ্ট্র - সমাধানের মাধ্যমে উদ্ভূত সংকটের সমাধান করতে হবে। ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন সংঘাত চলাকালীন ভারত সরকার প্রথমে ইজরায়েলের আক্রমণ সমর্থন করলেও পরে যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই সংঘর্ষকে দেশের অভ্যন্তরে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করছে কেন্দ্রের শাসকদল।
এদিকে গাজার হাসপাতালগুলিতে যেভাবে বোমা বর্ষণ করা হয়েছে তা দেখে ‘আতঙ্কিত’ বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান। গাজার উত্তর অংশে সবক’টি হাসপাতালের পরিকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আল শিফা হাসপাতালের আইসিইউ-এ ভরতি সমস্ত রুগি চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন, কেবলমাত্র গুরুতরভাবে অসুস্থ ৫০ জন শিশুকে রাফা সীমান্ত পেরিয়ে মিশরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো সম্ভব হয়েছে। গাজার মানুষের স্বাস্থ্যপরিষেবা নিয়ে চিন্তিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্যে চরম হতাশার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে কেননা সেখানকার মানুষের প্যালেস্তাইনের ভূখণ্ডে কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই। এই চরম উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর ক্ষেত্রে সাময়িক সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসূ হয় সেটাই দেখার। ইউনিসেফ মন্তব্য করেছে যে, "গাজা শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গা "। এখনও পর্যন্ত সেখানে ইজরায়েলি হামলায় ৫৩০০ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ত্রাণ যথাযথ ভাবে বিতরণ করার স্বার্থে এই যুদ্ধবিরতির সময়সীমা আরো বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে।