৫৯ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৭ আশ্বিন, ১৪২৮
ভবানীপুরে বামফ্রন্ট প্রার্থীর সমর্থনে প্রচার চলছে
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দক্ষিণে ইকবালপুর, খিদিরপুর থেকে জগুবাবুর বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত ভবানীপুরের বিধানসভা ক্ষেত্রে ভোটারদের মনে ক্ষোভ স্পষ্ট। কেন্দ্রের ৭ বছরের পুরনো বিজেপি সরকার আর রাজ্যের তৃণমূল সরকার - দুই সরকারের জনবিরোধী ভূমিকায় ক্ষুব্ধ মানুষ। কাজের অভাব, গ্যাস থেকে কেরোসিন সহ সব কিছুর আকাশভেদী মূল্যবৃদ্ধি, টিকাকরণ থেকে জমাজল তাঁদের ক্ষোভের তালিকায় রয়েছে অনেক কিছুই। কিন্তু বিজেপি বা তৃণমূল প্রার্থী এসব নিয়ে কোনো ‘রা’ কাড়ছেন না।
তাই ভবানীপুর উপনির্বাচনের সুবিধাজনক জায়গায় নেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি চাপে পড়ে গেছেন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই কেন্দ্রে ভোট। নিম্নচাপের দরুন বৃষ্টিতে যেমন জমা জলের নিকাশির সমস্যা, তেমনই কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি তাঁর ভাইপো সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জিকে কয়লা কেলেঙ্কারি টাকা পাচারের অভিযোগে ডাকায় মুখ্যমন্ত্রী ভীষণ চাপে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে তৃণমূল পিছিয়ে ছিল সেই নির্বাচনী পাটিগণিতের সত্যিটাকেও এড়াতে পারছে না তৃণমূল কংগ্রেস।
এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল এবং বিজেপি’কে রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরাস্ত করতে বামপন্থী প্রার্থী শ্রীজীব বিশ্বাস লড়াই করছেন।
এই কেন্দ্রের অবস্থা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) প্রার্থী তরুণ আইনজীবী শ্রীজীব বিশ্বাস বলছেন, গত ১০ বছরে মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুরের বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও এই কেন্দ্রের সমস্যা প্রচুর। এখনো রাস্তায় জল জমছে, গরিব মানুষের টিনের চালের ঘর এখনো পাকা হয়নি। বামফ্রন্ট সরকার যে উন্নয়ন করে গেছে তার ধারে কাছে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছতে পারেননি। মানুষের রোজগার বাড়েনি অথচ ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে। মানুষের অভিজ্ঞতাই আমাদের প্রচারের সাহস এবং ভরসা জোগাচ্ছে। এই মমতা ব্যানার্জির সরকার এক টাকা বিদ্যুৎ বিল কমাতে পারেনি। উল্টে বেড়েছে গ্যাসের দাম, জ্বালানি তেলের দাম। কর কমিয়ে রাজ্য সরকারের এ প্রসঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কোনো ইচ্ছা নেই। কোনও প্রতিবাদ করেননি তিনি। এই বিজেপি এবং তৃণমূল দুই সরকার মানুষের ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। মানুষের অভিজ্ঞতায় আছে সেসব। প্রচারে বেরিয়ে শুনছি মানুষ তার ক্ষোভের কথা বলছেন। আমাদের বিকল্পের আহবানে সাড়া দিচ্ছেন তারা।
বামপন্থী প্রার্থীর সমর্থনে মিছিল এবং মিটিংয়ে মানুষ জড়ো হচ্ছেন, মন দিয়ে শুনছেন প্রার্থীর কথা, বক্তাদের বক্তব্য। ভবানীপুরে ২১ সেপ্টেম্বর জগুবাবুর বাজারে সিপিআই(এম) প্রার্থীর সমর্থনে ৩০ সেপ্টেম্বরের উপনির্বাচনে বিজেপি এবং তৃণমূলকে পরাস্ত করার আহ্বান জানিয়ে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, মানুষ যাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন, যিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন সেই তাকেই পার্মানেন্ট করবার জন্য এই নির্বাচন। পশ্চিম বাংলার ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। এই ছল ও কৌশলের বিরুদ্ধেই গণতন্ত্র রক্ষা ও মানুষের স্বার্থে উপনির্বাচনে বামপন্থীরা লড়ছেন। তিনি বলেন তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে নীতির মিল রয়েছে। মানুষের স্বার্থবিরোধী নীতি। দুই দলই ধান্দার রাজনীতি কায়েম করে রসদ কুড়োতে তৎপর।
ওদিকে জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী কার্যত কাকুতি-মিনতি করছেন। নিজের দলের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হোক সেটা তিনি চাইছেন না। ভবানীপুরের জনসভায় তিনি বলেছেন, আমি না হলে অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। আমাকে মুখ্যমন্ত্রী রাখতে ভোট দিন।
সাংবিধানিক নিয়ম অনুযায়ী হেরো মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে পারেন না। তাই তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিয়ে ভোটের সুপারিশ করে চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে যা নিয়ে ব্যাপক বির্তক।
বাঙালি অবাঙালি বিভাজনের সূক্ষ্ম প্রাদেশিকতার খেলাও আড়াল থেকে পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ‘সমস্ত বাঙালি সমাজ এক হউন’ এই ধরনের পোস্টার দেখা গেছে বিভিন্ন জায়গায়। জল জমার সমস্যায় জেরবার এখানকার মানুষ। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে ২৩ তারিখে মুখ্যমন্ত্রীর সভা হতে পারেনি ডঃ সুবীর বসু রোডে। অত্যাধুনিক সব যন্ত্র নামিয়েও জমা জল সরানো যায়নি। তাই মাচা বাঁধলেও মুখ্যমন্ত্রীর জনসভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূল। সারা বছর জল নিকাশি উন্নত করার কোনো উদ্যোগ না থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে ঘিরে ভোটের মুখে ইকবালপুর, খিদিরপুর সহ নানা এলাকায় জল নামানোর চেষ্টা ভোটারদের বড়ো অংশই ভালোভাবে নিচ্ছেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর চাপ কমছে না।
২০১১ সালেও এমনই পরিস্থিতি ছিল। সেবারও তিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু বিধায়ক ছিলেন না। তবু ভবানীপুর তাঁকে জিতিয়েছিল। এবারে নন্দীগ্রাম থেকে সদ্য হেরে এসে তিনি আতঙ্কিত। এবারও তিনি মুখ্যমন্ত্রী, কিন্তু বিধায়ক নন। সেই আত্মবিশ্বাসটাই চলে গেছে শাসক দলে থাকা দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলের।