E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৭ আশ্বিন, ১৪২৮

কমরেড হারান হাজরার জীবনাবসান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা ও প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড হারান হাজরা কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। কমরেড হারান হাজরার স্ত্রী, পুত্র, দুই কন্যা, পুত্রবধূ ও দুই নাতনি বর্তমান। কমরেড হারান হাজরার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সিপিআই(এম) নেতা শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, দীপক দাশগুপ্ত, পার্টির হাওড়া জেলা কমিটির সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

কমরেড হারান হাজরা ১৯৪১ সালে সাঁকরাইলের বেটিয়ারী গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়েছেন। বাউড়িয়া রঘুদেবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। কিশোর হারান হাজরা লেখাপড়া শেষ করে কমিউনিস্ট পার্টির সংস্পর্শে আসেন। সাঁকরাইল অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া গরিব মানুষদের একত্রিত করে তাদের মধ্যে পার্টি গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন কমরেড হারান হাজরা। ১৯৬৬ সালে তিনি সিপিআই(এম)’র সদস্যপদ অর্জন করেন। আমৃত্যু তিনি পার্টি সদস্য ছিলেন। শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজে যুক্ত হন তিনি। ১৯৬৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সাঁকরাইল কেন্দ্র থেকে পার্টির প্রতীকে তিনি জয়ী হয়ে প্রথমবার বিধায়ক নির্বাচিত হন। আধা ফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসের আবহে ১৯৭১ সালে তিনি পরাজিত হলেও ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত টানা বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিধায়ক হিসাবে সাঁকরাইল বিধানসভার উন্নয়নমূলক কাজে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। বিধানসভা এলাকার বিভিন্ন স্কুলের উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা ছিল প্রশ্নাতীত। সরকারি কোনও সাহায্য না নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তৈরি হওয়া রঘুদেববাটি সাধারণের বিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। মহিলাদের শিক্ষার প্রসারে গড়ে তোলেন রঘুদেববাটি সাধারণের বিদ্যালয় (মহিলা)। এছাড়াও এলাকার যুবকদের সংগঠিত করে গড়ে তোলেন বিল্লকুঞ্জ যুব সমিতি, বেটিয়ারী সঙ্গশ্রী ও বেটিয়ারী মেহনতি সঙ্ঘ। এলাকার মানুষের কাছে তিনি ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়।

কমরেড হারান হাজরা সিপিআই(এম)’র পূর্বতন সাঁকরাইল ৩নং লোকাল কমিটির সম্পাদক, পূর্বতন ৬নং জোনাল কমিটির সদস্য ও পার্টির জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য ছিলেন। পার্টিতে যোগদান করে তিনি পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী হন। এছাড়াও কমরেড হারান হাজরা ডেলটা জুটমিলের বিসিএমইউ ইউনিয়নের সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। দীর্ঘদিন পূর্বতন ৬ নং জোনাল ট্রেড ইউনিয়ন কো-অর্ডিনেশন কমিটির সম্পাদক ছিলেন তিনি।

কমরেড হারান হাজরার মরদেহ পার্টির জেলা কমিটির দপ্তরে নিয়ে এলে পার্টির রক্তপতাকা ও মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টি নেতা দীপক দাশগুপ্ত, বিপ্লব মজুমদার, দিলীপ ঘোষ, পরেশ পাল সহ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যগণ। শ্রীদীপ ভট্টাচার্যের পক্ষ থেকে মরদেহে মাল্যদান করা হয়। কমরেড হারান হাজরার মরদেহ পার্টির জেলা অফিস থেকে সাঁকরাইল দক্ষিণ এরিয়া কমিটির দপ্তরে গেলে সেখানে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান পার্টিনেতা নন্দলাল মুখার্জি, অলোক দেবনাথ সহ অগণিত পার্টিকর্মী ও সমর্থকরা। পার্টির এরিয়া কমিটির দপ্তর থেকে কমরেড হারান হাজরার মরদেহ বিল্লকুঞ্জ যুব সমিতির মাঠে গেলে মরদেহে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সাঁকরাইল বিধানসভার বিধায়ক প্রিয়া পাল। বাড়িতে মরদেহ গেলে অগণিত সাধারণ মানুষ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাঁদের কাছের মানুষ কমরেড হারান হাজরাকে। ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিমতলা শ্মশানে কমরেড হারান হাজরার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।