E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৭ আশ্বিন, ১৪২৮

কমরেড সুকুমার সেনগুপ্ত এবং দেশহিতৈষী

অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়


স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা, দেশের মাটিতে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী মতাদর্শ রূপায়ণে উৎসর্গিত প্রাণ কমরেড সুকুমার সেনগুপ্ত আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন আজ থেকে ২৮ বছর আগে ১৯৯৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। রেখে গেছেন তাঁর বিপ্লবী জীবনাদর্শ এবং শিক্ষাকে। পরবর্তী প্রজন্মের কমিউনিস্ট কর্মীদের পথ চলার ক্ষেত্রে তাঁর জীবনাদর্শ এবং শিক্ষা হলো আলোকবর্তিকা।

গত ১৬ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার, সিপিআই(এম) পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির দপ্তর সুকুমার সেনগুপ্ত ভবনে ওই বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামীর একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। তমলুকের নিমতৌড়িতে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসু প্রমুখ সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে কমরেড সুকুমার সেনগুপ্ত’র জীবনাদর্শ এবং শিক্ষা অনুসরণ করে পার্টি কর্মী-সমর্থকদের পথ চলার আহ্বান জানিয়েছেন। মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।

এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে স্মরণ করতে ইচ্ছা করছে দেশ‍‌হিতৈষী’র সাথে তাঁর সম্পর্কের কথাগুলি। মতাদর্শ চর্চা‌য়, শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্তের আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে একাত্ম হয়ে কর্মীদের এগিয়ে যাওয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে দেশহিতৈষী’র ভূমিকা ও প্রয়োজন তিনি বারে বারে উচ্চারণ করে গেছেন। দেশহিতৈষী’তে তাঁর শেষ লেখা ২৩ জুলাই, ১৯৯৩ সাল, মৃত্যুর মাত্র দু’মাস আগে। তিনি লিখলেন - ‘‘দেশহিতৈষীঃ সংগ্রামের পরীক্ষিত হাতি‌য়ার। সংবাদ সাপ্তাহিক হিসাবে দেশ‍‌হিতৈষী’র সার্থকতা - সে সাড়া দিতে পেরেছে জনজীবনের সমস্ত জরুরি প্রশ্নে। জনগণের সংগ্রাম, প্রত্যয়, আশা-আকাঙ্ক্ষা, সমস্যা, উত্তরণকে অভিব্যক্তি দিতে পেরেছে দেশহিতৈষী। পেরেছে কমিউনিস্ট পার্টি(মাঃ)-র মুখপত্র হিসেবে গণজীবনের সুহৃদ ও শরিক হয়ে উঠতে।
    দেশ‍‌হিতৈষী যখন প্রকা‍‌শিত হয়েছিল আমরা তখন কারাগারে। দমদম সেন্ট্রাল জেলে। জেলের মধ্যে বসেই গোপনে পড়েছি দেশহিতৈষী। দেশহিতৈষী আমাদের সামনে নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। দেশহিতৈষী শঙ্কিত করেছিল শাসকশ্রেণিকে।
    খুবই জটিল সময়ে সংশোধনবাদ ও সংকীর্ণতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশ‍‌হিতৈষী কী ভূমিকাই না পালন করে এসেছে। শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-যুব-মহিলা-কর্মচারী, সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনকে দিকনির্দেশ এবং সংগঠিত করতে দেশহিতৈষী’র ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। বন্দিমুক্তি আন্দোলনকে সংগঠিত করতে, ভিয়েতনাম সংহতি আন্দোলনের বিকাশ বুঝতে উলটাতে হবে দেশহিতৈষী’র পাতা। মার্কসবাদ-লেনিনবাদের মর্মবস্তুকে আত্মস্থ করে এদেশের মাটিতে তার প্রয়োগের সংগ্রামে দেশহিতৈষী এক অসামান্য সংগঠক।’’


সুকুমার সেনগুপ্ত লিখেছেনঃ ‘‘মাঝখানে ১৯৬৪ সালে ১০/১১ মাস বাদ দিয়ে একটানা ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত জেলে ছিলাম। মেদিনীপুরে সংশোধনবাদীদের খপ্পর থেকে পার্টিকে বাঁচানোর সংগ্রামে দেখেছি দেশহিতৈষী কীরকম সাড়া ফেলে দিয়েছিল। জেলার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত ঘোরার সময় ব্যাগে থাকত দেশহিতৈষী’র বান্ডিল। বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে কাগজ বিক্রি করেছি। সেই গোড়ার সময় থেকেই দেখেছি কমরেডরা সাগ্রহে আলোচনা করছেন দেশহিতৈষী’র লেখা নিয়ে। যে কমিউনিস্ট আদর্শকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে দেশহিতৈষী’র জন্ম হয়েছিল, আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতেও তা অম্লান থাকবে।
    একটাও বিজ্ঞাপন না ছেপে, পাঠকের আনুকূল্যকে পাথেয় করে এরকম কাগজ যে প্রকাশিত হয়ে চলেছে সেটাই প্রমাণ দেশহিতৈষী’র গ্রহণযোগ্যতার। আজকের সময়ে দেশ‍‌হিতৈষী’র মতো কাগজের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তাই উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
    দেশহিতৈষীর মতো সংবাদপত্রগুলিই আমাদের পরীক্ষিত হাতিয়ার’’।


কমরেড সুকুমার সেনগুপ্তদের মতো বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেতাদের আদর্শে স্থিত থেকেই এবং তাঁদের শিক্ষা অনুসরণ করেই দেশহিতৈষী তার লক্ষ্য পথে এগিয়ে চলেছে।

কমরেড সুকুমার সেনগুপ্ত লাল সেলাম।