৫৯ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৭ আশ্বিন, ১৪২৮
কমরেড ডিবু মুর্মু ও অনুষঙ্গে কিছু কথা
মানবেশ চৌধুরী
কমরেড ডিবু মুর্মু
শাহি আমলে তৈরি একটা বিশাল চওড়া কাঁচা সড়ক, মুর্শিদাবাদের লালগোলার পাশে পদ্মানদীর উত্তর থেকে শুরু হয়ে জলপাইগুড়ি জেলার তেঁতুলিয়া (এখন বাংলাদেশের অন্তর্গত) এসে শেষ হয়েছে। সেই সড়কের নাম ‘মুর্শিদাবাদ রোড’।
সেই রোডের পশ্চিম ঘেঁষে শত শত গ্রামের একটি গ্রাম সরিফাবাদ। সেখানকার কান্দু মুর্মু, যাঁর মূল কাজ ছিল মোষ চড়ানো আর গ্রামের উত্তর দিকে ধর্মডাঙ্গায় আড়াই বিঘা জমিতে ধান ফলানো, তাঁর সন্তান আমাদের কমরেড ডিবু মুর্মু। বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়, খুব দুঃখ-কষ্টের মধ্যে তাঁদের দিনাতিপাত করতে হতো। ডিবুদা সেই আমলে ক্লাশ সিক্স-সেভেন পর্যন্ত পড়েছিলেন। আদিবাসী কোটায় প্রাইমারি মাস্টারের চাকুরি পেয়েছিলেন তাই।
কমরেড ডিবু মুর্মুর পাড়া পুরোটা সাঁওতাল পাড়া।
রাস্তার উলটো দিকের পাড়ায় রায়-ঘটোয়াল সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাঁদের পদবি রায়। একদা আসামের আমিনগাঁও, সেখান থেকে তপনের ডেলপির, তারপর সরিফাবাদ। এখানে বাড়িঘর করে স্থায়ী বসত। গরিব পাড়া। ভাঙা ফাটা বাড়িঘর। দেখাদেখি তাঁদের আত্মীয়-স্বজন এলেন বিহারের ভাগলপুর, দুমকা ইত্যাদি জায়গা থেকে। এঁদের রীতি-নিয়ম বিহার-ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দেহাতের মানুষের মতো। কথ্য ভাষাও হিন্দির একটি আঞ্চলিক উপভাষা। কালে দিনে তাঁরা সবাই এদেশীয় হয়ে গেলেন।
[ দুই ]
১৯৬৭ সালে প্রথম যুক্তফ্রণ্ট সরকার গঠিত হলো। শুরু হলো জমি উদ্ধারের লড়াই।
পতিরামের ফুটবল ময়দানে কেউ বলে জ্যোতি বসু, কেউ বলে হরেকৃষ্ণ কোঙার বক্তা। বক্তা বললেন, পুলিশমন্ত্রী জ্যোতি বসু, আপনারা ভেস্ট জমি উদ্ধার করুন। পুলিশ কিছু করবে না।
যুক্তফ্রন্ট সরকারের অবদানে অবিভক্ত জেলার অনেক জায়গায় জমি উদ্ধারের লড়াই শুরু হলো। তার সংগঠক মূলত কৃষক সভা। ভেস্টজমি দখল করো - দখল রেখে চাষ করো, বেনামি জমি দখল কর-দখল রেখে চাষ করো। গরিব পাড়ায় পাড়ায় এই স্লোগান আর ডুগডুগির বাজন। কোনো গ্রামে কৃষক সভা তখনও পৌঁছাতে পারে নি। গ্রামে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ নিজেরাই কারও বাড়িতে বসে জমির নকশা নিয়ে ভেস্ট জমি চিহ্নিত করে ডুগডুগি বাজাতে বাজাতে ঝান্ডা নিয়ে পরদিন লড়াইয়ে নেমেছেন। সকাল বেলায় গরিব পাড়ায় ডুগডুগি বা নাগড়ায় বোল উঠলেই, জোতদারদের মধ্যে আলোচনা - আইজকা কার বা জমিত শালারা নামিবি! নাগড়ায় এক একটা বাড়ি, আর জোতদারের বুকে ঢেকির ‘পাহাড়’, মানে ঢেকির এক একটা পাড়! জমি উদ্ধার বা সাদা বাংলায় জমি দখলের ওই সময়ে শত শত মানুষ জোয়ারের মতো জমায়েত হতো।
[ তিন ]
ডিবুদার কয়েকজন মূল সঙ্গীসাথির নাম জানানো উচিত।
নিজের পাড়ায় বড়কা হেমব্রম, তান্তি হেমব্রম, ওদগা হেমব্রম, মঙ্গল কিসকু, ডেনাই মুর্মু, বুধু মণ্ডল (হেমব্রম), সুফল মুর্মু, সানিয়াল কিসকু।
রায় পাড়ায় তিলকি রায়, বাবুলাল রায়, পল্টু রায়। এখানকার মাকড়া তখন ক্লাস ফোরে পড়ে। ১১-১২ বছর বয়স। তখন থেকেই সে ছিল ডিবুদার সঙ্গী। এ পাড়ায় কয়েক ঘর কোলকামার সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তাদের মধ্যে তারিণী কর্মকার, মঙ্গল কর্মকার আর যোগেন কর্মকার।
কিষ্টপুরে বলরাম ভগত (উঁরাও), বাঁয়া উঁরাও, গোবরা উঁরাও। তখন এ গ্রামে শিবলি উঁরাও নামে এক নারী কর্মী উঠে এসেছিলেন। তিনি পুলিশকে ডরাতেন না। পুলিশই তাঁর সামনে দাঁড়াতে ভয় পেতো।
নোধনে সুরেন বর্মন। বানেশ্বরবাটিতে চামরু মার্ডি। নোধনের সুরেন বর্মনকে কয়েকবছর পরে জোতদার পক্ষ খুন করে। জিদরাতে মহাদেব মহন্ত। এনায়েতপুর - ছিড়াইকুড়িতে মহেন্দ্র উঁরাও। দ্বীপখণ্ডাতে বন্ধন উঁরাও, মকবুল হোসেন।
বালুরঘাট থেকে শ্যামল সাহা নামে এক দুর্দান্ত সাহসী ছাত্র নেতাকে পার্টি পাঠিয়েছিল। তিনি ডিবুদার বাড়িতেই থাকতেন। হায়দারি হাঁক দিয়ে বলতেন - কোনো ভয় নেই। পুলিশ গুলি করতে এলে আমি আগে বুক পেতে দেব। গ্রামের কর্মীদের কথায় - তাঁর ছিল বাঘের মতো সাহস।
আর ছিলেন বালুরঘাটেরই, পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক, সনৎ দত্ত। তিনি এখানকার প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। থাকতেন রায় পাড়ার লাগোয়া দলমঙ্গল পাড়ায়। এঁরা দুজনই কয়েক বছর আগে মারা গিয়েছেন।
[ চার ]
কমরেড ডিবু মুর্মুর নেতৃত্বে গ্রামগুলির জমি দখল, দখল রেখে চাষ ও ফসল কাটার সংগ্রাম চলেছে ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ কালপর্বে। তার মধ্যে দু’বার যুক্তফ্রণ্ট সরকার কায়েম হয়েছে। একবার ১৯৬৭ সালের ১লা মার্চ থেকে ২রা নভেম্বর, দ্বিতীয় বার ১৯৬৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭০ সালের ১৯শে মার্চ পর্যন্ত। সরকারের ভেতরের কায়েমি স্বার্থবাদী ও ধনিকদের কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে সরকারগুলি ভেঙে যায়। কিন্তু জমির লড়াই চলতেই থাকে।
সরকার দু’টি থাকাকালীন পুলিশ অনেকটা কাবু ছিল। ১৯৬৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তারা স্বমূর্তি ধারণ করে।
[ পাঁচ ]
জিদরায় বালুরঘাটের জোতদার মাখনবাবুর ৮০/৯০ একর জমি। এই সব জমির আধিয়ার জিদরা, এনায়েতপুর, সুন্দরপুরের উঁরাও ও মুসলমানেরা।
আধিয়ার বা বর্গাদারদের জিদরায় মাখনবাবুর কামাতে সব ধান তুলতে হতো। তেভাগার আগের সময়কার প্রথা! এখানে কামাত দখল করে নিজের খইলানে ধান তোলার সংগ্রাম করে বিজয় হাসিল হলো।
কিষ্টপুরে পিনাকী রায়, মালদার চোখের ডাক্তার, সেই জোতদারেরও ওই পরিমাণ ভেস্ট জমি। সেই জমি দখল করা হলো।
পাশের গ্রাম পঞ্চায়েত হরসুরা অঞ্চলের সরঞ্জাবাড়িতে - ধীরেন শীল, বিমল সরকার, নির্মল ভদ্র, কমলেশ দেব, কিষ্টপুর থেকে বলরাম ভগত ও কিষ্টপুর বাহিনী গিয়ে ভেস্ট জমি উদ্ধার করলেন।
নোধন-বানেশ্বরবাটিতে মালদার চাঁচল-হরিশ্চন্দ্রপুরের বড়ো জোতদার সম্পত মাড়োয়াড়ি ওরফে সম্পতিয়ার ১০০ একরের মতো জমি। এখানে লড়াই শুরু হলো। এক পর্যায়ে একদিকে জোতদার পক্ষের দুষ্কৃতী ও পুলিশবাহিনী, আরেক পক্ষে তীর। জোতদারের লোকেরা খুব উল্লসিত। বলছে - শালারা বগিলার মতন মাঠত পড়ি যাছে। কিন্তু তা নয়, বরঞ্চ কমরেড ডিবু মুর্মুর ধনুক থেকে ছোঁড়া তীরে পুলিশ অফিসারের হাত এফোর-ওফোর হয়ে গেল। সঙ্গে লড়াকুদের ছোঁড়া শত শত তীর! তখন কোথায় জোতদারের লোক আর কোথায় পুলিশ বাহিনী!
[ ছয় ]
জোতদার পক্ষের পুলিশের মনোবাসনা পূর্ণ হচ্ছে না। কারণ এই গ্রামগুলো তখন দুর্গের মতো। পুলিশ ঢুকতেই পারছে না।
দফাদার-চৌকিদার গ্রামেরই গরিব ঘরের ও সামাজিকভাবে বিপণ্ণ পরিবারের মানুষ। তাঁদের স্বাভাবিক পক্ষপাত কৃষক আন্দোলনের দিকেই। টুনা দফাদারের বাড়ি নোধনে, চৌকিদার রঘু সিংয়ের বাড়িও নোধনে, পল্টু রায়, কৈলাশ রায়ের বাড়ি সরিফাবাদেই।
তখন পুলিশ ও এঁদের লুকোচুরি চলতো। পুলিশ জানতে চাইতো ডিবু মুর্মুরা কোথায়? জবাব - না বাবু মুই তো জানো না। কে বা কুঠি থাকে! ওঁরা গ্রামে এসে পুলিশের তৎপরতার কথা লড়াকুদের বলে দিতেন।
রাতে বাড়িতে থাকার উপায় নেই। কখন পুলিশ আসে! এদিকে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়, ধান খেতে জল। থাকবেন কোথায়!
তাই তারা ঝলঝলি, ঘোড়াডোবা, তালপুকুর - এসব পুকুরের পাড়ে থাকতেন। কিছু কমরেড স্কুলের মাটির ঘরেও থাকতেন। ওদিকে কিষ্টপুরের সংগ্রামীরা গাঙ্গিহার খাড়ির পাড়ে রাত কাটাতেন। মশার কামড় সবাইকেই ব্যতিব্যস্ত করে দিত।
কমরেড ডিবু মুর্মু একদিন সাহস করে স্কুলের উদ্দেশে রওনা দিলেন। তিনি মাঝিখণ্ডা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
তখন এই শাহি সড়ক কাঁচা। হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন। মাথায় একটা সাদা টুপি।
ওদিকে পুলিশ তক্কে তক্কে আছে। জিপ গাড়িটা মাঝিখণ্ডা চৌমোহিনীর উত্তর ধারে রেখেছে।
কমরেড ডিবু মুর্মু চৌমোহিনীতে এসে গিয়েছেন। তখন তিনজন পুলিশ এসে বলল - আপনি কী ডিবু মুর্মূ।
কমরেড ডিবু মুর্মু বুক চিতিয়ে বললেন - হ্যাঁ আমিই ডিবু মুর্মু।
পুলিশ তাঁকে অপমান করে জিপে উঠাল।
থানা লক আপে ঢুকালে, বাতাসের আগে আগে তাঁর গ্রেপ্তার হবার খবর চারদিকে ছড়িয়ে গেল। অপরেশ সাহা, বিভূতি শীল, সনৎ দত্ত, গেনু ভট্টাচার্য প্রমুখ নেতা থানায় এসে প্রবল প্রতিবাদ শুরু করলেন। কিন্তু এতদিন পরে শিকার ধরেছে পুলিশ কী আর ছাড়ে!
তাঁকে জেল হাজতে পাঠানো হলো। পরে পরে সিধু হেমব্রম, বুধু হেমব্রমকে ধরল পুলিশ।
[ সাত ]
তখন পার্টির জেলা সম্পাদক যামিনীকিশোর মজুমদার। অকুতোভয় নেতা। একটা পা খারাপ। ক্রাচে ভর দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু বর্ষার কাদা, গ্রীষ্মের দাবদাহ তাঁকে জব্দ করতে পারে না। তিনি ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে এ এলাকা ও এলাকা ঘুরে ঘুরে সংগঠন করেন। সংগঠনকে রক্ষা করেন।
কিন্তু বর্ষার শুরু থেকে কয়েক মাস, এমন অগম্য অবস্থা হয় খেয়ার (বরিন্দ) অঞ্চলের সড়কগুলির যে ঘোড়াও সেখানে হাঁটতে পারে না।
ডিবুদারা গ্রেপ্তার হবার সময়, এমনই অবস্থা তাঁদের গ্রামে ঢোকার কাঁচা সড়কটার। তাই ধাইনগরে বাস থেকে নামলে তাঁকে গোরুর গাড়িতে করে সরিফাবাদে নিয়ে আসা হলো।
বিশাল কর্মী সমাবেশ সেখানে। যামিনীদা বজ্রনির্ঘোষে ঘোষণা করলেন, কেউ ভয় পাবেন না। আমাদের পার্টি নেতা উকিল পরেশ নিয়োগী কেসটা দেখছেন। তাড়াতাড়ি যাতে জামিন হয়, তার সবরকম চেষ্টা করছি। পুরুষরা পাহারা থাকো - আশেপাশে পুলিশ দেখলেই নাগড়া বাজাবে। সেই নাগড়ার আওয়াজ শুনে, অন্যরা আবার নিজের নিজের নাগড়া বাজাবে। মেয়েরা তোমরা বটি, খন্তা, ঝাঁটা রেডি রাখবে। পুলিশ এলেই তাড়া করবে।
তাঁর কথায় উদ্দীপ্ত হয়ে কর্মীরাও অকুতোভয় হয়ে উঠলেন।
সবার জামিন পেতে তিন মাস লেগে গেল। বুঝুন, কতগুলো ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল ওঁদের বিরুদ্ধে!
[ আট ]
ডিবুদার অধিনায়কত্বে ও আগে বলা লড়াকুদের সহযোগে এবং হাজার হাজার মানুষের যোগদানে লড়াইয়ের যে আবহ তৈরি হলো, তার প্রভাবে তপন থানার অন্যান্য এলাকাতেও জমির আন্দোলন শুরু হলো। যেখানেই জমির লড়াই, সেখানেই ডিবুদা ও অন্যান্য যাঁদের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা হাজির হতেন। এই বাহিনীর নাম ছিল - কিষ্টপুর পার্টি।
হরতাল ধর্মঘট বন্ধ হলে তপনে কিষ্টপুর বাহিনীকে যেতে হবেই। আগের দিন বিকালে গিয়ে পার্টি অফসে রাত্রি বাস করে, পরের দিন তীর-ধনুক নিয়ে মিছিল।
স্বাভাবিকভাবেই ডিবুদার তখন খুব নাম-ডাক। নিজ থানা ও জেলার বিভিন্ন জনসভায় তিনি বক্তা। সাঁওতালি ভাষায় ও বাংলায় খুব ভালো ভাষণ দিতে পারতেন ডিবুদা। সভাগুলো আবেগে উত্তাল হয়ে উঠতো। মুহূর্মুহু হাততালি।
১৯৭১ - পার্টির আন্তরিক চেষ্টা সত্ত্বেও ফ্রন্ট হল না। তপন কেন্দ্রে আমাদের প্রার্থী কমরেড ডিবু মুর্মু। ভালো ভোটই পেলেন, কিন্তু দুই বাম দলের ভোট কাটাকাটিতে কংগ্রেস প্রার্থী জিতে গেল।
১৯৭৮সাল পঞ্চায়েত নির্বাচন। লড়াইয়ের রণক্ষেত্র সরিফাবাদে ডিবুদা, কিষ্টপুরে বলরাম ভগত(উঁরাও), নোধনে হাফি মোল্লা সিপি আই(এম)’র প্রার্থী হয়ে জিতলেন।
[ নয় ]
ডিবুদা ছিলেন মৃদুভাষী, হাসি লেগে থাকতো মুখে, তাঁকে কেউ কোনো দিন রাগতে দেখে নি। তাঁর ব্যবহারেই মানুষ সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট হতো। কিন্তু তিনি ছিলেন, সংকল্পে অটল ও কঠোর। কৃষক সভা ও পার্টিঅন্ত প্রাণ। তিনি তপন স্কুলমোড়ে টাটির বেড়ার ওপর মাটি ল্যাপা, খড়ের চালের একটা ঘর করেছিলেন। সেটা কর্মীদের থাকার জন্য দিয়ে দিলেন। এখানে রাত্রিতে থাকতেন হেম সাহা ও আরিফত হোসেন। এঁরা ডিবুদার বাড়িতে দুইয়ে-চারে আসতেন। হেম সাহা কিছু পরেই তপন থানার একজন বিশিষ্ট নেতায় পরিণত হন। যেরকম তাত্ত্বিক জ্ঞান, সেরকম কর্মকুশলতা! আরিফত হোসেনও জঙ্গি নেতা হিসাবে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন, বিশেষ করে আউটিনা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায়। তিনি তীরবিদ্ধ হন। তাঁদের নেতৃত্বে বামফ্রন্ট হবার পর খেতমজুর আন্দোলন সংঘটিত হয় অনেক গ্রামে।
এসবের পরম্পরায় গত শতকের নয়-এর দশকে যমুনা বিহারী সরকার ও রাধাকৃষ্ণ থিরানির যথাক্রমে ১৮ একর ভেস্ট ও রেয়ানা আইনে বেআইনিভাবে দখলে রাখা ২৯৭ একর জমি উদ্ধারের এবং খেতমজুরের মজুরির লড়াই হয়। তার মূল নেতা ছিলেন প্রসন্ন বসাক।
ডিবুদার দেওয়া ঘরটি পরে অনেকদিন পার্টি অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ডিবুদার উপহার।
তিনি বাড়ির সবাইকে পার্টির অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছিলেন। বড়ো ছেলে জিতু পার্টি সদস্য হিসাবে ভালো শ্রম দিতো। কি যে রোগ হলো, কয়েক বছর আগে সে মারা গেল! তার বোন লক্ষ্মী যুব ফেডারেশনের রাজ্য কাউন্সিল মেম্বার হয়েছিল। এতো মিষ্টি করে সাঁওতালি ও বাংলায় ভাষণ দিত - তা এখনও অনেকের মনে আছে।
ডিবুদার প্রতিদিন গণশক্তি না পড়লে অস্বস্তি হতো। আর প্রতি সপ্তাহে দেশহিতৈষী। যখন কিছুটা অশক্ত হলেন, তখন একটা টোটো ঠিক করলেন তাঁর বাড়িতে পত্রিকা পৌঁছে দেবার জন্য।
ডিবুদা কোনোদিন নির্ধারিত কোনো মিটিংয়ে অনুপস্থিত থাকতেন না। মিটিং শেষ না করেও চলে আসতেন না।
৯২ বছর বয়সে তিনি চলে গেলেন। ২৭ আগস্ট, ২০২১। রেখে গেলেন এক উজ্জ্বল কমিউনিস্ট পরম্পরা। তাকে রক্ষা করার দায় আমাদের।