৫৯ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৭ আশ্বিন, ১৪২৮
“প্রাণ জাগছে জাগছে জাগছে...”
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ছেঁদো কথা - এক
ভিক্টোরিয়ার সন্ধি! কোনো এক সন্ধ্যায় এক ঠোঙা ঝালমুড়ির বিনিময়ে সাদা পতাকা তুলে এই সন্ধির সূত্রপাত। তারপর দফায় দফায় আলোচনা, গোপন বৈঠক নিশ্চই হয়েছে। মাঝখানে দমদমে আরও একদফা চা- কুকিজ পর্ব। অবশেষে চূড়ান্ত চুক্তি সই। বাংলার দু’বারের সাংসদ রাজনীতিকে ‘আলবিদা’ জানানোর দেড় মাস পরে দল টল বদলে এবার বাংলার জন্য কাজ করতে উৎসুক। আসলে সব শব্দেরই যেরকম একটা উৎস থাকে, সব ঘটনারই যেমন একটা অতীত সূত্র থাকে, তেমনই সব সন্ধির পেছনেই বোধহয় একটা সৌজন্যের ঝালমুড়ি থাকে। আইএসএল, আইপিএল-এর উত্তেজনার ছোঁয়া দিতে দেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক আমদানি আইপিপিএল (ইন্ডিয়ান প্রফেশনাল পলিটিক্যাল লিগ)-এর। তাই খেলার নিয়ম মেনে প্লেয়ার কেনা বেচাও আছে। কেউ ঝালমুড়িতে বিক্রি হন। কেউ চা-কুকিজে। কেউ কেউ কাঞ্চনমূল্যে। পুঁটি, ইলিশ, চারাপোনারা বাজার আলো করে। টিপেটুপে, কানকো টানকো দেখে, পকেট বুঝে দাঁড়িপাল্লায় তুলতে পারলেই খেলা শেষ। তবে ‘জীবন্ত লাশ’ যখন বাজার করতে বেরিয়ে পড়ে তার অর্থ চারপাশে ‘ভূতের নেত্য’ চলছে সেটা অজান্তেই স্বীকার করে নেওয়া। ঘটনা পরম্পরায় একমাত্র অসহায় অবোধ শিশু মিডিয়া। বেচারিরা প্রবল অন্যায়ের ‘ফিসফ্রাই’ কাণ্ডে এত নিউজপ্রিন্ট আর প্রাইমটাইম খরচ করে ফেলেছে যে ‘পবল সৌজন্যের ঝালমুড়ি’ কাণ্ডে ঢোঁকটা কোথা দিয়ে গিলবে বুঝে উঠতে পারছে না। বাদশা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানটা মনে আছে তো? ‘এই মজার মজার ভেলকি দেখো,’... ‘পিয়ারীলালের খেলা দেখে যাও...’।
ছেঁদো কথা - দুই
আকুতির ট্রান্সফর্মেশন। মুখ্য টু মুখ্য... সচিব টু মন্ত্রী। রাজ্যে একটা আসনে উপনির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে মুখ্যসচিবের আকুতি কদিন আগেই চোখে পড়েছে। এবার চোখে পড়ছে সেই আসনে ভোটে জেতার আকুতি। নতুন ছায়াছবির নাম - আকুতি পার্ট ২। "ভোট না দিলে আমাকে পাবেন না.. ঝড় হোক, জল হোক ভোট দিন..আমাকে মুখ্যমন্ত্রী রাখতে ভোট দিন" "আমার শরীর থেকে দুটো পার্ট বাদ হয়ে গেছিল... একটা ছেলে হাত তুলেছিল বলে গুলিটা তার হাত দিয়ে বেরিয়ে গেছিল আর আমার মাথা বেঁচে গেছিল... কাঁচ ঢুকে চোখ নষ্ট হয়ে গেছিল... আমি জীবন্ত লাশ... নন্দীগ্রামে দরজা চেপে দিয়েছিল... গলাটা কাটা যেত... পা-টার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিল... গোড়ালি চেপে দিয়েছিল...’’। নির্বাচনী প্রচার অথবা সিনেমা - গুলিয়ে যেতেই পারে। চিত্রনাট্য খুবই কাঁচা হলেও সিনেমা হিট হবেই। হঠাৎ করে 'মেঘে ঢাকা তারা'র কথা মনে পড়লেও এক্ষেত্রে উদাহরণেচ্ছা সংবরণ করাই শ্রেয় বলে মনে হল। সব জায়গায় সব উদাহরণ খাটে না। নীতার বলিষ্ঠ, সংগ্রামী, লড়াকু চরিত্রের সঙ্গে এই সস্তার চটকদারি ঘটনার কোনো উদাহরণ টেনে ‘নীতা’কে ছোটো করা যায়না। ‘তাঁর’ বাঁচতে চাওয়ার প্রেক্ষিত আলাদা ছিল।
ছেঁদো কথা - তিন
‘‘আমায় কলকাতার মানুষকে বাঁচাতে দিল না।’’ ১৭ মে ২০২১। নারদ ঘুষ কাণ্ডে রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন সিবিআই-এর হাতে গ্রেপ্তার হবার পর এ আকুতি আমরা শুনেছিলাম। মিডিয়ায় ফলাও করে কান্নাকাটি, কাজ করার সদিচ্ছা নিয়ে প্রচারও করেছিল। তবে সেবার ছিল করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ। ‘দুয়ারে জলোচ্ছ্বাস’ প্রকল্প তখনও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রায় বছর ১১ কলকাতার মানুষকে একটু রেহাই দেবার জন্য যথেষ্ট সময় বলেই মনে হয়। যদিও ফি বছরেই বৃষ্টি হয়। ফি বছরেই কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চল ভেসে যায়। বর্ষা মিটে গেলেই দু’হাত তুলে নাচতে নাচতে খাল, নয়ানজুলি বিক্রি করতে ‘দুয়ারে জমি’ প্রকল্প শুরু হয়ে যায়। গত জুলাই মাসে গার্ডেনরিচ অঞ্চলে জমা জল কেন নামছে না খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় আস্ত একটা খাল লোপাট হয়ে গেছে। খাল লোপাটের কথা কান্নাকাটির পরে জানা গেলেও লোপাট হয়েছে কান্নাকাটির আগেই। শহর কলকাতায় জমা জলে দুর্বিষহ অবস্থা হবার পর ১৯ জুন তিনি জানিয়েছিলেন - আগের দুই সেচমন্ত্রীর সঙ্গে এবিষয়ে বারবার কথা বলে সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা করা হলেও কার্যত তাঁদের গড়িমসির কারণে সেচ দপ্তরের কাছ থেকে যথেষ্ট সাহায্য পাওয়া যায়নি। ফলে প্রায় তিন বছর ধরে চড়িয়াল খাল থেকে শুরু করে টালি নালা আদিগঙ্গা সহ বিভিন্ন খালের সংস্কারের কাজ থমকে থাকার কারণে, জল যন্ত্রণা থেকে এই সমস্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের পুরোপুরিভাবে মুক্তি দিতে সময় লেগে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রাক্তন দুই সেচমন্ত্রীর নাম শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। যারা দম আটকানো অসুখ সারাতে আপাতত দল বদলে অন্য দলে। বেচারি শহর কলকাতার মানুষ। যাদের জন্য কাজ করার এত সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও...
ছেঁদো কথা - চার
২০১৯ লোকসভা নির্বাচন। যাদবপুর কেন্দ্রে বাম প্রার্থী ছিলেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। ওই সময় এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনীতিকে ক্রমশ ক্রমশ গুরুত্বহীন করে তোলা। রাজনীতি যে সমাজ বিপ্লবের একটা অঙ্গ এখন সেটাই যদি কলুষিত করা যায় তাহলে যারা শাসন করছেন, শোষণ করছেন তাঁদের সুবিধে। তাঁরা রাজনীতিটাকে খেলো করতে চান বলেই রাজনৈতিক সংগ্রামের সময় সেখানে খেলো করা জিনিস হাজির করেন। সেই কারণেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন কিছু মানুষকে রাজনীতির মুখ করে তোলার চেষ্টা করা। এটা দক্ষিণপন্থার একটা চক্রান্ত। এর ফলে বহু সাধারণ মানুষের মনে রাজনীতির সম্পর্কে অনীহা তৈরি হয়। পরিকল্পিতভাবেই মানুষকে তাঁর সমস্যা থেকে দূরে সরানোর জন্য এটা করা হচ্ছে। আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’ এই প্রসঙ্গে দলবদল সংক্রান্ত একটা ছোটো তথ্য দেওয়া যেতেই পারে। গত সাত বছরে বিরোধী দলগুলো থেকে সবথেকে বেশি জনপ্রতিনিধি যোগ দিয়েছে বিজেপি-তে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস বা এডিআর-এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২৫৩ জন নির্বাচিত প্রার্থী এবং ১৭৩ জন সাংসদ ও বিধায়ক অন্য দল থেকে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। সাত বছরে সার্বিকভাবে দলবদল করেছেন ১,১৩৩ জন প্রার্থী এবং ৫০০ জন সাংসদ ও বিধায়ক। এর ২২ শতাংশই যোগ দিয়েছেন বিজেপি-তে। অতএব সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে কী, কেন বোধহয় বুঝতে খুব অসুবিধে হবার কথা নয়। ‘ঝালমুড়ি’ টু ‘মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা’, ভায়া ‘আকুতি’ টু ‘গণদলবদল’ - সবই এক চক্রান্তর পথ ধরে। হিসেব কষেই।
ছেঁদো কথা - পাঁচ
আপাত ছেঁদো বলে যা মনে করানো হচ্ছে তা যে নিছক ছেঁদো নয়, পরিকল্পিত ছেঁদো তা স্পষ্ট। এবার তাহলে নাহয় একটু অন্য প্রসঙ্গে নাক গলানো যাক। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো বা এনসিআরবি রিপোর্ট ২০২০। কোভিড অতিমারী আমাদের কী কী ক্ষতি করেছে তার সম্পূর্ণ হিসেব এখনও করে ওঠা যায়নি। মাঝে মাঝে দু’একটা ঘটনা খলবলিয়ে বেরিয়ে আসছে। দু’একদিন লাফালাফি হচ্ছে। আবার হারিয়ে যাচ্ছে। তবে এই অতিমারীর আগেও যে আমরা খুব একটা দারুণ ‘আচ্ছে দিন’ পর্যায়ে ছিলাম এমনটা নয়। অন্তত এনসিআরবি রিপোর্ট ২০২০ সেরকমটা বলছে না। যে রিপোর্টের সময়সীমা ১ জানুয়ারি ২০০০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০০। অর্থাৎ অতিমারী শুরুর আগের তিন মাস এবং পরবর্তী ৯ মাসের হিসেব।
● এনসিআরবি-১: ২০২০-র এই রিপোর্ট অনুসারে, বহুমাত্রায় বেড়েছে অপহরণ করে নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া। বিজেপি শাসিত যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশে এমন ঘটনা ২,৯৪৩টি। অপর বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে ৯২৬টি। কংগ্রেস শাসিত পাঞ্জাবে ৯৪৪টি। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই অপরাধের সংখ্যা ৬৪৭টি। হার প্রতি লক্ষে ২.২। বিশেষ করে কোভিড পরিস্থিতিতে এই অপরাধ আরও বেড়েছে বলে জানাচ্ছে রিপোর্ট। শিশু বিকাশ সেবার সঙ্গে যুক্ত এক আধিকারিকের মতে - কোভিড মহামারীতে শিশুদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গ্রাম এবং বস্তি অঞ্চলে আর্থিক অনটনের জেরে শিশুদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেশি। এমন অনেক গ্রামের নাবালিকাদের বিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেখানে কিছু বছর আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। অবস্থা যথেষ্টই উদ্বেগজনক।
● এনসিআরবি-২: এনসিআরবি রিপোর্ট ২০২০ অনুসারে লকডাউনের বছরে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮,০৪৬টি। শীর্ষে রাজস্থান। সেখানে নথিভুক্ত ঘটনার সংখ্যা ৫,৩১০। উত্তরপ্রদেশে ২,৭৬৯ এবং মধ্যপ্রদেশে ২,৩৩৯। মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনায় নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৭১ হাজার ৫০৩টি। দেশজুড়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে অ্যাসিড আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে ১০৫টি। পণের শিকার হয়ে মৃত্যু হয়েছে এরকম মামলা নথিভুক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৬টি। ২০২০ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের মামলা নথিভুক্ত হয়েছে ১ লক্ষ ২৮ হাজার ৫৩১টি, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৩.২ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালে দেশে মোট খুনের ঘটনা ঘটেছে ২৯ হাজার ১৯৩টি। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৯১৫।
● এনসিআরবি-৩: অতিমারীর কারণে ২০২০ সালের বেশিরভাগ সময় জুড়ে লকডাউন বা বিভিন্ন বিধিনিষেধ জারি থাকলেও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০১৯ সালে যেখানে সাম্প্রদায়িক হানাহানির নথিভুক্ত মামলা ৪৩৮টি সেখানে ২০২০ সালে তা হয়েছে ৮৫৭টি। ২০২০ সালে 'জাতিগত সংঘাতের' ঘটনা নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে ৭৩৬টি। ২০১৯ সালে মামলা দায়ের হয়েছিল ৪৯২টি। প্রকাশ্য শান্তি বিঘ্নিত করার অপরাধের মোট ৭১ হাজার ১০৭টি মামলা দায়ের হয়েছে গত বছর, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১২.৪ শতাংশ বেশি। কৃষি বিভাগের অধীনে শান্তি বিঘ্নিত করার প্রায় ২ হাজার ১৮৮টি মামলা দায়ের হয়েছে। বিক্ষোভ দেখানোর সময় হাঙ্গামা করার ঘটনায় ১ হাজার ৯০৫টি মামলা দায়ের হয়েছে।
● এনসিআরবি-৪: ভুয়ো খবরের কথা আমরা সকলেই জানি। ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ভুয়ো খবর, গুজব ছড়ানোর ঘটনা তিনগুণ বেড়েছে। ২০২০ সালে মোট ১ হাজার ৫২৭টি ভুয়ো খবর ছড়ানোর মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৮৬। অর্থাৎ এক বছরে ভুয়ো খবর ছড়ানোর ঘটনা বেড়েছে ২১৪ শতাংশ। ভুয়ো খবর ছড়ানোর ঘটনায় রাজ্যগুলোর মধ্যে শীর্ষে তেলেঙ্গানা। ২০২০ সালে সেখানে এই সংক্রান্ত মোট ২৭৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। এরপর তামিলনাড়ু, সেখানে ১৮৮টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। ১৬৬টি মামলা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। বিহার এবং মহারাষ্ট্রে যথাক্রমে ১৪৪ ও ১৩২টি মামলা দায়ের হয়েছে। ভুয়ো খবর ছড়ানোয় প্রথম স্থানে আছে হায়দরাবাদ শহর। সেখানে নথিভুক্ত মামলার সংখ্যা ২০৮টি। এরপরেই স্থান চেন্নাই এবং দিল্লির। যথাক্রমে ৪২ এবং ৩০।
ছেঁদো কথা - ছয়
সারাক্ষণ ধরে ছেঁদো কথা কাজের কথা মিলিয়ে অনেক কথা বলা হয়ে গেছে। তবু আরও একটা কথা বোধহয় বলা দরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এনপিএ, ব্যাড ব্যাঙ্ক ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার বন্দোবস্তও করা হয়েছে। অথচ তথ্য বলছে পূর্বতন ইউপিএ-২ সরকারের তুলনায় এনডিএ আমলে এনপিএ বেড়েছে ৩৬৫ শতাংশ এবং মকুব করে দেওয়া হয়েছে ৬.১১ লক্ষ কোটি টাকা। গত ১৭ সেপ্টেম্বর এই প্রসঙ্গে এক ট্যুইট বার্তায় সীতারাম ইয়েচুরি জানিয়েছেন, “এনপিএ জটিলতা দূর করতে নতুন ‘ব্যাড ব্যাঙ্ক’ তত্ত্ব আসলে সাধারণ মানুষের অর্থ লুটের বৈধতা। এখন আরও রাইট অফের জন্য পথ তৈরি করার অর্থ হলো ব্যাঙ্কগুলো যেন ‘ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের’ আরও বেশি ঋণ দিতে পারে।” তথ্য অনুসারে, ইউপিএ-২ সরকারের আমলে ২০০৮-০৯ থেকে ২০১৩-১৪ পর্যন্ত মোট এনপিএ হয় ৫,০৪,২০১ কোটি টাকা এবং রাইট অফ করা হয় ৩২,১০৯ কোটি টাকা। উল্টোদিকে এনডিএ আমলে ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৯-২০ আর্থিক বছরে মোট এনপিএ দাঁড়িয়েছে ১৮,২৮,৫৮৪ কোটি টাকা এবং রাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে ৬,৮৩,৩৮৮ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২০১৮-১৯ সালে রাইট অফ করা হয়েছে ১,৮৩,১৬৮ কোটি টাকা এবং ২০১৯-২০ সালে রাইট অফ করা হয়েছে ১,৭৮,৩০৫ কোটি টাকা।
শেষের কথা
দীর্ঘ ধানাই পানাই এর শেষে কথাটা কী দাঁড়াল ধন্দ তা নিয়েই। দ্বন্দ্বও। আমাদের হজমশক্তির পরীক্ষা আরও কতদিন চলবে প্রশ্ন তা নিয়েও। একদিকে ৩০০ দিন পেরিয়ে এসে ক্রমশ তীব্রতা বাড়াচ্ছে কৃষক আন্দোলন। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে ভারত বন্ধ। অন্যদিকে একটু একটু করে দেশ জুড়ে দানা বাঁধছে কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন। ঢেউ না উঠলে কারা টুটবে না। এবার ঢেউ উঠুক, কারা টুটুক, নতুন দিন আসুক...