E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৭ সংখ্যা / ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ / ৭ আশ্বিন, ১৪২৮

ত্রিপুরার চিঠি


২৭শের বন্‌ধকে সফল করতে গ্রাম-শহরে প্রচার

বিজেপি’র হিংসা নিয়ে সরকারকে হাইকোর্টের নোটিশ

হারাধন দেবনাথ


২৭ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত কিষান মোর্চার আহ্বানে ভারত বন্‌ধকে সফল করতে ত্রিপুরার গ্রাম-শহরে প্রচারাভিযান চলছে। একইসঙ্গে ডিসেম্বরে সিপিআই(এম)-র রাজ্য সম্মেলনকে সামনে রেখে শাখা সম্মেলন শেষে অঞ্চল স্তরে সম্মেলন থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে বেশি বেশি মানুষকে সমবেত করার আহ্বান উচ্চারিত হচ্ছে। শহরে প্রশাসনিক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করায় নানা প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। মিছিল-সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। মানুষের জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে লড়াই সংগ্রামে ভীত শাসক গণতন্ত্র নিধনে প্রশাসনিক যন্ত্র ব্যবহার করছে।

গণকনভেনশন

২৭ সেপ্টেম্বর সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে ভারত বন্‌ধের সমর্থনে ২১ সেপ্টেম্বর আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে অনুষ্ঠিত হয় সাড়া জাগানো গণকনভেনশন। জনাকীর্ণ কনভেনশন থেকে বন্‌ধের প্রচার ঘরে ঘরে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য মানিক সরকার। তিনি বলেছেন, মানুষের কাছে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে জয় করে আনতে হবে। শাসকের সৃষ্ট কোনো প্ররোচনায় পা না দিয়ে বুক চিতিয়ে, শিরদাঁড়া টান রেখে এগিয়ে যান। দেশের ১৯টি অ-বিজেপি রাজনৈতিক দলের ডাকে ১১ দফা দাবি নিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর আন্দোলন চলছে দেশজুড়ে। ৩০ সেপ্টেম্বরের পরেও এই আন্দোলনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের প্রতি কনভেনশন থেকে আবেদন জানিয়েছেন মানিক সরকার।

মানিক সরকার বলেন, কেন্দ্রের সরকার সাধারণ মানুষের শত্রু। এই সরকার একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সরকার। তাদের স্বার্থেই মূলত কাজ করছে ওরা। এককথায় বলা যায় দলবদ্ধভাবে যারা ডানে-বায়ে না তাকিয়ে, মানুষের রক্ত-মাংস শোষণ করে লুণ্ঠনের পর লুণ্ঠন করছে, তাদের পুঁজির পাহাড় পর্বতে পরিণত করছে তাদের সরকার। আইন তৈরি থেকে শুরু করে হেন পদক্ষেপ নেই যা এই সরকার গ্রহণ করেনি বা গ্রহণ করছে না কর্পোরেটদের স্বার্থে।

তিনি বলেন, কৃষক থেকে শুরু করে গরিব অংশের মানুষ কেন্দ্রের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি, আইনকানুন সমর্থন করছেন না। প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। সরকার যখন কথা শুনছে না তখন রাস্তায় নামতে বাধ্য হচ্ছে তারা। এই প্রতিবাদ-আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের দেশের সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার, নিজের মনোভাব অকুতোভয়ে স্বাধীনভাবে ব্যক্ত করা, সমালোচনা করার অধিকারসহ সমস্ত কিছুর উপর আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা হচ্ছে। আক্রমণ এখানেই থেমে থাকছে না। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে ক্রমে ক্রমে সংগঠিত সমস্যাপীড়িত বিরাট সংখ্যক মানুষকে লড়াই-সংগ্রামের ময়দানে বিভক্ত করতে, দুর্বল করতে ভিন্ন পথে চালিত করা, তাদের জীবনের মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতে নিকৃষ্ট পথ অবলম্বন করছে এই সরকার।

সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অঘোর দেববর্মার সভাপতিত্বে কনভেনশনে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিপিআই রাজ্য পরিষদের সহ-সম্পাদক যুধিষ্ঠির দাস, আরএসপি’র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক দেব, সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক দুলাল দেব এবং সিপিআই(এমএল)-র রাজ্য সম্পাদক পার্থ কর্মকার।

গণকনভেনশনে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বামপন্থী নেতা-কর্মীরা শামিল হন। কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত জনাকীর্ণ কনভেনশনের শুরুতে সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সদ্য প্রয়াত সম্পাদক গৌতম দাশ এবং সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত শ্যামল রায়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং শোকসন্তপ্ত পরিজনদের সমবেদনা জানিয়ে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন অঘোর দেববর্মা।

জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, এই বন্‌ধ শুধুমাত্র কৃষি ও কৃষকের জন্য নয়। দেশের স্বাধীনতা, সংবিধান, নাগরিক অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য রক্ষার জন্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বিজেপি খুব সচেতনভাবে ত্রিপুরাকে সাম্প্রদায়িকতার গবেষণাগার তৈরি করতে চায়। আরএসএস-বিজেপি’র মূল অ্যাজেন্ডা হিন্দুরাষ্ট্রের চেহারা কী হতে পারে তার মহড়া চলছে ত্রিপুরায়।

জীতেন্দ্র চৌধুরী রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্বে

আসন্ন রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন জীতেন্দ্র চৌধুরী। সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির একটি সংক্ষিপ্ত সভায় পার্টির রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশের প্রয়াণের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন রাজ্য সম্মেলন পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে জীতেন্দ্র চৌধুরীকে নির্বাচিত করা হয়।

পাহাড় থেকে সমতলে আরও মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাজ্যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, কাজ-খাদ্যের দাবিতে, কেড়ে নেওয়া সমস্ত অধিকার আদায়ে লড়াই তেজি করবে সিপিআই(এম), বামফ্রন্ট।

পার্টির রাজ্য দপ্তরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা নতুন দায়িত্ব পাওয়া জীতেন্দ্র চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। তিনি জবাব দেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের। তিনি বলেন, মানুষের মনের ব্যথা উপশম করতে বামপন্থীরাই একমাত্র রাস্তা দেখাতে পারে। মানুষ দেখছেন, উপলব্ধি করছেন কারা তাদের সমস্যা নিয়ে প্রকৃত লড়াই করছে। ১৯টি রাজনৈতিক দলের সমর্থনে ২৭সেপ্টেম্বর সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে ভারত বন্‌ধ সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, রাজ্যে এ সময়ে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। এ লড়া‍‌ই শুধু বামপন্থীদের একার নয়। এই লড়াইয়ে শুধু বামপন্থী সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করা নয়, শাসকদলের মধ্যেও যারা গণতন্ত্র ও শান্তি-সম্প্রীতির বাতাবরণ রক্ষা করার পক্ষে তাদের সবাইকে যুক্ত করেই আমরা আগামীদিনে আমাদের সেই লক্ষ্যে পৌঁছবো। কারণ বিরোধী দলের মধ্যে বামপন্থীরা শুরু থেকে প্রত্যক্ষভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন। পরোক্ষভাবে আক্রান্ত শাসকদলের মধ্যেও সংখ্যাগরিষ্ঠ গরিব, মধ্যবিত্ত অংশের মানুষও।

জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, পাহাড়, সমতল উভয়স্থানেই আমরা আক্রান্ত। বিজেপি-আইপিএফটি জোট সরকারের শাসনে আবার সেই বিভাজন, আবেগের খেলা এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দুর্বল করে দিয়ে একলা চলার স্লোগান ইত্যাদি উঠছে। যদিও এগুলি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করছেন মানুষ। বিভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়ায় তা দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই ছাড়াও গত ৪২মাসে কাজ ও খাদ্যের দাবি, রুজি-রোজগারের জন্য, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন মানুষ। প্রতিবাদ করছেন। শাসকদলের প্রতি মোহচ্যুতি ঘটছে। এজন্য মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এবং চরম ব্যর্থতা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য শাসক দল আজ বেপরোয়া। এটা শাসক দলের দুর্বলতা। গত সপ্তাহখানেক আগে প্রশাসন প্রায় অচল করে দিয়ে সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরসহ রাজ্যজুড়ে দলীয় অফিসে, নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে নগ্ন আক্রমণ চালায় শাসক দল। প্রতিবাদী মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকারে চরম ব্যর্থতা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য এগুলি করছে ওরা।

তিনি বলেন, গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের স্লোগান অবাস্তব। যারা এ স্লোগান তুলছেন তারাও নিজেদের অভিজ্ঞতায় একথা বুঝতে পারছেন। এটাও বুঝতে পারছেন, তারা প্রকৃত বিকল্প নন। ছয় মাস হয়ে গেল এডিসি-র ক্ষমতায় বসেছে গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের স্লোগানধারী রাজনৈতিক দল। পাহাড়ে না গিয়ে খুমুলুঙে আরাম আয়েস করছে তারা।

এনসিআরবি’র তথ্যে কাঠগড়ায় সরকার

বিজেপি-আরএসএস’র রাজনৈতিক সন্ত্রাসে ক্ষতবিক্ষত ত্রিপুরা। সেই নিদারুণ বাস্তবতারই স্বীকৃতি এবার ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)’র রিপোর্টে। সেই সঙ্গে খুন, ধর্ষণ এবং অপহরণের ঘটনায়ও আসামের পরেই দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা।

গত একটি বছর ত্রিপুরায় বিজেপি দুষ্কৃতীদের হামলায় লাগাতার বামপন্থীদের রক্ত ঝরেছে। এনসিআরবি’র রিপোর্ট জানাচ্ছে সেই উদ্বেগজনক তথ্য। সমগ্র উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যেই এই সময়ে সব থেকে বেশি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরাতেই। প্রতি লক্ষ জনসংখ্যার ক্ষেত্রে যার হার ০.৫ শতাংশ। বিজেপি সরকারের সরাসরি মদতে এই সময়ের মধ্যে বার বার আক্রান্ত হয়েছে সিপিআই(এ‌ম)’র দপ্তর। বাদ যায়নি খোদ রাজধানীর বুকে রাজ্য কমিটির দপ্তরও। আক্রান্ত হয়েছে ত্রিপুরার প্রথম সারির দৈনিক ‘ডেইলি দেশের কথা’র কার্যালয়। রাজনৈতিক সন্ত্রাসের তালিকায় তারপরেই রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ ০.১ শতাংশ এবং মণিপুর। যদিও ত্রিপুরায় রিপোর্টে উল্লিখিত ঘটনার থেকে অনেক বেশিমাত্রায় রাজ‍‌নৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি এনসিআরবি’র ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া ২০২০’ শীর্ষক রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে ত্রিপুরা, অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুর ছাড়া গত বছর উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে কোনো রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা সামনে আসেনি।

এর থেকে জানা যায় ২০২০ সালে ত্রিপুরায় ২২টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা সমাজে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। অন্যদিকে অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুরে যথাক্রমে ১টি করে রাজনৈতিক হানাহানি ঘটেছে।

রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায় - গত বছর আসামে ৮২৯টি গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে। দফায় দফায় ভেঙে চুরমার হয়েছে সামাজিক মৈত্রী। বিজেপি শাসনে থাকা আসামের পদাঙ্ক অনুসরণে তৎপর মোদী-শাহ জুটির নেকনজরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের আমলে নৈরাজ্যের অতলে তলিয়ে যেতে বসা ত্রিপুরাও। এই সময়েই ত্রিপুরায় ৮৩টি গোষ্ঠী সংঘর্ষ ঘটেছে।

ক্রমতালিকায় তারপরে ৬০টি এমন ঘটনা নিয়ে রয়েছে মণিপুর। পাশাপাশি অরুণাচল প্রদেশে ১০টি, মেঘালয়ে ২টি এবং সিকিম ও মিজোরামে ১টি করে গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছুটা আশার আলো দেখা গেছে নাগাল্যান্ডে, সেখানে এমন একটিও কাণ্ড না ঘটায়।

এনসিআরবি’র রিপোর্ট অনুসারে, গত বছর আসামে ১,১৩১টি খুন হয়েছে। তালিকায় ১১৪টি খুনের ঘটনা নিয়ে দ্বিতীয় ত্রিপুরা। এরপরে রয়েছে মেঘালয় ৭৯টি, মণিপুর ৪৫টি, অরুণাচল প্রদেশ ২৮টি, মিজোরাম ২৫টি এবং ১১টি খুনের ঘটনা নিয়ে নাগাল্যান্ড এবং সিকিম।

আসামে চিকিৎসা সংক্রান্ত অবহেলার ৯টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এই রাজ্যেই ঘটেছে ১৪৮টি পণ সংক্রান্ত খুন। আবার আসামে ১৩১৬টি খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সেখানে ত্রিপুরায় এমন ঘটনা ঘটেছে ১১৭টি। গোটা উত্তর-পূর্বে সব থেকে বেশি ১৬৫৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে আসামে। তালিকায় তার পরেই ৭৯টি ধর্ষণের অপরাধ নিয়ে ত্রিপুরা। এছাড়া মেঘালয়ে ৬০টি, অরুণাচল প্রদেশে ৩৩টি, মিজোরামে ৩২টি, মণিপুরে ১২টি এবং নাগাল্যান্ডে ৪টি ধর্ষণের কাণ্ড হয়েছে।

অপহরণের ঘটনায় সবার আগে আসাম। রাজ্যে গত বছর ৬,৯৩৪টি অপহরণ হয়। তালিকায় তার পরে ত্রিপুরা। সেখানে ১২৭টি অপহরণ হয়েছে।

বিজেপি-র হিংস্রতাঃ হাইকোর্টের নোটিশ রাজ্য সরকারকে

সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন স্তরের পার্টি অফিসগুলোতে বিজেপি’র হামলা, অগ্নিসংযোগ, কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে, সংবাদমাধ্যমের অফিসে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনার তদন্তে সিট গঠনের আবেদনে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে ত্রিপুরা হাইকোর্টে। মামলায় হাইকোর্টের কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তত্ত্বাবধানে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনের আবেদন জানানো হয়েছে।

২০ সেপ্টেম্বর মুখ্য বিচারপতি আকিল কুরেশি এবং বিচারপতি এস জি চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। ডিভিশন বেঞ্চ জনস্বার্থ মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছে এবং রাজ্য সরকারকে তার বক্তব্য জানাতে নোটিশ জারি করেছে। ৪ অক্টোবর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

হরিপদ দাস নামে রাজ্যের একজন নাগরিক জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান সচিব, পুলিশের আই জি, রাজ্যের আট জেলার পুলিশ সুপারদের।

আবেদনকারীর আইনজীবী রাজশ্রী পুরকায়স্থ বলেন, গত ৮সেপ্টেম্বর আগরতলায় মেলার মাঠে সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তর, পশ্চিম জেলা দপ্তর, 'ডেইলি দেশের কথা' এবং 'প্রতিবাদী কলম' পত্রিকা, পিবি-২৪ সংবাদ চ্যানেল, রাজ্যের নানা প্রান্তে সিপিআই(এ‌ম) অফিসগুলোতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। শাসক দলের মিছিল থেকে এই হামলা হয়। অনুরূপভাবে পার্টিনেতা, কর্মী, সমর্থকদের বাড়িতেও ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা, শারীরিক নিগ্রহ করেছে। ১০ জনকে হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। এফআইআর দাখিল করার পরও কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ। অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। এসব ঘটনার পুলিশি তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে। এজন্য হাইকোর্টের কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের তত্ত্বাবধানে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে ঘটনাগুলোর তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছে। আক্রান্তদের সুরক্ষা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়ও রয়েছে আবেদনে। রাজ্যে আইনের শাসন কায়েম, গণতান্ত্রিক-সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আরজিও জানানো হয়েছে এই মামলায়। আইনজীবী রাজশ্রী পুরকায়স্থকে সহায়তা করছেন দুই আইনজীবী সৈকত সাহা ও বিপ্লব দেবনাথ।