E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৫ আগস্ট, ২০২৩ / ৭ ভাদ্র, ১৪৩০

প্রবল গণ-প্রতিবাদের চাপে মিথ্যা অভিযোগ থেকে জামিনে মুক্ত হলেন জলপাইগুড়ির নেতৃবৃন্দ


মিথ্যা অভিযোগে পাঁচ পার্টি নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জলপাইগুড়ি শহরে মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ তৃণমূল সরকার ও শাসকদলের তাঁবেদার পুলিশ মিথ্যা মামলা সাজিয়ে জলপাইগুড়িতে যে পাঁচজন সিপিআই(এম) নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল, পাঁচদিন পর ২১ আগস্ট তাঁরা জামিনে মুক্ত হয়েছেন। এদিন জলপাইগুড়ি মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশের পেশ করা মেডিক্যাল রিপোর্ট, কেস ডায়েরি সহ সমস্ত আনুষঙ্গিক কাগজপত্র দেখে ধৃত পাঁচ সিপিআই(এম) নেতাকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এই নেতারা হলেন শ্রমিক নেতা, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউল আলম,পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ মিশ্র,পার্টি নেতা তমাল চক্রবর্তী, এবিটিএ’র জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ রায় এবং এবিপিটিএ’র জেলা নেতা জ্যোতিবিকাশ কর। তাঁদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তারের পর থেকেই মুক্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা জেলা। এই প্রতিবাদের রেশ ছড়িয়েছে সংলগ্ন জেলার পাশাপাশি গোটা রাজ্যে। বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদী মিছিল, সভা ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতে শুধুমাত্র সিপিআই(এম) এবং বিভিন্ন গণসংগঠনই নয়, সরব হয়েছেন শিল্পী, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী সহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। উত্তরবঙ্গের চা বাগানের শ্রমিকরা মিছিল করেছেন।

২১ আগস্ট মুক্তির পর পার্টি নেতৃবৃন্দকে নিয়ে জলপাইগুড়ি শহরে যে অগণিত মানুষের মিছিল হয়েছে, তাতে পার্টি ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতা-কর্মীদের উচ্ছ্বাস আন্দোলিত হয়েছে, ধ্বনিত হয়েছে প্রতিবাদী স্লোগান।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক র‌াগিং কাণ্ডে ছাত্র মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করতে মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থীদের বিরুদ্ধে যে কুৎসার আশ্রয় নেন এবং উসকানি দেন তারই প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলী দুর্বৃত্তরা হিংসাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। ১৬ আগস্ট রাতে জলপাইগুড়ি শহরের ডিভিসি রোডে অবস্থিত সিপিআই(এম) জেলা দপ্তর সুবোধ সেন ভবনে ওরা হামলা চালায়। পুলিশের উপস্থিতিতে ওই দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে লাঠি, পাথর, কাঁচের বোতল ইত্যাদি নিয়ে আক্রমণ করে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ দুষ্কৃতীদের জড়ো করে এসএফআই দপ্তর দখলের নামে সিপিআই(এম) দপ্তরে হামলা করেছিল। সিপিআই(এম) এবং এসএফআই’র দু’টি দপ্তর একই জায়গায়। এই হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন এসএফআই কর্মী আহত হন। অনেককেই জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করতে হয়েছিল।

সমস্ত ঘটনা পুলিশের সামনে ঘটা সত্ত্বেও তৃণমূলের হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না করে সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে থাকা পার্টি নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার করে মমতা সরকারের দলদাস পুলিশ। পুলিশকে আঘাত করার মিথ্যা অভিযোগে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা সাজানো হয়।

জেল থেকে জামিন পাবার পর পার্টির নেতা জিয়াউল আলমসহ অন্যান্যরা।

এদিকে মিথ্যা অভিযোগে পার্টি নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ-ধিক্কার মিছিল হতে থাকে। পার্টি নেতৃবৃন্দ ঘোষণা করেছিলেন, এই মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে রাস্তার লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াইও চলবে। পার্টির জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য ঘটনার দিনই ঘোষণা করেছিলেন, পার্টি নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে ছাড়া না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবে সিপিআই(এম)।

সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা দপ্তরে মুখ্যমন্ত্রীর প্ররোচনায় শাসকদল তৃণমূলের হামলা ও শ্রমিক নেতা সহ ৫ জন গণআন্দোলনের নেতাকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পথে নামে সিআইটিইউ। সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন এক বিবৃতিতে অভিযোগ করেন,পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক নিয়ম কানুন লঙ্ঘিত হচ্ছে। সারা ভারত বাগিচা শ্রমিক ফেডারেশনের তরফে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সারা দেশেই এই ঘটনার প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হবার কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অবিলম্বে নেতৃবৃন্দকে মুক্তির দাবি জানিয়েছিল রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি,এবিটিএ এবং এবিপিটিএ।

সিপিআই(এম) দপ্তরে হামলার প্রতিবাদে ও অন্যায়ভাবে ধৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে জলপাইগুড়ি শহরে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস যৌথভাবে মিছিল সংগঠিত করে। এছাড়াও এখানে শ্রমিক কর্মচারীদের যৌথ মঞ্চের ডাকেও মিছিল হয়েছে। এই মিছিলে সিআইটিইউ, আইএনটিইউসি, এআইটিইউসি সহ চা শ্রমিকদের জয়েন্ট ফোরাম, সিআইটিইউ’র অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য ইউনিয়ন এবং ছাত্র, যুব, মহিলা, কৃষক, খেত মজুর প্রভৃতি বিভিন্ন গণ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নিয়েছিলেন। মিছিল শেষে জয়েন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানায় নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তি ও দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়ে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়েছিল।

সারা ভারত বাগিচা শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আলম সহ পাঁচ জন গণআন্দোলনের নেতার মুক্তির দাবিতে ফেডারেশন অব ওয়েস্টবেঙ্গল বিড়ি অ্যান্ড টোবাকো ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ডাকে বালুরঘাটে মিছিল হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে জলপাইগুড়ি শহরের চিকিৎসক, অধ্যাপক, কবি, সাহিত্যিক, নাট্যকার, সমাজকর্মী প্রভৃতি নাগরিক সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ সরব হন। তাঁরা জলপাইগুড়ি প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে পুলিশের ন্যক্কারজনক পক্ষপাতদুষ্ট কার্যকলাপের প্রতিবাদ সহ ধৃত নেতৃবৃন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন। এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে শ্রমিকরা প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত করেছেন।

সিআইটিইউ সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনগুলির ডাকে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল সংগঠিত হয়েছে। কলকাতায় শ্রমিক ভবন থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মিছিল শেষে প্রতিবাদ সভা হয়েছে।

সারা ভারত বাগিচা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সি. কে. উন্নিকৃষ্ণণ ২১ আগস্ট জামিনের পর জিয়াউল আলম সহ মুক্ত পাঁচ জন নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছেন।