৬১ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৫ আগস্ট, ২০২৩ / ৭ ভাদ্র, ১৪৩০
রাজ্য প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি - এক সুকৌশলী আত্মসমর্পণের দলিল!
নিলয়কুমার সাহা
নয়া শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে রাজস্থানের সিকারে এসএফআই-র সমাবেশ।
প্রাথমিক পর্বে জাতীয় শিক্ষানীতির সার্বিক বিরোধিতা, বিকল্প শিক্ষানীতি প্রণয়নের অঙ্গীকার, বিকল্পের সন্ধানে একাধিকবার কমিটি গঠন এবং পরিশেষে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করার লক্ষ্যে রাজ্যের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্যদের নিয়ে তড়িঘড়ি কমিটি গঠন ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণের পর কোনো কমিটির কোনো রিপোর্ট জনসমক্ষে না এনে, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পক্ষ অর্থাৎ ছাত্র, শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, অভিভাবক কাউকে কোনো প্রকার আলোচনার সুযোগ না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাখো লাখো ছাত্র-ছাত্রীর উপর ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ চাপিয়ে দিল তা নিশ্চিতভাবে পরাধীন ভারতের ইংরেজ শাসনকেও হার মানায়। জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ রাজ্য সরকারের দূরভিসন্ধি প্রথম প্রকাশিত হয় যখন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তর হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ক’রে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যের সমস্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষানীতি নির্দেশিত ‘ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ করে ডিগ্রি প্রদানের সুপারিশ করে। কার্যত ওই সুপারিশেই রাজ্যের উচ্চশিক্ষায় কার্যকর হয় ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’। যথার্থ পরিকল্পনা, প্রস্তুতি, আলোচনা এবং উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ রাজ্য প্রশাসনকে খুশি করতে নেমে পড়েন জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করার প্রতিযোগিতায়। সম্ভবত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ নির্দেশিত উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় শর্তাবলী নিঃশর্তে গ্রহণের পর রাজ্যের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বিধানসভায় আত্মপক্ষ সমর্থনে ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থের কথা উল্লেখ করলেও উল্লেখ করলেন না এই শিক্ষানীতি প্রণয়নের পূর্ব শর্ত অপরিহার্য পরিকাঠামো সুনিশ্চিত করতে, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর পদ সৃষ্টি সহ নিয়োগের বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের সাথে সাথে সরকারি দায়বদ্ধতার কথা। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় প্রাথমিকভাবে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো প্রস্তুতের দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর চাপিয়ে দিয়ে প্রকারন্তে তিনি উদ্যোগপতিদের হাতে তুলে দিলেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষার ভার। এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিক্ষার বাজার দখল করতে মরিয়া বিনিয়োগকারীরা সারা দেশ সহ এই রাজ্যে তাদের ঈপ্সিত লক্ষ্য পূরণে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তা সহজেই অনুমেয়। এমতাবস্থায় বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় সরকার পোষিত রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পরিণতি কি হবে তা নিশ্চয়ই দুর্বোধ্য নয়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত কোনো নীতি প্রণয়ন না করেই কেবলমাত্র রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তির সাহায্যে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ কার্যকর করলেও বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে অবস্থার কিছুটা গুণগত পরিবর্তন লক্ষিত হয়। রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসৃত নির্দেশাবলী কার্যকর করার উদ্দেশে গত ৭ আগস্ট, ২০২৩ রাজ্য মন্ত্রীসভা অনুমোদন করে রাজ্য শিক্ষানীতি যা কার্যত কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষিত শিক্ষানীতির প্রতিলিপি মাত্র। সামাজিক মাধ্যমে পরিবেশিত রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি ২০২৩ সালে উচ্চশিক্ষায় এবং পর্যায়ক্রমে ২০২৪ সালে বিদ্যালয় শিক্ষাক্রমে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ কার্যকর করার সুপারিশ করেছে। এই সুপারিশের মাধ্যমেই সম্পন্ন হবে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যাবস্থার আমূল পরিবর্তন যা কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ ভিন্ন অন্য কিছু নয়। জাতীয় শিক্ষানীতির ‘অনুপ্রেরণা’য় প্রস্তুত রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি সরকার পোষিত শিক্ষাব্যবস্থার অকাল মৃত্যু নিশ্চিত করে আগামী দিনে রাজ্যে বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অধিক সংখ্যক বিদেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আবাহনের মাধ্যমে রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে ‘গৈরিক’ ধ্বজা উত্তোলনে বদ্ধপরিকর। এহেন এক অকল্পনীয়, অসহনীয় পরিস্থিতিতে রাজ্য প্রশাসন সুপরিকল্পিতভাবে রাজ্যের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোন বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সে আলোচনা আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০’ বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে ৫+৩+৩+৪ ব্যবস্থা কার্যকর করলেও রাজ্য প্রস্তাবিত বিদ্যালয় শিক্ষাক্রমে প্রচলিত পদ্ধতি ৪+৪+২+২ ব্যবস্থা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতিকে মান্যতা দিয়ে রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি প্রাক্-প্রাথমিক স্তরকে অঙ্গনওয়াড়ির সাথে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। রাজ্য সরকার বিদ্যালয় শিক্ষার অন্তর্ভুক্তির বয়স ৬ বছর অপরিবর্তিত রাখলেও প্রাক্-প্রাথমিক স্তরকে অঙ্গনওয়াড়ির সাথে যুক্ত করার সুপারিশের মধ্যে লুকিয়ে আছে সরকারি আনুকূল্যে পরিচালিত রাজ্যের সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় তুলে দেবার চক্রান্ত। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিকে অঙ্গনওয়াড়ির সাথে যুক্ত করার সাথে সাথে বন্ধ করে দেওয়া হবে রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের দিশারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজা। রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষিত যুব সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনারও ঘটবে চিরকালীন বিলুপ্তি। রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষনীতি কেন্দ্রের তিন ভাষার সূত্র গ্রহণ করেছে এবং উপযুক্ত পরিকাঠমো ও পর্যাপ্ত সম্পদের নিরিখে প্রাথমিক স্তর থেকে তিনটি ভাষা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে।
জাতীয় শিক্ষানীতিতে বিদ্যালয়ে বাৎসরিক পরীক্ষার পরিবর্তে ষাণ্মাসিক পরীক্ষার পাশাপাশি দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরিবর্তে তৃতীয়, পঞ্চম, অষ্টম এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে বিশেষ পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে। রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতে অষ্টম শ্রেণি থেকে তিন বছরের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ষাণ্মাসিক পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রচলনের সুপারিশ করা হয়েছে। একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ষাণ্মাসিক পরীক্ষার প্রথম দুটি পর্যায় অর্থাৎ একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা হবে সম্পূর্ণ ‘মালটিপিল চয়েজ কোশ্চেন ’ (এম. সি. কিউ.) নির্ভর আর ছোটো এবং বড়ো প্রশ্নের ভিত্তিতে সম্পন্ন হবে দ্বাদশ শ্রেণির দুটি পরীক্ষা।
৫ থেকে ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক এবং অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একত্রিত করার কেন্দ্রীয় নীতি অনুসরণ করে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর মানব সম্পদ এবং অন্যান্য দৈহিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে অনুভূমিক এবং উল্লম্বিক যোগসূত্র রচনা করে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ‘হাব’ তৈরির প্রস্তাবনা ব্যক্ত করেছে। এই প্রস্তাবনার মধ্যে লুকিয়ে আছে শিক্ষা সংকোচন নীতি যা সরকারি আনুকূল্যে পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থার মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়ে আহ্বান জানাবে বেসরকারি উদ্যোগপতিদের। ন্যূনতম মানের নিরিখে রাজ্যের বিদ্যালয়গুলি মূল্যায়নের লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষানীতি ‘স্টেট স্কুল স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি’ নামে একটি সংস্থা গঠনের সুপারিশ করেছে। জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করে বিদ্যালয় মূল্যায়নের যে প্রস্তাব রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বর্তমান সেই প্রস্তাবেও রয়েছে সরকারি আনুকূল্যে পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থার সংকোচন নীতি। রাজ্যের শহরতলীর বিদ্যালয় আর প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিদ্যালয় মূল্যায়নের মাপকাঠি যদি এক হয়, আইনত যা হওয়াই কাম্য, সেক্ষেত্রে রাজ্যের গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থার পরিণতি কি হবে তা অনুমান নিষ্প্রয়োজন। রাজ্যের শিক্ষানীতি কেন্দ্রীয় সরকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ অনুমোদিত উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির পর্যায় এবং স্তর নির্ণয়ের সুপারিশ করেছে। আগামী দু দশকের জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকপদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করতে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রতিটি রাজ্যকে বিস্তৃত শিক্ষক নিয়োগ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্য প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি সারা রাজ্যে অনুমোদিত শিক্ষক পদের সংখ্যা পুনঃমূল্যায়নের পাশাপাশি রাজ্যে আদর্শ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত রক্ষা করার জন্য বর্তমান ছাত্র সংখ্যার নিরিখে শিক্ষক পদের সংখ্যা পুনর্বিবেচনারও সুপারিশ করেছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতি যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া যে বিপর্যয়ের সম্মুীখীন হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে শিক্ষক পদের সংখ্যা পুনর্বিবেচনার কাজ রাজ্যের ভাবী শিক্ষক সম্প্রদায়কে আদৌ স্বস্তি দিতে পারবে কি?
‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০’ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত ৩+২-এর পরিবর্তে ৪+১ পদ্ধতির সুপারিশ করেছে এবং সেই সুপারিশ ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে কার্যকর হয়েছে। এই শিক্ষানীতি ‘মালটিপিল এন্ট্রি মালটিপিল একজিট’, ‘একাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট’, ‘ক্রেডিট ট্রান্সফার’, ‘ম্যাসিভ অনলাইন এডুকেশন’, ‘ইনডাকশন প্রোগ্রাম’ ইত্যাদি অভিনব মার্কিনী শিক্ষা ভাবনার সাহায্যে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অভিমুখ বদলে দিতে বদ্ধপরিকর। স্বাধীন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকার উদ্যোগের এহেন মার্কিনী বন্দনায় প্রোথিত আছে শিক্ষার বেসরকারিকরণের উদগ্র বাসনা। সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিযোগিতার খোলাবাজার দখল করবে পুঁজিপতিরা এবং এর ফলে বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত শিক্ষাক্রমের দৌরাত্মে বিপন্ন হবে রাজ্যের দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা, সলিল সমাধি ঘটবে তাদের স্বপ্নের।
বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই দলীয় আনুগত্যের কারণে রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের স্বাধিকার আজ বিপন্ন! অসহনীয় এই পরিস্থিতির সাথে যুক্ত হয়েছে রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির অবর্ণনীয় যন্ত্রণা এবং রাজভবন ও নবান্নের দৈরথ। এই আবহে রাজ্যের উচ্চশিক্ষার খোলাবাজারে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসৃত বিবিধ উপাচার সাদরে গ্রহণ করে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ‘মৃত্যু ঘণ্টা’ বাজিয়ে বেসরকারি উদ্যোগপতিদের সহযোগিতায় উচ্চশিক্ষার খোলাবাজারকে আরও গতিশীল করে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি স্নাতক স্তরে ‘মালটিপিল এন্ট্রি মালটিপিল একজিট’ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও রাজ্যের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পদ্ধতি গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবিত এই নীতি রাজ্যে প্রচলিত ‘চয়েজ বেস ক্রেডিট সিস্টেম’-এর সাথে ‘একাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট’ কার্যকর করার সুপারিশের সাথে সাথে ‘স্টেট লেভেল একাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট’-এর সুপারিশ করেছে। বিদ্যালয় শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষাতেও প্রস্তাবিত এই শিক্ষানীতিতে বিভিন্ন মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুভূমিক এবং উল্লম্বিক যোগসূত্রের সাহায্যে ‘ক্লাস্টার অব কলেজেস’-এর ধারণা উপস্থাপন করেছে। ‘ক্লাস্টার অব কলেজেস’-এর ধারণা নতুন না হলেও এই ধারণাকে ভিত্তি করেই রাজ্য সরকার উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রকেও সংকুচিত করতে বদ্ধপরিকর। জাতীয় শিক্ষানীতির পদাঙ্ক অনুসরণ করে রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি শিক্ষার মূল স্রোতের সাথে বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমকে যুক্ত করার সুপারিশ করেছে। যদিও ১৯৬৬ সালে প্রকাশিত কোঠারি কমিশনের প্রতিবেদনে প্রথম ঘোষিত হয়েছিল বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমের সুপারিশ। সেই সুপারিশে উচ্চশিক্ষার সাথে বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমের সংযুক্তিকরণের প্রস্তাব ছিল না, ছিল বিদ্যালয় শিক্ষাক্রমের পর যারা উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ পাবে না তাদের জন্য নানান বৃত্তিতে যুক্ত হওয়ার প্রাথমিক পাঠ।
সারা দেশব্যাপী কর্মসংস্থানের সুযোগ যখন ক্রমেই সঙ্কুচিত হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে কেন্দ্রে ও রাজ্যের ঘোষিত এবং প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি উচ্চশিক্ষার সাথে বৃত্তিমূলক শিক্ষাক্রমের সংযুক্তিকরণের মধ্য দিয়ে বেসরকারি উদ্যোগপতিদের উচ্চশিক্ষিত শ্রমিক জোগানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জাতীয় শিক্ষানীতি উদাত্ত কণ্ঠে ‘অনলাইন ডিজিটাল লার্নিং’-এর প্রসারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেছে। কেন্দ্রের ঘোষিত নীতি অনুসরণ করে রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতিতেও ধ্বনিত হয়েছে ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের প্রস্তাব। ‘অনলাইন ডিজিটাল লার্নিং’ সম্পর্কে কেন্দ্র এবং রাজ্যের একমুখী ভাবনা কার্যত শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের বিকল্প হিসেবে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষাক্রমকে কার্যকর করে শিক্ষা ব্যবস্থার অভিমুখকেই বদলে দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এহেন ছাত্র-ছাত্রীর স্বার্থ বিরোধী প্রস্তাবিত কালা শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ খোলা আছে কি?