E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬১ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৫ আগস্ট, ২০২৩ / ৭ ভাদ্র, ১৪৩০

আকাশে মায়াবী চাঁদ, মাটিতে নির্মম বুলডোজার

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


রথযাত্রা দেখার ভিড়ভাড়াক্কায় পথ, রথ, মূর্তি - সকলেই নিজেকে ‘দেব’ ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। শ্রেষ্ঠত্বর দাবি করে। কবির ভাষায় ‘অন্তর্যামী’ ওই সময় এসব দেখে মুচকি হাসেন। ঠিক তেমনই গতকাল যখনই বিজ্ঞান চাঁদের উলটো পিঠে মহাকাশযান নামিয়ে আরও একটা অসাধ্যসাধন করে ফেলেছে, তখনই কোমরে গামছা বেঁধে লোকজন মাঠে নেমে পড়েছে। এই অভিযানের আসল ‘দেব’ কে, তা নিয়ে আপাতত জোর লড়াই। বিজ্ঞানও সব কাণ্ড দেখে নিশ্চই মুচকি হেসেছে। অবশ্য যারা আজ সবার আগে নিজেদের পিঠ চাপড়াতে ব্যস্ত, কেন্দ্রের সেই বিজেপি সরকারই ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের বাজেটে ইসরো-র জন্য বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ কমিয়েছে ৮ শতাংশ। চন্দ্রযান ৩ এবং সূর্যের পর্যবেক্ষণের জন্য আদিত্য এল ১-এর বরাদ্দ কমিয়েছে ৩২ শতাংশ।

হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি থেকে এই চন্দ্রাভিযানের পেছনে ‘বিশিষ্টজন’দের অবদানের তালিকা এখনও পর্যন্ত মোবাইলে মোবাইলে অবশ্য ছড়িয়ে পড়েনি। তবে পড়বে। লোকসভা ভোট যত এগিয়ে আসবে ততই। ‘মুমকিন হ্যায়’ গোছের ‘কড়ক ছাপ’ অতিরঞ্জনের বন্যা বইতে শুরু করবে। ১৯৬২-তেই যে মহাকাশ গবেষণার বিষয়ে ভাবা হয়েছিল এবং সেই লক্ষ্যে ওই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ইনকোস্পার (Indian National Committee for Space Research - INCOSPAR) নামে একটা কাঠামো তৈরি করা হয়, তা যত তাড়াতাড়ি ভোলানো যায় ততই মঙ্গল। তা না হলে ফেরিওয়ালার ঝুলিতে ভোটের আগে বিক্রি করার মেটিরিয়াল কম পড়ে যাবে। ১-এ চন্দ্র, ২-এ পক্ষ, ৩-এ রাম ছাড়া ভোটের আগে হাতজোড় করে দাঁড়ানোর মতো আর কোনো কুমিরছানাই হাতে নেই। চন্দ্র বাদ দিয়ে দিলে পাছে ভোটে অর্ধচন্দ্র খাবার ভয় যে একেবারে নেই তাও তো এই সময় দাঁড়িয়ে ছাপ্পান্ন ইঞ্চির ছাতি বাজিয়ে বলা যাচ্ছে না...। ভোটের যদিও অনেক দেরি। তাই আপাতত এসব মুলতবি।

চাঁদ-টাদ তো অনেক হলো। এখন বরং একটু ‘নাইট অফ ব্রোকেন গ্লাস’-এর দিকে নজর দিই। আমার জ্ঞানভাণ্ডার যেহেতু নিতান্তই সীমিত, তাই লিখতে হলে সক্কাল সক্কাল একটু পড়তে বসি। সেখানেই আজ খুঁজে পেলাম ‘ক্রিস্টালনাখট’ (Kristallnacht)। কেউ বলেন ‘ক্রিস্টাল নাইট’। ১৯৩৮-এর নভেম্বরের ৯-১০ তারিখকে এই নামে ডাকা হয়। একেই বলা হয় ‘নাইট অফ ব্রোকেন গ্লাস’। এর ঠিক দু'দিন আগে ৭ নভেম্বর ছিল পূর্ণিমা। সেই সময়েই নাকি ইহুদি নিধনের মহান পরিকল্পনা সেরে ফেলেছিলেন জার্মান দণ্ডমুণ্ডের কর্তা অ্যাডলফ হিটলার এবং জোসেফ গোয়েবলস। এর আগে জার্মানিতে এদিক ওদিকে কারণে অকারণে ইহুদিদের বাড়ি ভেঙে দেবার মতো ঘটনা ঘটেছে। আর ৯ নভেম্বর রাত থেকে ১০ নভেম্বর সকালের মধ্যে জার্মানি জুড়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয় ইহুদিদের কয়েক হাজার বাড়ি, স্কুল, দোকানপাট সহ সবকিছু। তথ্য বলছে ন্যুরেমবারগ-এ ভাঙা হয়েছিল ২৩৬টি বাড়ি, ডুসেলডরফে ৪০০ বাড়ি। রোস্টক এবং মানহেইমে ইহুদিদের যত বাড়ি ছিল সব ভাঙা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে অপরিকল্পিত মনে হলেও পরে জানা গেছিল রাষ্ট্রীয় মদতে সংগঠিত এই আক্রমণ করা হয়েছিল স্বয়ং হিটলার এবং গোয়েবলসের নির্দেশে। ৯ নভেম্বর রাতে নাৎসি পার্টির নেতারা দলের বাহিনী এবং সদস্যদের এই আক্রমণের চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়। এক রাতে গ্রেপ্তার করা হয় প্রায় ৩০ হাজার নিরাপরাধ ইহুদিকে। মৃত্যু হয় কয়েকশো ইহুদির।

ইতিহাসটুকু বুঝে নিতে এই ঘটনার অনুঘটকটুকুও জেনে রাখা ভালো। ৭ নভেম্বর ১৯৩৮। যেদিন হারসেল গ্রিঞ্জসপ্যান নামক ১৭ বছর বয়সি এক ইহুদি কিশোর আরনেস্ট ভম রাথ নামক এক জার্মান কূটনীতিককে গুলি করে হত্যা করে। যিনি প্যারিসে জার্মান দূতাবাসের কর্মী ছিলেন। গ্রিঞ্জসম্যান-এর পরিবারকে জার্মানি ছেড়ে পোল্যান্ড যেতে বাধ্য করেছিল নাজি বাহিনী। এই হত্যার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই নাৎসি পার্টির পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় জার্মানির বিরুদ্ধে ইহুদিদের ষড়যন্ত্রের কারণেই এই হত্যা। চাই এর বদলা, প্রতিশোধ। অতএব ক্রিস্টালনাখট। হয়তো বা অতীতের এই তত্ত্ব অনুসারেই এর ৬৪ বছর পরে আমরা এই দেশে বসে শুনেছিলাম, ‘পহলে আগ লাগায়া কিসনে?’ সেটা ২০০২। অতীত ঘাঁটাঘাঁটি থাক। যে কথা বলতে বসে ক্রিস্টালনাখট চলে এলো তার সঙ্গে অবশ্য আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু সম্পর্ক যে একেবারেই নেই সেটাও বোধহয় বলা ঠিক হবে না আরও কিছুটা সময় না গেলে। কারণ সদ্য সদ্যই এদেশে আমদানি হয়েছে বুলডোজার তত্ত্ব। কোনো এক মুখ্যমন্ত্রী তো নাকি এখন যোগী থেকে ‘বুলডোজার বাবা’ নামেও খ্যাত হয়েছেন। তিনি নাকি কোনো অপরাধের ঘটনা দেখলেই বুলডোজার দিয়ে সেই অপরাধীর ঘরবাড়ি সব ভেঙে দিচ্ছেন। যেখানে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হচ্ছে বিচার বিভাগকে। আইনের শাসনকে। কোনো মুখ্যমন্ত্রী আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে এরকম করতে পারেন কিনা সে প্রশ্নও এখানে অবান্তর। তাঁর ইচ্ছা, তিনি করছেন। উত্তরপ্রদেশ ছাড়িয়ে সেই ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে হরিয়ানা, গুজরাট, আসাম, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, উত্তরাখণ্ড, দিল্লি এমনকী আমাদের রাজ্যেও। এইসব রাজ্যের মধ্যে দিল্লি ছাড়া সব রাজ্যেই বিজেপি সরকার আর কোনোটাতে বিজেপি-কে ‘ন্যাচারাল অ্যালাই' মনে করা তৃণমূল সরকার। রাজস্থানে কংগ্রেস পরিচালিত সরকার থাকলেও আলওয়ারের রাজগড় পুরসভা বিজেপি পরিচালিত এবং সেখানেও বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙার ঘটনা ঘটেছে। সন্দেহ নেই যে, ঘটনা পরম্পরা বিচার না করে তাৎক্ষণিকভাবে অনেকেই এতে বাহবা দিচ্ছেন বা ‘দারুণ ব্যাপার’ বলে মনে করছেন। তবে এই বুলডোজার সংস্কৃতি ভবিষ্যতে এই দেশেও যদি একটা ক্রিস্টালনাখট করে সেদিন কিন্তু অবাক হবেন না। যে কোনো কিছু এভাবেই শুরু করা হয়। ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে একদিন হঠাৎ করে ঘটে যায় ‘ফাইনাল সলিউশন’।

মার্চ ২০১৭ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপি’র যোগী আদিত্যনাথ। ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর মাসে প্রথমবার তিনি অপরাধীদের সম্পত্তি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। উত্তরপ্রদেশের বুকে প্রথম বুলডোজার ব্যবহার করে অপরাধীর বাড়ি ভাঙা হয় জুলাই ২০২০-তে। কুখ্যাত গুন্ডা বিকাশ দুবের বাড়ি। এরপর আগস্ট ২০২০ - মুখতার আনসারির বাড়ি। সেপ্টেম্বর ২০২০ আতিক আহমেদের বাড়ি। এরপর একের পর এক বুলডোজার ব্যবহার চলতে থাকে। ২০২২-এ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নিজের এবং দলের নির্বাচনী প্রচারে বুলডোজার ব্যবহার শুরু করেন। বিরোধীরাও তাঁর নাম দিয়ে দেন ‘বুলডোজার বাবা’।

২০২২ সালে হনুমান জয়ন্তীর দিন দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরিতে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গাড়ি-দোকান ভাঙচুর, ইটবৃষ্টি থেকে শুরু করে গুলি পর্যন্ত চালানো হয়। আমজনতার পাশাপাশি একাধিক পুলিশ কর্মীও আহত হন। এরপরই দিল্লির বিজেপি সভাপতি আদেশ গুপ্তা হুমকি দেন জাহাঙ্গীরপুরের মসজিদের কাছাকাছি থাকা সমস্ত ‘বেআইনি নির্মাণ’ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। সেই নির্দেশ মতো ২০ এপ্রিল সকালে বুলডোজারের সাহায্যে মসজিদের কাছে রাস্তার ধারে থাকা দোকান ও বাড়ি ভাঙচুর করা শুরু করেন পুরসভার কর্মীরা। সুপ্রিম কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে এই বুলডোজার আক্রমণ আটকে দেন সিপিআই(এম) নেত্রী বৃন্দা কারাত।

২০২২ সালের মে মাসে গুজরাটে বহু জায়গায় রামনবমীর মিছিলে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে। গুজরাট সরকার দ্রুত পদক্ষেপে এই ঘটনায় হস্তক্ষেপ করে বেশ কিছু অবৈধ নির্মাণকে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়। খাম্বাত শহরে জেসিবি ব্যবহার করে এবং কসাইদের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর বুলডোজার দিয়ে হিম্মতনগর, মোদাসা, কাদি, বোটাদের মতো শহর ও আহমেদাবাদ, সুরাট এবং আরও কিছু অংশে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হয়।

২০২২ সালের জুন মাসে বিজেপি নেত্রী নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সংঘর্ষ ছড়ায় উত্তরপ্রদেশের কানপুরে। তার রেশ ছড়িয়ে পড়ে প্রয়াগরাজে। সংঘর্ষে নাম জড়ায় আন্দোলনকারী মহম্মদ জাভেদের। অন্যান্যদের সঙ্গে জাভেদকে আটক করে পুলিশ এবং ১২ জুন বুলডোজার দিয়ে তাঁর বাড়ি গুড়িয়ে দেয় যোগী প্রশাসন। এর কয়েকদিনের মধ্যেই সংবাদ সংস্থা আইএএনএস এবং সি ভোটার বুলডোজারের ব্যবহার প্রসঙ্গে এক সমীক্ষা করে। যে সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ মানুষ উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি বলে মনে মতামত জানান। অন্যদিকে, ৪৪ শতাংশ মানুষ রাজ্যে বুলডোজার চালানোর পক্ষে মত দেন। ওই সমীক্ষায় সামগ্রিকভাবে, উত্তরপ্রদেশে বুলডোজার -রাজ বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছিলেন বিজেপি বিরোধীদের মধ্যে ৬২ শতাংশ মানুষ। আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে এনডিএ সমর্থকদের প্রায় ৪৮ শতাংশ বুলডোজার-রাজ বন্ধের পক্ষে মত দেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সিদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ‘ধ্বংস বন্ধ করুন’ দাবিকে সমর্থন করে। আর ৫৫ বছরের উপরে বয়স, এমন ৪১ শতাংশ মানুষ যোগী সরকারের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর। তিনি বলেন, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভাঙা বেআইনি। উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসন ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে না। এইভাবে একজনের বাড়ি কখনোই ভেঙে ফেলা উচিত নয়। ঘটনার পর সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করে প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনাকে চিঠি দেন শীর্ষ আদালতের প্রাক্তন তিন বিচারপতি। যে চিঠিতে স্বাক্ষর করেন দিল্লি, মাদ্রাজ এবং কর্ণাটক হাইকোর্টের ৩ বিচারপতি এবং ৬ জন প্রবীণ আইনজীবী।

চিঠিতে তাঁরা লেখেন, “বিজেপি নেতানেত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানানোর প্রতিক্রিয়ায় রাজ্যের মুসলিমদের উপর হিংসা এবং নিপীড়ন চালাচ্ছে যোগী সরকার। নাগরিকদের রক্ষা করা দেশের শীর্ষ আদালতের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। যেভাবে নাগরিক অধিকার রক্ষায় স্পাইওয়্যার বা লকডাউনের সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফিরতে গিয়ে চরম দুর্দশার মধ্যে পড়া নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে শুনানি করেছিল শীর্ষ আদালত, এ ক্ষেত্রেও তেমন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বুলডোজার দিয়ে যেভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে দমনের রাস্তায় হাঁটছে যোগী সরকার তা সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা নিয়ে উপহাস ছাড়া কিছু নয়।”

জুন মাসেই এই প্রসঙ্গিত এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি বিক্রম নাথের অবকাশকালীন বেঞ্চ জানায়, “সবকিছুই ন্যায্যভাবে করা উচিত। দেশে যে আইনের শাসন রয়েছে সে বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে একটি বোধ থাকতে হবে। সরকার কর্তৃপক্ষ সবসময় আইন মেনে কাজ করবে, এমনটাই আশা করি আমরা। প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিতে গিয়ে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না। এরপর যেন আর অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করুন।” বুলডোজার ইস্যুতে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে নোটিশ পাঠিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে, আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য এভাবে বুলডোজার দিয়ে বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এরও আগে ২০২২ সালের মে মাসে দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরিতে বুলডোজার ব্যবহারের প্রতিবাদে সিপিআই(এম) নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ হান্নান মোল্লা বলেন, “বিজেপি- আরএসএস সংখ্যালঘুদের টার্গেট করেছে। এই বুলডোজার রাজনীতি তারই জঘন্যতম অংশ।” তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীন বিজেপি’র ‘বুলডোজারের রাজনীতি’র বিপদ বোঝার সময় এসে গেছে। এটি একটি চক্রান্ত। যার মাধ্যমে কৌশলে গেরুয়া সরকার দেশের জ্বলন্ত অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে জনগণের মনোযোগ সরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডঃ অমল কুমার মুখোপাধ্যায় বিজেপি’র বুলডোজার রাজনীতিকে আগুন নিয়ে খেলার শামিল বলে উল্লেখ করে বলেছিলেন, “অতীতেও বিভিন্ন দেশে স্বৈরাচারী শাসকেরা আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত, গণআন্দোলনের কাছে তাদের নতিস্বীকার করতে হয়েছে। দিল্লিতেও এই বুলডোজার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে এবং কর্তৃপক্ষকে পিছিয়ে যেতে হয়েছে। তবে, এখন যে মনোভাব বিজেপি পরিচালিত পুরনিগম দেখিয়ে চলেছে, তার পরিণাম খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে।”

এটা ২০২৩-এর আগস্ট। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও বুলডোজার অভিযান চলছে। সাম্প্রতিক ঘটনা ঘটেছে হরিয়ানার দাঙ্গাবিধ্বস্ত নুহ শহরে। ঠিক যেভাবে চন্দ্রাভিযান-এ বিজ্ঞানের সাফল্য কখন মোদির সাফল্য হয়ে বিজেপি’র ইলেকশন প্রোপাগান্ডাতে ঢুকে যাবে বোঝা যাবে না, ঠিক তেমনই ক্রিস্টাল নাইটের নাম করে কখন গাঢ় অন্ধকার নামিয়ে আনা হবে, বুলডোজার দিয়ে অপরাধীদের বাড়ি ভাঙার নাম করে আমার আপনার বাড়ি ভেঙে দেওয়া হবে সেটাও নয়। ভোট যত এগিয়ে আসবে এসব ঘটনা তত বাড়বে। ‘বুলডোজার কেন ভালো’ তা নিয়ে নন্দী-ভৃঙ্গীদের দাপাদাপি বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। তাই এখনই বোধহয় সাবধান হওয়ার, মুখ খোলার সময় এসে গেছে...