৫৮ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা / ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ / ৯ পৌষ ১৪২৭
নয়া-কৃষি আইন বাতিল সহ অন্যান্য দাবি জানালো পলিট ব্যুরো
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো’র সভা অনলাইনে গত ১৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে প্রকাশিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পার্টির সমস্ত শাখার কাছে পলিট ব্যুরো আহ্বান জানিয়েছেঃ
‘‘কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের যে সংগ্রাম চলছে তার প্রতি সংহতিমূলক কর্মসূচি সংগঠিত করতে হবে;
বৃহদাকারে বেসরকারিকরণ, শ্রমআইন বাতিল ও জাতীয় সম্পদের লুটের বিরুদ্ধে শ্রমিকশ্রেণির যে সংগ্রাম চলছে তার সমর্থনে কর্মসূচি এবং
জনগণের চলতি সংগ্রামগুলির প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে লাগামহীন অপপ্রচার চলছে তার বিরুদ্ধে প্রচার তীব্র করতে হবে।’’
প্রেস বিবৃতিতে কৃষক আন্দোলন, অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি, উদ্বেগজনক ক্ষুধা ও বেড়ে চলা কর্মচ্যুতি, সেন্ট্রাল ভিস্তা, সংসদে শীতকালীন অধিবেশন এবং উইসট্রন কোম্পানিতে শ্রমিক বিক্ষোভ প্রসঙ্গে পলিট ব্যুরো সভায় গৃহীত মতামত বিবৃত হয়েছে। বিবৃতিতে কঠিন সময়ে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের নির্বাচনে কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টকে জয়ী করার জন্য কেরালার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।
সিপিআই(এম) পুনরায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নয়া-কৃষি আইনসমূহ বাতিলের এবং কৃষক ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য অংশের সাথে কৃষি সংস্কার নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছে। এই আলোচনার ভিত্তি হবে সংসদে নয়া আইন প্রণয়ন।
অতিমারীর আগে থেকেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। এর ফলে মানুষের উপর যে দুর্দশা চেপেছিল তা চলতিবছরে আরও খারাপ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী ও তাঁর সরকার এ ব্যাপারে একেবারেই ভাবিত নয়; এর পরিবর্তে তারা জনগণের উপর আরও বোঝা চাপাচ্ছে এবং জনগণের দুর্দশাকে অসহনীয় করে তুলছে।
উদ্বেগজনক ক্ষুধা এবং বেড়ে চলা কর্মচ্যুতি মোকাবিলায় পলিট ব্যুরো পুনরায় পার্টির সেই দাবি তুলে ধরে বলেছেঃ ‘‘অবিলম্বে আগামী ছয় মাস প্রতিমাসে আয়কর দেয় না এরকম পরিবারগুলিকে মাসিক ৭৫০০ টাকা দেওয়া এবং প্রতি ব্যক্তিকে মাসে ১০ কেজি খাদ্যদানা বিনামূল্যে দিতে হবে।’’
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) দাবি জানিয়েছেঃ ‘‘সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্প বাতিল করা হোক। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য ও নগদ দেওয়ার জন্য স্থানান্তরিত করা হোক।’’
কোভিড অতিমারীর প্রেক্ষিতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন বাতিলের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
বিবৃতিতে শ্রমিকদের উপর ব্যাপকহারে পুলিশি নিপীড়ন ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা করেছে পলিট ব্যুরো। পলিট ব্যুরো বলেছেঃ দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষিত করার অতি আগ্রহে মোদী সরকার যে শ্রমিক বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে চলছে তা অবিলম্বে গ্রহণ বন্ধ করতে হবে। পলিট ব্যুরো’র সভায় ঠিক হয়েছে পরবর্তী কেন্দ্রীয় কমিটর সভা ২০২১সালের ৩০-৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেস বিবৃতির বাকি অংশ নিচে দেওয়া হলো -
কেরালার নির্বাচনী ফল
কঠিন সময়ে কেরালায় বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টকে জয়ী করার জন্য কেরালার মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছে পার্টি। সব স্তরে ফলাফল আগের ভোটের তুলনায় ভালো হয়েছে। জেলা পরিষদ স্তরে ১৪টির মধ্যে ১১টি জয়ী বামপন্থীরা। গতবার জয়ী হয় ৭টিতে। যে ৬টি কর্পোরেশনে গতবার জয়ী হয়েছিল ৪টিতে, এবার ৫টিতে জয়ী বামপন্থীরা।
কৃষক বিক্ষোভ
পাঁচশোর বেশি কৃষক সংগঠনের ঐক্যকে অভিবাদন জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। পার্টির প্রতিটি ইউনিটকে সংহতি কর্মসূচি সংগঠিত করার ডাক দিয়ে পলিট ব্যুরো বলেছে, দৃঢ় সঙ্কল্প নিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পরিচালনা করছেন কৃষকরা। তিন কৃষি আইনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল বাতিলের দাবিতেও চলছে লড়াই। গৌরবময় এই লড়াই পরিচালিত হচ্ছে দেশের কৃষি এবং অন্নদাতাদের রক্ষার জন্য। তীব্র শীতের মধ্যেও বিক্ষোভ অবস্থানে বাড়ছে যোগদান।
অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধি
পলিট ব্যুরো বলেছে, মহামারী পরিস্থিতিতে জীবন জীবিকার সঙ্কট তীব্রতর হয়েছে অপরিকল্পিত এবং প্রস্তুতিবিহীন লকডাউনে। তার ওপর অসহনীয় হয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, জনজীবনে দুর্দশা গভীরতর হয়েছে। পেট্রোল, ডিজেলের দাম সমানে বেড়ে চলেছে, বাড়ছে পরিবহণ খরচ। ফলে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ভারতে পেট্রোপণ্যের ওপর করের হার বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। মানুষের যন্ত্রণা বাড়িয়ে কোষাগার ভরছে কেন্দ্র। এর মধ্যেই মাত্র নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরে ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম।
পলিট ব্যুরো মনে করিয়েছে যে মহামারীর আগে থেকেই খোঁড়াচ্ছিল দেশের অর্থনীতি। পলিট ব্যুরো বলেছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর সরকারকে দেখে মনে হচ্ছে এমন অবস্থায় মানুষের ওপর বাড়তি বোঝা চাপাতে কিছু আসে যায় না।
উদ্বেগজনক ক্ষুধা এবং বেড়ে চলা ছাঁটাই
সদ্য প্রকাশিত জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা রিপোর্টের উল্লেখ করেছে পলিট ব্যুরো। সমীক্ষা দেখিয়েছে অপুষ্টি, দেশের ভবিষ্যৎ শিশুদের মধ্যে বিশেষত, উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে। পলিট ব্যুরো বলেছে, ক্ষুধার মাত্রায় বৃদ্ধি থেকে স্পষ্ট মানুষের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি হয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, লাফিয়ে বাড়তে থাকা ছাঁটাই এবং ক্ষুধার পরিস্থিতিতেও বিপন্ন প্রত্যেকের কাছে নগদ সহায়তা দিতে নারাজ কেন্দ্র। অথচ এফসিআই’র গুদামে পচছে ১০ কোটি টন খাদ্যশস্য। নগদ অর্থ এবং ১০ কেজি করে চাল-গম দেওয়ার দাবিও তুলেছে এই সূত্রেই।
উইসট্রন শ্রমিক বিক্ষোভ
বেঙ্গালুরুর কাছে উইসট্রন কারখানায় আন্দোলনরত শ্রমিকদেরই গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। আইন ভেঙেও পার পেয়ে যাচ্ছে উইসট্রন কর্তৃপক্ষ। কর্ণাটকে বিজেপি সরকারের তীব্র নিন্দা করেছে পলিট বুরো। মোদী সরকারের উদ্দেশ্যে পলিট ব্যুরো বলেছে, বিদেশি বিনিয়োগ টানার জন্য শ্রমিক বিরোধী ভূমিকা নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
এই বহুজাতিক সংস্থা অপর বহুজাতিক অ্যাপলের জন্য আইফোন তৈরি করে। বেঙ্গালুরুর কারখানায় চার মাস বেতন বকেয়া রাখা হয়েছে। ওভারটাইম না দিয়ে দিনে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। মোট ১০ হাজার শ্রমিকের ৮০ শতাংশ অস্থায়ী। পরিস্থিতি জানিয়ে পলিট ব্যুরো বলেছে, এমনকি অ্যাপল সংস্থাও স্বীকার করছে সরবরাহকারী উইসট্রন নিয়ম ভেঙেছে। অথচ কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী শ্রমিকদের নিন্দা করে চলেছেন। পলিট ব্যুরো বলেছে, নতুন শ্রম বিধি কার্যকর হলে শ্রমিকের অধিকারের লঙ্ঘন আরও বেপরোয়া হবে।