৫৮ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা / ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ / ৯ পৌষ ১৪২৭
সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার দিবস পালিত
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার দিবসে রাজ্যে বিভিন্ন সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে সংখ্যালঘুদের অধিকার, জীবন ও জীবিকা, ঐক্য-সংহতি এবং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ রক্ষার শপথ ধ্বনিত হয়েছে। রাজ্যজুড়ে এদিনের কর্মসূচিতে প্রতিভাত হয়েছে, সংখ্যালঘুর অধিকার নিশ্চিত করতে ধর্মীয় মৌলবাদ, ভাষিক মৌলবাদ ও জাতিগত মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। এদিন সিপিআই(এম), বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলির উদ্যোগে কলকাতা সহ হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এবং ‘আওয়াজ’ সংগঠনের উদ্যোগেও নানা জায়গায় এই দিবসটি পালিত হয়েছে।
এদিন বামফ্রন্ট ও সহযোগী দলগুলির ডাকে এন্টালি বাজারে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সভাপতির ভাষণে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, সংখ্যালঘুর অধিকারের অর্থ শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘুর অধিকার নয়। বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার, ভাষিক সংখ্যালঘুদের অধিকার, জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ধারাবাহিক লড়াই-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছিনিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু দিবসের আহ্বান হোক - প্রতিটি সংখ্যালঘু মানুষই যাতে নিরাপদে থাকেন এবং তাঁদের অধিকার যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে।
সভায় সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের সঙ্গে সংখ্যালঘুর অধিকার জড়িত। গণতান্ত্রিক অধিকার আক্রান্ত হলে সংখ্যালঘুর অধিকারও আক্রান্ত হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার সুনিশ্চিত রয়েছে কিনা তা বোঝা যায় সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছেন কিনা তা দেখে। সংখ্যালঘুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভাষা, ঐতিহ্য, খাদ্যাভাসের অধিকার স্বীকৃত থাকলে বুঝতে হবে গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের দেশে শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছেন না, বিজেপি সরকারের জমানায় একই সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন ভাষিক সংখ্যালঘুরাও।
তিনি বলেন, সংখ্যাগুরুর মতবাদে যারা বিশ্বাস করে তারা নিজের দেশের সংখ্যালঘুর অধিকার হরণ করে আবার অন্য দেশে সংখ্যালঘুর অধিকার আক্রান্ত হলে চোখের জল ফেলে, এটাই স্বৈরাচারের চরিত্র। এখানেই প্রগতিশীলতা আর প্রতিক্রিয়াশীলতার ফারাক।
মহম্মদ সেলিম বলেন, আরএসএস-বিজেপি আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের বিকৃত ধারণা চাপানোর চেষ্টা করছে। বহুত্ববাদের ধারণা অস্বীকার করে, বিবিধের বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে আরএসএস-বিজেপি ‘এক দেশ-এক ভাষা-এক ধর্ম-এক খাদ্যাভাস’ কায়েম করতে চায়।
তিনি বলেন, সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদকে মোকাবিলা করা ছাড়া, পরাস্ত করা ছাড়া সংখ্যালঘুর অধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাই গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার সুনিশ্চিত করতে লড়াই সংগ্রাম তীব্র করাই আজ বামপন্থীদের দায়িত্ব।
এই সভায় আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, দেশে সবার অধিকার কেড়ে নিয়ে শুধু আম্বানি-আদানিদের অধিকার রক্ষার যে কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন কৃষকরা, চলছে নাছোড়বান্দা লড়াই।
সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি বলেন, বিজেপি সরকার পরিচালনা করছে আরএসএস, যাদের ঘোষিত শত্রু মুসলিম ও কমিউনিস্টরা। বিজেপি সরকারের জমানায় সংখ্যালঘুর অধিকার সব থেকে আক্রান্ত শুধু নয়, আক্রান্ত সংবিধান ও বিচারব্যবস্থা।
এছাড়াও এদিনের সভায় বক্তব্য রাখেন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা গোবিন্দ রায়, এমএফবি নেতা আশিস চক্রবর্তী, এলজেডি নেত্রী সোমা নন্দী, সিপিআই(এম এল) নেতা ইন্দ্র ঘোষ দস্তিদার, পিডিএস নেতা টিপু সুলতান। সভা পরিচালনা করেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার।
এদিন উত্তর কলকাতার জাকারিয়া স্ট্রিটের এক সভায় মূল বক্তা ছিলেন মহম্মদ সেলিম। এছাড়াও ছিলেন সিপিআই(এম) নেতা ফৈয়াজ খান, ডাঃ ফুয়াদ হালিম, কংগ্রেস দলের মহম্মদ সামসাদ। সভাপতিত্ব করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের গণেশ রায়।
এদিন হাওড়া জেলার শিবপুরের চওড়া বস্তিতে আরেকটি সভাতেও বক্তব্য রাখেন মহম্মদ সেলিম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) নেতা অরিন্দম বসু, শৈলেন্দ্র রাই। সভাপতিত্ব করেন প্রণব চ্যাটার্জি।
এছাড়াও এদিন ধূলাগড়ের জনসভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার। এছাড়াও উনসানি ও বি গার্ডেনের সভায় বক্তব্য রাখেন ফুয়াদ হালিম। এদিন জেলার বাগনান, আমতা দেওড়া, উলুবেড়িয়া, ললিতাগোড়ি, জোয়ারগড়ি পিততলা, বাউড়িয়া, বালি ভোটবাগানে সভা হয়েছে।
এই দিনটিতে হুগলি জেলার গোঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের সানবাদি গ্রামে সিপিআই(এম)’র উদ্যোগে সভা হয়েছে। সভা হয়েছে গোঘাট ২নং এরিয়ার মান্দারনের মিনি মার্কেটে, হরিপালের কলছড়া হাটতলা, গজা বকুলতলায়, খানাকুল ২নং এরিয়া এলাকার বাঁকানগর, সিঙ্গুরের জয়মোল্লা মসজিদতলা, খাঁ পুকুর, পাণ্ডুয়ার ইটাচুনা জগন্নাথপুর মোড়ে এই দিনটি পালিত হয়েছে। বামপন্থী ও সহযোগী দলের উদ্যোগে ব্যান্ডেল বাজারের নিমতলায় সভা হয়।
এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা জায়গায় আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু দিবসে সভা হয়। কেশপুরে জামসেদ আলি ভবনে এক সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। তিনি বর্ণবৈষম্য, ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্র করার আহ্বান জানান।
মেদিনীপুর শহরে সিপাইবাজার মোড়েও সভা হয়। এছাড়া খড়্গপুর শহরের ইন্দা, প্রেমবাজার, ডেবরা, ঘাটাল, গোপীগঞ্জ, জলচক, মাদপুর প্রভৃতি স্থানে সভার মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয়েছে।
‘আওয়াজ’-এর উদ্যোগ
আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু অধিকার দিবসে হাওড়ার বাঁকড়া বাজারে ‘আওয়াজ’-এর উদ্যোগে গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের জেলা কমিটির উদ্যোগে এই কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন কবি মন্দাক্রান্তা সেন, আইনজীবী রবিশঙ্কর চ্যাটার্জি, ইমতিয়াজ আহমেদ, সংগঠনের জেলা সম্পাদক আক্কেল আলি। কনভেনশন পরিচালনা করেন মৌলানা সফিক আলম। টিকিয়াপাড়া বাজারেও সভা হয়েছে।
নদীয়ার বেথুয়াডহরি বিদ্যুৎ অফিসের সামনে ‘আওয়াজ’-এর নদীয়া জেলা কমিটির উদ্যোগে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন সেলিনা খাতুন। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা সম্পাদক গোলাম বারি।
বিভিন্ন সভায় বক্তারা উল্লেখ করেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু মানুষজন আক্রান্ত হচ্ছেন। বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই আক্রমণকে মদত দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি ধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। সংখ্যালঘু মানুষের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে সংখ্যাগুরু মানুষদের এগিয়ে এসে বিজেপি-র এই অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার আবেদন জানান বক্তারা।