৫৮ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা / ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ / ৯ পৌষ ১৪২৭
কেরালার ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও পৌরসভা নির্বাচনে এলডিএফ’র বিরাট জয়
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেরালায় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির নির্বাচনে সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন এলডিএফ বিরাট জয় অর্জন করেছে। এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পৌরসভা এবং পৌরনিগম। ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৪টি জেলা পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টি, ১৫২টি ব্লক পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০৮টি এবং ৯৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫১৪টিতে এলডিএফ জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে রাজ্যের শহরাঞ্চলে ৬টি নগর পৌরনিগমের ৫টিতে এবং ৮৬টি পৌরসভার মধ্যে ৩৫টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এলডিএফ। প্রসঙ্গত, কেরালায় স্থানীয় সংস্থাসমূহের নির্বাচন হয় গত ৮, ১০ ও ১৪ ডিসেম্বর, এবং গত ১৬ ডিসেম্বর ফল প্রকাশ হয়।
কেরালার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এলডিএফ) বিরাট জয়ে রাজ্যের মানুষকে সেলাম এবং অভিনন্দন জানিয়েছে সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো। এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছেঃ ‘‘এলডিএফ সরকারের কাজকর্মের প্রতি তাঁদের অনুমোদনকেই নথিভুক্ত করেছে কেরালার জনগণ। ২০১৮ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ২০২০ সালে কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সংস্থাসমূহ যে কাজ করেছে, কেরালার জনগণ তাকে প্রশংসিত করেছে।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ এবং এক অংশের দক্ষিণপন্থী গণমাধ্যমের মদতে ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দ্বারা কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে বিজেপি এলডিএফ সরকার ও তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দেগে যে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছিল, কেরালার জনগণ তাকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’
এর আগে কেরালার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে। সেই নির্বাচনে এলডিএফ ৫৪৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৮৯টি ব্লক পঞ্চায়েত, ৭টি জেলা পঞ্চায়েত, ৪৪টি পৌরসভা এবং ৪টি নগর পৌর নিগমে জয়ী হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর ও পৌরসভা বাদ দিলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বাকি স্তরগুলি ও পৌর নিগম নির্বাচনে এলডিএফ’র ফল গত নির্বাচনের তুলনায় ভাল হয়েছে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের এই নির্বাচনী ফলের ভিত্তিতে বিধানসভাওয়াড়ি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ১৪০টি আসনের মধ্যে ১০১টিতে এগিয়ে রয়েছে এলডিএফ।
কোচি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে গত তিনটি নির্বাচনে জিতেছিল ইউডিএফ। এটি ইউডিএফ’র শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে ৭৪টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে জিতে এলডিএফ সর্ববৃহৎ জোট হিসাবে এই পৌর নিগমে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখানে ইউডিএফ পেয়েছে ৩১টি আসন। এমনকি ইউডিএফ’র মেয়র পদপ্রত্যাশী এন ভেনুগোপালও পরাজিত হয়েছেন। ৫৫ আসন বিশিষ্ট কোল্লাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে এলডিএফ’র ৩৯জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন, যেখানে ইউডিএফ এবং বিজেপি পেয়েছে যথাক্রমে ৯টি এবং ৬টি আসন। ত্রিশুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে এলডিএফ ২৪টি, ইউডিএফ ২৩টি এবং বিজেপি ৬টি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে কোজিকোডে এলডিএফ’র প্রতি বিরাট সমর্থন জানিয়েছেন মানুষ। সেখানে এলডিএফ পেয়েছে ৪৯টি আসন, যেখানে ইউডিএফ এবং এনডিএ পেয়েছে যথাক্রমে ১৪ এবং ৭টি আসন।
গতবারের নির্বাচনে তিরুবনন্তপুরম পৌর নিগমে বিজেপি ভালো ফল করেছিল। এবারে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, তারাই এই নিগমে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু জনগণ তাদের হতাশ করেছে। এই পৌর নিগমের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টি পেয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এলডিএফ ৫২টি আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে এই পৌরনিগমে।
এই বিরাট জয়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ‘জনগণের জয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে এলডিএফ আধিপত্য দেখিয়েছে। গরিবদের স্বার্থে যে পদক্ষেপসমূহ এলডিএফ সরকার গ্রহণ করেছে কেরালার জনগণ সবসময়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিরোধী দলগুলি এবং এক অংশের মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে ভেস্তে দিতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিও চেষ্টা চালিয়েছিল। মিথ্যা প্রচারে প্ররোচিত না হয়ে ভোটাররা যে সচেতনভাবে ভোট দিয়েছেন, তার জন্য বিজয়ন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। লাইফ মিশন (আবাসন), আরড্রাম (স্বাস্থ্য)’র মতো উন্নয়নমূলক উদ্যোগ, সরকারি বিদ্যালয়গুলির উন্নতিকরণ, সামাজিক সুরক্ষার সুযোগগুলিকে বৃদ্ধি করা প্রভৃতি এই বিরাট জনাদেশে অবদান রেখেছে।
কেরলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ অবশিষ্ট ভারতের কাছে একটি মডেল। আজ থেকে ২৫ বছর আগে, ১৯৯৬ সালে এলডিএফ সরকার কার্যকরভাবে স্থানীয় সংস্থাগুলিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে। তাদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রদান করতে আইন করা হয়। কেরালার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে ক্ষমতা ও দায়িত্বের পরিষ্কার বিভাজন করা হয়েছে। জেলাস্তর পর্যন্ত স্কুল ও হাসপাতাল, কৃষি, মৎস্য, ক্ষুদ্র সেচ, ক্ষুদ্র শিল্পের মতো বিষয়গুলি যেগুলি জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেগুলিকে এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আওতায় আনা হয়। এছাড়াও রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং আবাসন, শৌচাগার ও পানীয় জলের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলি পৌঁছে দেবার দায়িত্বও এই সংস্থাগুলির উপর অর্পিত হয়েছে। এই মৌলিক পরিষেবাগুলি জনগণের কাছে পৌঁছে দেবার কাজ যথেষ্ট ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে। গত সাড়ে চার বছরে এলডিএফ সরকারের নেতৃত্বে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ভয়াবহ বন্যা ও ২০২০ সালে কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায়ও নজিরবিহীনভাবে কাজ করেছে এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি। একইভাবে কোভিড নিয়ে সচেতনতা প্রচার, কোভিড আক্রান্তদের তথ্য একত্রিত করা, নিভৃতবাসের নিয়মাবলি রূপায়ণ এবং জনগণ, বিশেষকরে কোভিড আক্রান্তদের কাছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ সুনিপূণভাবে করেছে এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি। এই সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন করার পিছনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে।
এলডিএফ নির্বাচনী প্রচারে এই বিষয়গুলিকেই তুলে ধরেছিল। অন্যদিকে ইউডিএফ এবং বিজেপি তাদের মনগড়া কেলেঙ্কারি নিয়ে এলডিএফ নেতৃত্বের বিরদ্ধে বিরামহীন কুৎসা করে গেছে। একশ্রেণির গণমাধ্যমও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই কুৎসা-অপপ্রচারে ইন্ধন জুগিয়েছে। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে এলডিএফ নেতৃত্বকে যুক্ত করে অপদস্থ করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি’কে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি এই সম্পর্কিত একটি ষড়যন্ত্রও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়। ইউডিএফ এবং বিজেপি ভেবেছিল - এই নেতিবাচক প্রচার, কুৎসা-অপপ্রচার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবে, কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জবাব দিয়েছে কেরালার জনগণ। তারা ২০১৫’র থেকেও আরও বিরাটভাবে এলডিএফ প্রার্থীদের প্রতি সমর্থনজ্ঞাপন করেছেন। আসলে ইউডিএফ এবং বিজেপি’র মূল উদ্দেশ্যই ছিল এইসব নেতিবাচক প্রচার করে এলডিএফ সরকার যে উন্নয়নমূলক কাজ সমাধা করেছে, তার থেকে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে চালনা করা। কিন্তু জনগণকে তারা সে পথে চালনা করতে পারেনি।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কোট্টায়াম জেলা, কোচি শহরের মতো ইউডিএফ’র শক্ত ঘাঁটিগুলিতে তারা পরাজিত হয়েছে। বিজেপি তিরুবনন্তপুরম পৌর নিগমকে পাখির চোখ করেছিল, কিন্তু সেখানে তারা গতবারের চেয়েও কম আসন পেয়েছে। এলডিএফ’র এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কেরালার সামগ্রিক উন্নয়নে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অবশ্যই এলডিএফ’র জয় সেই উন্নয়ন-অধ্যায়ে বাড়তি উৎসাহ-প্রেরণা সঞ্চার করবে। এবং একইভাবে এই জয় ২০২১ সালের এপ্রিম-মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে এলডিএফ’র নৈতিক অবস্থান ও আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করবে।কেরালায় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির নির্বাচনে সিপিআই (এম) নেতৃত্বাধীন এলডিএফ বিরাট জয় অর্জন করেছে। এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত, পৌরসভা এবং পৌরনিগম। ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে ১৪টি জেলা পঞ্চায়েতের মধ্যে ১১টি, ১৫২টি ব্লক পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০৮টি এবং ৯৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫১৪টিতে এলডিএফ জয়লাভ করেছে। অন্যদিকে রাজ্যের শহরাঞ্চলে ৬টি নগর পৌরনিগমের ৫টিতে এবং ৮৬টি পৌরসভার মধ্যে ৩৫টিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে এলডিএফ। প্রসঙ্গত, কেরালায় স্থানীয় সংস্থাসমূহের নির্বাচন হয় গত ৮, ১০ ও ১৪ ডিসেম্বর, এবং গত ১৬ ডিসেম্বর ফল প্রকাশ হয়।
কেরালার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের নির্বাচনে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এলডিএফ) বিরাট জয়ে রাজ্যের মানুষকে সেলাম এবং অভিনন্দন জানিয়েছে সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো। এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছেঃ ‘‘এলডিএফ সরকারের কাজকর্মের প্রতি তাঁদের অনুমোদনকেই নথিভুক্ত করেছে কেরালার জনগণ। ২০১৮ সালের ভয়াবহ বন্যা এবং ২০২০ সালে কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ও স্থানীয় সংস্থাসমূহ যে কাজ করেছে, কেরালার জনগণ তাকে প্রশংসিত করেছে।
কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ এবং এক অংশের দক্ষিণপন্থী গণমাধ্যমের মদতে ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দ্বারা কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে বিজেপি এলডিএফ সরকার ও তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ দেগে যে নেতিবাচক প্রচার চালিয়েছিল, কেরালার জনগণ তাকে দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’
এর আগে কেরালার স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে। সেই নির্বাচনে এলডিএফ ৫৪৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ৮৯টি ব্লক পঞ্চায়েত, ৭টি জেলা পঞ্চায়েত, ৪৪টি পৌরসভা এবং ৪টি নগর পৌর নিগমে জয়ী হয়েছিল। এবারের নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর ও পৌরসভা বাদ দিলে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বাকি স্তরগুলি ও পৌর নিগম নির্বাচনে এলডিএফ’র ফল গত নির্বাচনের তুলনায় ভাল হয়েছে। স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের এই নির্বাচনী ফলের ভিত্তিতে বিধানসভাওয়াড়ি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যের ১৪০টি আসনের মধ্যে ১০১টিতে এগিয়ে রয়েছে এলডিএফ।
কোচি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে গত তিনটি নির্বাচনে জিতেছিল ইউডিএফ। এটি ইউডিএফ’র শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে ৭৪টি আসনের মধ্যে ৩৪টি আসনে জিতে এলডিএফ সর্ববৃহৎ জোট হিসাবে এই পৌর নিগমে আত্মপ্রকাশ করেছে। এখানে ইউডিএফ পেয়েছে ৩১টি আসন। এমনকি ইউডিএফ’র মেয়র পদপ্রত্যাশী এন ভেনুগোপালও পরাজিত হয়েছেন। ৫৫ আসন বিশিষ্ট কোল্লাম মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে এলডিএফ’র ৩৯জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন, যেখানে ইউডিএফ এবং বিজেপি পেয়েছে যথাক্রমে ৯টি এবং ৬টি আসন। ত্রিশুর মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে এলডিএফ ২৪টি, ইউডিএফ ২৩টি এবং বিজেপি ৬টি আসন পেয়েছে। অন্যদিকে কোজিকোডে এলডিএফ’র প্রতি বিরাট সমর্থন জানিয়েছেন মানুষ। সেখানে এলডিএফ পেয়েছে ৪৯টি আসন, যেখানে ইউডিএফ এবং এনডিএ পেয়েছে যথাক্রমে ১৪ এবং ৭টি আসন।
গতবারের নির্বাচনে তিরুবনন্তপুরম পৌর নিগমে বিজেপি ভালো ফল করেছিল। এবারে বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছিলেন, তারাই এই নিগমে ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু জনগণ তাদের হতাশ করেছে। এই পৌর নিগমের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টি পেয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এলডিএফ ৫২টি আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে এই পৌরনিগমে।
এই বিরাট জয়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ‘জনগণের জয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ রাজ্যের প্রতিটি অঞ্চলে এলডিএফ আধিপত্য দেখিয়েছে। গরিবদের স্বার্থে যে পদক্ষেপসমূহ এলডিএফ সরকার গ্রহণ করেছে কেরালার জনগণ সবসময়ে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিরোধী দলগুলি এবং এক অংশের মিডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছিল। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে ভেস্তে দিতে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিও চেষ্টা চালিয়েছিল। মিথ্যা প্রচারে প্ররোচিত না হয়ে ভোটাররা যে সচেতনভাবে ভোট দিয়েছেন, তার জন্য বিজয়ন তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। লাইফ মিশন (আবাসন), আরড্রাম (স্বাস্থ্য)’র মতো উন্নয়নমূলক উদ্যোগ, সরকারি বিদ্যালয়গুলির উন্নতিকরণ, সামাজিক সুরক্ষার সুযোগগুলিকে বৃদ্ধি করা প্রভৃতি এই বিরাট জনাদেশে অবদান রেখেছে।
কেরলে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহ অবশিষ্ট ভারতের কাছে একটি মডেল। আজ থেকে ২৫ বছর আগে, ১৯৯৬ সালে এলডিএফ সরকার কার্যকরভাবে স্থানীয় সংস্থাগুলিতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে। তাদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রদান করতে আইন করা হয়। কেরালার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির মধ্যে ক্ষমতা ও দায়িত্বের পরিষ্কার বিভাজন করা হয়েছে। জেলাস্তর পর্যন্ত স্কুল ও হাসপাতাল, কৃষি, মৎস্য, ক্ষুদ্র সেচ, ক্ষুদ্র শিল্পের মতো বিষয়গুলি যেগুলি জনগণের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, সেগুলিকে এই ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের আওতায় আনা হয়। এছাড়াও রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ এবং আবাসন, শৌচাগার ও পানীয় জলের মতো মৌলিক পরিষেবাগুলি পৌঁছে দেবার দায়িত্বও এই সংস্থাগুলির উপর অর্পিত হয়েছে। এই মৌলিক পরিষেবাগুলি জনগণের কাছে পৌঁছে দেবার কাজ যথেষ্ট ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে। গত সাড়ে চার বছরে এলডিএফ সরকারের নেতৃত্বে ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ভয়াবহ বন্যা ও ২০২০ সালে কোভিড অতিমারীর মোকাবিলায়ও নজিরবিহীনভাবে কাজ করেছে এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি। একইভাবে কোভিড নিয়ে সচেতনতা প্রচার, কোভিড আক্রান্তদের তথ্য একত্রিত করা, নিভৃতবাসের নিয়মাবলি রূপায়ণ এবং জনগণ, বিশেষকরে কোভিড আক্রান্তদের কাছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ সুনিপূণভাবে করেছে এই স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি। এই সবকিছু সফলভাবে সম্পন্ন করার পিছনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে।
এলডিএফ নির্বাচনী প্রচারে এই বিষয়গুলিকেই তুলে ধরেছিল। অন্যদিকে ইউডিএফ এবং বিজেপি তাদের মনগড়া কেলেঙ্কারি নিয়ে এলডিএফ নেতৃত্বের বিরদ্ধে বিরামহীন কুৎসা করে গেছে। একশ্রেণির গণমাধ্যমও মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই কুৎসা-অপপ্রচারে ইন্ধন জুগিয়েছে। সোনা চোরাচালানের সঙ্গে এলডিএফ নেতৃত্বকে যুক্ত করে অপদস্থ করতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি’কে ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি এই সম্পর্কিত একটি ষড়যন্ত্রও স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়। ইউডিএফ এবং বিজেপি ভেবেছিল - এই নেতিবাচক প্রচার, কুৎসা-অপপ্রচার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে যাবে, কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জবাব দিয়েছে কেরালার জনগণ। তারা ২০১৫’র থেকেও আরও বিরাটভাবে এলডিএফ প্রার্থীদের প্রতি সমর্থনজ্ঞাপন করেছেন। আসলে ইউডিএফ এবং বিজেপি’র মূল উদ্দেশ্যই ছিল এইসব নেতিবাচক প্রচার করে এলডিএফ সরকার যে উন্নয়নমূলক কাজ সমাধা করেছে, তার থেকে জনগণের দৃষ্টিকে অন্যদিকে চালনা করা। কিন্তু জনগণকে তারা সে পথে চালনা করতে পারেনি।
নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কোট্টায়াম জেলা, কোচি শহরের মতো ইউডিএফ’র শক্ত ঘাঁটিগুলিতে তারা পরাজিত হয়েছে। বিজেপি তিরুবনন্তপুরম পৌর নিগমকে পাখির চোখ করেছিল, কিন্তু সেখানে তারা গতবারের চেয়েও কম আসন পেয়েছে। এলডিএফ’র এই জয় প্রত্যাশিতই ছিল। কেরালার সামগ্রিক উন্নয়নে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। অবশ্যই এলডিএফ’র জয় সেই উন্নয়ন-অধ্যায়ে বাড়তি উৎসাহ-প্রেরণা সঞ্চার করবে। এবং একইভাবে এই জয় ২০২১ সালের এপ্রিম-মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে এলডিএফ’র নৈতিক অবস্থান ও আত্মবিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করবে।