E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ / ১২ ফাল্গুন, ১৪২৮

মতাদর্শগত চেতনায় উন্নত গণলাইনসম্পন্ন বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার প্রত্যয়

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ২৪তম সম্মেলনে

শংকর মুখার্জি


ওল্ড দিঘা থেকে সুবিশাল বর্ণাঢ্য মিছিল নিউ দিঘায় সম্মেলনস্থল পর্যন্ত যায়।

শাসকশ্রেণিগুলির সমস্ত ষড়যন্ত্র আক্রমণকে প্রতিরোধে সক্ষম মতাদর্শগত চেতনায় উন্নত গণলাইন সম্পন্ন বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার প্রত্যয় ধ্বনিত হলো পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ২৪তম সম্মেলনে। গত ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি নিউ দিঘায় এই সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলন উপলক্ষে নিউ দিঘার নামকরণ করা হয়েছিল কমরেড নির্মল জানা নগর। প্রতিনিধি অধিবেশন হয় স্থানীয় বন্ধন ইন লজে সনাতন বানুয়া-গুণধর সামন্ত-অপূর্ব জানা-বিশ্বজিৎ সাহু মঞ্চে।

পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সম্মেলন উদ্বোধন করেন। পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু রক্তপতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের সূচনা করেন। ওল্ড দিঘায় রক্তপতাকা উত্তোলন এবং শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর সুবিশাল বর্ণাঢ্য মিছিল নিউ দিঘায় সম্মেলন স্থল পর্যন্ত যায়। বিমান বসু, সূর্য মিশ্র, রবীন দেব, শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, অতনু সাহা সহ জেলা নেতৃত্ব, প্রতিনিধিরা এবং কয়েক হাজার পার্টি কর্মী ও সাধারণ মানুষ এই মিছিলে হাঁটেন। অন্যদিকে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে পার্টি পতাকা, পেস্টুন, ব্যানার, তোরণে লালের হিল্লোল লেগেছিল সৈকত নগরীতে। সম্মেলনে প্রতিনিধি, দর্শক এবং সম্মানীয় প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট ৪১৩ জন উপস্থিত ছিলেন।

জেলায় পার্টির রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রভাব বৃদ্ধির লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২১ দফা আগামী কাজ চিহ্নিত হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ দফা কাজে জেলার সকল পার্টি সদস্যকে উপযুক্ত করে তোলার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আগামী কাজে। বলা হয়েছে, এই ন্যূনতম কাজ না করলে কারুরই পার্টিতে থাকা যাবে না।

রাজ্যে পার্টির বিরুদ্ধে তৃণমূল সহ প্রতিক্রিয়াশীলদের হিংসাত্মক আক্রমণের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। পার্টি নেতা-কর্মীদের শেষ করে দেবার লক্ষ্যে হিংস্রাত্মক আক্রমণের সাথেই সমানতালেই চলেছে সজানো মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানোর চেষ্টা। সম্মেলনে গৃহীত এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবে বলা হয়েছেঃ ২০১৮ সাল পর্যন্ত জেলায় পার্টি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে রুজু মিথ্যা মামলার সংখ্যা ১৯১২টি। এই মামলাগুলি রয়েছে ১৩ হাজার ২০১ জনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে শুধু নন্দীগ্রাম এবং খেজুরির মামলার সংখ্যা ৫১৫। অভিযুক্ত ৬,৩৫৬ জন। এই সব মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। জেলা পার্টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রতি পার্টি সদস্য ও সহায়ক গ্রুপের সদস্যদের কাছ থেকে বছরে ১০ টাকা করে নেওয়া হবে। তাতেও অর্থের সংকুলান সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাই ওই পরিমাণ বাড়িয়ে বছরে ২৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত সম্মেলনে সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়েছে। সম্মেলনে জানানো হয়েছেঃ শুধু নন্দীগ্রাম ও খেজুরি এলাকার ৫৬টি মামলা সরকার ও শাসকদলের সমস্ত অপচেষ্টা সত্ত্বেও উচ্চ আদালত সাক্ষ্য প্রমাণাদির অভাবে খারিজ করে দিয়েছে। অন্যদিকে, ঝড়, বন্যা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে এবং দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত পার্টিকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে জেলা ত্রাণ তহবিলকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্তও সম্মেলনে গৃহীত হয়েছে। এক্ষেত্রেও প্রতি পার্টিসদস্য ও সহায়ক গ্রুপের সদস্যরা বছরে ২৫ টাকা করে দেবে।

সম্মেলনে শহিদ স্মরণে ও শোকপ্রস্তাব পেশ করেন হিমাংশু দাস। মোট ২৭টি প্রস্তাব সম্মেলনে সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়। হিমাংশু দাস, কাঞ্চন মুখার্জি, রীতা দত্ত এবং ইব্রাহিম আলিকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী সম্মেলন পরিচালনা করে।

শাখাই পার্টির বিপ্লবী ভিত

শাখাই পার্টির বিপ্লবী ভিত। জনগণের সঙ্গে পার্টির যোগাযোগের সেতু। বুথ কমিটি, বুথ সংগ্রাম কমিটি, গণসংগঠন গড়ে তোলাই হলো শাখার অন্যতম প্রধান কাজ। সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে একথা বলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। তিনি বলেনঃ গ্রামে কৃষক, খেতমজুর, অকৃষি শ্রমিকদের সংগঠন গড়তে হবে; ঐক্যবদ্ধ করতে হবে তাঁদের। আর শহরে সাংগঠনিক কাজের অন্যতম প্রধান অভিমুখ হবে শ্রমিক, বস্তিবাসী ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে সংগঠন গড়ে তোলায়। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে স্থানীয় আদায়যোগ্য দাবিতে সফল আন্দোলন পরিচালনা করতে পারলে আন্দোলনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। আন্দোলনের পরিধির মধ্যে আরও অনেক বেশি মানুষকে টেনে আনা সম্ভব হবে। দুর্বার আন্দোলনই পারবে মানুষকে সব বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করতে। শ্রীদীপ ভট্টাচার্য মনে করিয়ে দেন, কমিউনিস্ট পার্টি বিপ্লবীদের পার্টি। ন্যূনতম বিপ্লবী চেতনাসম্পন্ন পার্টিকর্মীতে পরিণত হতে হলে প্রতি পার্টি সদস্যকে প্লেনাম নির্দেশিত ন্যূনতম পাঁচটি কাজ করতেই হবে।

বর্তমান বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, উত্তর আধুনিকতার তত্ত্ব শ্রেণিতত্ত্বকে খারিজ করে। এই তত্ত্ব ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করার কথা বলে। এই বিভেদকামী মতাদর্শই সারাবিশ্বে কর্তৃত্ব করতে চাইছে। আমাদের দেশে চলছে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে মানুষকে বিভক্ত করার প্রয়াস। আরএসএস জানে তাদের নীতিতে মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই তারা বিভাজনের রাজনীতিকেই তীব্র করছে। কেন্দ্রের সরকারের উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতি পুষ্ট করছে করপোরেটতন্ত্রকে। এবছরের বাজেট তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। এসবের বিরুদ্ধেই কমিউনিস্ট পার্টির লড়াই। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা, সংবিধান রক্ষার লড়াই না লড়ে কমিউনিস্ট পার্টি তার বিপ্লবী ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।

রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন

২০১৮ সালের ২০-২২ ফেব্রুয়ারি এগরায় জেলা ২৩তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ঠিক চার বছর পর আবার সম্মেলন। এই দীর্ঘ সময়ের জেলা পার্টির রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজকর্মের খসড়া প্রতিবেদন সম্মেলনে পেশ করেন বিদায়ী জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি। বর্তমানে জেলায় ৭০৬টি শাখা আছে। পার্টিসদস্যের সংখ্যা ৮,০৬৭। প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ নিষ্ক্রিয়তামুক্ত পার্টি গড়ে তুলতে ক্রমান্বয়ে পার্টি সদস্য হ্রাস পেলেও এখনও সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয়তামুক্ত পার্টি গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে জেলায় পার্টিসদস্যের মধ্যে শ্রেণিবিন্যাসে শ্রমিক-খেতমজুর-গরিব কৃষকের অংশ বিগত সময়কালে সামান্য হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী এই অংশ ৮৫.৮৭ শতাংশ। এখন জেলায় ৫০৪টি শাখায় সহায়ক গ্রুপ আছে, গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ১৫৩৮।

জেলার বেশকিছু শাখা সম্মেলন উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সংগঠিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সব শাখা সম্মেলনে দীর্ঘ মিছিল হয়েছে। সংবর্ধনা জানানো হয়েছে প্রবীণ পার্টি সদস্য ও গুণীজনদের। পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। আবার কোথাও হয়েছে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান। বুথ টিম, বুথ সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার বিষয়টি বেশিরভাগ শাখা সম্মেলনেই গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে।

আত্মসমালোচনার সুরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছেঃ শহরের বস্তিবাসী এবং গ্রামে কৃষক, খেতমজুর ও অকৃষি শ্রমিকদের নিয়ে গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের ফেডারেশন গড়ার প্রশ্নটি এখনও জেলাস্তরেই চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। এব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি পার্টির প্রত্যেক স্তরেই উপলব্ধির মধ্যে আনতে হবে, দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শ্রেণি আন্দোলন বিকাশের ক্ষেত্রে এটা একান্ত জরুরি। প্রতিবেদনে ছাত্র ও তরুণদের মধ্য থেকে সর্বক্ষণের কর্মী তৈরির ব্যাপারে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।

এই সময়কালে বিভিন্ন নির্বাচনে আশানুরূপ ফল না হলেও কলকাতায় ব্রিগেড সমাবেশ, জেলায় কেন্দ্রীয় সমাবেশ এবং ধর্মঘট সহ অন্যান্য কর্মসূচিতে জমায়েতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে। এপ্রসঙ্গে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর চণ্ডীপুরের সমাবেশ বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এই সমাবেশে ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ এসেছিলেন। সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক প্রচার সংগঠিত হয়। সারা জেলায় ২৫৭টি পথসভা, ১৩১টি ছোটোবড়ো মিছিল সংগঠিত হয়েছিল। এবং ১ লক্ষ ৬৭ হাজার পরিবারের কাছে পৌঁছনো গিয়েছিল। গণ অর্থসংগ্রহ হয়েছিল ৪২ লক্ষ টাকার মতো।

হিংসা সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই চলছে পার্টিকে প্রতিষ্ঠা করার লড়াই

রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনের ওপর আলোচনায় ৫০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। তৃণমূলের হিংসা-সন্ত্রাস এবং এক অকল্পনীয় প্রতিকূলতার মধ্যেও কীভাবে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা হচ্ছে সেই অভিজ্ঞতার কথা শোনা গেছে প্রতিনিধিদের আলোচনায়। নন্দীগ্রাম, খেজুরির মতোই জেলার শিল্পাঞ্চল হলদিয়াতেও তৃণমূলের সন্ত্রাসের কথা বলেছেন সেখানকার প্রতিনিধি। এখানে ৪৬ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ৩২টি মিথ্যা মামলা করেছে শাসকদল। ১৩ জনের ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। পার্টি দপ্তরে তিন বার আক্রমণ করে বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পার্টিকর্মীদের প্রতিরোধে তা তারা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়াও খেজুরি, নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া বাজার প্রভৃতি স্থানে তৃণমূলীরা যে পার্টি অফিস দখল করেছিল তা পুনরুদ্ধার করেছেন পার্টিকর্মীরা। তবে এখনো দেশপ্রাণ প্রভৃতি স্থানে তৃণমূলের সন্ত্রাসে বর্গাচাষি, ভাগচাষিরা চাষ করতে পারেন না। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা যে পুকুর চুরি চালাচ্ছে তার বর্ণনা শোনা গেছে প্রতিনিধিদের বক্তব্যে। তবে এর বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধও হচ্ছে। প্রতিনিধিদের বক্তব্যে জানা গেছে - লাউদা, কানাইদিঘি প্রভৃতি স্থানে রাস্তা তৈরি, ত্রাণের আত্মসাৎ করা টাকা পার্টির নেতৃত্বে জনগণের আন্দোলনে তৃণমূলের নেতারা ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।

কোভিড মহামারীতে রেড ভলান্টিয়ারদের কাজের প্রসঙ্গ প্রায় প্রতিটি প্রতিনিধির বক্তব্যে এসেছে। প্রতিবেদনেও এসম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সারা জেলায় ৩২টি মূল টিম সহ আরও কয়েকটি ছোটো টিমে মোট ৮৭০ জনের মতো রেড ভলান্টিয়ার কোভিড সংক্রমিত মানুষের সেবায় কাজ করেছেন। প্রতিনিধিদের আলোচনার ওপর জবাবি ভাষণ দেন নিরঞ্জন সিহি। প্রতিবেদনটি সম্মেলনে সর্বসম্মতিতে গৃহীত হয়।

অভিনন্দনসূচক বক্তব্য

দ্বিতীয় দিন, ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষে সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব। তিনি বলেন, সংগঠন রাজনীতির ত্রুটি দুর্বলতাগুলিকে চিহ্নিত করার জায়গা হলো সম্মেলন। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি। এই প্রক্রিয়া ধারাবাহিক। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ত থেকেই পরিস্থিতির ইতিবাচক উপাদানগুলিকে ব্যবহার করাই কমিউনিস্টদের প্রধান কাজ। রাজ্যের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রবীন দেব বলেন, এরাজ্যে বিজেপি-কে জায়গা করে দিয়েছে তৃণমূল। মূল লক্ষ্যে অবিচল থেকে শত্রুকে পরাস্ত করতে শাসকশ্রেণির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে তাকে ব্যবহার করে কমিউনিস্টরা। নেয় যুক্তফ্রন্টের রণকৌশল। তবে সিপিআই(এম)’র শক্তি বৃদ্ধি না পেলে শত্রুর বিরুদ্ধে কোনোভাবেই বিভিন্ন শক্তিকে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা যাবে না।

সম্মেলনের একেবারে শেষ পর্বে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, পার্টি নির্বাচনী লড়াইয়ে সাফল্য পাবে কী পাবে না তা নির্ভর করবে বাইরের লড়াইয়ের ওপর। আবার ব্যাপক মানুষের কাছে পৌঁছতে হলে দরকার যুক্ত সংগ্রাম। সাম্প্রতিক কৃষকদের লড়াই ওইরকম এক যুক্ত সংগ্রাম। এই প্রসঙ্গেই সূর্য মিশ্র বলেন, সমস্ত গণসংগঠনের প্রাথমিক কমিটিগুলির সম্মেলন করতে হবে। স্থানীয়স্তরে গণসংগঠনগুলির এই সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তিতেই গড়ে তুলতে হবে বুথ সংগ্রাম কমিটি। স্থানীয় আদায়যোগ্য দাবি চিহ্নিত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক দপ্তরগুলিতে বসে থাকার শক্তি অর্জন করতে হবে। এরসাথেই আরও বৃহৎ পরিসরে পরিকল্পনা করতে হবে শ্রেণি ও সামাজিক ইস্যুগুলিকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার।

পার্টি সংগঠন প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে লড়াই করার উপযুক্ত পার্টি গড়ে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে, যুক্ত সংগ্রামে কোনো শক্তিই আসবে না যদি না পার্টির স্বাধীন শক্তির বিকাশ ঘটে। সালকিয়া প্লেনামে ঠিক হয়েছিল গণ-বিপ্লবী পার্টি গড়ে তুলতে হবে। সেই কাজ আমরা করে উঠতে পারি নি বলেই কলকাতা প্লেনাম গণলাইন সম্পন্ন বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছে। পরিশেষে তিনি ফের স্মরণ করিয়ে দেন, মতাদর্শই রাজনীতি নির্ধারণ করে। সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলন-সংগ্রাম, দৈনন্দিন কর্মসূচিতে তা প্রয়োগ হয়। তাই মতাদর্শ, রাজনীতি, সংগঠন এবং আন্দোলন-সংগ্রামকে আলাদা করে দেখলে চলবে না।

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনঃ নতুন কমিটি

জেলা সম্মেলন থেকে ৫৫ জনের জেলা কমিটি সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত হয়েছে। এই জেলা কমিটিতে ৩ জন বিশেষ আমন্ত্রিত রয়েছেন। এঁরা হলেনঃ কাঞ্চন মুখার্জি, কালিপদ শীট এবং নান্টু মাজী। সম্মেলন মঞ্চে অনুষ্ঠিত জেলা কমিটির প্রথম বৈঠকে নিরঞ্জন সিহি জেলা সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। রাজ্য ২৬তম সম্মেলনের জন্য ১৪ প্রতিনিধি এবং ৫ বিকল্প প্রতিনিধি সম্মেলনে সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত হয়েছেন।

সম্মেলনে উপস্থিত ৪১৩ জন প্রতিনিধি ও দর্শক

পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে ৩৭২ জন প্রতিনিধি, ৬ জন সম্মানীয় প্রতিনিধি এবং ৩৫ জন দর্শক অর্থাৎ মোট ৪১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। অনুপস্থিত ছিলেন ২ জন। এঁদের মধ্যে ৩৫৮ জন পুরুষ, ৫৫ জন মহিলা এবং ৪৯ জন সর্বক্ষণের কর্মী। শ্রেণি উৎসের বিচারে ৫৯ জন শ্রমিক, খেতমজুর ৭৪ জন এবং ১৬৮ জন গরিব কৃষক। সম্মেলনে সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন সম্মানীয় প্রতিনিধি ৮৩ বছরের প্রশান্ত প্রধান। সর্বকনিষ্ঠ ২৬ বছরের জাকির হোসেন মল্লিক। সম্মেলনে উপস্থিত ৪৭ জন রাজনৈতিক কারণে জেলে গেছেন এবং আত্মগোপনের অভিজ্ঞতা রয়েছে ৩৬ জনের। সবচেয়ে বেশিদিন কারাবাসে ছিলেন আশিস গিরি, ১৫৪ দিন। রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন এমন ১১১ জন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। আর গত চার বছরে রাজনৈতিক কারণে শ্রেণিশত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন ৮০ জন।