E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৫ জুন, ২০২১ / ১০ আষাঢ়, ১৪২৮

পুঁজিপতিদের ঋণ মকুবে ব্যস্ত কেন্দ্রীয় সরকার

কোভিডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি সিপিআই(এম)’র


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা মহামারীর গ্রাসে ভারত। দেশজুড়ে মারাত্মক সংক্রমণে শোচনীয় অবস্থা। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করা থেকে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো - কোনও ক্ষেত্রেই মোদী সরকারের কার্যকর তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না এখনও। বেড়েই চলেছে মৃতের সংখ্যা। অসহায় দেশবাসী আতঙ্কিত। কিন্তু মহামারীতে মৃতদের পরিবারকে এই সরকার ক্ষতিপুরণ দিতে চাইছে না। তাঁদের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন মোদী-অমিত শাহরা বৃহৎ পুঁজিপতিদের ভরতুকি দিতেই মত্ত। কেন্দ্রের এই মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। ২৪ জুন আদালত এককালীন ক্ষতিপূরণের বিষয়ে হলফনামা দাখিল করতে বলেছে কেন্দ্রকে। চেয়ে পাঠানো হয়েছে কোভিডে মৃত্যু চিহ্নিতকরণে শীর্ষ চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর’র নির্দেশিকাও।

এই পরিস্থিতিতে কোভিডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)। এপ্রসঙ্গে এক টুইট বার্তায় সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মোদী সরকারের দান খয়রাতিকে কটাক্ষ করে বলেছেন, এঁদের জন্য ১১.৫ লক্ষ কোটি ঋণ মকুব করে দেয় সরকার। সেন্ট্রাল ভিস্তা, জনসংযোগের বিজ্ঞাপন, মূর্তি নির্মাণ, বিলাসবহুল বিমানে প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণ বা রাষ্ট্রের খরচে নির্বাচনী প্রচারের মতো অপ্রয়োজনীয়, বাজে খরচের জন্য টাকা আছে সরকারের। অথচ কোভিডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার টাকা নেই!

সরকারের বক্তব্য, ‘‘কোভিড মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, টিকাকরণের মতো কাজে খরচ হচ্ছে। এই খরচ বাড়তে থাকবে। মৃতের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৮৫ হাজার ছাড়িয়ে বাড়ছে। অন্যদিকে করবাবদ আয়ের করুণ দশা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির। এই অবস্থায় মৃতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ করে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।’’ যদিও ১১ জুন শুনানিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলে যে ক্ষতিপূরণের দাবি ন্যায্য। তা বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু হলফনামায় বক্তব্য বদলে নেয় মন্ত্রক।

কেন্দ্রীয় সরকার এড়িয়ে গেলেও কোভিডে মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানালো সিপিআই(এম)। ২১ জুন এক বিবৃতিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো স্পষ্টই বলেছে, বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুসারেই এককালীন এই আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। করোনায় মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিতে অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। অথচ করোনা অতিমারী মোকাবিলায় এই আইন বলবৎ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারই। এই আইন অনুসারে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তা দিতে বাধ্য সরকার। পলিট ব্যুরো একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছে, সরকার যুক্তি দিচ্ছে যে এই ধরনের এককালীন ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে আর্থিক বোঝা বেড়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করতে পারত ভালোভাবেই যদি পূর্ব নির্ধারিত বহু খরচ বর্জন করে আর্থিক ঘাটতি বেঁধে রাখত এই মাত্রার সঙ্কট মোকাবিলায়। ফলে এমন বিপর্যয়ের সময় আর্থিক ঘাটতির গল্প শোনানোর কোনও যুক্তিই নেই।

পলিট ব্যুরো বলেছে, এই এক বছরে কোটি কোটি মানুষ জীবিকা হারিয়েছেন। তাঁদের বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে। অনুপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, জীবনদায়ী ওষুধের অভাব সত্ত্বেও তাঁরা অতিমারীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ সরকারের কাছে সাহায্য পেয়েছে সামান্যই। অসংঠিত ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত কোটি কোটি দিনমজুর আজ কার্যত ধ্বংসের মুখে। এই অধঃপতনের শুরু জিএসটি, নোটবন্দি দিয়ে, আর তার চূড়ান্ত পরিণতি লক্ষ্য করা গেল কোভিড অতিমারীতে। পলিট ব্যুরো মনে করে, মানবিক কারণেই এই পরিস্থিতিতে কোভিডে স্বজন হারানো পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রয়োজন।

মহামারীর ১৮ মাসে ১৩৫ কোটির এই দেশে ৪০ কোটির নমুনা পরীক্ষাও করে উঠতে পারেনি সরকার। বিগত পাঁচ মাসে মাত্র পাঁচ শতাংশের সম্পূর্ণ টিকাকরণ করে উঠতে পেরেছে তারা। আবার কেন্দ্রের নানা পরিসংখ্যানগুলির সত্যতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। দেশজুড়ে যতজন মারা গিয়েছেন, তার ১০ শতাংশও সরকারি পরিসংখ্যানে তোলা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে বহুবার। কেন্দ্রীয়ভাবে মহামারী সংক্রান্ত কোনও সমীক্ষা বা গবেষণা রিপোর্ট তৈরি হয়নি এখনও। যদিও বেসরকারিভাবে একাধিক সমীক্ষা হয়েছে। মিলেছে তার রিপোর্টও। একাধিক সংবাদ রিপোর্টে গ্রাম ভারতে হুহু করে ছড়িয়ে পড়া সংক্রমণ, প্রচুর মৃত্যু, হাতে গোনা নমুনা পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বেহাল দশার চিত্র ফুটে উঠেছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এতটাই ধুঁকছে যে গ্রামে-গঞ্জে কোনোভাবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। ওই সংবাদমাধ্যম ৬১টি গবেষণা রিপোর্ট খতিয়ে দেখেছে। মূলত হিন্দিভাষি রাজ্য — উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থানের পরিস্থিতি পর্যালোচনা হয়েছে। প্রতিটি রিপোর্টেই উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যগুলির এক বা একাধিক গ্রামে মে মাসের প্রথম তিন সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৫ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে। নমুনা পরীক্ষা প্রসঙ্গে রিপোর্টে বলা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তার কোনও ব্যবস্থাই নেই। আবার গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীরা যে ন্যূনতম সচেতনতাও গড়ে তুলতে পারেননি, তার প্রমাণও মিলেছে। গ্রামভারতে এই পুরো প্রক্রিয়াটিতেই গাফিলতি স্পষ্ট। তাই মৃত্যু হারও সঠিক নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

২৪ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ৩.০১ কোটি মানুষ করোনায় আক্রান্ত, যার মধ্যে বিগত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫৪ হাজার ৬৯ জন। সেরে উঠেছেন ২.৯১ কোটি। মোট মৃতের সংখ্যা ৩.৯২ লক্ষ। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ১ হাজার ৩২১ জন।