E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৫ জুন, ২০২১ / ১০ আষাঢ়, ১৪২৮

অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশে কোভিড সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই কেন্দ্রের মোদী সরকার একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়ে চলেছে। সেইল, অ্যান্ড্রু ইয়ুলের পর দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ও এফ বি) বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন প্রতিরক্ষাকর্মীরা। ১৯ জুন দেশের ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এদিন অল ইন্ডিয়া ডিফেন্স এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (এআইডিইএফ) সহ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডিফেন্স ওয়ার্কার্স ফেডারেশন (আইএনডিডব্লিউএফ) এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা মজদুর সংঘ (বিপিএমএস) - প্রতিরক্ষাকর্মীদের এই তিনটি সর্বভারতীয় ফেডারেশনের ডাকে দেশব্যাপী প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে এদিন ইছাপুর প্রতিরক্ষা শিল্প বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি ও মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরির গেটের সামনে শ্রমিক-কর্মচারীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভে শামিল হন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা পোড়ান।

দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে ধ্বংস করে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বেসরকারিকরণে মোদী সরকারের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা শিল্পের শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভে এদিন উত্তাল হয়ে ওঠে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি ও মেটাল অ্যান্ড স্টিল ফ্যাক্টরির গেট। প্রতিরক্ষা শিল্পকে বেসরকারি হাতে তুলে দেবার লক্ষ্যে মোদী সরকারের উদ্যোগের বিরুদ্ধে এদিন প্রতিরোধ গড়ে তোলার শপথ নেন শ্রমিক-কর্মচারীরা।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২৪৬ বছরের পুরনো দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি) বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই অত্যন্ত স্পর্শকাতর সংস্থাটি বিলোপ করে ৭টি পৃথক রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেট কোম্পানিতে ভাগ করার কৌশলী সিদ্ধান্ত করে কেন্দ্রীয় সরকার। একবার কর্পোরেট সংস্থায় পরিণত করতে পারলেই ধাপে ধাপে ওএফবি-কে দ্রুত বেসরকারি হাতে বেচে দিতে পারবে কেন্দ্রীয় সরকার।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ব্যবহারযোগ্য অস্ত্র ও যন্ত্রাংশ, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক, সাঁজোয়া গাড়ি, পরিবহণ ট্রাক, বিস্ফোরক প্রতিরোধক গাড়ি, রকেট, বিমান বিধ্বংসী আগ্নেয়াস্ত্র, সেনাকর্মীদের জন্য পোশাক ও কৌশলী যুদ্ধ সামগ্রী, অপ্টো-ইলেকট্রনিক্স গিয়ার, প্যারাসুট সহ যাবতীয় জিনিসপত্র উৎপাদনের কাজ দেখভাল করে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি। শীর্ষ সংস্থা হিসেবে ওএফবি সারা দেশে ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। বেসরকারিকরণের পথ সুগম করতেই দেশের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিকে ভেঙে ৭ টুকরো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনে প্রতিরক্ষা উৎপাদন বিভাগ (পিডিপি)-র নিয়ন্ত্রণে কাজ করে অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড।

প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে দেশের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলিকে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে একমাসব্যাপী লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল এআইডিইএফ সহ তিনটি ফেডারেশন। প্রায় একশো শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারী এই ধর্মঘটে শামিল হয়েছিলেন। পাঁচ দিন ধর্মঘট চলার পর মোদী সরকার পিছু হটেছিল। আবারও এই মহামারীর মধ্যে মোদী সরকার মরিয়া হয়ে দেশের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলোকে বেসরকারি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিতে চাইছে।

মোদী সরকারের এই চরম দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত জানাজানি হওয়া মাত্রই ওএফবি-র সমস্ত শ্রমিক-কর্মচারী একযোগে জানিয়ে দেন, এই সিদ্ধান্ত প্রতিরোধে জোরালো লড়াই হবে, পিছু হঠতেই হবে কেন্দ্রকে। তাঁরা বলেছেন, প্রয়োজনে প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে লাগাতার লড়াই হবে। মোদী সরকারের এই ভয়ঙ্কর পদক্ষেপকে প্রতিরোধ করার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে প্রতিরক্ষা শিল্পের তিনটি সংগঠন এআইডিইএফ, আইএনডিডব্লিউএফ এবং বিপিএমএস। সমস্ত রাজনৈতিক দল,ট্রেড ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী সংগঠন, সর্বোপরি দেশের সমস্ত অংশের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়ে তারা বলেছে, ভারতের জাতীয় সুরক্ষা ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলবে এই পদক্ষেপ। সরকারের এই বিপজ্জনক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদে শামিল হোন।

কেন্দ্রের এই সর্বনাশা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এক যৌথ বিবৃতিতে সিআইটিইউ, এআইটিইউসি, আইএনটিইউসি, এইচএমএস, টিইউসিসি, এআইসিসিটিইউ, এসইবিএ, এলপিএফ, ইউটিইউসি, এআইইইউটিইউসি এবং বিভিন্ন শিল্প ও সংস্থার ফেডারেশন সমূহ বলেছে, কেন্দ্র দেশের প্রতিরক্ষার ৪১টি অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডকে ৭টি কর্পোরেটে পরিণত করছে, যাতে দেশের সম্পদ হয়ে ওঠা এই অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলোকে সহজেই বিক্রি করে দেওয়া যায়। দেশ মহামারীতে আক্রান্ত, কেন্দ্র তার মোকাবিলায় উদ্যোগী হওয়ার পরিবর্তে দেশের সম্পদ ঢেলে বিক্রি করে দিতেই ব্যস্ত। তারা একের পর এক শ্রমিক-কৃষক স্বার্থবিরোধী সব পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে।

শ্রমিক সংগঠনগুলি বলেছে, দেশে বিভিন্ন সময়ে ৬ জন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিখিত আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিকে কখনই কর্পোরেটে পরিণত করা হবে না। কারণ, তা কোনো লাভজনক প্রস্তাব নয়। মোদী সরকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সেইসব প্রতিশ্রুতির কোনো তোয়াক্কা করছেন না। তারা একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের প্রতিরক্ষায় গড়ে ওঠা সম্পদ বেচে দিচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ হয় সর্বভারতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে। তার কর্মীদের বেতন, পেনশন সংবিধানের নির্দেশ মেনে দেওয়া হয়। বেসরকারিকরণ হলে সেই সুরক্ষা থাকবে না।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই ধ্বংসাত্মক পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে সিআইটিইউ'র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৭৫ শতাংশেরও বেশি প্রয়োজনীয় সামগ্রী সাফল্যের সঙ্গে এবং সময়মতো উৎপাদন ও সরবরাহ করে থাকে দেশের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলি। দক্ষতা ও মানের দিক থেকেও এই উৎপাদন নজিরবিহীন। মোদী সরকার মুখে যে 'আত্মনির্ভর ভারত' স্লোগান নিয়ে বাগাড়ম্বর করে, বাস্তবে আমাদের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলিই সেই আত্মনির্ভরতার প্রশ্নাতীত ও প্রকৃষ্ট নজির। তিনি বলেছেন, দেশের সুরক্ষার জন্য অতি স্পর্শকাতর প্রতিরক্ষা উৎপাদন ক্ষেত্রকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার এই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের লড়াইয়ে শ্রমিকশ্রেণি সর্বোতোভাবে থাকবে।