E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৫ জুন, ২০২১ / ১০ আষাঢ়, ১৪২৮

কসবায় ভুয়ো টিকাদান শিবিরে তৃণমূলের যোগ

ইঞ্জেকশন চুরিকাণ্ডে রাজ্যের হলফনামা তলব হাইকোর্টের


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী নতুন নতুন সাফল্যের কথার জয়ঢাক বাজিয়ে ব্যর্থতা চাপা দিতে চেষ্টা করছেন। কিন্তু ঢিমে গতির নমুনা পরীক্ষা ও টিকাকরণ, ভ্যাকসিন চুরি, ভুয়ো টিকা শিবিরের মতো নানা ঘটনা আর পরিসংখ্যান কোভিড সামলাতে তৃণমূল সরকারের বেহাল দশা রোজই কিস্তিতে কিস্তিতে প্রশাসনের কঙ্কালসার চেহারা বেআবরু করছে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সরকারি ডাক্তারদের সংগঠন এএইচএসডি লাগাতার স্বাস্থ্য দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চিঠি দিয়ে সচেতন করার যাবতীয় উদ্যোগ নিচ্ছেন। কিন্তু অর্ধসত্য আর কায়েমি স্বার্থের তাঁবেদারি ছাড়া সরকার সেরকম কিছুই করছে না। এদিকে ভ্যাকসিন না পেয়ে আতঙ্কিত মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বিভিন্ন জায়গায় - ঘটছে এমনটাও। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগামী ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে গোটা দেশে কোভিডের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের রকম সকম দেখে মনে হচ্ছে, মানুষের জীবন জীবিকা বা স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নয়, সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের দ্রুত করা নিয়েই তাঁর যত মাথাব্যথা।

কসবার অবৈধ টিকাকাণ্ড প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকারের টিকাকরণ প্রক্রিয়াকেই। কসবা বিধানসভা এলাকার মধ্যে থানার কাছেই কর্পোরেশনের লেটারহেড সীলমোহর নথিপত্র ব্যবহার করে ১০ দিন ধরে শাসকদলের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি ভুয়ো ভ্যাকসিন শিবির চালানোর ঘটনায় রাজ্যজুড়ে হইচই পড়ে গেছে। ওই শিবিরে যাদবপুরের সাংসদ মিমি চক্রবর্তী টিকা নিয়ে শংসাপত্র না পাওয়ায় পুলিশে অভিযোগ জানান। তারপরই ঘটনায় অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই ভ্যাকসিন সেন্টার ভ্যাকসিনের নাম করে আদৌ টিকা হিসেবে কী দেওয়া হচ্ছে, কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত। টিকা নিলেও তাঁদের কাউকেই সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি। তাঁরা তৃণমূলের অনেক নেতাকে বিষয়টি আগেই জানিয়েছেন কিন্তু তারা তা কানে তোলেননি। পৌরসভার অনুমতি ছাড়া এতদিন কিভাবে ক্যাম্প চলল তা নিয়ে অন্ধকারে স্বাস্থ্য ভবনও। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ নিজেকে আইএএস বলে পরিচয় দেওয়া ধৃত দেবাঞ্জন দেব শাসকদলের ঘনিষ্ঠ। যদিও মেয়র ফিরহাদ হাকিম সহ কোন তৃণমূল নেতা এই প্রতারক এর সঙ্গে তাদের যোগাযোগের কথা অস্বীকার করছেন। ধৃতকে ২৯ জুন পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আলিপুর আদালত। প্রশ্ন উঠেছে, কার সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে সাংসদ ওখানে গেলেন এবং টিকা নিলেন।

সরকারি হাসপাতাল থেকেই কোভিড চিকিৎসার মহার্ঘ টসিলিজুমার ইঞ্জেকশনের নজিরবিহীন চুরিকাণ্ডে এবার রাজ্য সরকারের হলফনামা তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। আগামী ২ জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্য সরকারকে এই গোটা ঘটনা হলফনামা নিয়ে জানাতে হবে। গোটা ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের এক চিকিৎসক ও সিস্টারকে কোচবিহারে বদলি করেই কার্যত দায় সেরেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এই চুরি নিয়ে দু-দু’টো তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল। দু’টি কমিটির রিপোর্টই এক। যে দু’জনের কথোপকথন সামনে এসেছিল শুধু সেই দু’জনকেই তদন্ত রিপোর্টে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এতবড় ঘটনায় সামনে খোদ তৃণমূলী বিধায়ক নির্মল মাঝির প্রসঙ্গ এলেও তা সযত্নেই এড়িয়ে গিয়েছে সরকার। কোভিড পর্বে এমন ঘটনার তদন্তের খবর জনসমক্ষে প্রকাশ করার আবেদন নিয়েই জনস্বার্থের মামলা দায়ের হয়। একই দাবি প্রথম থেকেই তুলেছিল চিকিৎসক সংগঠন এএইচএসডি।

রাজ্যে হঠাৎ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, এখনও সঙ্কটজনক রোগীদের জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর চূড়ান্ত অভাব বহু জায়গায়। সবাই টিকা না পাওয়ার ফলে আসন্ন তৃতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ মারাত্মক হবে ও সেই সঙ্গে মৃত্যুও বাড়বে বলে আশঙ্কা। অন্যদিকে দৈনিক সংক্রমণ কমলেও বর্তমানে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪০ হাজারের উপর।

অন্যদিকে, রাজ্যে এপর্যন্ত মিউকরমাইকোসিসে মৃত্যু হয়েছে ১৫। মিউকরমাইকোসিসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। গত একমাসের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ অনেকটা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের বক্তব্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বহু করোনা রোগীই সঙ্কটজনক অবস্থায় ছিলেন। সেইসব রোগীদেরই মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফলে এই রোগে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ আরও বাড়বে।

পশ্চিমবঙ্গে গত (২৪ জুন) ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৩৮। নতুন করে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১,৯২৫।