৫৮ বর্ষ ৪৫ সংখ্যা / ২৫ জুন, ২০২১ / ১০ আষাঢ়, ১৪২৮
কমরেড অনিল সাহার জীবনাবসান
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ সিপিআই(এম) এবং কৃষক আন্দোলনের প্রবীণ নেতা কমরেড অনিল সাহার জীবনাবসান ঘটেছে। ২১ জুন, সোমবার সকালে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। বয়স হয়েছিল ৮৪। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর দিন পর্যন্ত সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর খবরে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
এদিন নার্সিংহোম থেকে শিলিগুড়ির সুকান্তনগরে প্রয়াত নেতার বাড়িতে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন কমরেড অনিল সাহা। বাড়িতেও বহু মানুষ এসে শ্রদ্ধা জানান। তাঁর সহজ সরল জীবনযাত্রা সবাইকে আকৃষ্ট করতো। বাড়ি থেকে হিলকার্ট রোডে অনিল বিশ্বাস ভবনে নিয়ে আসার পথে তাঁর মরদেহ শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ এবং জিটিএসসি ক্লাবে নিয়ে যাওয়া হয়। এই দুই জায়গায় ক্লাব সদস্যবৃন্দ এবং মহকুমা পরিষদের কর্মী ও আধিকারিকরা মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
কমরেড অনিল সাহার মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র। উভয়েই প্রয়াত কমরেডের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। পার্টি নেতা অশোক ভট্টাচার্য, দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সময়কালে তাঁর মৃত্যুতে পার্টিতে একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো।
প্রয়াত কমরেড অনিল সাহার মরদেহ হিলকার্ট রোডে অনিল বিশ্বাস ভবনের সামনে নিয়ে আসা হলে সেখানে মৃতদেহে লাল পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অশোক ভট্টাচার্য। শ্রদ্ধা জানান মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তাপস সরকার, পার্টিনেতা সমন পাঠক, গৌতম ঘোষ, কালু ভৌমিক, দিলীপ সিং, মুকুল সেনগুপ্ত, জয় চক্রবর্তী, সিপিআই(এমএল) নেতা অভিজিৎ মজুমদার, প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, কংগ্রেস নেতা সুজয় ঘটক, সারা ভারত কৃষকসভার জেলা সম্পাদক ঝরেন রায়, সিআইটিইউ নেতা বিমল পাল, এআইসিসিটিইউ নেতা বাসুদেব বোস, এবিটিএ নেতা বিশ্বনাথ দত্ত, সৌরভ সরকার, সৌরভ দাস, গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের পার্থপ্রতিম মিত্র, সৃজন সেনার অজয় মৈত্র, খোখো কাবাডি অ্যাসোসিয়েশনের রাজা দত্ত মজুমদার প্রমুখ। এসএফআই, ডিওয়াইএফআই, গণশক্তির পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কৃষকসভার জেলা সভাপতি কে বি ওয়াতার। এছাড়াও শ্রদ্ধা জানান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা গৌতম দেব, রঞ্জন সরকার ও বেদব্রত দত্ত। শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। প্রয়াত কমরেড সাহার স্ত্রী, এক পুত্র, তিন কন্যা বর্তমান। এদিনই কিরণ চন্দ্র শ্মশানঘাটে তাঁর শেষকৃত্য হয়।
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ প্রথম জীবনে কমরেড অনিল সাহা ডাক বিভাগে চাকরি করতেন। সেখান কর্মচারীদের সংগঠিত করতে গিয়ে তাঁকে ছাঁটাই হতে হয়। এরপর তিনি কৃষক আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন। কৃষক আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। গ্রাম থেকে গ্রামে তিনি কৃষকদের সংগঠিত করতে থাকেন। তাঁদের যেকোনো সুখে-দুঃখে তিনি তাঁদের পাশে থাকতেন। তরাইয়ের গ্রামের মানুষের সাথে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। গ্রামাঞ্চলে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। তাঁকে কিছুদিন আত্মগোপনও করতে হয়েছিল। জরুরি অবস্থার সময় কিছুদিন তিনি জেলেও ছিলেন।
তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত দার্জিলিঙ জেলা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ডিজিএইচসি গঠিত হওয়ার পর ১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। শিলিগুড়ি নাট্যমেলার প্রথম সভাপতিও ছিলেন তিনি। কমরেড অনিল সাহা সবার সাথে সমানভাবে মিশতে পারতেন।