E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৫ মার্চ, ২০২২ / ১০ চৈত্র, ১৪২৮

বীরভূমে তৃণমূলের খাসতালুকে নারকীয় গণহত্যা, নিহত ১২


বগটুই গ্রামে আতঙ্কিত গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলছেন মহম্মদ সেলিম এবং রামচন্দ্র ডোম।

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ সাম্প্রতিককালের নারকীয়তম ঘটনার সাক্ষী থাকলো বীরভূমের বগটুই গ্রাম। বিগত প্রায় এক দশক ধরে তৃণমূলের একাধিপত্যে থাকা রামপুরহাট সংলগ্ন এই গ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে পুড়িয়ে মারা হলো কমপক্ষে বারোজনকে। ঘটনায় এ পর্যন্ত ভাদু শেখ সহ মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩ জন। আহতের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ। যে ঘটনার বীভৎসতায় শিউরে উঠেছে সভ্য দুনিয়া। ঘটনার প্রতিবাদে ২২ মার্চ থেকে রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভে নামে সিপিআই(এম) সহ বামফ্রন্ট। যদিও এখনও পর্যন্ত এই ঘটনা প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি রাজ্যের একসময়ের পরিবর্তনকামী বুদ্ধিজীবীরা।

ঘটনার সূত্রপাত ২১ মার্চ রাতে। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ স্থানীয় বড়শাল পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান ভাদু শেখকে বোমা মারে দুষ্কৃতীরা। এলাকাকে বিরোধীশূন্য করে ২০১৩ এবং ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই অঞ্চল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ভাদু শেখ। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর সেই রাতেই ভাদুর বাড়ির কাছাকাছি বগটুইয়ের পূর্বপাড়া গ্রামে একাধিক বাড়িতে বোমা মারার পাশাপাশি আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। হামলা হয় তৃণমূলেরই ভাদু বিরোধী গোষ্ঠীর সোনা শেখ, ফটিক শেখের বাড়িতে। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুসারে প্রায় দুঘণ্টার বেশি সময় ধরে গ্রাম জুড়ে নারকীয় হত্যালীলা চলে। ঘটনায় মহিলা শিশু সমেত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেহগুলি এমনভাবে পুড়ে গেছে যেখানে পুরুষ বা মহিলার দেহ আলাদা করে বোঝা যাচ্ছে না। অসমর্থিত সূত্রের খবর অনুসারে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

রামপুরহাটের গণহত্যার পর এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, তৃণমূল এবং পুলিশের যোগসাজশেই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। গোটা রাজ্যকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে এই মর্মান্তিক ঘটনা। মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকেই এর দায় নিতে হবে। তিনিই রাজ্যকে বিরোধীশূন্য করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কবে এই মৃত্যুমিছিল বন্ধ হবে তার জবাব মুখ্যমন্ত্রীকেই দিতে হবে।

রাজ্য সম্পাদকের আহ্বানের পর ২২ মার্চ বিকেল থেকেই রাজ্যজুড়ে পথে নামে সিপিআই(এম) সহ বাম কর্মী-সমর্থকরা। জেলায় জেলায় শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ, অবরোধ। একাধিক এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়।

২২ মার্চ রাতেই আনিস খানের হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে পাঁচলার সভা শেষে রামপুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ২৩ মার্চ সকালে বগটুই গ্রামে বাম নেতৃত্ব ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। বিমান বসুকে আটকে দেওয়া হলেও বাইকে চেপে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মহম্মদ সেলিম। ঘটনাস্থল ঘুরে দেখার পাশাপাশি কথা বলেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। এদিন সেলিম বলেন, “মমতার সিআইডি আর অমিত শাহের সিবিআই-এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। মমতা আর অমিত শাহ ঠিক করে দেন কী হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওয়াই চপ্পলে রক্তের দাগ আছে।”