৫৯ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৫ মার্চ, ২০২২ / ১০ চৈত্র, ১৪২৮
সামনের দিনের প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাবে পার্টি
সিপিআই(এম) রাজ্য ২৬তম সম্মেলনে প্রত্যয়ী ঘোষণা
সন্দীপ দে
সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন বিমান বসু।
চরম দক্ষিণপন্থী ও চূড়ান্ত উদারবাদী অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রেণি ও গণসংগ্রামগুলিতে ব্যাপকতম সমাবেশ ঘটাতে হবে। পার্টির নিজস্ব সংগ্রামের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। মতাদর্শ, রাজনীতি, সংগ্রাম ও সংগঠন - এই চারটি হাতিয়ারকে শানিত করে বর্তমান পরিস্থিতির গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে - এই আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৬তম সম্মেলন। গত ১৫ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ কমরেড নিরুপম সেন নগর, কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী মঞ্চে (প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন) এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সম্মেলন ঘোষণা করেছে, ‘‘শোষণহীন এক উন্নত, সমৃদ্ধ ভারত গড়ার মূল কাণ্ডারি শ্রমিকশ্রেণির বিপ্লবী পার্টি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)। সামনের দিনগুলিতে প্রতিকূলতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার হিম্মত একমাত্র এই পার্টিরই রয়েছে। এই আত্মবিশ্বাসকে অবলম্বন করেই আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হবো।’’
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাব
পার্টির রাজ্য সম্মেলন থেকে দেশ ও রাজ্যের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলি হলো - রাজ্যের অর্থনৈতিক দুরবস্থা প্রসঙ্গে; বেকারির বিরুদ্ধে, কর্মসংস্থানের পক্ষে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলো; গণতন্ত্র রক্ষার সংগ্রাম ও সন্ত্রাস মোকাবিলা করা; মহিলাদের অধিকার রক্ষা করো, বিকল্পের জন্য সংগ্রাম গড়ো; সাম্প্রদায়িকতা ও বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে; নকল লড়াই নয়, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে গণতান্ত্রিক সংগ্রামই জরুরি; সর্বনাশা কৃষক বিরোধী নীতির প্রতিরোধে সংগ্রামের শক্তিকে সংহত করো; শিক্ষাক্ষেত্রে স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণ ও নতুন জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে; শ্রমিকশ্রেণির অর্জিত অধিকার ও শ্রমজীবী মানুষের উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণের বিরুদ্ধে; কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের করপোরেটমুখী স্বাস্থ্যনীতির বিরুদ্ধে তীব্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলো; এপিএল-বিপিএল নয়, চাই সর্বজনীন গণবণ্টন ব্যবস্থা; সংখ্যালঘু অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলন তীব্র করতে হবে; তপশিলি জাতি ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের উন্নয়নের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলো; পরিবেশ চেতনা বৃদ্ধি ও পরিবেশ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রসঙ্গে; পরিবেশ ধ্বংসকারী ও করপোরেট স্বার্থবাহী ‘দেউচা-পাঁচামি-হরিণসিংগা’য় লুটের পরিকল্পনা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন তীব্র করো ; স্বাধীন ও বহুত্ববাদী মিডিয়ার সমর্থনে এবং মোদি সরকারের জনবিরোধী, জাতীয় স্বার্থবিরোধী আর্থিক নীতির প্রতিবাদে ২৮-২৯ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট সফল করার সমর্থনে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
নবনির্বাচিত কমিটি ও পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধি
আগামীদিনে পার্টি পরিচালনা ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে লড়াই-আন্দোলন গড়ে তুলতে পার্টির রাজ্য সম্মেলন থেকে ৮০ জনের নতুন রাজ্য কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছে। রাজ্য কমিটির প্রথম সভায় মহম্মদ সেলিম রাজ্য সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজ্য কমিটিতে ২৩ জন নতুন সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া মহিলা ১৪ জন এবং সংখ্যালঘু সদস্য রয়েছেন ১২ জন।
আগামী ৬ থেকে ১০ এপ্রিল কেরালার কান্নুরে অনুষ্ঠিতব্য পার্টি কংগ্রেসের জন্য রাজ্য সম্মেলন থেকে ১৬০ জন প্রতিনিধি ও ৩ জন দর্শক নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজ্য কন্ট্রোল কমিশন
সিপিআই(এম) রাজ্য ২৬তম সম্মেলন থেকে নতুন কন্ট্রোল কমিশন গঠিত হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা হলেন মিনতি ঘোষ, সাইদুল হক, কেষ্ট সরকার, রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম এবং বিমল মিস্ত্রী। সম্মেলন চলাকালীন রাজ্য কন্ট্রোল কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা থেকে মিনতি ঘোষ কমিশনের চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন।
প্রতিনিধি অধিবেশন
সিপিআই(এম) রাজ্য ২৬তম সম্মেলন উদ্বোধন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এছাড়া সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত। খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন উত্থাপন করেন বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। (উদ্বোধনী পর্বের বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ১৮ মার্চ সংখ্যায়)।
বিদায়ী রাজ্য সম্পাদকের জবাবি ভাষণ
সম্মেলনে পেশ করা খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনের উপর ৭২ জন প্রতিনিধি আলোচনা করেন। (প্রতিনিধিদের আলোচনার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন অন্য পৃষ্ঠায়)। প্রতিনিধিদের আলোচনা শেষে জবাবি ভাষণ দেন বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, পার্টির প্লেনামের নির্দেশ অনুযায়ী শ্রেণি সংগ্রাম-গণসংগ্রামকে তীব্র করার পাশাপাশি সামাজিক বৈষম্য দূর করার কথা ছিল। এর একটি থেকে অপরটি আলাদা করা যায়না। পশ্চিমবঙ্গে আদিবাসী, তপশিলি ও সংখ্যালঘু অংশের মানুষ মোট জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু, ২২ শতাংশ তপশিলি এবং আদিবাসী জনঅংশের মানুষের সংখ্যা ৬ শতাংশ। এরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। সাচার কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী এদের ব্যাপক অংশ সামাজিক দিক থেকে এবং জীবনজীবিকার ক্ষেত্রে অবহেলিত হয়েছিল। এই আদিবাসীদের মধ্যে আবার নানা জনগোষ্ঠী রয়েছে। আরএসএস এদের মধ্যে মাইক্রো সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং চালাচ্ছে। ফলে এদের মধ্যে পরিচিতি সত্তার রাজনীতি মাথাচাড়া দিচ্ছে। এই অংশের মানুষদের মধ্যে আমরা ক্রমাগত জনভিত্তি হারিয়েছি। আমরা যদি এই বিভাজন দূর করতে না পারি তবে সামাজিক-রাজনৈতিক ভারসাম্যের পরিবর্তন করতে পারব না। এদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে আন্দোলন-সংগ্রামের ময়দান থেকে পার্টিতে কর্মী নিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে শ্রেণি বৈশিষ্ট্য বদলে যাচ্ছে। রাজ্যে অসংগঠিত শ্রমিক প্রায় ৯৫ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে কৃষক-শ্রমিকের পার্থক্য বোঝার উপায় নেই। গ্রামে খেতমজুর ও গরিব কৃষকদের মৈত্রী গড়ে তুলতে হবে। ধনী কৃষক, মাঝারি কৃষক দোদুল্যমান মিত্র। দিল্লির কৃষক আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে ধনী কৃষকও আমাদের মিত্র হতে পারে। আজ মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত অংশের মানুষও দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। ধনী কৃষকের সঙ্গে কর্পোরেট পুঁজির দ্বন্দ্ব বাড়ছে। শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। ছাত্র-যুবরা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের দাবিতে লড়াই করছে। নারীদের উপর অত্যাচার হচ্ছে,তারাও প্রতিবাদে পথে নেমেছে। এই পরিস্থিতি আমাদের সুযোগ এনে দিয়েছে শ্রেণি আন্দোলনকে শক্তিশালী করার, যা শ্রেণি ভারসাম্য পরিবর্তন করতে পারে। তিনি পার্টি সদস্যদের পরিবারকে কমিউনিস্ট পরিবার হিসেবে গড়ে তোলার ডাক দেন।
২৮-২৯ মার্চ সারা ভারত ধর্মঘটকে সর্বাত্মক সফল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আজ শ্রমকোডের মধ্যদিয়ে শ্রমিকদের অধিকারকে কেড়ে নেবার চেষ্টা চলছে, কৃষির উপর আঘাত নেমে এসেছে, ব্যাঙ্ক-বিমা সহ সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। সংযুক্ত কিষান মোর্চা ওই দু’দিন গ্রামীণ বন্ধের ডাক দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকার যে স্বৈরাচারী আক্রমণ নামিয়ে এনেছে তা মেনে নেবো না। এই সরকার রাজ্যে কৃষক বিরোধী আইন এনেছে, মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলি গ্রামের মানুষদের সর্বনাশ করছে। সমস্ত সমবায় সংস্থাকে ওরা ধ্বংস করেছে। দেউচা-পাঁচামিতে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে আদানিদের স্বার্থে কয়লাখনি তৈরির চেষ্টা চলছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে, মহিলারাও প্রতিরোধে এগিয়ে এসেছেন। আনিস খানের হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন চলছে। এই সমস্ত আন্দোলন-সংগ্রামকে একত্রিত করে আমাদের লড়াইকে তীব্র করতে হবে। যার প্রতিফলন ঘটাতে হবে সাধারণ ধর্মঘটে।
তিনি বলেন, দিল্লির কৃষক আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে শত প্ররোচনা-প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আন্দোলনে সফল হওয়া যায়। ওরা যদি পারে তবে আমরা কেন পারব না স্থানীয় আদায়যোগ্য দাবিদাওয়া নিয়ে পঞ্চায়েতকে ঘিরতে। গ্রামের কৃষক, খেত মজুর, অসংগঠিত শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মহিলা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এজন্যই বুথ সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার কথা বলেছি। প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েত দপ্তরের সামনে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সংগঠিত করতে হবে, তারপর ব্লক স্তরে, তারপর জেলা স্তর পেরিয়ে কলকাতায় আন্দোলনের তরঙ্গ সৃষ্টি করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই জারি রাখতে হবে।
তিনি বলেন, প্লেনামের সময় বলা হয়েছিল, পার্টিতে পরিমাণগত পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু গুণগত পরিবর্তন হচ্ছেনা। কাজ আমাদের অনেক, কিন্তু করতে পারছি না, কাজ করার মতো উপযুক্ত কর্মীর অভাব। আমরা এমন একটা সময় অতিবাহিত করছি যখন পার্টিতে বোঝাপড়া, ঐক্য, সংহতি ইস্পাতদৃঢ় হওয়া প্রয়োজন। পার্টিতে সবার চিন্তার ঐক্য, ইচ্ছার ঐক্য ও কাজের ঐক্য এক হওয়া জরুরি।
পরিশেষে তিনি বলেন, এখন আমরা এক কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে রয়েছি। জরুরি অবস্থার চেয়েও কঠিন অবস্থা এখন। একমাত্র সিপিআই(এম)-ই পারে এই অবস্থাকে অতিক্রম করতে। গণলাইন সম্পন্ন বিপ্লবী পার্টি হিসেবে গড়ে তুলে লড়াই-আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে সক্ষম হব।
জবাবি ভাষণের পর খসড়া রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদনটি কিছু সংযোজনী-সংশোধনী সহ গৃহীত হয়। সূর্য মিশ্র উত্থাপিত আয়-ব্যয়ের হিসাবও সম্মেলন গ্রহণ করে।
পার্টির নবনির্বাচিত সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
সংগ্রামের বার্তা
কমরেড নিরুপম সেন নগর ও কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী মঞ্চে অনুষ্ঠিত পার্টির রাজ্য সম্মেলনের অন্তিম পর্বে সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, পার্টির প্রবীণ নেতা পলিট ব্যুরো সদস্য বিমান বসু, বিদায়ী রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং নবনির্বাচিত রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম ।
সীতারাম ইয়েচুরি এই সম্মেলনকে ‘ঐতিহাসিক সম্মেলন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, আমি যখন এসএফআই-তে আসি তখন বিমান বসু ছিলেন ছাত্র নেতা এবং পার্টিরও নেতা। সূর্যদাও রাজ্যের মন্ত্রী এবং পার্টির রাজ্য সম্পাদক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা এবারে অব্যাহতি নিচ্ছেন,আবার নতুনরা আসছেন নেতৃত্বে। এটাই স্বাস্থ্যের লক্ষণ - এটাই প্রকৃতির নিয়ম। একেই তিনি ‘স্বাস্থ্যকর কমিউনিস্ট রূপান্তর’ বলে অভিহিত করেন।
দেশের বামপন্থী আন্দোলনের অগ্রণী কেন্দ্র হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে এখানকার পার্টিকেই। তিনি ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলনের উল্লেখ সহ তেতাল্লিশের মন্বন্তরে বামপন্থীরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই প্রসঙ্গে বলেন, সাম্প্রতিককালে কোভিড পরিস্থিতিতে বহু তরুণ ছাত্র-যুব রেড ভলান্টিয়ার হিসেবে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছেন। এটাই এ রাজ্যের ধারাবাহিক আন্দোলনের ঐতিহ্য। আমি নিশ্চিত মহম্মদ সেলিমের নেতৃত্বে নতুন রাজ্য কমিটি পার্টিকে আরও উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে। দেশে যদি কোনো দলের ভবিষ্যৎ থাকে তবে কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে আমাদের পার্টিরই আছে। নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের পার্টি অপরিহার্য এবং উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।
দীর্ঘ একান্ন বছর পার্টির নেতৃত্বদানের পর এবারে অব্যাহতি নিলেন বিমান বসু। তিনি ছিলেন সম্মেলন পরিচালনার জন্য গঠিত সভাপতিমণ্ডলীর অধ্যক্ষ। এদিন তিনি তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে সম্মেলনকে অভিনন্দন জানান এবং পার্টির শৃঙ্খলা রক্ষার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, সম্মেলনে যে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক প্রতিবেদন গৃহীত হয়েছে তা নতুন রাজ্য কমিটি বাস্তবায়ন করবে এই প্রত্যাশা করছি।
সূর্য মিশ্র বলেন, আমাদের পার্টি যৌথ নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়। দেড়শো বছরে পৃথিবী এমন অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়নি। একশো বছরের মধ্যে এমন মহামারীও হয়নি। স্বাধীনতার পর দেশে এমন একটা সরকার এসেছে যারা সংবিধানের উপর ভয়ঙ্কর আঘাত নামিয়ে এনেছে। আবার ৭৬ বছর পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একটি আসনও পায়নি বামপন্থীরা। এমনই একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। কিন্তু পরিস্থিতি কঠিন হলেও আমাদের কাছে বিরাট সু্যোগও এনে দিয়েছে সংগ্রামের। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব, আন্দোলনের প্রবাহের মধ্য দিয়েই গণলাইন সম্পন্ন বিপ্লবী পার্টি গড়ে তুলে এগিয়ে যেতে পারব।
নবনির্বাচিত রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম
রাজ্য সম্পাদক নির্বাচিত হবার পর মহম্মদ সেলিম তাঁর ভাষণে বলেন, আজকের দিনের যে চাহিদা, যে চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে এসেছে, আমাদের সমর্থক-দরদিরা আমাদের কাছে যে প্রত্যাশা করেন তার উপযুক্ত হয়ে উঠতে হবে আমাদের। আমরাই পারব রাজ্যে যে জল্লাদ বাহিনীর রাজত্ব চলছে তা প্রতিরোধ করতে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে। সাম্প্রদায়িক সংহতির মিলন ক্ষেত্র এই বাংলায় যেভাবে মানুষকে বিচ্ছিন্ন ও বিভাজিত করার চক্রান্ত চলছে তা রুখে দিয়ে রাজ্যের ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারব। তিনি বলেন, কমিউনিস্টদের কাছে হতাশার কোনো জায়গা নেই। আমাদের মতাদর্শকে সামনে রেখে আসু ও আদায়যোগ্য দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। সামনে ধর্মঘট ও উপ নির্বাচন। সদস্যদের যেমন পুনর্নবীকরণ করতে হয়, তেমনি পার্টিরও পুনর্নবীকরণ করে, পার্টি কর্মীদের রাজনৈতিক চেতনায় সমৃদ্ধ করে সমস্ত প্রতিকূলতাকে চূর্ণ করে আমরা এগিয়ে যাব।