E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৫ মার্চ, ২০২২ / ১০ চৈত্র, ১৪২৮

প্রয়াত কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম


বিশেষ সংবাদদাতাঃ প্রয়াত হলেন তেলেঙ্গানা গণসংগ্রামের নেত্রী কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম। প্রবাদপ্রতিম এই কমিউনিস্ট নেত্রী ১৯ মার্চ, শনিবার হায়দরাবাদের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। সেখানেই ফুসফুসে সংক্রমণের কারণে ২ মার্চ থেকে তিনি ভরতি ছিলেন। বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাক্তন সদস্য কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির বিশেষ আমন্ত্রিত সদস্য।

তাঁর জীবনাবসানে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। ২০ মার্চ এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো তাঁর বৈপ্লবিক জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।

কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যমের জন্ম নালগোন্ডার সূর্যপেটের এক গ্রামে ১৯৩১ সালে। তাঁর ‘স্বরাজ্যম’ নামও স্বাধীনতা আন্দোলনের নামে। তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্য অসহযোগ ও সত্যাগ্রহে অংশ নিয়েছিলেন। তদানীন্তন সামন্ততান্ত্রিক পরিবেশে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও শৈশব থেকেই নিজামশাহির সামন্ততান্ত্রিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যুক্ত হন তিনি। তাঁর দাদা ভীমিরেড্ডি নরসিমা রেড্ডির সঙ্গে তিনি অন্ধ্র মহাসভার কাজে যুক্ত হন। মাত্র দশ বছর বয়সেই অন্ধ্র মহাসভার ডাকে মানুষের মধ্যে চাল বিতরণের কাজে অংশ নেন। দাসশ্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেমে পড়েন মাত্র ১১ বছর বয়সে। ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাস পড়ে কমিউনিজমের প্রতি তাঁর তীব্র আকর্ষণ তৈরি হয়। একের পর এক সামাজিক প্রথা ভেঙে তিনি গণসংগ্রামে এগিয়ে আসেন। অন্ধ্র মহাসভাকে সামনে রেখে তেলেঙ্গানার সংগ্রাম গড়ে তুলছিল কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫১-র তেলেঙ্গানা মহাবিদ্রোহে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিতে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণও নেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে তিনি এই সংগ্রামের জন্য মানুষকে, বিশেষত মহিলাদের প্রস্তুত করেন। অন্তত ৩০০ মহিলাকে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন মেজর জয়পাল সিং। রাজাকার বাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধে যে ‘দলম’ তৈরি হয়েছিল তেমন একটি দলমের তিনি ছিলেন কমান্ডার। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তাঁর মাথার দাম ধার্য হয়েছিল ১০ হাজার টাকা। আদিবাসী মানুষের মধ্যে মিশে যেতেন তিনি, তাঁদেরই একজনের মতো জীবনযাপন করতেন। তাঁদেরই আশ্রয়ে তেলেঙ্গানার গ্রামে গ্রামে জনগণকে সংগঠিত করার কাজ করতেন। ছিলেন অগ্নিবর্ষী বক্তা। তাঁর বক্তৃতা অসংখ্য কৃষককে টেনে এনেছিল তেলেঙ্গানার লড়াইয়ে। নিজে ভালো গান গাইতেন। তাঁর লেখা ও গাওয়া গানও তেলেঙ্গানা মহাসংগ্রামের সম্পদ। তেলেঙ্গানার লড়াইয়ের শহিদদের স্মরণ করে তাঁর গান ‘ভুয়াল্লু’ বহু মানুষকে এই লড়াইয়ে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছে।

তেলেঙ্গানা সংগ্রামেরই সহযোদ্ধা মাল্লু ভেঙ্কট নরসিমা রেড্ডির সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশের থুঙ্গাতুর্থি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ১৯৭৮ ও ১৯৮৩ সালে বিধায়ক নির্বাচিত হন। কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম মহিলা আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় নেত্রী। শ্রমজীবী মহিলাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাঁর দুই পুত্র ও এক কন্যা রয়েছেন।

কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যমের প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। সিআইটিইউ এবং সারা ভারত কিষান সভা।

সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যমকে কমিউনিস্ট মহিলা আন্দোলনের একজন প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন আমাদের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নেত্রী।

সারা ভারত কিষান সভার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি ছিলেন তেলেঙ্গানা সংগ্রামের একজন বীর। একজন মহান কমিউনিস্টের পাশাপাশি তিনি সমস্ত ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক শোষণের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াকু নেত্রী। তিনি আমাদের কর্মীদেরও অনুপ্রেরণা। তাঁর মৃত্যুতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বড়ো ক্ষতি হয়ে গেল।

তেলেঙ্গানা সশস্ত্র সংগ্রামে কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যম (বাঁদিক থেকে প্রথম)।

সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকেও কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যমের সংগ্রামী জীবনকে স্মরণ করার পাশাপাশি গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কমরেড মাল্লু স্বরাজ্যমের জীবনাবসানে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি রাইফেল হাতে জমিদার ও হায়দরাবাদের নিজামশাহিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এই বিপ্লবী কমিউনিস্ট নেত্রী আমাদের চিরকালের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। মানবমুক্তির সংগ্রামে তাঁর জীবন আমাদের শক্তি জোগাবে।

সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য বিমান বসু শোক প্রকাশ করে বলেছেন, জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি মার্কসবাদী আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা রেখে শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে তাঁর জীবন নিবেদিত করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয় ছিল। তাঁকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

পার্টির প‍‌‍‌‍‌লিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত বলেন, সামন্ততান্ত্রিক ও পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই এবং সমাজতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা অনুপ্রেরণা জোগায়। গরিবদের জন্য লড়াইয়ে তিনি ছিলেন অগ্রণী নেত্রী‍‌ এবং কোনোদিনই সেই পথ থেকে সরে যাননি।

শোক জ্ঞাপন করেছেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্য মিশ্র, পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।