৬০ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৫ নভেম্বর, ২০২২ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’ পদযাত্রায় গ্রামের গরিব মানুষ জোটবদ্ধ হচ্ছেন রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বদলে দিতে
পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষের বোঁয়াইচণ্ডীতে পদযাত্রা। ছবিঃ পার্থপ্রতিম কোঙার
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আলপথ পেরিয়ে গ্রামে গ্রামে বাংলার মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে সাড়া জাগাচ্ছে ‘গ্রাম জাগাও, চোর তাড়াও, বাংলা বাঁচাও’ স্লোগান মুখর পদযাত্রা। কাটমানি আর লুটের পঞ্চায়েতকে হটিয়ে মানুষের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার দাবিতে পদযাত্রীদের সঙ্গে সরব হচ্ছেন বাংলার মানুষও। গড়ে উঠছে নানা হৃদয়-ছোঁয়া নজির। যেখানে দুর্নীতি আর কাটমানিখোর তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য সন্তানের হাতে মার খেয়েও ফুঁসে উঠে অভিযোগ জানাচ্ছেন লাল ঝান্ডা হাতে মিছিলে হাটা বয়স্ক মা। তৃণমূল-বিজেপি’র যোগসাজসে চলা দুর্নীতির আখড়া হয়ে ওঠা বিভিন্ন স্তরের পঞ্চায়েত দপ্তরগুলিতে দেওয়া হচ্ছে ডেপুটেশন। সেখানে সরাসরি প্রতিকার চেয়ে সোচ্চারে মানুষ হিসেব চাইছেন। চাইছেন মিছিল এবং মিছিল শেষের জমায়েতকে ঘিরে স্বতঃস্ফুর্ত ছোটো-বড়ো সভাগুলি থেকেও। জলপাইগুড়ি থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সাগর দ্বীপ পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই দুই দলকে পরাজিত করার জান কবুল শপথ উচ্চারিত হচ্ছে। পদযাত্রা উপলক্ষে বাসন্তী ব্লক দপ্তরের সামনে আয়োজিত সভায় সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, টাকা রোজগারের জন্য রাজনীতি করে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-এমএলএ-রা। বালি, পাথর, গরু পাচারের টাকা খেয়েছে। দুষ্কৃতী অসৎরা তৃণমূলের নেতা। তৃণমূল বিজেপি’র মধ্যে খেলা চলছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই দুই দলকে পরাস্ত করতে হবে। বাংলার উন্নয়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বামফ্রন্টের সময়কালে রাজ্যের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রাম বাংলার মানুষের অংশগ্রহণ ছিল।
সভায় শমীক লাহিড়ি বলেন, রাজ্যজুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েতে পদযাত্রা চলছে। কথা একটাই, হিসেব চাই। হিসেব দিতে হবে। গ্রাম সংসদ ডেকে জনগণকে আগে কী কাজ হবে তা জানাতে হবে। সরকারের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এই সরকার চলে গেলে দু’হাতে হাতকড়া পড়বে। পিসি-ভাইপোর কোনো সই নেই। সই আপনার। দেশের আইন অনুযায়ী সিএজি’র কাছে অভিযোগ জানালে ১০ বছর পর্যন্ত হিসেব দেখাতে বাধ্য থাকবে সরকার।
বাসন্তী ব্লকের পাশাপাশি বিষ্ণুপুর, জুলপিয়া অঞ্চল, ভাঙরের বামনঘাটা, প্রাণগঞ্জ, খোয়াইদহ, মিনাখা থেকে মালঞ্চ পদযাত্রা হয়েছে। হামলার চক্রান্ত রুখে বর্ধমানের বেরুগ্রামে পদযাত্রায় শামিল হন বহু মানুষ বৈকুন্ঠপুর, দরবারপুর, আমডাল এলাকায় পদযাত্রায় সাড়া পাওয়া গেছে।
সন্ত্রাস অধ্যুষিত বাঁকুড়ার তালডাংরায় পদযাত্রা।
পদযাত্রায় মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ দেখে শাসকদল আতঙ্কিত। তাই বিভিন্ন জায়গায় নামিয়ে আনছে আক্রমণ। বীরভূমের দুনিগ্রামের গোপালপুরে মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য বৃদ্ধা শিখা লেট-কে তাঁর বড় ছেলে তৃণমূল কর্মী বিধান লেট মারধর করে। সন্তানের দিকে তাকিয়ে মুখবুজে তার দুর্নীতিতে শামিল হওয়া মেনে নেননি বৃদ্ধা। প্রতিবাদ করেছেন। সন্ত্রাস কবলিত এলাকার সমীকরণ পাল্টাচ্ছে এমন সব ঘটনায়।
তাপমাত্রার পারদ নামলেও পদযাত্রার উত্তাপ ছড়িয়ে যাচ্ছে গ্রাম থেকে গ্রামে। বর্ধমানের গলসি বাজারে বিশাল সমাবেশ হয় পদযাত্রা শেষে। বীরভূমের মহম্মদ বাজারের গণপুর, দুবরাজপুরের গোহালিয়ার মেটেলা, গোবিন্দপু্র, রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের কুসুম্বা, বরাকর জামুরিয়া শিল্পাঞ্চলে জাঠা হয়েছে। পদযাত্রা ঘিরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে বাঁকুড়ার তালডাংরায়। এখানে বিবরদা পঞ্চায়েত এলাকায় দমবন্ধ পরিবেশ ছিল। নিষিদ্ধ ছিল লালঝান্ডা। সেখানেই ভয় ভেঙে ১৬ কিলোমিটার পথ জুড়ে দৃপ্ত মিছিল দাপিয়ে বেড়ালো গলি থেকে আলপথ। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, মারধর, ঘরছাড়া করা থেকে শুরু করে কাজ কেড়ে নেওয়া - কোনো কিছুই বাকি রাখেনি তৃণমূলীরা, লাল ঝান্ডার মানুষকে দমিয়ে রাখতে। সেই দমিয়ে রাখা মানুষ অন্যদের নিয়ে বেরিয়ে এসেছেন। বলছেন, আমরা দেখলাম এত অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে এদিকে মানুষের ঘরে কাজ নেই। কেন ওদের কিল মারার গোঁসাই করে রাখব? আমরা এগিয়ে আসতেই তৃণমূলের মস্তানি চুপসে গেল। বিবরদা গ্রাম পঞ্চায়েতে কাজ চেয়ে ডেপুটেশন দিলাম। যারা একদিন তৃণমূলকে পাশে রেখেছিল পরে পদ্মফুলেও যায় তারা অনেকেই বুঝছেন দিল্লি আর নবান্নের দুই সরকার এক। তাদের অনেকেই আজ মিছিলে এসেছে। পুরুলিয়ার পারা ব্লকের নডিহা, রঘুনাথপুর দুই ব্লকের জয়পুরে, মালবাজারের জবলা কাশিপুরের মহেশ বাড়ি সহ অন্যান্য জায়গায় মানুষের ঢল নামে জাঠাগুলিতে। হুগলির দাদপুর থানার হাঁড়িট অঞ্চল, পান্ডুয়ার দ্বারবাসিনী, বলাগড়ের ডুমুরদহ, নিত্যানন্দপুর দু’নম্বর অঞ্চল সহ অন্যত্র সংগঠিত হয়েছে পদযাত্রা। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর দুই ব্লকের বালিসাই অঞ্চলের দশটি বুথে পদযাত্রা হয়েছে বিপুল উদ্দীপনার সঙ্গে।
আলিপুরদুয়ারের শহিদ বাদলনগর বিদ্যাপীঠ থেকে কালীবাড়ি ময়দান পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, চোপড়া ব্লকের দাসপাড়া, দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা, চন্ডিপুর গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয়, অশোকগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতে পদযাত্রা হয়।
নদীয়ার রানাঘাট ব্লক ২ এর আইসমালিতেও বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন পদযাত্রায়। এই জেলার অন্যান্য এলাকাতে ভয় ভেঙে পথে নেমেছেন মানুষ। গ্রামীণ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে গ্রামের গরিব মানুষ আবারো জোটবদ্ধ হচ্ছেন যা আগামীদিনে বাংলার রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বদলে দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিকমহল।
আলিপুরদুয়ারের শহিদ বাদলনগর বিদ্যাপীঠ থেকে কালীবাড়ি ময়দান পর্যন্ত পদযাত্রা হয়। উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত, চোপড়া ব্লকের দাসপাড়া, দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন ব্লকের মালঞ্চা, চন্ডিপুর গঙ্গারামপুর ব্লকের উদয়, অশোকগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতে পদযাত্রা হয়।
নদীয়ার রানাঘাট ব্লক ২ এর আইসমালিতেও বিভিন্ন পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন পদযাত্রায়। এই জেলার অন্যান্য এলাকাতে ভয় ভেঙে পথে নেমেছেন মানুষ।
গ্রামীণ পদযাত্রার মধ্য দিয়ে গ্রামের গরিব মানুষ আবারও জোটবদ্ধ হচ্ছেন যা আগামীদিনে বাংলার রাজনৈতিক ভারসাম্যকে বদলে দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিকমহল।