৬০ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৫ নভেম্বর, ২০২২ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
GOELRO পরিকল্পনাঃ বৈদ্যুতিন বিপ্লব
সৌম্য নাগ রায়
‘‘এতকাল সমাজের অধিকাংশ লোক শিক্ষার পূর্ণ সুযোগ থেকে বঞ্চিত—ভারতবর্ষ তো প্রায় সম্পূর্ণই বঞ্চিত। এখানে সেই শিক্ষা কী আশ্চর্য উদ্যমে “সমাজের সর্বত্র ব্যাপ্ত হচ্ছে তা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। শিক্ষার পরিমাণ শুধু সংখ্যায় নয়, তার সম্পূর্ণতায়, তার প্রবলতায়। কোনো মানুষই যাতে নিঃসহায় ও নিষ্কর্মা হয়ে না থাকে এজন্যে কী প্রচুর আয়োজন ও কী বিপুল উদ্যম। শুধু শ্বেত-রাশিয়ার জন্যে নয়—মধ্য-এশিয়ার অর্ধসভ্য জাতের মধ্যেও এরা বন্যার মতো বেগে শিক্ষা বিস্তার করে চলেছে—সায়ন্সের শেষ-ফসল পর্যন্ত যাতে তারা পায় এইজন্যে প্রয়াসের অন্ত নেই। এখানে থিয়েটারে অভিনয়ে বিষম ভিড়, কিন্তু যারা দেখছে তারা কৃষি ও কর্মীদের দলের। কোথাও এদের অপমান নেই।’’ – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাশিয়ার চিঠি (১৯৩০, রাশিয়া)
১৯৩০ সালে যখন রবীন্দ্রনাথ এই চিঠি লিখছেন, তখন বিপ্লবোত্তর রাশিয়া অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীত ছিন্ন ভিন্ন করে সভ্যতার আলোয় মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বিজয়ীর বেশে-শিক্ষায়, প্রযুক্তিতে, শিল্পায়নে। চিত্তের জাগরণ আর আত্মমর্যাদার আনন্দ আহরণ যে পথ ধরে, তারই আলোচনায় এই লেখা।
একটি নতুন সমাজের বস্তুগত ভিত্তির বৈপ্লবিক পরিবর্তনে বিদ্যুতের ভূমিকা
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে, আধুনিকবিশ্ব শিল্প উৎপাদনে একটি সক্রিয় বৃদ্ধি দেখেছিল, যা পুঁজিবাদী সম্পর্কের বিকাশের সাথে মিলে যায়। কার্ল মার্কস সামাজিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মধ্যে সম্পর্ক সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে পুঁজিবাদকে ‘‘বাষ্প যুগ’’ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু প্রকৌশলী এবং রাজনীতিবিদ উভয়েই বুঝতে পেরেছিলেন যে বিংশ শতকের শিল্প বিকাশের প্রশ্নে এই প্রধান চালিকাশক্তিটি এর সম্ভাবনাকে নিঃশেষ করে ফেলেছে। শক্তির নতুন উৎসের প্রয়োজন ছিল — শক্তিশালী শিল্পের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন সমাজ গঠনের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে সভ্যতার অগ্রগতির জন্য উপযুক্ত একটি উৎস। ফলত, সমগ্র রাশিয়ার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিশনকে একটি সাধারণ জাতীয় পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল —বৈদ্যুতিক শক্তির ভিত্তিতে রাশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের একটি পরিকল্পনা।
রাশিয়ার বিদ্যুদয়নের জন্য প্রাক-বিপ্লবী পরিকল্পনায় দুটি প্রযুক্তিগত ধারণা অন্তর্ভুক্ত ছিল:
● উপভোক্তাদের থেকে কম দূরত্বে স্থিত ছোটো উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়ন, প্রাথমিকভাবে শহুরে উপভোক্তাদের কাছাকাছি ট্রাম, ময়দা মিলের প্রতিস্থাপন, ব্যক্তিগত মালিকদের মালিকানাধীন স্থানীয় উৎপাদন শিল্পের বিকাশ।
● কয়লা এবং পিটের উৎসের কাছাকাছি বড়ো উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করে দূরবর্তী উপভোক্তাদের কাছে পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চালন।
বিদ্যুৎকে সেই সময়ের কর্তৃপক্ষ কেবল শীতকালীন প্রাসাদ, রাজধানীর কেন্দ্রীয় রাস্তা, আভিজাত্যের বাড়ি এবং প্রাসাদগুলির আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে অনুকূলভাবে ব্যবহার করত। দৈনন্দিন জীবন, কৃষি ও কৃষক সমাজের বিদ্যুদয়ন ছিল প্রশ্নের বাইরে। শিল্প জগতে উন্নতির জন্য, দেশের সামগ্রিক বিকাশের জন্য যে বৃহৎ আকারের বিদ্যুদয়ন প্রয়োজন তা শুধুমাত্র কেন্দ্রীভূত বিদ্যুদয়নের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হতে পারে।
বলশেভিকরা এবং প্রাথমিকভাবে লেনিন সমাজতন্ত্র ও বিদ্যুদয়নের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককে উপলব্ধি করেছিলেন। যা জাতীয় উৎপাদনশীল শক্তির আমূল পুনর্বিন্যাসের ভিত্তি তৈরি করতে পারে। বলশেভিকরা ১৯১৭ সালে ক্ষমতায় এসে কেবল সমগ্র রাশিয়ার বিদ্যুদয়ন করার ধারণাকেই সমর্থন করেননি, বরং এটিকে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রধান হাতিয়ারও করে তুলেছিলেন। সেই সময়ে রাশিয়ার উন্নয়ন সামরিকায়িত ‘‘শ্রমিক বাহিনী’’ প্রয়োগ করে হয়নি। যুদ্ধ-পূর্ব শিল্পের ধ্বংসস্তুপের পুনরুদ্ধারের জন্য অদক্ষ কৃষক-শ্রমিক জনসাধারণ নিয়োগ নয় (যেমনটি ট্রটস্কি প্রস্তাব করেছিলেন), শুধুমাত্র সোভিয়েত অবকাঠামোর অধীনে বৃহৎ বিদ্যুদায়িত শিল্পের একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করে এবং রাষ্ট্রীয় সমর্থনকে কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে অর্থনীতির আমূল পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে নির্ধারিত হয়েছিল। উপরন্তু, বলশেভিকরা এটি বুঝতে পেরেছিলেন, কৃষক জীবনকে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার শক্তিশালী মাধ্যম ছিল বিদ্যুদয়ন।
GOELRO পরিকল্পনার বিকাশের পটভূমি
প্রাক বিপ্লব যুগে ইলেকট্রিক লাইটিং সোসাইটি-র মালিকানাধীন প্রায় ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট ছিল। ১৯১৫ সালে মস্কোর কাছে একটি পিট-ভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র-ইলেকট্রোপেরেডচায়া (পাওয়ার ট্রান্সমিশন)-চালু করা হয়েছিল যার উদ্দেশ্য ছিল ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে মস্কোতে বিদ্যুৎ সংবহন করা।
১৯০০ সাল থেকে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের উদ্যোগে অল-রাশিয়ান ইলেক্ট্রোটেকনিক্যাল কংগ্রেসগুলি অনুষ্ঠিত হতে শুরু করে।এই ইলেক্ট্রোটেকনিক্যাল কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীকালে রাশিয়ার বিদ্যুদয়নের জন্য রাষ্ট্রীয় কমিশন (GOELRO)-এর কাজে জড়িত ছিলেন, যা ১৯২০ সালের গোড়ার দিকে সোভিয়েত সরকারের সিদ্ধান্তে তৈরি হয়েছিল অল-রাশিয়ান সেন্ট্রাল এক্সিকিউটিভ কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক।
জি ক্রিজহানভস্কি বিদ্যুদয়নের প্রকল্পের অন্যতম সূচনাকারী, শুধুমাত্র লেনিনের একজন রাজনৈতিক সহযোগী ছিলেন না, তিনি ১৯১৭ সালে মস্কো বিদ্রোহের প্রস্তুতিতে অংশগ্রহণকারীও ছিলেন। কিন্তু এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন পেশাদার পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার—যাকে এই উন্নয়নের নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। ১৮৮৬ সালে স্থাপিত ইলেকট্রিক লাইটিং সোসাইটিতে কাজ করার সময় তিনি বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক রচনা ‘‘অন দ্য নেচার অফ ইলেকট্রিক কারেন্ট’’ (১৯০৯) লিখেছিলেন এবং মস্কোর কাছে প্রথম পিট-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। একজন রাজনীতিবিদ এবং একজন পেশাদারের একই অঙ্গে এই ধরনের সংমিশ্রণ, যিনি লেনিনের ব্যক্তিগত আস্থাভাজন এবং বিজ্ঞানী, প্রকৃতরূপে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তি। তিনি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের প্রযুক্তিবিদদের মধ্যে সহজেই সম্মান ও আস্থা অর্জন করেছিলেন।
যদিও এই নথি প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময়কাল (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ১৯২০) এক বছরেরও কম ছিল, এই কমিশন শক্তি এবং অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান এবং অর্থনীতির দর্শনের ক্ষেত্রে অনেক দেশীয় এবং বিশ্ব বিশেষজ্ঞের অর্জনকে মূর্ত করেছিল। ব্যাপক উন্নয়নের উপর শুধু নয়, এই উন্নয়নের প্রধান যুগান্তকারী আকরের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল। ইংরেজি কল্পবিজ্ঞান লেখক এইচ জি ওয়েলস যদি লেনিনকে ‘‘ক্রেমলিনের স্বপ্নদ্রষ্টা’’ বলে অভিহিত করেন, তবে ক্রিজহানভস্কি এই ‘‘স্বপ্নগুলি’’কে কেবল তার সময়কালের নয়, সমাজতন্ত্রের সমগ্র যুগের রাষ্ট্রীয় দলিলের স্তরে নিয়ে এসেছিলেন।
সোভিয়েতের অষ্টম কংগ্রেসে আগত প্রতিটি প্রতিনিধিকে ৬৫০ পৃষ্ঠার GOELRO পরিকল্পনার একটি করে কপি দেওয়া হয়। অন্ধকারাচ্ছন্ন বলশই থিয়েটারের স্টেজ জুড়ে তখন রাশিয়ার বৃহৎ একটি মানচিত্র। সেই মানচিত্রে যেখানে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে এবং যেখানে যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হবে, সেই স্থানগুলিতে একটি করে বাল্ব বসানো। ক্রিজহানভস্কি GOELRO পরিকল্পনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করছেন স্টেজে, আর একটি একটি করে বাল্ব জ্বলে উঠছে। শেষ বাল্বটি জ্বলে ওঠার সাথেই উপস্থিত সব প্রতিনিধি নিশ্চিত বুঝলেন তাদের ভবিষ্যতের দিশারী কী — প্রশ্নাতীতভাবে বিদ্যুদয়ন। সোভিয়েতের অষ্টম কংগ্রেসে এই পরিকল্পনাটি উপস্থাপনের পরে লেনিন এটিকে পার্টির দ্বিতীয় কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছিলেন। লেনিন বলেছিলেন —কর্মসূচি ব্যক্ত করে আমরা কী করতে চাই, আর GOELRO পরিকল্পনা ব্যক্ত করে কীভাবে আমরা তা অর্জন করতে পারি।
GOELRO পরবর্তী বিদ্যুৎ উৎপাদন চিত্র
১৯৩১ সালে ৮.৮ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছানো হয়েছিল, এবং জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৩২ সালে প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার শেষ নাগাদ এটি ১৩.৫ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা, ১৯৩৭ সালের মধ্যে ৩৬ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা এবং ১৯৪০ সালের মধ্যে ৪৮ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টায় পৌঁছেছিল। ১৯১৩ সালে উৎপাদন ছিল মোটে ১.৯ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা।
রাশিয়ায় GOELRO পরিকল্পনা এবং আধুনিক প্রযুক্তিগত কৌশল
এপ্রিল ১৯২০-তে অনুষ্ঠিত নবম পার্টি কংগ্রেসে অর্থনৈতিক পুনরুত্থানকে আশু লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন সবাই। এক অভিন্ন জাতীয় স্তরের পরিকল্পনা কতটা জরুরি, সেই বিষয়ে পার্টিতে কোনো মতভেদ ছিল না। নবম পার্টি কংগ্রেস গুরুত্বের বিচারে কিছু লক্ষ্য স্থির করে। পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি ও খাদ্য শস্য, জ্বালানি, কাঁচামালের মজুত বৃদ্ধি; পরিবহণ, জ্বালানি নিষ্কাশন, কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আধুনিক যন্ত্রের উৎপাদন; ভোগ্য পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে আধুনিক যন্ত্রাংশের উৎপাদন; ভোগ্য পণ্যের বিক্রি বাড়ানো।
লেনিনের নিউ ইকোনমিক পলিসির পদাঙ্ক অনুসরণ করেই অর্থনীতি চাঙ্গা করার দাওয়াই খোঁজা হয়েছিল। কীভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো ফলপ্রসূ হবে, তার উত্তর নিহিত ছিল GOELRO পরিকল্পনার মধ্যে।
GOELRO পরিকল্পনা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সাধারণ পঞ্চবার্ষিক কর্মসূচি গঠনের মাধ্যমে সোভিয়েত রাশিয়ায় ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। পরিতাপের বিষয় এই যে, সময়ের সাথে সাথে এই পরিকল্পনা একটি রাজনৈতিক দলিল হিসাবে তার গুরুত্ব হারিয়েছে।বিদ্যুতের জয় তার তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের সাথে যুক্ত:
● রাশিয়ার দখলে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে এই ধরনের শক্তির উৎসের বহুমুখিতা: পিট, জ্বালানি কাঠ, কয়লা, জলবিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, পারমাণবিক শক্তি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি;
● পাবলিক প্রোডাকশন এবং পাবলিক ইউটিলিটিগুলির সমস্ত ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুবিধা; শিল্পে বিদ্যুৎ প্রক্রিয়ার জন্য, দৈনন্দিন জীবনে আলো এবং বৈদ্যুতিক তাপ পাওয়ার জন্য, পরিবহণের বিদ্যুদয়নের জন্য এবং পরে চিকিৎসা এবং সামাজিক ক্ষেত্রে এর ব্যবহার। এর ভিত্তি ছিল রাশিয়ার ব্যাপক বিদ্যুদয়ন, যা GOELRO প্ল্যান দ্বারা নির্ধারিত হয়েছিল। এই বিদ্যুদয়ন দেশটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়ার শিল্পকেন্দ্রগুলির বৃহৎ অংশ দখল করে ফেলা নাৎসি বাহিনীকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দেয়, — যখন প্রান্তিক শক্তি সুবিধাগুলি ভোলগা এবং ইয়েনিসেই, কুজবাস এবং সাখালিনের আঞ্চলিক উৎপাদন কমপ্লেক্সের পূর্বশর্ত হয়ে ওঠে। এই আঞ্চলিক উৎপাদনে ভর করেই নাৎসি বাহিনীর ক্ষয়িষ্ণু যুদ্ধ শক্তির বিপরীতে লাল ফৌজের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে যুদ্ধের বয়স বাড়ার সাথে সাথে।
● সহজতম রিলে সার্কিট এবং সবচেয়ে জটিল ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়াগুলির নিয়ন্ত্রণযোগ্যতা।
গত ৩০ বছরে, রাশিয়ান সরকার ‘‘২০১০ থেকে ২০৩৫ পর্যন্ত সময়ের জন্য রাশিয়ার শক্তি কৌশল’’ শিরোনামে বেশ কয়েকটি নথি প্রকাশ করেছে। এই নথিগুলিতে, নতুন বাজারের বাস্তবতা এবং পরিস্থিতিতে নতুন বাহ্যিক সমস্যা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সুযোগগুলির সাথে রাষ্ট্র এবং শক্তি সংস্থাগুলির মধ্যে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের নতুন সম্বন্ধ খুঁজে বের করার জন্য রাশিয়ার সামগ্রিক শক্তি বিকাশের লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু এই নথিগুলিতে মূল জিনিসটি ছিল না যা গুণগতভাবে GOELRO পরিকল্পনাকে আলাদা করে — যেখানে সোভিয়েতের কৌশলগত উন্নয়নের সামগ্রিক লক্ষ্যের স্পষ্ট ধারণার কথা ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, শক্তির চাহিদার সঠিক পূর্বাভাস এবং নতুন শক্তি এবং সংশ্লিষ্ট শিল্পের সমন্বিত বিকাশের জন্য কোনো সামগ্রিক জাতীয় ধারণার অনুপস্থিতি আজ বৃদ্ধির জন্য নয় — বেঁচে থাকার জন্য শক্তি কৌশল গ্রহণের দিকে পরিচালিত হই আমরা। পুঁজিবাদী মতাদর্শের প্রভাবের অধীনে মূল নীতিটি ছিল 3D নীতি: ডিকার্বনাইজেশন, ডিসেন্ট্রালাইজেশন এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন। এটি শুধুমাত্র পরিমাণগত উন্নয়নের অস্বীকৃতির দিকে পরিচালিত করে না, নতুন শক্তি ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে সক্রিয় সামাজিক জীবনের অধিকার হিসেবে বিদ্যুতের গুণগত স্বীকৃতিকে নস্যাৎ করে। সমাজতন্ত্রের সামগ্রিক অগ্রগতির শিক্ষার বিপরীতে দাঁড়িয়ে ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাদী ট্যাবলেট, যা সমাজের রোগ নির্মূল করতে পারেনি। পারবে না কোনোদিনই।