৬০ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৫ নভেম্বর, ২০২২ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯
নভেম্বর বিপ্লবের আলোয় ভারত
সুপ্রতীপ রায়
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
গত শতাব্দীর শুরু থেকেই রাশিয়া এবং ভারতে ঘটা রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম সম্পর্কে পারস্পরিক সংবেদনশীলতা ছিল। নভেম্বর বিপ্লবের পরে ভারতের ক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র রাজনৈতিক বৃত্তে থাকা কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্নদের মধ্যে সীমিত ছিল না। সংবেদনশীলতার পরিধি ছাড়িয়ে তাকে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ব্যাপ্তিতে সংক্রামিত করে নভেম্বর বিপ্লব। তাই ১৯১৭-র ৭ নভেম্বর শুধু নয়, ১৯৪৫ এর ২ মে সোভিয়েতের কাছে ফ্যাসিস্ট হিটলারের পতন এশিয়া, আফ্রিকার উপনিবেশবাসী সাধারণ মানুষের মুক্তির পাশাপাশি আমাদের দেশেরও মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে।
১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লব সফল হওয়ার পর আতঙ্কিত পুঁজিবাদী শিবির সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং মহামতি লেনিনের বিরুদ্ধে কুৎসিত প্রচার সংগঠিত করে। আমাদের দেশেও এই ধরনের প্রচার পুঁজিবাদের দোসররা করেছেন এবং এখনও করছেন। কিন্তু ভারতবর্ষ সম্পর্কে লেনিনের আগ্রহ ছিল। ভারতে ব্রিটিশ শোষণ সম্পর্কে লেনিন যেমন কলম ধরেছিলেন তেমনি জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে তিনি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
ভারত সহ প্রাচ্যের দেশগুলির শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা সম্পর্কে লেনিনের পরিষ্কার ধারণা ছিল। ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের শোষিত মানুষের আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে লেনিনের গভীর পড়াশুনা ছিল।ভারতবর্ষের জনগণের উপর ব্রিটিশ শক্তির অত্যাচার ও নিপীড়ন সম্পর্কে লেনিনের সম্যক ধারণা ছিল। লেনিনের প্রবন্ধ, ‘মেটেরিয়াল ইন ওয়ার্ল্ড’-এ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের জনজাগরণের উল্লেখ ছিল। লেনিনের ‘দ্য ডেভেলপমেন্ট অব ক্যাপিটালিজম ইন রাশিয়া’ গ্রন্থে ভারত ও রাশিয়ার গ্রামীণ অর্থনীতিতে সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। ভারতীয় ভূমি ব্যবস্থার বিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে লেনিন সচেতন ছিলেন।
১৯০৫ সালের বিপ্লব রাশিয়াতে ব্যর্থ হয়েছিল।আবার ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলার মানুষ গর্জে উঠেছিলেন। এ প্রসঙ্গে লেনিন তাঁর রচনায় উল্লেখ করেছিলেন, ‘‘জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করার উদ্দেশ্য নিয়েই সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বঙ্গভঙ্গের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিল।’’ লেনিন অন্যায়ভাবে তিলকের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেছিলেন। ১৯১১ সালে ‘ব্রিটিশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্মেলন’ প্রসঙ্গে আলোচনায় ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নটি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করেছিলেন। ১৯১৩ সালে প্রাভদা’তে ‘সভ্য ও ইয়োরোপীয় বর্বরবাসী’ প্রবন্ধে ভারতে ব্রিটিশ অত্যাচারের কাহিনি তুলে ধরেন ও তীব্র প্রতিবাদ করেন।
ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত
১৯১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপিন চন্দ্র পাল এক জনসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে সোভিয়েত বিপ্লবকে অভিনন্দন জানান। এর আগে রুশ বিপ্লবের জয়লাভের খবরে আনন্দিত কাজী নজরুল করাচির সেনানিবাসে উৎসব করেছিলেন।
বিশ শতকের শুরু থেকেই ভারতীয় বিপ্লবীদের আন্তর্জাতিক যোগোযোগ গড়ে উঠেছিল। এও আমরা জানি বাংলার সশস্ত্র বিপ্লববাদীরা আন্তর্জাতিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভারত থেকে ব্রিটিশদের বিতাড়িত করতে চেয়েছিলেন। ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’ গঠনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছিল। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটা অংশের মধ্যে কমিউনিজমের প্রতি আকর্ষণ ছিল। ১৯২০-র দশকে ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। রবীন্দ্রনাথ অনেক বিরোধিতাকে তুচ্ছ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। কবিগুরুর রুশ ভ্রমণ ব্রিটিশ সরকার ভালো চোখে দেখেনি। যাইহোক রবীন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়া পরিভ্রমণে গিয়েছিলেন। তিনি লিখলেন সেই বিখ্যাত কথা, ‘‘আপাতত রাশিয়া এসেছি-না হলে এ জন্মের তীর্থদর্শন অসমাপ্ত থাকত।’’ কবিগুরুর ‘‘রাশিয়ার চিঠি’’ কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী নন এমন মানুষদের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে আগ্রহ ও আকর্ষণ দুইই বৃদ্ধি করে। ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রবন্ধ (যা অধ্যাপক সুশোভন সরকার লিখেছিলেন) সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। রুশ বিপ্লবের অব্যবহিত পরেই চেন্নাই থেকে ‘‘দি লেসনস ফ্রম রাশিয়া’’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি পুস্তিকায় লেখা হয়েছিল, ‘‘রুশ বিপ্লব আমাদের অভিভূত ও অনুপ্রাণিত করেছে।’’ পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের রুশ বিপ্লব অনুপ্রাণিত করেছিল।
১৯১৮ সালের ২৩ নভেম্বর লেনিনের সঙ্গে ভারতীয়দের মধ্য প্রথম সাক্ষাৎ হয় আবদুল জব্বার খৈরী ও আবদুল সাত্তার খৈরীর। লেনিন তাঁদের সঙ্গে ভারত সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেন।জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের পর জানা যায়, লেনিন অমৃতবাজার পত্রিকার কথা জানতেন। এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের পর তৃতীয় আন্তর্জাতিকের এক প্রতিনিধি লেনিনের পক্ষে এক তারবার্তা অমৃতবাজার পত্রিকায় পাঠিয়েছিলেন।অমৃতবাজার পত্রিকায় সোভিয়েত ফরেন ব্যুরো প্রেরিত একটা ছোটো চিঠি ছাপা হয়েছিল। চিঠিটি ছিল নিম্নরূপঃ
‘‘সম্পাদক সমীপেষু,আপনার বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রে প্রকাশিত জালিয়ানওয়ালবাগের রক্তাক্ত সংঘর্ষের বিবরণ পড়েছেন মিস্টার লেনিন।তাঁর পক্ষ থেকে ভারতীয় জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি আমাকে একথা জানাতে বলেছেন যে,তাঁর ভারতীয় ভাইদের ন্যায্য আদর্শের প্রতি সোভিয়েত সরকারের পূর্ণ সহানুভূতি আছে।’’ (জয়দেব বসু, লেনিন, প্যাপিরাস, কলকাতা, ২০১০, পৃঃ ৭-৮)
মৌলানা বরকতউলার সঙ্গে লেনিনের সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯১৯ সালের ৭মে। এর কিছুদিন পর রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ এক দল নিয়ে লেনিনের সঙ্গে দেখা করেন। মহেন্দ্রপ্রতাপ লেনিনকে ‘রিলিজিয়ন অব লাভ’ নামে একটি গ্রন্থ উপহার দেন। লেনিন বলেন, বইটি আগেই পাঠ করেছেন। মহেন্দ্রপ্রতাপকে এই বইটি সম্পর্কে লেনিন বলেছিলেন, ‘‘ধর্ম ভারতীয় জনগণকে বাঁচাতে পারবে না। টলস্টয় ও তাঁর অনুগামীরা এই ধরনের প্রয়াস নিয়েছিল কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হয়েছে। বরং ভারতে গিয়ে শ্রেণিসংগ্রামের প্রচার করুন দেখবেন ভারতের স্বাধীনতা নিকটবর্তী হয়েছে।’
বোম্বাইয়ের শ্রমিকশ্রেণি ১৯০৮ সালে ছয়দিনব্যাপী ধর্মঘট সংগঠিত করে বালগঙ্গাধর তিলককে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে। এর তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন লেনিন। এবিষয়ে লেনিন তীব্র প্রতিবাদ করে যে মন্তব্য করেছিলেন তা ১৯০৮ সালের ৫ আগস্ট বলশেভিক পত্রিকা ‘প্রলেতারি’তে প্রকাশিত হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে সকল বিপ্লবী ইয়োরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের অনেকের সঙ্গেই লেনিনের যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল। যেমন, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র নাথ রায় প্রমুখ।
লেনিন মানবেন্দ্রনাথ রায়কে ভারত বিষয়ক গ্রন্থ সংগ্রহ করে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। অবনী মুখার্জি লেনিনকে মালাবার রিভোল্ট নামে একটি নিবন্ধ লিখে পাঠিয়েছিলেন। নিবন্ধটি পাঠ করে লেনিন তাতে ‘মন্দ নয়’ কথাটি লিখে প্রাভদা’য় ছাপতে বলেছিলেন। লেনিন প্রাভদা’তে আরও বেশি বেশি করে ভারতীয় লেখকদের লেখা যাতে প্রকাশিত হয় তা চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন? এবিষয়ে তিনি বুখারিনকে এক পত্রে লিখেছিলেন -
‘‘নিবন্ধটি পাঠালাম, পড়ে দেখুন। ভারতীয় কমরেডদের লেখা। যেটা পাঠালাম শুধু সেটাই নয়, যে কোনো ভালো লেখা যত বেশি সম্ভব প্রকাশিত হলে ভারতীয়দের যেমন উৎসাহিত করা হবে, পাশাপাশি ভারতবর্ষ এবং সেখানকার বৈপ্লবিক কাজকর্ম সম্পর্কে আমরা আরও বেশি বেশি করে তথ্য সংগ্রহ করতে পারব, অনেক কিছু জানতে পারব।’’ (Colleced Works,Vol 45, p376)
১৯২০ সালের ১৯ জুলাই থেকে ৭আগস্ট মস্কোতে অনুষ্ঠিত কমিনটার্নের ২য় কংগ্রেসে অন্যন্য বিষয়ের সঙ্গে ভারতের অবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। এই মহাসম্মেলনে একাধিক ভারতীয় প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেসে লেনিনের সন্ধর্ভসমূহ গৃহীত হয়। লেনিনের বক্তব্য ছিলঃ ঔপনিবেশিক এবং আধা-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলোতে বিপ্লবের ধরন হবে গণতন্ত্রিক চরিত্রের, যেখানে কৃষক প্রশ্ন এবং সাম্রাজ্যবাদ উৎখাতের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও নভেম্বর বিপ্লবের পরবর্তীতে প্রাচ্যের দেশগুলোর বিশেষত ভারতের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করেছিলেন লেনিন।
সোভিয়েত ইউনিয়নকে যখন জার্মানি আক্রমণ করে তখন আমাদের দেশে কমিউনিস্ট পার্টি বেআইনি ছিল। সেই অবস্থার মধ্যেই বাংলার বুদ্ধিজীবীরা আক্রান্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে প্রচার সংগঠিত করেছিলেন। ২২জুন, ১৯৪২ সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন। ১৯৪১ সালের ২১ জুলাই বাংলার বিভিন্ন অংশের মানুষের উদ্যোগে ‘সোভিয়েত দিবস’ পালিত হয়। এই দিবস পালনের লক্ষ্য ছিল - সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জানানো। ওই বছরের ২০ জুলাই ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’য় প্রায় একশত বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট মানুষের আবেদনমূলক বিবৃতি প্রকাশিত হয়। এই আবেদনমূলক বিবৃতির শিরোনাম ছিল - ‘‘মানব কল্যাণে সোভিয়েতের অবদানঃ নাৎসি সামরিক অভিযানে পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনাঃ সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতি বাংলার মনীষীবৃন্দের সহানুভূতি।’’ এই আবেদনমূলক বিবৃতির প্রথমেই আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের নাম বড়ো হরফে ছাপা ছিল। ১৯৪৯ সালের ১৯ জুলাই নিখিল ভারত কিষান সভার অস্থায়ী সাধারণ সম্পাদক গোপাল হালদার লন্ডনে অবস্থিত সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত মেইস্কির কাছে সোভিয়েত রাশিয়ার সমর্থনে একটি তারবার্তা পাঠান।
অবিভক্ত বাংলায় জ্যোতি বসু সম্পাদক থাকার সময় ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’ ফ্যাসিস্ত বিরোধী আন্দোলনেরই সহায়ক শক্তি হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ‘ফ্রেন্ডস অব সোভিয়েত ইউনিয়ন’ যাঁরা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নন তাঁদেরও সক্রিয় সহযোগিতা পেয়েছিল। যেমন - সি ভি রমন, মেঘনাদ সাহা, হোমি ভাবা, রাহুল সাংকৃত্যায়ন, ক্ষিতিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায়, চিত্রকর যামিনী রায় আন্তরিক সহযোগিতা করেছিলেন। ১৯৪২ সালে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি ফ্যাসিস্ত শক্তির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের লড়াইয়ের সমর্থনে এক প্রস্তাব গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকার সমর্থনে কমিউনিস্ট পার্টির বাইরের মানুষও এগিয়ে এসেছিলেন, ‘সোভিয়েত সুহৃদ সমিতি’র সক্রিয় সদস্য হয়েছিলেন। এটি প্রমাণিত হয় তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘জনযুদ্ধ’ পত্রিকার রিপোর্ট (১৭ জুন, ১৯৪২) থেকে। হীরেন মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেনঃ ‘‘সকলেই অবশ্য কর্মী নন। সভাসমিতি অনেকের ধাতে সয় না, বিপ্লবী আওয়াজ তোলা স্বভাববিরুদ্ধ, কিন্তু তাঁরা অনেকেই সমিতিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই আজ ফ্যাসিজমের ছোবল থেকে দেশকে বাঁচাবার চেষ্টায় সাধ্যানুযায়ী লাগতে চাইছেন সাম্যবাদী কর্মীদের উপর নির্ভর না করে। যে ব্যাপক সমর্থন প্রথম থেকে পেয়েছি, তাকে বাড়িয়ে তোলার চেষ্টাই আজ প্রধান কর্তব্য।’’
পরাধীন ভারত শুধু নয়, স্বাধীনতার পর জোট নিরপেক্ষ ভারতের রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রেও সোভিয়েত রাশিয়ার সাহায্য ছিল অন্যতম প্রধান অবলম্বন। শিল্প সহ ভারতীয় অর্থনীতিতে গৃহীত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের ছাপ সুস্পষ্ট ছিল। ভারতবর্ষে নভেম্বর বিপ্লবের প্রভাব ব্যাপক। নভেম্বর বিপ্লব পরাধীন ভারতবাসীকে আশার আলো দেখিয়েছিল।