E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৫ নভেম্বর, ২০২২ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

‘বন্দরে বন্ধনকাল এবারের মতো হল শেষ...’

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


ঋতুচক্র চলছে কি? তা পরীক্ষা করতে অন্তর্বাস খুলে প্রমাণ দিতে হয়েছিল ছাত্রীদের। মহিলা কলেজের কর্তৃপক্ষ ৬৮ জন ছাত্রীর পোশাক খুলে পরীক্ষা করে দেখে তাঁদের ঋতু হয়েছে কিনা। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মহিলা হোস্টেল প্রধানের দাবি ছিল, ঋতুচক্রের সময় অনেক ছাত্রী ধর্মীয় রীতি-নীতি ঠিকমতো পালন করছে না। তাই তিনি কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর প্রিন্সিপাল ছাত্রীদের শৌচালয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁদের অন্তর্বাস খুলিয়ে পরীক্ষা করেন। এটা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির ঘটনা। গুজরাটের ভুজ জেলার শ্রী সহজানন্দ গার্লস ইনস্টিটিউটের। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ নামক গালভরা স্লোগান আওড়ালেও বেটিদের এই চরম অপমানে আমাদের মধ্যে খুব একটা কিছু নাড়াচাড়া পড়েনি।

‘পহলে আগ লাগায়া কিসনে?’ অথবা ‘হর ক্রিয়া কী প্রতিক্রিয়া হোতি হ্যায়’। কুড়ি বছরের পুরনো ঘটনার কাসুন্দি ঘেঁটে আজ আর বিশেষ লাভ নেই। তা সে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য হলেও। কারণ ২০০২-এর ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে মার্চের প্রথম ক’দিন - গোধরায় সবরমতী এক্সপ্রেসে আগুন লাগা থেকে গুজরাট গণহত্যা - পুরো পর্বটাই দগদগে অতীত। হাজারো মলমেও যে ক্ষতচিহ্ন যেমন মিটবে না, তেমনই ভোলা যাবেনা প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু (বেসরকারি মতে দু’হাজার) এবং প্রায় এক লাখ মানুষ (বেসরকারি মতে দেড় লাখের বেশি) গৃহহীন হবার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ‘সর্বজনশ্রদ্ধেয়’ অটলবিহারী বাজপেয়ীর কিংবা গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওই উক্তিগুলো। অতি অবশ্যই ভোলা যাবেনা, ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পর বিজয়ী নরেন্দ্র মোদিকে এই রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফুল পাঠানোর ঘটনা। সৌজন্য মে ওসব অল্পবিস্তর হোতা হ্যায়।

২০০১ সালে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনে পরাজয় এবং তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপি’র পরাজয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী বদল করা ছাড়া বিজেপি’র সামনে কোনো পথ খোলা ছিল না। কারণ তার আগেই লাগামছাড়া দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, নড়বড়ে প্রশাসন, ভুজ-এ ভয়ংকর ভূমিকম্প -পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে বিজেপি’র জনসমর্থন একেবারে তলানিতে। অতএব, ৭ অক্টোবর, ২০০১ কেশুভাই প্যাটেলকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো হয় লালকৃষ্ণ আদবানীর একসময়ের ভাবশিষ্য নরেন্দ্র মোদিকে। ২০০২ সালের ডিসেম্বরে বিজেপি-কে গুজরাটের সাগর পার করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় আমাদের আজকের প্রধানমন্ত্রীকে। ২০০২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজকোট-২ আসন থেকে বিধানসভা উপনির্বাচনে নির্বাচিত হন নরেন্দ্র মোদি। আর ২০০২-এর ডিসেম্বর মাসের বিধানসভা নির্বাচনে ৪৯.৮৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ১২৭ আসনে জিতে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। দাঙ্গাবিধ্বস্ত অঞ্চলের ৬৫ আসনের মধ্যে বিজেপি’র জয় আসে ৫৩ আসনে। এখন প্রায় প্রতি ঘটনাতেই যে ক্রোনোলজির কথা ঘুরে ফিরে আসে, একবার শুধু সেই ক্রোনোলজিটায় খেয়াল রাখলেই হবে। ঘটনার টাইমলাইনে একটু নজর করলেই একেবারে দুধ কা দুধ, পানি কা পানি।

১৮২ আসনবিশিষ্ট গুজরাট বিধানসভায় বিজেপি এককভাবে ক্ষমতায় আছে একটানা ২৭ বছর। কংগ্রেস শেষবার ক্ষমতায় এসেছিল ১৯৮৫-তে। ১৪৯ আসনে জিতে। সেবার বিজেপি’র আসন ছিল ১১। জনতা পার্টির ১৪। ১৯৯০-এর নির্বাচনে গুজরাটে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কংগ্রেস নেমে যায় ৩৩ আসনে। বিজেপি পায় ৬৭ আসন এবং জনতা দল পায় ৭০ আসন। জনতা দল এবং বিজেপি’র জোট সরকার ক্ষমতায় আসে। মুখ্যমন্ত্রী হন জনতা দলের চিমনভাই প্যাটেল এবং উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপি’র কেশুভাই প্যাটেল। এরপর ১৯৯৫। একক শক্তিতে ১২১ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। কংগ্রেস পায় ৪৫ আসন। বিজেপি’র অন্তঃদ্বন্দ্বে ১৯৯৮ সালে ফের বিধানসভা নির্বাচন হয় গুজরাটে। এবার বিজেপি পায় ১১৭ আসন এবং কংগ্রেস পায় ৫৩ আসন। ২০০২-এর কথা আগেই বলা আছে। গুজরাট গণহত্যা-পরবর্তী ভোটে বিজেপি পায় ১২৭ আসন এবং কংগ্রেস পায় ৫১ আসন। ২০০৭-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ১১৭ এবং কংগ্রেস ৫৯ আসন। ২০১২-র নির্বাচনে বিজেপি পায় ১১৭ এবং কংগ্রেস ৬১ এবং সর্বশেষ গুজরাট বিধানসভা আসনে বিজেপি পায় ৯৯ আসন এবং কংগ্রেস পায় ৭৭ আসন। এবারের ১ এবং ৫ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ এবং নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে ৮ ডিসেম্বর।

‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর কথা বলে রাজনীতি করা বিজেপি গুজরাট নির্বাচন জিততে মরিয়া। কারণ দেশের সামনে ‘গুজরাট মডেল’ বলে যা খাওয়ানো হয়, গুজরাটের নির্বাচনে পরাজিত হলে সেই ইমেজ ধাক্কা খাবে। তাই একসঙ্গে হিমাচল প্রদেশ এবং গুজরাটের নির্বাচন ঘোষণা হবার কথা থাকলেও কিছুদিনের জন্য পিছিয়ে যায় গুজরাটের নির্বাচন ঘোষণা। ১৪ অক্টোবর হিমাচল প্রদেশের নির্বাচনের ঘোষণা হয়। ভোট হয় ১২ নভেম্বর। এরপর সরকারিস্তরে সমস্ত সুযোগ সুবিধা প্রকল্প ঘোষণার শেষে ৩ নভেম্বর গুজরাটের ভোটের দিনক্ষণ ঘোষিত হয়। যে ঘোষণার দিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এক তির্যক ট্যুইট করে জানানো হয়, ‘ভারতের নির্বাচন কমিশন এক স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এরা নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনা করে।’ এই ট্যুইট প্রসঙ্গে মন্তব্য করার বোধহয় প্রয়োজন নেই। সমঝদারোকে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়।

আসন্ন গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া আটকাতে এবং নির্বাচনী ক্ষতি কমাতে দলের বহু সিনিয়র নেতা এবং মন্ত্রীদের মনোনয়ন দেয়নি বিজেপি। পরিবর্তে, গত ২৭ বছর ধরে রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা বিজেপি এবার ক্ষমতা ধরে রাখতে দলবদল করে বিজেপি-তে আসা নেতৃত্ব এবং নতুন মুখের উপর নির্ভর করছে। বিজেপি’র জারি করা প্রার্থীদের প্রথম তালিকায় ছিল ১৭ জন দলবদলকারী এবং ৩৮ জন নতুন মুখ। ১৬০ জন প্রার্থীর তালিকায় ১৪ জন মহিলা, ১৩ জন তফশিলি জাতি এবং ২৪ জন তফশিলি উপজাতি প্রার্থী৷ পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনী বিপর্যয়ের আশঙ্কায় বেশ কিছু নেতাকে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে বিজেপি হাইকম্যান্ড। তবে মনোনয়ন পেয়েছেন চন্দ্রসিং রাউলজি। যিনি সম্প্রতি বিলকিস বানোর ধর্ষণকারীদের ‘সংস্কারী ব্রাহ্মণ’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গোধরা কেন্দ্র থেকে। বিলকিস বানোর ১১ জন ধর্ষকের মুক্তির বিষয় বিবেচনা করার জন্য যে প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল তার সদস্য ছিলেন এই রাউলজি। রাউলজি সহ প্যানেলের সব সদস্যই ধর্ষকদের মুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে, ৯ নভেম্বর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন ভগভাই বাড়ড়। তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। অন্য এক প্রাক্তন কংগ্রেস কর্মী মোহনসিংহ রাথভা, যিনি নভেম্বরের প্রথমেই তাঁর দুই ছেলে সহ বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন, তাঁকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে। তাঁর ছেলে রাজেন্দ্র সিংহকে ছোটোদেপুর আসন থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। মোরবিতে সেতু বিপর্যয়ের পর এই কেন্দ্রে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে বিজেপি। ৩০ অক্টোবর এখানেই ঝুলন্ত সেতু ধসে ১৩৫ জন মারা যান। যে ঘটনায় প্রকাশ্যে চলে আসে ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতি। এই কেন্দ্রের বর্তমান বিজেপি বিধায়ক ব্রিজেশ মের্জা, যিনি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপি-তে এসেছিলেন তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। উল্লেখযোগ্যভাবে আহমেদাবাদের ১১ জন বর্তমান বিধায়ক এবং রাজকোটের ৪ জন বিধায়ককে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রার্থীপদ জমা দেওয়ায়, দুই দফায় মোট ১৯ জন বিধায়ক ও প্রবীণ নেতাকে সাসপেন্ড করেছে বিজেপি। এঁরা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের অনুরোধ সত্ত্বেও বিজেপি’র বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়াননি।

কল্পনা, বাস্তব, গল্প, তথ্য, পরিসংখ্যান - প্রত্যেকটা বিষয় আলাদা আলাদা। কল্পনায় বা গল্পে গোরু গাছে তোলা গেলেও বাস্তব তথ্য এবং পরিসংখ্যানে তা করা সম্ভব নয়। ঠিক এই জায়গা থেকেই ‘গুজরাট মডেল’ নামক যে বিষয় আমাদের গুলে খাওয়ানো হয় তা আদৌ কতটা বাস্তব সে প্রশ্ন তোলাই যায়। ঠিক যেমন প্রশ্ন তোলা যায় দীর্ঘ ২৭ বছর বিজেপি শাসনে থাকা গুজরাটে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ কতটা হলো? আদৌ কিছু হলো? নাকি সবটাই নির্বাচনী প্রচারে সস্তার হাততালি পাবার ডায়লগ? লাভের বেলায় শুধুই ঠনঠন গোপাল?

একবার দেখে নেওয়া যেতেই পারে মডেল গুজরাটের হাল হকিকত। কেন্দ্রীয় তথ্য অনুসারে গুজরাটের গুজরাটের মাত্র ৩৪ শতাংশ মহিলা দশম শ্রেণি পর্যন্ত অথবা তার বেশি পড়াশোনা করেছেন। যা সর্বভারতীয় গড়ের (৪১শতাংশ) চেয়ে কম। ১৮ বছরের নিচে গুজরাটের প্রায় ২২ শতাংশ মহিলার বিয়ে হয়ে যায়। এক্ষেত্রে সর্বভারতীয় গড় ২৩.৩ শতাংশ। প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর হার ২৩। ৬ মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তাল্পতায় ভোগে ৭৯.৭ শতাংশ। বয়সের তুলনায় ওজন কম প্রায় ৪০ শতাংশ শিশুর। বয়সের তুলনায় কম উচ্চতা প্রায় ৩৯ শতাংশ শিশুর। গুজরাটে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৬৩ শতাংশ রক্তাল্পতায় ভোগেন। গুজরাটের সমস্ত মহিলাকে ধরলে রক্তাল্পতায় ভোগার হার ৬৫ শতাংশ। খেতমজুরদের দৈনিক মজুরিতেও নিচের সারিতে গুজরাট। যে রাজ্যে খেতমজুররা দৈনিক মজুরি পান ২৪৩.৬১ টাকা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচারে কেরালা মডেলের কথা একবারও না উঠে এলেও এই সমস্ত ক্ষেত্রেই কেরালা গুজরাটের থেকে অনেক এগিয়ে। অনেক ভালো অবস্থানে। যদিও প্রচার পায় গুজরাট মডেল। সেই গুজরাট। যেখানে হাউডি মোদি অনুষ্ঠান করার জন্য বারো কিলোমিটার রাস্তার দুধারে চার ফুট করে পাঁচিল তুলে ঢেকে দিতে হয় দারিদ্র্য। পাছে বিদেশি সর্বেসর্বা অতিথির সামনে গুজরাট মডেলের ফানুস ফুটো হয়ে যায়।

মডেল গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই উসকে দেওয়া হয়েছে সিএএ বিতর্কও। গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী প্রতিবেশী তিন দেশের সংখ্যালঘুদের, সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী ‘শরণার্থীদের’ ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬ নং ধারা এবং ২০০৯ সালের নাগরিকত্ব বিধি অনুসারে গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাসকারী ওই সমস্ত দেশ ছেড়ে আসা মানুষদের ভারতের নাগরিক হিসাবে নিবন্ধনের অনুমতি এবং তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে। যদিও দীর্ঘ ২৭ বছর গুজরাটে বিজেপি সরকার থাকলেও, এতদিন তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। জানা গেছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানরা দীর্ঘদিন ধরে গুজরাটের আনন্দ এবং মেহসানা জেলায় বসবাস করেন।

সবকা সাথ সবকা বিকাশের গুজরাটে ২০১৭ সালে এবং তার আগে ক্ষমতাসীন বিজেপি-র বিধানসভা নির্বাচনী ইস্তাহারে ধারাবাহিকভাবে বর্ণবৈষম্য দূর করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও গুজরাটের গ্রামে গ্রামে ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। গোহিল, সোলাঙ্কি সম্প্রদায়ের মহিলাদের নবরাত্রি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেওয়া হয়না। মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়না। এমনকী একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামে গ্রামে নিম্ন বর্ণের জন্য আলাদা শ্মশান আছে। বাল্মীকিদের নিজেদের বাসনপত্র ব্যবহার করতে হয়। এমনকী কোনো বিয়েবাড়িতে গেলে নিজেদের খাবার নিজেদের নিয়ে যেতে হয়। স্থানীয়দের বক্তব্য অনুসারে, “নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রার্থীরা ভালো রাস্তা এবং স্থায়ী বাড়ি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো কাজ হয়না। তারা শুধু পাঁচ বছর অন্তর আমাদের কাছে ভোট চাইতে আসেন।” তবে প্রার্থীরাও এঁদের বাড়িতে ঢোকেন না বা স্পর্শ এড়িয়ে চলেন। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ সালে দলিতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক অপরাধ যে সব রাজ্যে সংগঠিত হয়েছে শীর্ষ পাঁচটি বিজেপি শাসিত রাজ্যের মধ্যে একটি হলো গুজরাট।

গুজরাট নির্বাচনের ফলাফল কী হতে পারে তা হয়তো জানা যাবে ৮ ডিসেম্বর। যদিও সামগ্রিক ছবি খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস নির্বাচনী প্রচারে গুজরাট গণহত্যার কথা এড়িয়ে চলছে। বিবিসি-র এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে আহমেদাবাদের সেন্টার ফর সোশ্যাল নলেজ অ্যান্ড অ্যাকশনের পরিচালক ও সমাজবিজ্ঞানী অচ্যুত ইয়াগনিক জানিয়েছেন, ‘‘কংগ্রেস শিবির মনে করে যে, ওই প্রসঙ্গে যদি কিছু না বলা যায়, তাহলেই তাদের বেশি সংখ্যক ভোট দিয়ে যাবে মানুষ। তাই এরকম একটা নীতি নিয়েছে তারা যে দাঙ্গা নিয়ে কিছু বলবেই না।’’ অন্যদিকে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতে আম আদমি পার্টি তেড়েফুঁড়ে নামায় ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে কংগ্রেস। আপাতত অপেক্ষায় থাকা যাক ৮ ডিসেম্বরের জন্য।