E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৫ নভেম্বর, ২০২২ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৯

পরিবেশ আলোচনা

মিশরে অনুষ্ঠিত সিওপি-২৭ - একটি মিস ডাইরেক্টেড ফ্লপ শো

তপন মিশ্র


২০২২ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের যে কয়টি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে আমাদের দেশের ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো - এবছর বিশ্বের প্রথম ও তৃতীয় সর্বাধিক দূষিত শহরের খেতাব পেয়েছে যথাক্রমে দিল্লি এবং কলকাতা। এবং এবছর কেবল পূর্ব ও মধ্য ভারতে খরা ও বন্যার মতো চরম জলবায়ু ঘটনায় (extreme climate event) ২৭৫৫ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশে অতিবৃষ্টি, প্লাবন ও অনাবৃষ্টি; বিগত ৫০০ বছরে মধ্যে ইয়োরোপের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্ম ঋতু; ফিলিপাইনে সুপার টাইফুন রাই-এর আঘাত, কিউবার যুগান্তকারী বিদ্যুৎ ঘাটতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যারিকেন ইয়ানেড়-এর নৃশংস তাণ্ডব বিশ্বের জলবায়ু সংকটের স্পষ্ট বার্তা বহন করছে। একথা স্পষ্ট যে, জলবায়ু সংকটের কারণে বিশ্বের কোনো দেশ তার অর্থনীতি উপর আঘাত থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। তা সত্ত্বেও এবারে মিশরের ‘সরম এল-সেখ’ শহরে বিশ্বের ২০০টি দেশের রাষ্ট্রনায়করা জড়ো হয়ে প্রতিশ্রুতি ছাড়া বিশ্ববাসীকে আর কিছুই দিতে পারেননি।

কিছু মানুষ মনে করেন যে ইয়োরোপ, আমেরিকা জলবায়ু সংকটে পড়লে অন্তত তাদের দেশের মানুষের স্বার্থে তো কিছু ব্যবস্থা নেবে! সে গুড়ে বালি। পুঁজির একমাত্র লক্ষ্য হলো বিনিয়োগের মাধ্যমে মুনাফার পাহাড় বানানো। আমেরিকাবাসী, ইয়োরোপীয় বা ভারতীয়দের জলবায়ু সংকটের কারণে দুর্ভোগ বা মৃত্যু কোনভাবেই রাষ্ট্রনায়কদের বিচলিত করে না। তাদের দেশে পুঁজির সুষ্ঠু বিনিয়োগ এবং মুনাফার নিরাপত্তাই রাষ্ট্রনায়কদের একমাত্র লক্ষ্য। যতই জোড়াতালি দিক না কেন শিল্পোন্নত সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলি, তা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে পরিবেশ সমস্যায় জর্জরিত, দরিদ্র রাষ্ট্রগুলির দ্বন্দ্ব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এবছরের পরিবেশ সম্মেলন যা ইজিপ্টের সরম এল-সেখ শহরে সদ্য অনুষ্ঠিত হলো তা ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন্য ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)-এর ২৭তম অধিবেশন যা কনফারেন্স অফ পার্টিজ (সিওপি-কপ) নামে পরিচিত। ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঠিক হয়। কিন্তু আরও একদিন বাড়াতে হয় এই আলোচনা। ইউএনএফসিসিসি’র সদস্য ১৯৮টি দেশ। এবছর রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে এই পরিবেশ সম্মেলনের ৫০ বছর পুর্তি হলো। তবুও নিরুত্তাপ রয়ে গেল এই আডম্বরপুর্ণ আলোচনা। ১৯৭২ সালে সুইডেনের স্টকহোম শহরে রাষ্ট্রনায়কদের নিয়ে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যে প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তা মানুষের মধ্যে আশার আলো দেখায়। তারপর ১৯৯২ সালের রিও-ডি-জেনেইরোর বসুন্ধরা সম্মেলন। এখান থেকে তৈরি হয় ইউএনএফসিসিসি। ১৯৯৫ সাল থেকে শুরু হয় পরিবেশের দুর্দশা কমানোর জন্য সদস্য দেশগুলির মধ্যে আলোচনা। যখনই এই আলোচনায় সামান্য অগ্রগতি ঘটেছে তখনই বাদ সেধেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৯৭ সালে জাপানের কিয়োটো বা ২০১৫ সালের প্যারিস আলোচনা সমস্ত ক্ষেত্রেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্তের সারবস্তু ভেস্তে দিয়েছে।

কী পাওয়ার ছিল?

এবারের সম্মেলনের প্রাককালে বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি জাতিসংঘের আহ্বান ছিল: “সাহসী ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সামনে উদাহরণ তৈরি করে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নেতৃত্ব দান করতে হবে।” এবারের সম্মেলনের আলোচনার জন্য পাঁচটি মূল বিষয় ঠিক করা হয়। এগুলি হলো: প্রকৃতি সংরক্ষণ, খাদ্য সুরক্ষা, পানীয় জল সুনিশ্চিত করা, শিল্পক্ষত্রে ডিকার্বনাইজেশন এবং জলবায়ু অভিযোজনের উপর গুরুত্বদান। সম্মেলনের মুল লক্ষ্য ছিল -

১। প্রশমন: জলবায়ু সমস্যার প্রশমন করা অর্থাৎ যেকোনভাবে হোক কার্বন নির্গমনকে এভাবে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যাতে বিশ্বের গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে আটকে রাখা যায়। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির হিসেব হয় ১৮৫০ সাল বা প্রাক-শিল্প বিপ্লবের যুগের তুলনায়।

২। অভিযোজন: এখনই যারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের অভিযোজনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের সহায়তা করার দিকে প্রয়োজনীয় অগ্রগতি ঘটানো।

৩। আর্থিক দায়বদ্ধতা: জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থিক সহায়তার জন্য উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটনো এবং এর মধ্যদিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সহায়তা করার জন্য প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতিকে সুনিশ্চিত করা।

৪। সহযোগিতার বাতাবরণ: যেহেতু জাতিসংঘের আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত সম্মতি-ভিত্তিক, তাই চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য “সকল স্টেকহোল্ডারদের অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ” প্রয়োজন।

এই সমস্ত ভালোমানুষি এবং কেতাবি কথা বিশ্ব জলবায়ু সংকট নিরসনে কোনভাবেই সাহায্য করতে পারবে না।

আমরা কেন আশাহত?

বিশ্ব পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী কিশোরী গ্রেটা থুনবর্গ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়ে বললেন “I’m not going to Cop27 for many reasons, but the space for civil society this year is extremely limited,”। আর এক কারণ হিসাবে তিনি সমালোচনার সুরে বলেন “global summit is a forum for greenwashing”। ‘গ্রিনওয়াশিং’ হলো এমন আলোচনাসমূহ যেখানে পরিবেশগতভাবে কার্যকরী বিষয় সম্পর্কে একটি মিথ্যা ধারণা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য জানানোর প্রক্রিয়া। গ্রিনওয়াশিং-এ এমন অপ্রমাণিত দাবি করা হয় যাতে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের এইভাবে প্রতারিত করা যায় যে, এই আলোচনা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে বা আলোচনা পরিবেশ সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। সন্দেহ নেই যে, প্রথম সম্মেলন থেকে একই প্রবঞ্চনা ঘটে চলেছে। কিন্তু যতদিন পুঁজির তাঁবেদারি করবে রাষ্ট্রগুলি এবং তাদের তৈরি আন্তর্জাতিক সংগঠনসমূহ, ততদিন বিশ্বের এই মঞ্চগুলিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ব্যতীত অন্য উপায় নেই। গ্রেটা থুনবর্গের “prisoners of conscience” বা ‘বিবেকবন্দি মানুষ’দের কাছে আবেদন ছিল: “The CoPs are mainly used as an opportunity for leaders and people in power to get attention, using many different kinds of greenwashing,” অর্থাৎ এই সম্মেলনগুলি পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করতে চায়। তাই তার আহ্বান ছিল “So as it is, the CoPs are not really working, unless of course we use them as an opportunity to mobilise”। অতএব বেশি বেশি মানুষের প্রতিবাদে অংশগ্রহণ এবং বিশ্বব্যাপী এই রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনই একমাত্র সমাধানের পথ।

আমাদের দেশের পরিবেশ, অরণ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভুপেন্দ্র সিং যাদব এই আলোচনাকে ঐতিহাসিক বর্ণনা করে বলেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিপূরণের জন্য অনুদান (loss and damage funding) সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা এককথায় ঐতিহাসিক। এরই আর এক নাম গ্লোবাল ক্লাইমেট ফিনান্স। এর অর্থ হলো - জলবায়ু পরিবর্তন রোধ সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের তেমন কোনো গুরুত্ব নেই - যা আছে গ্রিন ফান্ডের নামে আর্থিক সহায়তায়।

আর একটি আশঙ্কার কথা চর্চিত হয়েছে এই সম্মেলনে। তা হলো Forest and Climate Leaders’ Partnership (FCLP)-এর মধ্যদিয়ে সরকার, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান এবং বনবাসীদের যৌথ উদ্যোগে অরণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবে বলা হয় যে, পৃথিবীর ৬০টির মতো দেশ ইতিমধ্যে REDD+(রেড+) ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জাতিসঙ্ঘের এই কর্মসুচির মাধ্যমে প্রায় ৯ গিগাটন (এক গিগাটন = ১০৮ কোটি টন) কার্বন শোষণ করার ক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। ব্যাপারটা এমন যেন রেড+ ব্যবস্থাপনার বাইরে যে সমস্ত দেশ আছে সেগুলির অরণ্যের কার্বন শোষণের ক্ষমতা নেই।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী গ্লোবাল ক্লাইমেট ফিনান্স উন্নয়নশীল দেশগুলির সামগ্রিক নির্গমন রোধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ২০১৯-২০২০ সালে অনুমান করা হয়েছিল যে, গ্লোবাল ক্লাইমেট ফিনান্স ৮০৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে, যদিও তা এখনও হয়ে ওঠেনি। যা পাওয়া গিয়েছিল তার পরিমাণ ছিল পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে যে অর্থ দরকার তার মাত্র ৩১-৩২ শতাংশ। অন্যদিকে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের দিকে দ্রুত ধাবমান এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আটকে রাখা। অধিকাংশ শিল্পোন্নত দেশের ঐতিহাসিক নির্গমনের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সাহায্য করা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

এক গর্বের প্রবেশ

১৬ নভেম্বর আলোচনার আসরে সগৌরবে প্রবেশ করেন ব্রাজিলের নব-নির্বাচিত বামপন্থী রাষ্ট্রপতি লুই ইনাসিও লুলা দা সিলভা - ‘লুলা’। ২০২৩-এর জানুয়ারিতে তিনি দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন। লুলার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই সম্মেলন কক্ষে এক উচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যায়। তাঁর প্রথম ঘোষণা ছিল যে, এখন থেকে পৃথিবীর ফুসফুস ব্রাজিলের আমাজন অরণ্যের ধ্বংস বন্ধ করা হবে। আমাজন বনাঞ্চলের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করবে তার সরকার। লুলার কথায় "We will spare no efforts to have zero deforestation and the degradation of our biomes by 2030"। ২০৩০ সালের ইউএনএফসিসিসি’র সম্মেলন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। লুলা তাঁর ভাষণের এক অংশে বলেন "The planet is at every moment alerting us that we need one another to survive," তিনি আরও বলেন "However, we ignore these alerts. We spend trillions of dollars on wars that bring destruction and death, while 900 million people in the world don't have something to eat" - আমরা যুদ্ধের জন্য লক্ষ কোটি টাকা খরচ করছি অথচ বর্তমান পৃথিবীর প্রায় ৯০ কোটি মানুষ ক্ষুধায় ছটপট করে। প্রসঙ্গত, পৃথিবীতে প্রথম লাতিন আমেরিকার দেশ বলিভিয়া তাদের দেশে বেশ কয়েকটি খোলা মুখ খনির উপর বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে কারণ এগুলি পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি করে।

আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে

মিশরের কপ-২৭ সম্মেলনের আগে ভারতের পক্ষ থেকে দেশের কার্বন নির্গমন এবং পরিবেশ রক্ষার অন্যান্য দিকগুলি সম্পর্কে নতুন ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন - এনডিসি ঘোষণা করা হয়েছে । প্রথম এনডিসি ঘোষিত হয়েছিল ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের আগে। এই ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান হলো - ‘LIFE’ - ‘Lifestyle for Environment’ নামে এক জন-আন্দোলন গড়ে তোলা। যে দেশে মাথাপিছু শক্তির ব্যবহার মাত্র ১২১৮ কিলোওয়াট প্রতি ঘণ্টা (আমেরিকার তুলনায় প্রায় ১২ ভাগের এক ভাগ এবং এক্ষেত্রে একদম নিচের সারিতে), যে দেশে প্রতিদিন করপোরেটদের স্বার্থে পরিবেশ আইন ভাঙা হয় এবং সরকার এই প্রক্রিয়ায় মদত দেয়, যেদেশে সরকার ৪০ কোটি আদিবাসী-অরণ্যবাসীদের অরণ্য সংরক্ষণে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে অগ্রাহ্য করে তাদের অরণ্য ব্যবহারের অধিকার হনন করে, দেশের নদ-নদীগুলির সংরক্ষণে যে দেশের সরকার কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ করে না, সর্বোপরি যে দেশের রাজধানী পৃথিবীর সবথেকে দূষিত শহর হিসাবে চিহ্নিত - সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বলতে ইচ্ছা করে ‘আপনি আচরি ধর্ম শিখাও অপরে’।

যদি এক কথায় মিশরের ‘সরম এল-সেখ’ শহরের ২৭ তম জলবায়ু সম্মেলনের সংক্ষিপ্তসার কেউ জানতে চান তাহলে বলা যায় যে, এই সম্মেলনে ঘোষিত ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট ফিনান্স’ অর্থাৎ শিল্পোন্নত ধনী দেশগুলির দানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কার্বন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রগুলির সংরক্ষণ, অরণ্য সহ জৈববৈচিত্র্যের সীমাহীন লুঠের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, সমুদ্রের গহ্বরে ক্রমে তলিয়ে যাওয়া দ্বীপ-রাষ্ট্রগুলির দুর্দশা ইত্যদির বিরুদ্ধে তেমন কোনো সদর্থক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। কেবল বিপর্যয় মোকাবিলায় কিছু অর্থদান করে ধনী ও দরিদ্র রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রশমনের চেষ্টা করেছে মাত্র। একারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেটা’র সংগঠন ‘ফ্রাইডেজ ফর ফিউচার’-এর আহ্বান ছিল: এই বিশ্বকে পরিবেশ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় হলো - শ্রেণিসংগ্রামকে তীব্রতর করে উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তন।