৫৮ বর্ষ ৭ম সংখ্যা / ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ৮ আশ্বিন ১৪২৭
রাজ্যে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে জাতীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। দেশে নাশকতামূলক কাজের প্রস্তুতির পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল ধৃতরা, জানিয়েছে এনআইএ। মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল, রানিনগর, জলঙ্গি থেকে গ্রেপ্তার হওয়া এই যুবকদের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে এই যোগাযোগ সম্পর্কে অবশ্য রাজ্য পুলিশের কাছে কোনো তথ্য ছিল না। রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র এ প্রসঙ্গে এনআইএ’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং সল্টলেকে এনআইএ’র পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তার কাছে জবাব চেয়ে দায় সেরেছেন। জাতীয় তদন্ত সংস্থার অভিযান এবং জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে অবশ্য আগাম তথ্য ছিল না নবান্নের কাছেও। অভিযোগ, রাজ্য সরকারের কোনো স্তরের গোয়েন্দা বিভাগের কাছেই কোনো হদিস ছিল না এই ধৃতদের জঙ্গি কার্যকলাপ প্রসঙ্গে। তথ্যভিজ্ঞ মহলের অভিমত, ২০১৪ সালের খাগড়াগড়ের বিষয়টি সামনে আসে জঙ্গি কার্যকলাপের ঘটনায় বিস্ফোরণের পর, যদিও তার থেকে রাজ্য প্রশাসন কোনো শিক্ষা নেয়নি। সেটা প্রমাণ হচ্ছে বারবার। চূড়ান্ত অপদার্থতার ধারাবাহিক নজির সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এই সরকারের চরম নির্লজ্জতাকেই বেআব্রু করে দিচ্ছে।
ধৃতদের সম্পর্কে এনআইএ জানিয়েছে, দিল্লিসহ দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে আইইডি বিস্ফোরকের সাহায্যে নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল ধৃতদের। প্রায় আট মাস ধরে ধৃতরা কাজ করে যাচ্ছিল বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়েতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ভারতীয় অংশ ‘গাজয়াতুল হিন্দ’-এর সঙ্গে যোগসাজশের ভিত্তিতে - এনআইএ’র অভিযোগ। অভিযানের সময় রাজ্য পুলিশের এবং আধা সামরিক বাহিনী হিসেবে বিএসএফ’র সহায়তা নিয়েছে এনআইএ। উল্লেখ্য, ডোমকল থেকে জলঙ্গি পর্যন্ত এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যাপক দাপাদাপি। অথচ, ডোমকল, রানিনগর, জলঙ্গি কোনো থানা থেকেই এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য রাজ্য পুলিশের উপর মহলে যায়নি। অথচ, এনআইএ’র সুত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ নজরদারির পর এই গ্রেপ্তারি।
কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সি এক বিবৃতিতে সরাসরি ধৃতদের উগ্রপন্থী বলে অভিহিত করেছে। তদন্তকারীদের দাবি, ধৃতরা আল-কায়েদার ভারতীয় শাখা ‘কায়দাতুল জিহাদ’ বা ‘আল কায়েদা ইন সাব কন্টিনেন্ট’-এর সঙ্গেও যুক্ত। একই দিনে কেরালার এর্নাকুলাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও ৩জনকে। কেরালায় ধৃতরা মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা বলে জানানো হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে পেশাগত ভাবে পরিযায়ী শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রও। তাদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন ধৃতেরা নির্দোষ।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বামফ্রন্ট পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের নিশ্চয়ই ধরা উচিত। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কিন্তু অপরাধী নয় এমন নিরীহ কেউ যাতে শিকার না হয় তার জন্য সতর্ক থাকা উচিত। সন্ত্রাসবাদীদের কোনো ধর্ম সম্প্রদায় নেই, তারা অপরাধী। যেকোনো সম্প্রদায়ের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে নইলে একটা সাম্প্রদায়িকতা আর একটাকে বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, গুরুতর উদ্বেগজনক অভিযোগে কয়েকজনকে ধরা হয়েছে মুর্শিদাবাদ থেকে। ...কিন্তু কেন্দ্রের সরকারের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে সন্ত্রাসবাদীদের সুবিধা হচ্ছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলার খারাপ হাল, পুলিশ এবং গোয়েন্দা বাহিনীর বেহাল দশায় বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ২০১৪ সালের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে তৃণমূলের অফিসে বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ...ওখানে বিস্ফোরণ না হলে তো জানা যেত না যে এখানে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জেএমবি বাসা গেড়েছে।
এন আইএ’র বক্তব্য, এই মডেলের পরিকল্পনা ছিল দিল্লি সহ দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা। জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বিবৃতিতে বলেছে কেরালা থেকে ধৃত ৩ জন হলো, মুর্শিদ হাসান, ইয়াকুব বিশ্বাস এবং মোশারফ হোসেন। তিনজনই বর্তমানে এর্নাকুলামের বাসিন্দা। বাকি ৬ জন পশ্চিমবঙ্গের। তারা হলো, নাজমুস সাকিব, আবু সুফিয়ান, মইনুল আহমেদ, লিউ ইয়ান মন্ডল, আল মামুন কামাল এবং আতিকুর রহমান। বেশি রাতে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করার কথা বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনআইএ। প্রাথমিক অনুসন্ধান বলে জানালেও ধৃতরা সন্দেহভাজন উগ্রপন্থী নয়, সরাসরি সকলেই উগ্রপন্থী বলেই বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে এনআইএ। জাতীয় তদন্ত সংস্থা বিবৃতিতে জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে সম্ভাব্য উগ্রপন্থী হামলা রুখতে আগাম পদক্ষেপ হিসেবে এই গ্রেপ্তারি করা হয়েছে।
এনআইএ’র বিশেষ আদালত ধৃতদের ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনআইএ হেফাজতে রাখার অনুমতি দেয়। ট্রানজিট রিমান্ড নিয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে দিল্লি ফিরেছে এনআইএ’র বিশেষ দল।