৫৮ বর্ষ ৭ম সংখ্যা / ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ৮ আশ্বিন ১৪২৭
পার্টির ডাকে দেশব্যাপী প্রতিবাদ সপ্তাহে বিপুল সাড়া
জীবন জীবিকা গণতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর সারাদেশ
দেশজুড়ে প্রতিবাদ সপ্তাহে কলকাতায় কেন্দ্রীয় মিছিল মহাজাতি সদন থেকে শ্যামবাজার।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ মহামারীর পরিস্থিতিতে দেশের বিজেপি সরকার সাধারণ মানুষের জীবনজীবিকার ওপর যে মারাত্মক আক্রমণ নামিয়ে এনেছে এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হানছে, তার বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী প্রতিবাদ সপ্তাহ পালন করেছে সিপিআই(এম)। গত ১৭ থেকে ২২সেপ্টেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই প্রতিবাদ সপ্তাহ পালিত হয়েছে। একইসঙ্গে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী ও জনবিরোধী বিভিন্ন বিলের বিরুদ্ধেও কৃষকসহ অন্যান্য শ্রমজীবী অংশের মানুষ প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
এই প্রতিবাদ সপ্তাহে দেশের নানা জায়গায় পার্টিকর্মী, সমর্থক ও গণসংগঠনের কর্মীরা ফ্ল্যাগ-ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি নিয়ে মিছিল, অবস্থান বিক্ষোভ, ধরনা, পথ অবরোধ, পথসভার মধ্য দিয়ে জনজীবনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেছেন। এই কর্মসূচিগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক দলের সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, জনগণের অধিকার ও ন্যায্য দাবি থেকে বঞ্চনা, মহিলা দলিত আদিবাসী ও অন্যান্য প্রান্তিক অংশের ওপর নির্মম আক্রমণ, কর্পোরেটদের স্বার্থে নির্বিচারে বেসরকারিকরণ ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজির অনুপ্রবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ লুঠ, শ্রমআইন শিথিল করার মধ্য দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের সর্বনাশ করার তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়।
মহামিছিল বাঁকুড়ার বড়জোড়ায়।
এর পাশাপাশি সপ্তাহব্যাপী এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে আয়কর দেন না এমন সমস্ত পরিবারকে মাসিক ৭,৫০০ টাকা সাহায্য প্রদান, আগামী ৬ মাস গরিব বিপন্ন অংশের মানুষ যাদের প্রয়োজন তাদের সকলকেই মাথাপিছু দশ কিলোগ্রাম খাদ্যশস্য বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করা, বর্ধিত মজুরি সহ রেগার কাজ বছরে অন্তত ২০০দিন নিশ্চিত করা, শহরাঞ্চলে কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইন চালু করা, সকল বেকারকে বেকারভাতা দেওয়া, সংবিধান প্রদত্ত সকল নাগরিকের জন্য স্বাধীনতা, সমতা, গণতান্ত্রিক অধিকার ইত্যাদিকে সুনিশ্চিত করার দাবি উত্থাপিত হয়েছে।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, কেরালা, ত্রিপুরা, ছত্তিশগড়, আসাম প্রভৃতি বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও জেলায় জেলায় এই প্রতিবাদ সপ্তাহে মিছিল, পথসভা ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছে। এ রাজ্যের কর্মসূচিতে সর্বভারতীয় দাবিগুলির পাশাপাশি তৃণমূল সরকারের স্বৈরাচারী অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে এবং বর্তমানের সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা পরিষেবা, কাজ হারানো অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা ও সীমাহীন ব্যর্থতা এবং মানুষের এই ভয়াবহ সঙ্কটের মুহূর্তে ত্রাণসামগ্রী ও অর্থ লুঠের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে।
মিছিল খেজুরিতে।
সিপিআই (এম)’র ডাকে মিছিল ছত্তিশগড়ের কোরবায়।
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতা মহানগরীর বুকে দু’টি বিশাল মিছিল হয়েছে। সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে এদিন উত্তর কলকাতার মহাজাতিসদন থেকে বিধান সরণি হয়ে শ্যামবাজার এবং অপরটি হাজরা মোড় থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত - দু’টি মিছিল সংগঠিত হয়েছে। উত্তর কলকাতার মিছিলে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং দক্ষিণ কলকাতার মিছিলে ছিলেন পার্টির কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সন্ত্রাসবিদ্ধ খেজুরিতে দীর্ঘ ১০ বছর পর লাল পতাকার দৃপ্ত মিছিল সংগঠিত হয়েছে। কামারদা এলাকায় এই মিছিলে অংশ নেন অগণিত কৃষক, খেতমজুর সহ ছাত্র-যুব-মহিলা। এই মিছিলে নেতৃত্ব দেন পার্টিনেতা হিমাংশু দাস সহ পরিতোষ পট্টনায়ক, প্রতিমা মণ্ডল, গোকুল ঘড়াই, মৃন্ময় মাইতি প্রমুখ। এছাড়া এদিন মিছিল হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪পরগনা জেলায়। ২১ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া জেলায় সিপিআই(এম)-র ডাকে ২১টি ব্লকে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ রাস্তায় নেমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এই উপলক্ষে বড়জোড়ায় সুবিশাল মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। ওন্দা ও বিষ্ণপুরে মিছিল ও ডেপুটেশন কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র।
এছাড়াও হুগলি, হাওড়া, নদীয়া জেলায়ও প্রতিবাদ সপ্তাহ পালিত হয়েছে।