৫৮ বর্ষ ৭ম সংখ্যা / ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ৮ আশ্বিন ১৪২৭
কমরেড মৃদুল সেনের জীবনাবসান
বামপন্থী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রবীণ সংগঠক ও নেতা কমরেড মৃদুল সেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি ছিলেন গণনাট্য আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী আন্দোলনের বর্ষীয়ান নেতা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না সেনও করোনায় আক্রান্ত। তিনি বর্ধমান শহরের বাড়িতেই আছেন।
কমরেড মৃদুল সেনের মৃত্যুর খবরে গভীর শোক জানিয়েছেন সিপিআই(এম) নেতা মদন ঘোষ, আভাস রায়চৌধুরি, অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এবং পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক রজত বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৪০ সালের ২৬মে কমরেড মৃদুল সেনের জন্ম। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১। ছাত্র আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতাতে পার্টির কাজের সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৭ সালে পার্টি সভ্যপদ অর্জন করেন। প্রিণ্টিং টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসে ম্যানেজারের কাজে যোগদান করেন। এই সময়ে সিপিআই(এম) বর্ধমান জেলা কমিটির তদানীন্তন সম্পাদক কমরেড সুবোধ চৌধুরির সাথে যোগাযোগ করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মচারী সংগঠন গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। এই সংগঠন গড়ে তোলায় কমরেড মৃদুল সেন ও কমরেড অমল ব্যানার্জি মুখ্য ভূমিকা নেন। ৭০ দশকের আধা-ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসের সময়ে তিনি কিছুদিন কলকাতায় আত্মগোপন করেন। সেই সময় পার্টির রাজ্য সম্পাদক কমরেড প্রমোদ দাশগুপ্তের পরামর্শে তিনি গণশক্তি পত্রিকার ছাপার কাজেও ভূমিকা নেন। এই কাজের খবর পেয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৯৭৭ সালের পরবর্তী সময়ে আবার তিনি বর্ধমানে ফিরে আসেন। কাজের যোগ্যতায় প্রেসের সুপারিন্টেনডেন্ট পদে উন্নীত হলেও তা গ্রহণ করেননি কর্মচারী আন্দোলনে যুক্ত থাকবেন বলে। কমরেড মৃদুল সেন ১৯৭৮-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের ও কোর্টের সদস্য থাকাকালীন বহু উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেছেন। বর্ধমান আর্ট কলেজ তৈরিতে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় গণনাট্য সঙ্ঘের তিনি মুখ্য সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি জেলার সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কমরেড মৃদুল সেন সাংস্কৃতিক ও কর্মচারী আন্দোলনের সাথে বর্ধমান শহরের গণআন্দোলনেও ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে বড়শুলে বর্ধমান সদর ও শহর নিয়ে যে অবিভক্ত পার্টি লোকাল কমিটি তৈরি হয় তিনি তাঁর সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে তিনি শহর এলসি’র সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন। বর্তমানে কমরেড মৃদুল সেন বর্ধমান শহর-২ এরিয়া কমিটির কেন্দ্রীয় শাখায় যুক্ত ছিলেন।