৫৮ বর্ষ ৭ম সংখ্যা / ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ৮ আশ্বিন ১৪২৭
বিদ্যাসাগর ও সেই সময়
তপন মিশ্র
পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
জন্মঃ ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৮২০
মৃত্যুঃ ২৯ জুলাই, ১৮৯১
যিনি সময়কে প্রভাবিত করতে পারেন তাঁর জন্য সাল-মাস-তারিখ দিয়ে সময়ের হিসাব এক নিছক যান্ত্রিক প্রক্রিয়া। পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সময়কে এতটা প্রভাবিত করেন যে, এক নতুন যুগের সূচনা হয়ে যায়। ১৮২০ বা ২০২০ সময়ের হিসাবে দুই শতকের ব্যবধান হলেও যেন আজও বিদ্যাসাগরের সময় অতিক্রান্ত হয়নি। যখন বাংলায় জ্ঞানচর্চার কথা ওঠে, নবজাগরণের কথা ওঠে, ভাবতে হয় যুক্তিবাদী মানসিকতার জন্য লড়াইয়ের কথা তখনই বিদ্যাসাগর হয়ে ওঠেন প্রাসঙ্গিক। তাই বিদ্যাসাগর-উত্তর সমস্ত সময়টাই তাঁর। কিন্তু সেই সময়টায় বিদ্যাসাগরের সাথে এক ঘনীভূত অন্ধকারের মধ্যে আলোকবর্তিকা নিয়ে নামতে দেখা যায় আরও কয়েকজনকে। তবে কোনোভাবেই সেই সময়কার সম্পূর্ণ ইতিহাস এই প্রবন্ধে পাওয়া যাবেনা।
সেই সময়ের পটভূমি
এই প্রবন্ধে যে সময়টার কথা বলার চেষ্টা হবে সেটা মোটামুটি ১৮৩৯ থেকে ১৮৯১। ১৮৩৯-এ বিদ্যাসাগর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে শিক্ষকতার কাজে যুক্ত হন এবং ১৮৯১ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে তিনি যে কেবল একা লড়েছেন তাই নয় আরও কয়েকজনও এগিয়ে এসেছেন এবং এই লড়াইয়ের আঙিনায় শামিল হয়েছেন। রামমোহনের মৃত্যু হয় ১৮৩৩ সালে। তারপর আর একজন যুক্তিবাদী মানুষ ভিভিয়ান ডিরোজিও (Henry Louis Vivian Derozio)’র অকাল প্রয়াণ ঘটে মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৮৩১ সালে। যখন বিদ্যাসাগর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখন বাংলার শিক্ষিত সমাজের মধ্যে এই দুই আদর্শের জ্বালানো আগুন পুরোপুরি নিভে যায়নি।
তখন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবিকাশের ক্ষেত্রে বাংলা সহ সারা ভারত পিছিয়ে, বিজ্ঞানচর্চা তো অনেক দূরের কথা। ১৮৩৫ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়, ১৮৫৬ সালে বেঙ্গল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং তার পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৮৪৯ সালের জানুয়ারি মাসে ‘সংবাদ ভাস্করে’ প্রকাশিত এক খবর বলছে যে, মেডিক্যাল কলেজ চালু হওয়ার পর প্রথম দিকে বাংলার সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলো বিনা দ্বিধায় তাদের ছেলেদের এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষালাভের জন্য পাঠাতে চাননি, তবে শীঘ্রই পশ্চিমী চিকিৎসাবিজ্ঞানের চমৎকারিত্ব এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের যত্নের দিকটি বিবেচনা করে তাদের মতের পরিবর্তন ঘটে।
উচ্চশিক্ষা, কারিগরি এবং চিকিৎসাশিক্ষা যে ব্যবস্থার উপর দাঁড়িয়ে থাকে তা হলো প্রাক্স্নাতক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা। এই ক্ষেত্রে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাংলায় খুবই খারাপ অবস্থা ছিল। ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮৫৫ সালে হিন্দু কলেজের সিনিয়র বিভাগের অবলুপ্তি ঘটিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের যাত্রা শুরু হয়। তখন স্নাতকস্তরে বিজ্ঞান বিভাগ বলে কিছু ছিল না। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আর যে কয়েকটি কলেজ কলকাতায় শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে যুক্ত ছিল সেগুলি প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ১৮০০ সালে, ১৮২৪ সালে সংস্কৃত কলেজ এবং ১৮৪৯ সালে বেথুন কলেজ। ১৮৭২ সালে বিদ্যাসাগরের নিজস্ব উদ্যোগে মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশন (বর্তমানের বিদ্যাসাগর কলেজ) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যাসাগর কলেজ প্রতিষ্ঠা ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবনে একটা বড়ো সংগ্রাম। এই সময়ে বিদ্যাসাগরের সংস্কৃত কলেজে পাঠ্যসুচির মধ্যে যা ছিল সেগুলি দেখলে বোঝা যাবে যে, কতটা যুক্তিবাদের চর্চা হতো সেই পঠনপাঠন ব্যবস্থায়। সেখানে পঠিত বিষয়ের মধ্যে ছিলঃ সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি ভাষা, অলঙ্কার, বেদান্ত, ন্যায়দর্শন, স্মৃতি ইত্যাদি। সংস্কৃত কলেজে বারো বছর পাঁচ মাস তাঁকে অধ্যয়ন করতে হয়েছিল। যদিও প্রতিটি শ্রেণিতে তিনি পারিতোষিক পান তবুও তিনি যে এই পাঠক্রমে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং বাংলার শিক্ষাপ্রসারে এই ব্যবস্থার যে কোনো ভুমিকা ছিল না তা বোঝ যায় যখন তিনি দ্বিতীয়বার সংস্কৃত কলেজে চাকরির সূত্রে যুক্ত হন। পাঁক থেকে যেমন পঙ্কজের জন্ম হয় ঠিক তেমনই বিদ্যাসাগর দ্বিতীয় বার সংস্কৃত কলেজের দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষায় নবজাগরণ আনলেন।
সময় অতিক্রমের সাহস আর যাঁরা দেখিয়েছিলেন
বিদ্যাসাগরের সঙ্গে যাঁরা এককভাবে বা যৌথভাবে সমাজসংস্কারের কাজে হাত দিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে যাঁর নাম সর্বাগ্রে করতে হয় তিনি হলেন অক্ষয়কুমার দত্ত। কিন্তু আরও কয়েকজন ছিলেন যাঁরা তাঁর সঙ্গে একাত্ম না হলেও বিভিন্নভাবে নবজাগরণের চিন্তার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের মধ্যে যাঁদের নাম করতে হয় তাঁরা হলেন মহেন্দ্রলাল সরকার, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রসময় দত্ত প্রমুখ। এঁদের সঙ্গে বিদ্যাসাগরের ছিল অম্লমধুর সম্পর্ক। আদর্শের কোনো বাঁকমোড়েই বিদ্যাসাগর কারোর সঙ্গে যেমন কোনো সমঝোতা করেননি তেমনই সমাজের তৃণমূল স্তরে যে জগদ্দল পাথর সরানোর কাজ তিনি করছিলেন সেই কাজে অনেকক্ষেত্রে তাঁকে একাই লড়াই করতে হয়েছে।
অক্ষয়কুমার দত্ত ‘বিদ্যাদর্শন’ নামক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতেন। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পর অক্ষয়কুমার ধর্ম-সম্পর্কিত এই দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ব্রাহ্মসমাজের পত্রিকা ‘তত্ত্ববোধিনী’ ত্যাগ করেন। অক্ষয় দত্ত ও তাঁর বন্ধু বিদ্যাসাগরের কারণে এটি সে সময়ে সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস ও সমাজসংস্কার বিষয়ে একটি অগ্রণী পত্রিকায় পরিণত হয় ‘বিদ্যাদর্শন’। বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ প্রচলনের উদ্দেশে লিখিত বিভিন্ন প্রবন্ধ এই পত্রিকায় ছাপা হয় এবং অক্ষয় দত্ত তার সমর্থনে সম্পাদকীয় লেখেন। যাত্রার ‘শুভ-অশুভ’ক্ষণ বলে কিছু যে নেই তা প্রমাণ করার জন্য শাস্ত্রে ‘অশুভ’ এমন দিনক্ষণ দেখে অক্ষয়কুমার ভ্রমণে বেরোতেন।
রসময় দত্ত ইংরেজি শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত ছিলেন। হিন্দু কলেজ ও হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁর উদ্যোগ ছিল। ডেভিড হেয়ার, দ্বারকানাথ ঠাকুর, রসিককৃষ্ণ মল্লিকের সাথে সংবাদপত্র নিরোধক আইনের বিরোধিতা, গণতান্ত্রিক মতপ্রকাশের দাবিতে সরব হয়েছিলেন তিনি। সংস্কৃত কলেজের সম্পাদক থাকাকালীন শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগে বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হয়। একারণে ১৮৪৭ সালের জুলাই মাসে বিদ্যাসাগরকে সংস্কৃত কলেজ থেকে ইস্তফা দিতে হয় এবং ১৮৫০ সালে বিদ্যাসাগর পুনরায় যোগ দিলে রসময় দত্তই তাঁকে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিয়ে পদত্যাগ করেন।
বিদ্যাসাগরের ভাবনায় প্রভাবিত রসিককৃষ্ণ মল্লিক, ‘জ্ঞানান্বেষণ’ নামক এক দ্বিভাষী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন এবং ডিরোজিওর শিষ্যদলের সাথী হিসাবে বিভিন্ন ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। কথিত আছে রসিককৃষ্ণ আদালতে কোনো এক মামলায় সাক্ষী হিসাবে গঙ্গাজল স্পর্শ করে সত্য বলার শপথ নিতে সম্মত হননি। বিচারপতি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি যা বলেন তাকে ইরাজিতে তরজমা করে জজকে বলা হয় যেঃ “I do not believe in the sacredness of the Ganges”। অন্যান্য ডিরোজিয়ানদের সঙ্গে তিনিও এই মতও পোষণ করতেন যে, ব্রাহ্মরা রামমোহনের আদর্শকে ছোটো করছেন।
আরেকজনের কাজ না উল্লেখ করলে অন্যায় হয়ে যাবে। তিনি হলেন মহেন্দ্রলাল সরকার। তখন ভারতবর্ষে বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তা যাঁরা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন কেবল নয়, তাঁদের মধ্যে যিনি একে বাস্তবে রূপায়ণ করার সফল চেষ্টা করলেন তিনি মহেন্দ্রলাল সরকার। বউবাজারের ২১০ নম্বর ঘরে এআইসিএস (Indian Association for the Cultivation of Science) প্রতিষ্ঠায় যাঁরা তাঁকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করেছেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার মধ্যে এক উজ্জ্বল নাম। বিদ্যসাগর যেমন ছিলেন এর বোর্ড অফ ট্রাস্টির সদস্য তেমনই অর্থ দিয়েও সাহায্য করেন তিনি। তারপর এআইসিএস-এর জয়যাত্রা কখনই থেমে যায়নি। সি ভি রমনের গড়ে ওঠার পেছনে এই প্রতিষ্ঠানের ছিল গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশক পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানই ছিল ভৌতবিজ্ঞানে দেশের একমাত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই দূরদর্শিতা কেবল বিদ্যাসাগরের সময়ের আবেশে তৈরি হওয়া সম্ভব ছিল।
কাছের মানুষ বিদ্যাসাগর
বলাই বাহুল্য যে, বিদ্যাসাগর এসব থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন এবং সমাজের তৃণমূল স্তরে কূপমণ্ডুকতার জন্য যে দুর্দশা মানুষকে সহ্য করতে হয় তার বিরুদ্ধে সর্বস্তরে যুদ্ধ ঘোষণা করতে তিনি পিছপা হননি। বিধবা বিবাহের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা, বিশেষ করে কলকাতার বাইরে নারীশিক্ষা প্রসার, বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি ও প্রত্যক্ষ বিরোধিতা এসব তো বহুচর্চিত বিষয়। কিন্তু সংস্কৃত কলেজে শিক্ষা সংস্কারের বা বর্তমানের বিদ্যাসাগর কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে দৃঢতা তিনি দেখান তা সর্বকালের গণ্ডি অতিক্রম করে।
সেই সময়কার বাবুদের মধ্যে দুই প্রভাবশালী ধর্মীয় শিবির ক্রিয়াশীল ছিল। অবশ্য গরিব-গুর্বোদের মধ্যে এ নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা ছিল না। একদিকে ব্রাহ্মদের প্রভাব এবং অন্যদিকে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রভাব সমাজের উপরতলাকে আছন্ন করে রেখে ছিল। এটা লক্ষণীয় যে, বিদ্যাসাগর এই ধরনের কোনো যুক্তিহীন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বরং এসবের বিরোধী ছিলেন।
সংস্কৃত কলেজে ১৮৫১ সালে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দিয়ে এমন একটি কাজ করে বসেন যার জন্য শক্ত মানসিকতার দরকার ছিল, সাথে ছিল প্রচণ্ড বুদ্ধিদীপ্ত যুক্তির দ্বারা অচলায়তন ভাঙার সাহস। সেই কাজগুলি ছিলঃ
১। তিনি সংস্কৃত কলেজ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। কোনো ধর্ম, জাতিবিদ্বেষ এবং কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় মতাদর্শের জন্য সেখানে পড়াশোনা করার বাধা ছিল না।
২। নিয়মানুবর্তিতার উপর কঠোরভাবে জোর দেন এবং পূর্ণিমা, একাদশী বাদ দিয়ে প্রথম সাপ্তাহিক রবিবারে ছুটির প্রচলনও করেন তিনি।
৩। বছরে একটিমাত্র পরীক্ষা না নিয়ে সারা বছর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা (continuous evaluation) করেন।
৪। ‘মুগ্ধবোধ’ নামে যে সংস্কৃত ব্যাকরণ পড়ানো হতো তা বাদ দিয়ে বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ পড়ানো শুরু করেন।
৫। যে সাংখ্য ও বেদান্ত দর্শন তাঁকে পড়তে হয়েছিল সেগুলিকে ভ্রান্ত দর্শন হিসাবে আখ্যা দিয়ে তা বাতিল করেন এবং জন স্টুয়ার্ট মিলের তর্কশাস্ত্র পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেন।
৬। আদিকালের লীলাবতী বাদ দিয়ে ইংরেজি ভাষায় বীজগণিত পঠন তিনি প্রচলন করেন।
বাংলা ভাষাকে সাধারণের ভাষায় রূপান্তরিত করার কাজ যিনি করেছিলেন তার নাম পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। কবিগুরুর কথায়ঃ “বাংলা ভাষায় প্রথম যথার্থ শিল্পী”। তাঁর লেখা বর্ণ পরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, নীতিবোধ যেমন সাধারণকে বাংলা ভাষার সঙ্গে পরিচিত করায় তেমনই বাংলা গদ্য লেখার নতুন শৈলীর প্রচলনের মধ্য দিয়ে শকুন্তলা, সীতার বনবাস ইত্যাদি গদ্য তিনি রচনা করেন।
১৮৬২ সালে শঙ্কর ঘোষ লেনে কলকাতা ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য বাড়ি কিনে ১৮৭২ সালে মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেখানে আধুনিক ইতিহাস, গণিত, বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্য পড়ানো শুরু করেন। তার পর অনেক লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে ১৮৮১ সালে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন আদায় করে।
২০২০ সালে এই ধরনের অচলায়তন ভাঙার চেষ্টা করলে বিদ্যাসাগরকে ‘আর্বান নকশাল’ এবং দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া হতো। উনিশ শতকের সময়ে বাংলায় এ ধরনের কাজকে ঈশ্বরের প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব পোষণ করা বলে মনে করা হতো। নবজাগরণের একটা বিশেষ লক্ষণ হলো সর্ববিষয়ে কৌতূহল বা অনুসন্ধিৎসা। ইংরেজি ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রভাবে অষ্টাদশ শতাব্দীর তমসা কাটিয়ে, কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা ছিল বিদ্যাসাগরের সময়ের বৈশিষ্ট্য। আমরা এখনও সেই লড়াইয়ের অংশ হতে চাই।