৫৮ বর্ষ ৭ম সংখ্যা / ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ / ৮ আশ্বিন ১৪২৭
‘ময়রাণী লো সই। নীল গেঁজোছো কই।।’
বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়
‘নীলকর-বিষধর-দংশন-কাতর-প্রজানিকর-ক্ষেমঙ্করেণ-কেনচিৎ পথিকেনাভিপ্রণীতং’। ১৬০ বছর আগের কথা। ১৮৬০ সাল। সদ্য প্রকাশিত এক নাটকে এভাবেই লেখকের নাম লেখা ছিল। সরকারি ডাক বিভাগের উচ্চপদস্থ এক কর্মচারী নাম গোপন রেখে একটা বিপ্লব করে ফেললেন। যদিও সেই নাম জানতে মানুষের খুব বেশি দেরি হয়নি। ততদিনে রঙ্গমঞ্চে এসে গেছেন পাদ্রি লং সাহেব, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কালীপ্রসন্ন সিংহ-র মতো প্রথিতযশারা। বর্তমান বাংলা বা দেশের প্রকৃতি অনুসারে যে শব্দটা এখন ‘বেশ ভালো খায়’ তা হলো ‘অ্যাপলিটিক্যাল’। ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলা সরকারি চাকুরে ওই ভদ্রলোকও কিন্তু আক্ষরিক অর্থে ‘অ্যাপলিটিক্যাল’ই ছিলেন। যদিও এখনকার ‘অরাজনৈতিক’দের মতো পুরোপুরি সামাজিক বোধশূন্য ছিলেন না। বরং বাস্তববোধ আর পাঁচজনের থেকে কিছুটা প্রখরই ছিল। সাধারণ মানুষের সমস্যা, অত্যাচারিতের যন্ত্রণা তাঁকে নড়িয়ে দিতো। তাই সরকারি চাকুরে হবার সুবাদে যা যা তাঁর চোখে আটকে গেছিলো তা দিয়েই লিখে ফেলেছিলেন এক চরম রাজনৈতিক ভাবাদর্শের নাটক। যে নাটকে উঠে এসেছিলো কৃষকের দুর্দশা, সমস্যা, জমিদারি প্রথার কুফলের কিছু ছবি। যে নাটকের ঐতিহাসিক গুরুত্ব যতটা, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দিকটিও।
প্রথম গর্ভাঙ্ক
আপনারা হয়তো এতক্ষণে ভাবতে শুরু করেছেন হঠাৎ আবার ‘নীলদর্পণ’ নিয়ে টানাটানি কেন বাপু। আমরা তো জানি ওসব কথা। অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের কথা। কৃষকদের দুর্দশার কথা। নীলের দাদন, মানে নীলের গাদনের কথা। চুক্তি চাষের কথা। শ্যামচাঁদ দিয়ে বেয়াড়া প্রজাকে শায়েস্তার কথা। পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে নতুন কিছু পাওয়া যাবে কি? আছি তো বেশ রসেবশে। এর মাঝে শুধুশুধু সমস্যা খুঁজে লাভ কী! বেকার ওইসব কষ্ট নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি, বিলাসিতা আর ভাল্লাগে না বাপ। ক্ষ্যামা দিন এবার।
বেশ। দিলাম। আপনাদের যখন নীলদর্পণে এতটাই আপত্তি তখন সত্যি সত্যিই ক্ষ্যামা দিলাম। বরং ১৬০ বছর আগের কচকচি ছেড়ে একটু এখনকার দর্পণের সামনে দাঁড়াই। কারা যেন একটা বিজ্ঞাপনে বলেছিলো উল্টে দেখলেই নাকি অনেক কিছু পালটে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়ালে সোজা জিনিসও উলটো হতে বাধ্য। তা আমরাও বরং এখন একটু চোখ খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ‘নদি চ্ছেআ’ খুঁজে দেখি। মানে ‘আচ্ছে দিন’ আর কী।
দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক
ঠিক এই মুহূর্তটা আমাদের জন্য সুখের নাকি দুঃখের তা বিতর্কিত। কার ‘সুখ’, কার ‘অসুখ’, কার ‘দুখ’ তাও। করোনা আবহে দেশের ১৩০ কোটির মধ্যে বহু মানুষ যেমন কাজ হারিয়েছেন, রোজগার হারিয়েছেন তেমনই মুনাফা সুনামির কারণে ১৫ জন বিলিওনেয়ার হয়েছেন। কিছু মানুষের সম্পদ এত বেড়েছে যে বিদেশি মিডিয়ায় রোজ তাঁদের নাম ছাপা হচ্ছে। তবে যার যাই হোক না কেন, ১৯৫৫ সাল থেকে দীর্ঘ দিনের পরাধীনতা ভোগ করার ৬৫ বছর পর আলু, পেঁয়াজদের আজ বড়ো সুদিন। দেশের কৃষকদরদি সবজিদরদি সরকারের বদান্যতায় আজ ‘তাঁরা’ স্বাধীনতা প্রাপ্ত হয়েছেন। এবার ‘আত্মনির্ভর’ হবেন। ওদের সাথেই স্বাধীন হয়েছেন চাল, ডাল, তৈলবীজ, ভোজ্য তেল প্রভৃতি। কষ্ট করে ওদের আর ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’ বলতে হবে না। শুধু স্বাধীনতার আনন্দে মশগুল আলু, পেঁয়াজদের জানা নেই - মুক্তি ওরে মুক্তি কোথায় পাবি, মুক্তি কোথায় আছে, তোদের প্রভু নোটের বাঁধন জোরে, বাঁধা ‘ওদের’ কাছে। এছাড়াও গত ২০ সেপ্টেম্বর সংসদে পাশ হয়েছে ফার্মার্স প্রোডিউস ট্রেড অ্যাইন্ড কমার্স (প্রোমোশন অ্যাান্ড ফেসিলিটেশন) অর্ডিন্যান্স, ২০২০; ফার্মার্স (এমপাওয়ারমেন্ট অ্যানন্ড প্রজেকশন) এগ্রিমেন্ট অন প্রাইস অ্যা্সুরেন্স অ্যা ন্ড ফার্ম সার্ভিস অর্ডিন্যান্স, ২০২০। ‘ময়রাণী লো সই। নীল গেঁজোছো কই।।’
তৃতীয় গর্ভাঙ্ক
১৯৫৫ সালে দেশে চালু হয়েছিলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন। যে আইনের বলে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তৈলবীজ, ভোজ্য তেল জাতীয় পণ্যের ওপর সরাসরি সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছিলো। এইসব পণ্য নিজের ইচ্ছেমতো মজুত করা যেত না। দেশের মানুষের স্বার্থে বামেদের বরাবরের দাবি ১৪টি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম সারাদেশে এক করতে হবে। ‘আত্মনির্ভর’ ভারত গড়ার লক্ষ্যে করোনা বড়ো ঢাল। তাই গত ৫ জুন এই আইনের কিছু সংশোধনী জারি করেছিলো কেন্দ্রীয় সরকার। যা গত ২২ সেপ্টেম্বর বিরোধীশূন্য রাজ্যসভায় ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতি সই করে দিলেই আলু, পেঁয়াজ আত্মনির্ভর, মুক্তকচ্ছ। খাদ্য ও গণবণ্টন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী দানভে রাওসাহেব অবশ্য বলেছেন - এই সংশোধনী আইন হলে চাষিরা ফসল উৎপাদন, মজুত, বণ্টন ও বিক্রির স্বাধীনতা পাবেন। কৃষিক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুলে যাবে। রাজার থেকে পারিষদরা চিরকালই বেশি বলেন। এখন তো মন্ত্রী সান্ত্রি সকলেই দাবি করছেন তাঁরা নাকি কৃষক। কাজেই তাঁদের থেকে কৃষকের সমস্যা কেউ ভালো বুঝবেন না। রাজা নিজেই এইসব পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে দিয়েছেন। ইতিহাস মহম্মদ বিন তুঘলককেও মনে রেখেছে আবার সম্রাট আকবরকেও। কে কাকে কীভাবে মনে রাখবে সে তো সময় বলবে। শুধু একটাই ফুটনোট - মিডিয়ার দয়া হলে মাঝে মাঝে আমরা দেখতে পাই কৃষকরা সঠিক দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডাল ফেলে বিক্ষোভ দেখায়। সরকারি নিয়ন্ত্রণ থেকেও যেখানে কৃষকরা ফসলের দাম পায় না, সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করতে করতে ফসল পচে যায়, সেখানে নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবস্থায় কীভাবে রাতারাতি ‘কৃষকরা প্রচুর সুবিধা পাবেন’ তা গোদা মাথায় ঢোকা মুশকিল। দেশের শস্যভাণ্ডার কী তবে এবার নিয়ন্ত্রণ করবে কর্পোরেট দুনিয়া? হয়তো জিও মার্টের কাছে উত্তর আছে! ব্যানানা রিপাবলিকের আদলে পরবর্তী সময়ে পটেটো রিপাবলিক, অনিয়ন রিপাবলিক, রাইস রিপাবলিক, পালস রিপাবলিক গড়ে উঠবে কিনা কে জানে!
চতুর্থ গর্ভাঙ্ক
কৃষি নিয়ে অনেক হলো। এবার বিষয় পাল্টানো যাক। কারণ ঘন ঘন বিষয় না পাল্টালে মানুষকে ঠিকমতো কনফিউজ করে তোলা যায় না। আমি কী বলতে চাইছি তা যদি মানুষ এত সহজে বুঝে যায় তাহলে করেকম্মে খাবো কী করে? মানুষের চারপাশে অজস্র ভুলভুলাইয়া তৈরি করতে না পারলে ঘুরপাক খাওয়ানো যাবে কী করে? তাই শ্রম আইন লঘু করার ভুলভুলাইয়াতে রাম মন্দিরের শিলা পোঁতা, কৃষি বিলের ভুলভুলাইয়াতে চীনের আগ্রাসন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেসরকারিকরণের ভুলভুলাইয়াতে আত্মনির্ভর ভারত, ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের ভুলভুলাইয়াতে তবলিগি জামাত, দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ভুলভুলাইয়াতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ - উদাহরণ দিতে দিতে রাত কাবার হয়ে যাবে। কাজেই ক্ষ্যামা দেন। বিষয়ে আসি।
পঞ্চম গর্ভাঙ্ক
এই আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ দেশে ভরা লকডাউনের বাজারে বিভিন্ন পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কে ১৯,৯৬৪ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে। দেশের ১২টা পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্কে মোট ২,৮৬৭টি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা। যার মধ্যে জালিয়াতির ঘটনার সংখ্যায় শীর্ষে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। আর জালিয়াতির অঙ্কে শীর্ষে ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় ২,০৫০টা জালিয়াতির ঘটনায় ২,৩২৫.৮৮ কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় ৪৭টি জালিয়াতির ঘটনায় মোট জালিয়াতি ৫.১২৪.৮৭ কোটি টাকা। এছাড়াও কানাড়া ব্যাঙ্কে ৩৩টি জালিয়াতির ঘটনায় ৩,৮৮৫.২৬ কোটি টাকা, ব্যাঙ্ক অফ বরোদায় ৬০টি জালিয়াতির ঘটনায় ২,৮৪২.৯৪ কোটি টাকা, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কে ৪৫টি, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কে ৩৭টি এবং ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্রে ৯টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এই তিন ব্যাঙ্কে জালিয়াতি হয়েছে যথাক্রমে ১,৪৬৯.৭৯ কোটি, ১,২০৭.৬৫ কোটি এবং ১,১৪০.৩৭ কোটি টাকার। ইউকো ব্যাঙ্কে ১৩০টি জালিয়াতির ঘটনায় ৮৩১.৩৫ কোটি টাকা, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় ১৪৯টি জালিয়াতির ঘটনায় ৬৫৫.৮৪ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ায় ৪৯টি জালিয়াতির ঘটনায় ৪৬.৫২ কোটি টাকা, পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্কে ১৮টি জালিয়াতির ঘটনায় ১৬৩.৩ কোটি টাকা এবং পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে ২৪০টি জালিয়াতির ঘটনায় জালিয়াতি হয়েছে ২৭০.৬৫ কোটি টাকা। বাদল অধিবেশনের প্রথম দিন ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর সংসদে জানিয়েছেন, ১.১.২০১৬ থেকে ৩১.১.২০১৯ পর্যন্ত এরকম ৩৮টি ব্যাংক জালিয়াতির মামলার তদন্ত চলছে। এরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। শেষ ১ বছরে পালিয়েছেন ১১ জন। অবশ্য উনি এই পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যেই ‘দেশ কে গদ্দারোকো গোলি মারো শালোকো’ বলেছিলেন কিনা জানা যায়নি।
ষষ্ঠ গর্ভাঙ্ক
মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘কেম ছো ট্রাম্প’, পরে যা নাম বদলে হয় ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে এসেছিলেন ২৪ ফেব্রুয়ারি। ফিরে যান ২৫ ফেব্রুয়ারি। ২৪ ফেব্রুয়ারি আমেরিকাতে করোনা সংক্রমিত ছিলেন ৫৩ জন এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৬০-এ। ওই সময় ভারতে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ছিলো ৩। ঠিক কতজন তাঁর সঙ্গে এদেশে এসেছিলেন তা জানা না গেলেও সংখ্যাটা খুব একটা কম হবেনা। ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ এই বিশাল সংখ্যক প্রতিনিধিদলের কারোরই ভারতে ঢোকার সময় করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। সংসদে ২২ সেপ্টেম্বর একথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি মুরলীধরণ। ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় তবলিগি জামাতের বড়ো ভূমিকা ছিলো বলেও রাজ্যসভাতে জানানো হয়েছে।
অথচ, সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড-এর দাবি অনুসারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেব্রুয়ারি মাসেই করোনা সংক্রমণের ভয়াবহতার কথা জানতেন। তিনি উডওয়ার্ডকে ১৯ মার্চ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আমি কখনোই বিষয়টাকে গুরুত্ব দিতে চাইনি। কারণ আমি চাইনি এটা নিয়ে কোনো আতঙ্ক তৈরি হোক। প্রকাশ্যে বারবারই ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। অর্থাৎ, মার্কিন রাষ্ট্রপতি যখন ভারতে এসেছিলেন তখনই তিনি করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতেন। যদিও তিনি নিজে বা তাঁর প্রতিনিধিদলের কেউ ভারত সফরের সময় কোনো সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেননি। করোনা ভাইরাসের ইনকিউবেশনের সময় ১৪ থেকে ২৪ দিন ধরা হলে তারিখটা দাঁড়ায় ২১ মার্চ।
দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাত জমায়েত ছিলো ১ থেকে ২১ মার্চ। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী রাজ্যসভায় জানিয়েছেন ২৩৩ জন তবলিগি জামাত সদস্যকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে এবং ২,৩৬১ জনকে উদ্ধার করা হয়। এই ২১ দিনে মোটামুটি ৯০০০ মানুষ এই জামাতে এসেছিলেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ১৮ এপ্রিলের তথ্য অনুসারে নিজামুদ্দিনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ৪০ হাজার মানুষকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিলো। ১৩ মার্চ দিল্লি সরকার জমায়েত নিষিদ্ধ করে। অন্যদিকে গুজরাটের মোতেরা স্টেডিয়ামে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ১ লক্ষের বেশি মানুষ। আগ্রার অনুষ্ঠানে শুধু শিল্পী ছিলেন ৩০০০-এর বেশি। তথ্যগুলো পরপর সাজালে ভারতে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে কার ভূমিকা বেশি তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে।
অতঃপর
১৬০ বছর আগে নীলদর্পণ-এর ভূমিকায় দীনবন্ধু মিত্র লিখেছিলেন - “এক্ষণে তোমরা যে সাতিশয় অত্যাচার দ্বারা বিপুল অর্থ লাভ করিতেছ তাহা পরিহার কর, তাহা হইলে অনাথ প্রজারা সপরিবারে অনায়াসে কালাতিপাত করিতে পারিবে। তোমরা এক্ষণে দশ মুদ্রা ব্যয়ে শত মুদ্রার দ্রব্য গ্রহণ করিতেছ তাহাতে প্রজাপুঞ্জের যে ক্লেশ হইতেছে তাহা তোমরা বিশেষ জ্ঞাত আছ…।” দেড় শতকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই বাক্যবন্ধে এতটুকুও মরচে পড়েনি। তাই এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। সীতারাম ইয়েচুরির একটা মন্তব্য দিয়েই শেষ করা যাক। যেখানে ইয়েচুরি বলছেন - আমাদের সংসদ, যা গণতন্ত্রের মন্দির, মোদী সরকার তার মর্যাদা হ্রাস করছে । একনায়কতন্ত্র চলছে এখানে। আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাদের সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে।