৬০ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৬ আগস্ট, ২০২২ / ৯ ভাদ্র, ১৪২৯
মুখেন মারিতং জগৎঃ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বৃত্তান্ত
অর্ণব ভট্টাচার্য
স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গত ১৫ আগস্ট লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যে ভাষণ দিয়েছেন তাকে তার ভক্তকুল ইতিমধ্যেই অনন্য, ঐতিহাসিক ইত্যাদি নানা বিশেষণে অভিহিত করেছেন। কেউ কেউ তো তাকে সমাজসংস্কারক পর্যন্ত বলে ফেলেছেন। কিন্তু বাস্তবে কি আদৌ প্রধানমন্ত্রী কোনো যুগান্তকারী ভাবনা হাজির করেছেন? নাকি কিছু চমকপ্রদ কথার মাধ্যমে জনগণকে মোহিত করে তাদের মধ্যে ভ্রম সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়েছে? শ্রী মোদি যেখান থেকে রাজনীতির পাঠ গ্রহণ করেছেন সেই আরএসএস মুখোশের আড়ালে থেকে রাজনীতি করায় সিদ্ধহস্ত। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এযাবতকাল ন'টি স্বাধীনতা দিবসে তাঁর যে বক্তব্য হাজির করেছেন তা কথার মাধ্যমে কুহক বা মায়াজাল সৃষ্টির চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন। উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন পরিবারতন্ত্র ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে। আর এদিকে প্রদীপের তলাতেই অন্ধকার। তাঁর নিজের অতি ঘনিষ্ঠ সহকর্মী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পুত্র জয় শাহ কেবল পিতৃ পরিচয়ের সুবাদে বিসিসিআই-এর সচিব হয়ে গেলেন আর ব্যবসায়েও বিপুল লাভের কড়ি ঘরে তুলে ফেললেন। প্রধানমন্ত্রীর খেয়াল থাকেনা যে, বিজেপি-তে পরিবারতন্ত্রের ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। আর দুর্নীতি নিয়ে বিজেপি’র কোনো কথা বলার নৈতিক অধিকার আছে কী? এদেশে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের আমলে তেহেলকা কেলেঙ্কারির সুবাদে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি বঙ্গারু লক্ষণকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। কফিন কেলেঙ্কারির মতো নিকৃষ্ট দুর্নীতিতে জড়িয়ে ছিল সে সময়কার বিজেপি পরিচালিত সরকার। এদিকে নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’। অথচ তাঁর রাজত্বে কীভাবে নীরব মোদি, বিজয় মাল্যর মতো দুর্নীতিগ্রস্তরা দেশের সম্পদ লুট করে দেশের বাইরে পালিয়ে গেল? কেন তাদের এখনো ভারতে এনে বিচারের ব্যবস্থা করা গেল না? বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে যে ভয়ঙ্কর ‘ব্যাপম’ দুর্নীতি হলো তার কোনো বিচার এখনো হলো না কেন? কেন এই কেলেঙ্কারির তদন্ত চলাকালীন অনেকের প্রাণ গেল? এই সমস্ত প্রশ্নের একটিরও উত্তর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নেই। অথচ তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ডাক দিচ্ছেন! এই উচ্চাঙ্গের অভিনয়ের মূল উদ্দেশ্য জনগণের চোখে ধুলো দেওয়া, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কথার জাদুকরিতে বিজেপি’র কলঙ্ক ধুয়ে যায়। তবে দুর্নীতি বিজেপি’র মতো দলের জন্মদাগ যা কখনো মোছা যাবে না। বিশেষ করে করপোরেট ও হিন্দুত্ববাদী শক্তির আঁতাতের পর এই দাগ আরও গভীর ও স্পষ্ট হয়েছে। ভারতের বুকে ধান্দার ধনতন্ত্রকে যে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বিজেপি তা দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে যে পঞ্চপ্রাণের তত্ত্ব ঘোষণা করা হয়েছে তা নিয়ে তাঁর সমর্থকরা ধন্য ধন্য করছেন। জনৈক বশংবদ কলমচি তো এক ধাপ এগিয়ে একে আমাদের দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বিখ্যাত ‘Tryst with Destiny’ বক্তৃতার সাথে তুলনা করে একে আরও যুগান্তকারী বলে আখ্যা দিয়ে ফেলেছেন! তাহলে দেখা যাক যে, শ্রী মোদি কী বলেছেন আর বাস্তবটাই বা কী।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তর সংকল্প নিয়ে উন্নত ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন। অথচ ভক্তকুলের হর্ষোল্লাসের মধ্যেও যে রূঢ় সত্য চাপা পড়ছে না তা এই যে, মোদি সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী ও ভ্রান্ত নীতির জন্য উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্য বারেবারে ব্যাহত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘‘অমৃত কালে’’-র গল্প শোনাচ্ছেন, কিন্তু সর্বঅংশের ভারতবাসী একথা উপলব্ধি করছেন যে, আমাদের দেশে ‘অমৃত’ পান করছেন সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষ আর আমজনতা দুঃখ-দারিদ্র্যের বিষপান করে নীলকণ্ঠ হতে বাধ্য হচ্ছেন। মোদি সরকার ২০১৬ সালে যে ‘নোটবন্দি’র নীতি গ্রহণ করেছিল তা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের সর্বনাশ করেছে এবং কালো টাকার কারবারিদের অবৈধ আয়কে বৈধ করতে সুযোগ করে দিয়েছে। ডেকে এনেছে অর্থনৈতিক নৈরাজ্য। নরেন্দ্র মোদির রাজত্বে দারিদ্র্য, বেকারি ও মূল্যবৃদ্ধি অত্যন্ত উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। করোনা অতিমারীর দোহাই দিয়ে নিজেদের অক্ষমতাকে আড়াল করতে চাইলেও সরকারি তথ্য জানাচ্ছে যে, অতিমারীর আগেই ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুত অবনতি লক্ষ্য করা গিয়েছিল যা পরবর্তীকালে আরও তীব্র আকার ধারণ করে। অথচ কী আশ্চর্যের বিষয়, গত বছর স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের সীমাবদ্ধতা নিয়ে কোনোরকম আত্মসমালোচনা না করে উলটে সরকারের সাফল্যের কথাই কেবল উচ্চকণ্ঠে তুলে ধরেছেন। তবে সাফল্যের সেই ঢক্কানিনাদে করোনাকালে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে, অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়া হাজার হাজার মৃত ব্যক্তির স্বজনদের আর্তনাদ চাপা পড়েনি। সরকারের প্রধান হিসেবে নরেন্দ্র মোদির সৎ সাহস হয়নি একথা বলার যে, ভারতীয় রাষ্ট্র এই অভূতপূর্ব অতিমারীর সময় কয়েক কোটি পরিযায়ী শ্রমিককে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে পারেনি। শত শত মাইল পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে গিয়ে অকালে ঝরে গিয়েছে কত প্রাণ! তাঁদের কারোর জন্য আনুষ্ঠানিক নীরবতাটুকু পালন করা হয়নি! রাষ্ট্রীয় উৎসবের জৌলুসে ভারত সরকারের এই অমানবিকতা ঢেকে ফেলা যাবে না।
এবছর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী ‘পঞ্চপ্রাণ’-এর দ্বিতীয় সংকল্প হিসেবে দাসত্ব থেকে মুক্তির আহবান জানিয়েছেন। ইতিহাসের পরিহাস এই যে, বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই দেশের মানুষকে করপোরেটের সেবাদাসে পরিণত করবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আমাদের দেশের কৃষকরা রুখে না দাঁড়ালে কৃষিপ্রধান ভারতের পুরো কৃষিক্ষেত্র এতদিনে কর্পোরেটের মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে যেত, আর কৃষকরা হয়ে যেতেন বহুজাতিক কোম্পানির ক্রীতদাস। একদিকে নতুন দাসত্বের ফাঁদে দেশবাসীকে ফেলবার অপচেষ্টা চলছে, অন্যদিকে আত্মনির্ভরতার কথা বলে, দাসত্বের মনোবৃত্তি মুক্ত হবার ডাক দিয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার কৌশল অবলম্বন করেছে দেশের শাসকদল। ব্রিটিশ শাসনের শেকল ভাঙার সংগ্রামের উত্তরাধিকার যারা বহন করে না, যারা ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশের মানুষের ঐক্য সম্প্রীতিকে ধ্বংস করবার কাজে জন্মলগ্ন থেকে নিয়োজিত তাদের মুখে দাসত্বমোচনের কথা মানায়?
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন নিজেদের ঐতিহ্য উত্তরাধিকার নিয়ে গর্ববোধ করতে। কিন্তু কোন্ ঐতিহ্যের জন্য ভারতে গর্ববোধ করবে? সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঐতিহ্য, সম্প্রীতির ঐতিহ্য, সমন্বয়ের ঐতিহ্য আমাদের কাছে বরণীয়। কিন্তু আরএসএস-র কাছে ঐতিহ্য মানে মনুসংহিতার মনুষ্যত্ব-বিরোধী নির্দেশ। প্রাচীন ভারতের যুক্তিতর্কের পরম্পরার উত্তরাধিকার এরা মানতে চায় না। আর তাই তিস্তা শীতলবাদ,উমর খালিদ, আনন্দ তেলতুম্বডের মতো প্রতিবাদীদের জেলে বন্দি থাকতে হয়। অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হয় অশীতিপর স্ট্যান স্বামীকে। যে ভারতে কাশীর বালাজি মন্দিরের চাতালে বসে বিসমিল্লাহ খান সানাই বাজান, যেখানে নজরুল ইসলামের কলমে শ্যামা সংগীত রচিত হয়, যেখানে পণ্ডিত যশরাজ গেয়ে ওঠেন ‘‘মেরো আল্লাহ মেহেরবান’’ সেই ভারতকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় আরএসএস। প্রকৃত ভারতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আরএসএস-র বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথায় ভুলে গেলে চলবে না।
নরেন্দ্র মোদি বলেছেন দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে। অথচ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, তথাকথিত নিম্ন বর্গভুক্ত দলিত সম্প্রদায়ের মানুষদের প্রতিনিয়ত এ দেশে যেভাবে লাঞ্ছনা, অত্যাচার ও অপমানের শিকার হতে হচ্ছে তার অবসান না ঘটিয়ে জাতীয় ঐক্য তৈরি করা সম্ভব? আর সংঘ পরিবার যদি জাতীয় ঐক্য রক্ষায় প্রকৃতই উদ্যোগী হতে চায় তাহলে সমাজে বিভেদ ও বিদ্বেষের রাজনীতি কেন প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে দিচ্ছে? ভারতের বৈচিত্র্যময় এবং বহুত্ববাদী সংস্কৃতির ধারা সবচেয়ে বেশি আক্রমণের মুখোমুখি হয়েছে বিগত সাত বছরে। পাঠ্য পুস্তকে ইতিহাসের বিকৃতি ঘটিয়ে শিশুমনকে কলুষিত করা হচ্ছে। গোটা সমাজ কাঠামোকে একছাঁচে ঢেলে ফেলার চেষ্টা চলছে। ভারতের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে এহেন অপচেষ্টা অনৈক্য সৃষ্টির চতুর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই অনৈক্যের মাধ্যমে সংকীর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা যারা করছে তাদের মুখে ঐক্যের কথা একেবারেই বেমানান। নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরি করবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, সংঘ পরিবারের জাতীয়তাবাদ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, গ্রহণমূলক জাতীয়তাবাদ নয়। এই জাতীয়তাবাদ আসলে বর্জনমূলক উগ্র জাতীয়তাবাদ যা ঘৃণা আর বিদ্বেষের চাষ করে বিচ্ছিন্নতার মনোভাবকে জাগিয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে নাগরিক কর্তব্যে অবিচল থাকতে বলেছেন। তিনি দেশবাসীকে বাণী দেওয়ার সময় এ কথা ভুলে গেলেন যে, কর্তব্য ও অধিকার পরস্পরের পরিপূরক। এদেশে যে প্রতিমুহূর্তে নাগরিক অধিকার বিপন্ন হচ্ছে তা নিয়ে তাঁর মুখে কোনো কথা নেই। রাষ্ট্র যে নাগরিকদের প্রতি তার কর্তব্য পালন করছেনা, বরং সংবিধান-স্বীকৃত নাগরিক অধিকারগুলি প্রতিনিয়ত পদদলিত হচ্ছে তা নিয়ে দেশব্যাপী চর্চা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলাই বর্তমান সময়ের দাবি।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, নারীদের প্রতি অবমাননা বন্ধ করবার শপথ নিতে হবে। তাহলে গুজরাটের বিজেপি সরকার বিলকিস বানুর ধর্ষকদের মুক্তি দিল কীভাবে? কার অভয় আছে বলে বিজেপি বিধায়ক ধর্ষকদের উচ্চ সংস্কার সম্পন্ন ব্রাহ্মণ সন্তান বলে তাদের গুণগান করেন? এদেশে নারীর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে যে পুরুষতান্ত্রিক ও সামন্ততান্ত্রিক পরিমণ্ডলে সেখানে সাম্প্রদায়িকতার উপাদানকে যুক্ত করে পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে আরএসএস এবং তার রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি। আর তাই আট বছরের আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যা করার পরে ধর্ষকদের সমর্থনে মিছিল বের করার দুঃসাহস দেখানো সম্ভব হয়েছে এই দেশে! এই অনাচারের অবসানের কোনো দিশা এই প্রধানমন্ত্রী দেখাতে পারবেন না কারণ, তাঁর দল এই সব ঘৃণ্য অপরাধের সঙ্গে নানা জায়গায় সরাসরি যুক্ত থাকছে এবং নারীর অধিকার ও মর্যাদাহানির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। অবশ্য মনুবাদের আদর্শে বিশ্বাসী ফ্যাসিস্ট দলের কাছ থেকে অন্য কিছু প্রত্যাশাও করা যায় না।
২০১৪ সাল থেকে নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রত্যেক স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতাতেই কিছু না কিছু চমক হাজির করেছেন। কখনো ‘স্বচ্ছ ভারত’-এর স্লোগান বা শ্রমিক-কৃষকের লোকদেখানো স্তুতি। কখনো ‘স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া’, ‘স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া’র স্লোগান। কখনো ‘আত্মনির্ভর ভারত’ গড়ার আহ্বান। আবার গত বছর তিনি শুনিয়েছিলেন ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’, ‘সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’-এর কথা। শুনতে মনোমুগ্ধকর এইসব স্লোগানের অন্তঃসারশূন্যতা গত সাত বছরে ক্রমশ স্পষ্ট হয়েছে। সত্যি কী দেশে সকলের বিকাশ হচ্ছে? সকলের হাত কী ধরছে সরকার? তাহলে আমজনতার দুরবস্থার সময় করপোরেটের মুনাফা এভাবে সর্বাধিক বাড়লো কীভাবে? যে সরকার বলছে জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার, সেদেশে অপুষ্টিজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়ছে কীভাবে? সরকার তরুণ প্রজন্মের পিঠ চাপড়ে দিয়ে বলছে এরা ‘Can do generation’ অর্থাৎ করিৎকর্মা। তাহলে এত কর্মহীনতা কেন? তরুণ প্রজন্ম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজের অভাবে কেন ধুঁকছে?
নরেন্দ্র মোদি দেশের জনগণের সেবক হবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। তারপর ক্রমান্বয়ে করপোরেটের একনিষ্ঠ সেবকে পরিণত হয়েছেন। আর প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চকে ব্যবহার করছেন জনগণকে ধোঁকা দেবার কাজে। একদিকে মুখেন মারিতং জগৎ আর অন্যদিকে জনগণের প্রাপ্য দেওয়ার সময় হাত উপুড় করে দেওয়ার দু’মুখো নীতি চলতে পারেনা। সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন যে, কথার মারপ্যাঁচে মানুষের মগজ ধোলাই করে দেবেন, তাহলে তিনি ভুল করছেন।