E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৬ আগস্ট, ২০২২ / ৯ ভাদ্র, ১৪২৯

স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের ভূমিকা

[বঙ্গভঙ্গ রদ-পরবর্তী সময় থেকে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা পর্যন্ত]

সুপ্রতীপ রায়


ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রধান দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই অবদান ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস চর্চার অনেক ক্ষেত্রেই মুসলমানদের অবদান সঠিকভাবে আলোচনা করা হয় না। আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৭৫ বছরে সারা বছর ধরেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস আলোচনা হবে। সেই সব আলোচনায় স্বাধীনতা আন্দোলনে মুসলিমদের অবদানও স্থান পাবে বলে আশা করা হয়।

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পরবর্তী সময় থেকে যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছে সেই আন্দোলনে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিশিষ্ট অবদান ছিল। সৈয়দ হাসান ইমাম ছিলেন একজন জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতা। তাঁর উদ্যোগে ১৯১২ সালে বাঁকিপুরে জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক অধিবেশন হয়। অ্যানি বেসান্ত গৃহবন্দি হলে তিনি তার তীব্র প্রতিবাদ করেন। হাসান ইমাম রাউলাট আইনের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি হোমরুল আন্দোলন, ১৯২৭ সালে সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলন ও আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

উত্তর পশ্চিম ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৈপ্লবিক কর্ম তৎপরতা ছিল উল্লেখযোগ্য। “যখন ভারতের বিপ্লবীরা বাইরের দেশ থেকে অস্ত্র ও অর্থ সাহায্য নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে সর্বাত্মক সংগ্রাম বাঁধাবার চেষ্টায় ছিলেন তখন উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের মুজাহিদ বা মুজাহিড ওয়াহাবিগন অনেকটা ধর্মীয় কারণ হলেও ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। ১৯১৪ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ আরম্ভ হলে তুরস্কের সুলতান ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ান। কাজেই ভারতের মুসলমানরাও তাঁদের ধর্মগুরু তুরস্কের সুলতানের সমর্থনে ইংরেজগণকে তাঁদের শত্রুরূপে বিবেচনা করেন। লাহোর, পেশোয়ার, কোহাট প্রভৃতি অঞ্চল থেকে অনেক মুসলমান ছাত্র মৌলভি ওবেদুল্লা, মৌলভি মামুদ হাসান প্রমুখের নেতৃত্বে আরব মুল্লুক ও মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি মুসলমান শাসিত দেশের কর্তৃপক্ষকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করতে উৎসাহিত করেন”। [১]

১৯১৫ সালের ১ ডিসেম্বর কাবুলে স্বাধীন ভারতের যে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়েছিল তার রাষ্ট্রপতি ছিলেন মহেন্দ্রপ্রতাপ ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মৌলভি বরকতুল্লাহ্। বরকতুল্লাহ্ আফগানিস্তান থেকে বার্লিনে ফিরে গিয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্স পার্টি গঠন করেন। ১৯২৭’র ১০-১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাসেলসে যে উপনিবেশিক অত্যাচার ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সম্মেলন হয়েছিল সেখানে তিনি সানফ্রানসিস্কোর হিন্দুস্থান গদর পার্টির প্রতিনিধি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। [২]

খান আবদুল গফফর খান ‘খুদাই খিদমদগার’-গণদেশপ্রেমিক ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। [৩] তিনি গান্ধীজির অহিংস নীতির সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১৯১৯ সালের মার্চে কুখ্যাত রাউলাট বিল আইনে পরিণত হয়। এর প্রতিবাদে ৬ এপ্রিল উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে পালিত হয় হরতাল। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আব্দুল গফফর খান। তিনি গ্রেপ্তার হন।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মজহারুল হক একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি হোমরুল আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। পাটনায় হোমরুল লিগ শাখার সভাপতি হয়েছিলেন। তাঁর বেশ কয়েকটি ইংরেজ বিরোধী লেখা ‘দি মাদার ল্যান্ড’-এ প্রকাশিত হলে তিনি গ্রেপ্তার হন। মজহারুল রচিত ‘The Great Trial’ গ্রন্থে গান্ধীজির কারাবরণ সম্পর্কে লিখেছিলেন।

মহম্মদ আলি ও শওকত আলি স্বাধীনতা আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯১৯ সালের ১০ এপ্রিল গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সৈফুদ্দিন কিচলু। ১৯২১ সালে তিনি করাচিতে এক মামলায় কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে দেশীয় সৈন্যদের বিদ্রোহ করায় উসকানি দেওয়ায় অভিযোগ ছিল। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ এক নির্দেশ জারি করে বলেছিল, তিনি কোনো জনসভায় বক্তৃতা দিতে পারবেন না। ১৯২৯ সালে লাহোর কংগ্রেসের অধিবেশনে জহওরলাল নেহরু পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। কিচলু একে সমর্থন করেছিলেন।

ডাঃ মহম্মদ আলি আনসারি জাতীয় আন্দোলনে একটি বিশিষ্ট নাম। ১৯২০ সালে তিনি মুসলিম লিগের সভাপতি নির্বাচিত হলেও তাঁর সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল না। তিনি অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি বহুবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

১৯২০ সালে বর্ধমানে আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেস সংগঠন গড়ে উঠেছিল। ১৯২১ সালে বর্ধমান জেলা কংগ্রেস কমিটি গঠিত হয়। প্রথম সভাপতি ছিলেন মৌলভি মহম্মদ ইয়াসিন। বর্ধমান জেলার মুসলমান নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ জাতীয় কংগ্রেসে কাজ করতেন। আবুল কাশেম চিত্তরঞ্জন দাসের স্বরাজ পার্টিতে যোগদান করেছিলেন। আব্দুল কাদের, আবুল হায়াত, কচি মিয়া, আব্দুল সাত্তার প্রমুখ নেতা জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন।

এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে হাকিম খান একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯১৭ সালে তিনি গান্ধীজির সংস্পর্শে এসেছিলেন। ১৯২০ সালে তিনি সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ‘হাজিক-উল-মুল্‌ক’ উপাধি বর্জন করেছিলেন। দেশবাসী তাঁকে ‘মামিন-উল-মুল্‌ক’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কাজি নজরুল ইসলামের অবদানকে কে অস্বীকার করবে? ১৯১৪ সালে শুরু হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধে অনেক যুব বাঙালি সৈনিক হিসাবে যোগদানে ইচ্ছুক ছিলেন। নজরুল সৈন্য বিভাগে ভরতি হিয়েছিলেন। উক্ত সময়ে বাঙালি সৈন্যদের নিয়ে ডবল কোম্পানি নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে এই ডবল কোম্পানিটিকে ৪৯ নম্বর রেজিমেন্টে পরিণত করা হয়েছিল। করাচি সেনানিবাসে থাকার সময় নজরুল অনেক দেশাত্মবোধক গল্প ও কবিতা রচনা করেছিলেন। ১৯২০ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ প্রস্তাব গৃহীত হলে নজরুল গানে জয়ধ্বনি দিলেন-“তোরা সব জয়ধ্বনি কর।/ তোরা সব জয় ধ্বনি কর।/ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে/ কাল বোশেখীর ঝড়”। [৪]

মৌলানা হসরত মোহানি স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তাঁর তীব্র ঘৃণা ছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সমালোচনা করে তিনি লিখেছিলেন - সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করতে চায়, এমন কর্মসূচিতেই আমি বিশ্বাস রাখি। জীবনভর এটাই আমার কর্মসূচি থাকবে। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী কর্মসূচি সম্পন্ন যে কোনো দলেই আমি যোগ দেব।

ব্রিটিশ বিরোধী লেখার জন্য তাঁকে ছ’বছর ব্রিটিশ কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে হয়েছিল। ১৯২১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের আমেদাবাদ অধিবেশনে তিনি প্রথম পূর্ণ স্বাধীনতার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। গান্ধীজির বিরোধিতাকে উপেক্ষা করেই তিনি এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তাঁর এই প্রস্তাব পরাস্ত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এটির তাৎপর্য ছিল অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, রামপ্রসাদ বিসমিল ও আসফাকুল্লা খান প্রমুখ মোহানির সঙ্গে পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে অনেক প্রতিনিধির সমর্থন সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন। [৫] কংগ্রেসের পরবর্তী অধিবেশনগুলিতেও প্রস্তাবটি পেশ করা হয়েছিল। ১৯২৯ সালে লাহোর অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্য গৃহীত হয়েছিল।

খিলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯২০ সালের ২০ জানুয়ারি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত খিলাফত কমিটির এক সভায় গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিটি দিয়েছিলেন। এই সভার কয়কদিন পর মীরাটে অনুষ্ঠিত খিলাফত সম্মেলনে এই কর্মসূচিটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল। ১৯২১ সালের জুলাই মাসে করাচিতে অনুষ্ঠিত খিলাফত সম্মেলনে যে প্রস্তাবগুলি গৃহীত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতের স্বাধীন রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের সংকল্প। প্রসঙ্গত, অসহযোগের প্রস্তাব প্রথমে উঠেছিল কংগ্রেস থেকে নয়, সেন্ট্রাল খিলাফত কমিটি ও ‘জমিয়তুল উলাম-ই-হিন্দ’ থেকে। [৬]

১৯২১ সাল থেকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি পায়। এই আন্দোলনে অন্যান্যদের সঙ্গে সামনের সারিতে ছিলেন মহম্মদ আলি, শওকত আলি, আবুল কালাম আজাদ, হাকিম আজমল খাঁ প্রমুখ। ১৯২১ সালের ৮ জুলাই নিখিল ভারত খিলাফত সম্মেলন থেকে ইংরেজ শাসকের অধীনে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত মুসলমান সৈনিকদের কর্মস্থল থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। সরকার বিরোধী ঘোষণার জন্য ১৯২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মহম্মদ আলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নিয়ে আবুল কালাম আজাদ, শওকত আলি প্রমুখ গ্রেপ্তার হন।

সত্যাগ্রহ আন্দোলন বিস্তারের লক্ষ্যে গান্ধীজি দেশের নানা অঞ্চলে ‘সত্যাগ্রহ সভা’র শাখা স্থাপন করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশে সত্যাগ্রহ সভা চালান মহম্মদ আলি, সওকত আলি, আব্দুল কবি সৈয়দ হুসেন প্রমুখ নেতা। লাহোরে সত্যাগ্রহ সভা যাঁরা পরিচালনা করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সৈফুদ্দিন কিচলু।

রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতবাসী গর্জে উঠেছিলেন। যুদ্ধ শেষে আমাদের দেশ এক নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলো। রাউলাট বিল আইনে পরিণত হওয়ার প্রতিবাদে আইন পরিষদের সভ্যপদ থেকে জিন্নাহ, মাজহারউল হক প্রমুখ আইন সভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। রাউলাট আইনের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রচুর সভা, সমাবেশ হয়েছিল। সরকার সাইফুদ্দিন কিচলু সহ বেশ কয়কজনের প্রকাশ্য জনসভায় বক্তৃতা বন্ধের আদেশ দিয়েছিল। ১৯১৯ সালের ১০ এপ্রিল সাইফুদ্দিন কিচলুকে অমৃতসর শহর থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে আব্দুল বারি একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯২০ সালের জুন মাসে লক্ষ্ণৌয়ে আব্দুল বারি এক ফতোয়া জারি করে বলেছিলেন, ভারত দার-উল-হরব বা যুদ্ধরত দেশ। ভারতের মুসলিমদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য জেহাদ অর্থাৎ ধর্মযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত। এরা যদি ব্রিটিশ সরকারের মোকাবিলা না করতে পারে, তাহলে তারা যেন এদেশ থেকে হিজরত করে বাইরে চলে যায়। এরা যেন মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতায় ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

আব্দুল বারির এই ফতোয়ায় ভারতের মুসলমানদের অনেকের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল। এই ফতোয়াকে মান্যতা দিয়ে কেবলমাত্র সিন্ধু উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ থেকে দলে দলে মুসলমান স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য দেশ থেকে হিজরত করে বাইরে চলে গিয়েছিলেন। আব্দুল গফফার খানও এই আন্দোলনে দেশ ছেড়ে কাবুলে চলে গিয়েছিলেন। মোপলা বিদ্রোহ আর এক বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের অধ্যায়। এই বিদ্রোহে কখনই সাম্প্রদায়িক উপাদান ছিল না। এটি ছিল ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই।

১৯২১-র অসহযোগ আন্দোলনে আব্দুল হালিম যোগ দিয়েছিলেন। তিনি কয়েক বছর আন্দামানে দ্বীপান্তরিত হয়েছিলেন। হিজলি বন্দি শিবিরেও তিনি কাটিয়েছিলেন। ১৯২২ সালে পাঞ্জাবে অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার অপরাধে বাই আম্মান মীরাটে গ্রেপ্তার হয়ে দু’বছর কারাবাস করেছিলেন। ১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জমিয়াত-উল-উলেমার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেছিলেন শেখ উল হিন্দ মাহমুদ আল হাসান। তিনি তাঁর সমাপ্তি ভাষণে ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

১৯২২ সালে চৌরিচৌরার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত শহিদদের মধ্যে ছিলেন আবদুল্লা ও লাল মহম্মদ। মৌলানা শওকত আলি ও মৌলানা মহম্মদ আলি মহাত্মাজির আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ও উচ্চবেতনের চাকুরি ত্যাগ করেছিলেন।

অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কিছুদিন পর থেকেই ব্রিটিশ বিরোধী তৎপরতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিপ্লবীদের কাজ চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় অর্থের। ১৯২৫ সালের ৯ আগস্ট কাকোরি ও আলম নগরের মাঝামাঝি স্থানে ট্রেন ডাকাতি হয়। ১৯২৬ সালের ৪ জানুয়ারি ২৫ জন ধরা পড়েন। ২৩ জনের নামে মামলা ওঠে ১৯২৬-র ১৬ এপ্রিল। যাঁদের নামের মামলা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে অন্যতম আসফাকুল্লাহ খান ছিলেন (সাহারানপুর)-১৯২৭ সালের ৬ এপ্রিল। মৃত্যুদণ্ডে যাঁরা দণ্ডিত হয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আসফাকুল্লাহ। ১৯ ডিসেম্বর ফৈজাবাদ জেলে আসফাকুল্লাহর ফাঁসি হয়। তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িক বিভাজনের বিরুদ্ধে। তাই তিনি বিভেদের বিরুদ্ধে ডাক দিয়ে বলেছিলেন, “এই বিবাদ পিছনে ফেলে এসো, আরও কাছাকাছি হও। হিন্দু ও মুসলিম অচেনা লাগে তোমাদের এই ভেদাভেদ।” [৭]

জাতীয় মুক্তির আন্দোলনে ওবায়দুল্লাহ সিন্ধি একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি মাহমুদ আল হাসানের কাছ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজমন্ত্র গ্রহণ করেছিলেন। ওবায়দুল্লাহ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের কাবুল কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯২৫ সালে স্বাধীন ভারতের একটি খসড়া গঠনতন্ত্র প্রকাশ করেন। ৫৬ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকাটির নাম ছিল ‘The Constitution of the Federated Republics of India’।

আমাদের দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে অর্ধসত্য, বিকৃত তথ্য পরিবেশন করার পরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে। প্রকৃত সত্য মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেশপ্রেমিকরা পালন করে চলেছেন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুসলিমদের অবদান মুছে ফেলার চক্রান্ত চলছে।


তথ্যসূত্রঃ
১। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের আনুপূর্বিক সর্বতথ্য - সারসংগ্রহঃ শ্রী জ্ঞানেন্দ্র নাথ রায় (পৃঃ ৭৩২)।
২। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলিমদের ভূমিকা - সত্যেন সেন (পৃঃ ৯৫)।
৩। ভারতভাগ বিরোধী মুসলিম জনমত - শামসুল ইসলাম (পৃঃ ১১২)।
৪। কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা - মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ - ৪র্থ মুদ্রণ, মে, ১৯৭৫ (পৃঃ ২১০)।
৫। http://en.wikipedia.org/wiki/hasrat-mohani/
৬। অতীতের কথা (কৃষক আন্দোলন ও আমরা) - মহম্মদ আবদুল্লাহ রসুল - গণশক্তি, ২৪/২/১৯৮৪।
৭। ভারতভাগ বিরোধী মুসলিম জনমত - শামসুল ইসলাম (পৃঃ ১০৭)।