৫৮ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ১৩ ফাল্গুন, ১৪২৭
২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশ সফল করতে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আই এস এফ’র যৌথ আবেদন
২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেড সমাবেশকে ঐতিহাসিক রূপ দিতে বামফ্রন্ট, সহযোগী দল, জাতীয় কংগ্রেস এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের পক্ষ থেকে এক আবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই আবেদনে বলা হয়েছে -
● লড়াই চলছে সমগ্র দেশজুড়ে - কৃষক-খেতমজুর-শ্রমিক যেমন লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন আবার ছাত্র-যুব-মহিলা সব অংশের শিক্ষক সবাই লড়াইয়ের ময়দানে। কেন্দ্রে মোদীর নেতৃত্বে আরএসএস-বিজেপি সরকারের কৃষি আইন, শ্রম কোড সংস্কার সবই কর্পোরেটের স্বার্থে। করোনা মহামারীর সময়কালে দেশের ১৫ কোটি মানুষের কাজ চলে গেছে। দারিদ্র্য, অভাব, বৈষম্য, বুভুক্ষা সমস্ত কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ শুধুমাত্র বিগত ১১ মাসে দেশের বৃহৎ কর্পোরেট গোষ্ঠীর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা। পেট্রোল-ডিজেল সহ সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ঘটছে। ২৬ নভেম্বর, ২০২০ আমরা প্রত্যক্ষ করলাম কেন্দ্রের সরকারের কর্পোরেটের স্বার্থবাহী, জনবিরোধী নীতিগুলির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট - তীব্র অসন্তোষের প্রবল অভিব্যক্তি। বিগত ৮ ডিসেম্বর দিল্লিতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রমাণ করেছে ভয়ঙ্কর কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগ্রামের প্রতি রয়েছে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন। কৃষকদের শান্তিপূর্ণ সংগ্রামকে কালিমালিপ্ত করার লক্ষ্যে মোদী সরকার এবং আরএসএস-বিজেপি’র ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এই সরকারের প্রকৃত চরিত্র পরিষ্কার করে দিয়েছে।
● বিগত ১০ বছর ধরে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার চলছে। শিক্ষা, কাজ, নারী নিরাপত্তা, গণতন্ত্র রক্ষা, জীবন-জীবিকা, শ্রমিক, কৃষক সহ সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা, আইন-শৃঙ্খলা সমস্ত ক্ষেত্রে এই সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কৃষি সঙ্কট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে শিল্পায়ন স্তব্ধ, নতুন শিল্প গড়ে উঠছে না। রাজ্য সরকারের নিয়োগ বন্ধ। দুর্নীতি-তোলাবাজি-জোর জবরদস্তি রাজ্য সরকার ও তৃণমূল দলটার বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদ দমিয়ে দিতে পুলিশকে দিয়ে বর্বর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। ৩১ বছরের যুবক শহিদ মইদুল ইসলাম মিদ্যার অপরাধ কী, যার জন্য পুলিশের নৃশংস আক্রমণে ওর অমূল্য প্রাণ দিতে হলো? রাজ্য সরকারের কাছে সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা ও কাজের দাবি করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী উপহার দিলেন জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠি। এই ধরনের বর্বরতা, নৃশংসতা বিগত ১০ বছর ধরে এই রাজ্যে আমরা প্রত্যক্ষ করছি।
● দেশের সংবিধানের মর্মবস্তু আজ আক্রান্ত। ভারতের বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে বিজেপি সরকার। সংখ্যালঘুদের অধিকারগুলি ক্রমান্বয়ে খর্ব হয়ে চলেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রসারিত।
● শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য-ইতিহাস সহ সব ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি উৎসাহিত হচ্ছে। ভারতের ভাষ্য সম্পূর্ণ পালটে দেওয়ার কৌশলী চেষ্টা চলছে।
● রাজ্যের তৃণমূল সরকার কৌশলে সাম্প্রদায়িক কার্ড ব্যবহার করছে। বিজেপি এবং তৃণমূলের বোঝাপড়ার রাজনীতি এই রাজ্যে দ্বিদলীয় রাজনীতির কাহিনিকে শক্তিশালী করতে চাইছে।
● সমগ্র দেশের সাথে বাংলার বুকে সমগ্র অংশের জনগণের সংগ্রামগুলি বৃদ্ধি পাচ্ছে। শ্রমিক-কৃষকের সাথে ছাত্র-যুব-মহিলাদের বৃহৎ বৃহৎ প্রতিবাদ আন্দোলন এই সময়কালে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। পুলিশি বর্বরতার কাছে কোনও আন্দোলন নতি স্বীকার করেনি।
● রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। দেশ ও রাজ্যের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে রাজ্য ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করার ঐতিহাসিক কর্তব্য আমাদের পালন করতেই হবে। রাজ্যের বুকে বিকল্প নীতিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শিক্ষা, কাজ, খাদ্য, স্বাস্থ্যের অধিকার, শ্রমিক - কৃষকের স্বার্থ, নারী নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারে এবং দুর্নীতি তোলাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজত্বের অবসান ঘটাতে সক্ষম এমন এক বিকল্প সরকার স্থাপন করতে হবে। এরাজ্যের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলেই আমরা বিকল্প প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছি।
● সমস্ত সংগ্রামগুলিকে আরও তীব্র করে এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির এক বিকল্প গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার ব্রিগেড ময়দানে এক ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এইদিনে ব্রিগেড ময়দানে সমাবেশের এক নতুন নজির সৃষ্টি হবে।
এই সমাবেশে আপনাকে ও আপনার পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাই।