৫৮ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ১৩ ফাল্গুন, ১৪২৭
এলডিএফ সরকারের সাফল্যের বার্তা রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছাবে বিকাশ জাঠা
বিকাশ জাঠার উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।
বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে রাজ্যের উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে মানুষের সামনে বিকল্প রূপায়ণ নিশ্চিত করে কেরালার বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকার এগিয়ে চলেছে আসন্ন নির্বাচনে নিশ্চিত সাফল্যের দিকে। পরপর দু’টি ভয়াবহ বন্যা, ওখি সাইক্লোন, করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীর বাধা পেরিয়ে কেরালার সরকার পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বে পরিকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কল্যাণ, তথ্য ও প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলির পুনরুজ্জীবন, গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ, বর্জ্য নিষ্কাশন, জলভাগের পুনরুজ্জীবন - সবক্ষেত্রেই সাফল্যের ছাপ রেখেছে এই সরকার। এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় এই সরকারের ভূমিকা গোটা দেশজুড়ে অভিনন্দিত হয়েছে। এই সাফল্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঘোষণা করেছেন যে, কেরালায় কখনোই নাগরিকত্ব সংশোধন আইন এবং কৃষক বিরোধী কেন্দ্রীয় সরকারের বিল সমূহ কখনোই প্রয়োগ করা হবে না। এলডিএফ সরকারের এই অবস্থানের জেরে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ এবং কৃষকদের আস্থাশীল এবং আত্মবিশ্বাসী করেছে। এই সাফল্যের কথা এবং রাজ্যের উন্নয়নের বার্তা সব অংশের মানুষকে পৌঁছে দিতে এলডিএফ’র পক্ষ থেকে রাজ্যজুড়ে উত্তর এবং দক্ষিণ থেকে দু’টি বিকাশ পদযাত্রা সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। এই বিকাশ জাঠা’র নেতৃত্ব দেবেন এলডিএফ-এর আহ্বায়ক সিপিআই(এম)’র ভারপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদক এ বিজয়রাঘবন এবং সিপিআই-এর জাতীয় পরিষদের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বিনয় বিশ্বম।
দেশ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন এজেন্সি রাজ্যের এই সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং রাজ্যকে পুরস্কৃত করেছে। সদ্যসমাপ্ত স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থা, পৌরসভাগুলির নির্বাচনে কেরালার মানুষ এই সরকারের ওপর তাদের আস্থা ঘোষণা করেছেন জয়ী করে। এই নির্বাচনের আগে কেরালার বাম সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার চলেছে ঘৃণা উগরে দেওয়া প্রচার। মিডিয়াতে চলেছে সোনা পাচারের মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে লাগাতার সরকার বিরোধী কুৎসা। আগামী বিধানসভা নির্বাচন এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হবে। মানুষকে সাথে নিয়ে সেই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী এলডিএফ।
দু’টি জাঠাই শুরু হয়ে গেছে বিপুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। উত্তরের জাঠা শুরু হয়েছে কাশারগড় জেলার উপপালা থেকে। শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি ত্রিচুরে। জাঠা শেষে ত্রিচুরের সমাবেশে বলবেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি।
দক্ষিণের জাঠা শুরু হয়েছে এর্নাকুলাম থেকে। এই জাঠা উদ্বোধন করেন সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা। দক্ষিণের জাঠা শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি তিরুবনন্তপুরমে।
উত্তরের জাঠার উদ্বোধন করে পিনারাই বিজয়ন বলেন, এলডিএফ সরকার গত পাঁচ বছরে যা অর্জন করেছে তা অর্জন করা অসম্ভব ছিল। রাজ্যের মানুষ তাই এই সরকারকেই আবার নির্বাচিত করতে চান। তিনি বলেন, কেরালার মানুষ তাঁদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বিশ্বাস করেন যে, শুধুমাত্র এলডিএফ-ই পারে রাজ্যকে আরও উন্নত এবং সমৃদ্ধশালী করতে। যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনের আগে তার সবক’টিই এলডিএফ পূরণ করেছে। প্রত্যেক বছরই এই সরকার তাদের উন্নতির শংসাপত্র প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, এই সরকার এখানেই থেমে নেই, সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের থেকে মতামত গ্রহণ করছে। তাঁরাও খোলা মনে তাদের মতামত জানাচ্ছেন। তাঁরা বলেছেন, এই সরকারকেই তাঁরা আবার চান।
তিনি বলেন, সরকারের ভাবমূর্তিকে মলিন করার জন্য বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করা হয়েছে এবং মূল ধারার সংবাদমাধ্যম স্রোতের মতো মিথ্যা খবর ছেপেছে এই সরকারের বিরুদ্ধে।
পিনারাই বিজয়ন বলেন, সিএএ এই রাজ্যে কখনোই চালু করা হবে না। এখানে বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক সংগঠন চেষ্টা করছে সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয় থেকে মানুষের নজর ঘোরাতে। এসডিপিআই এবং জামাত-ই-ইসলামি আরএসএস-কে ঠেকানোর জন্য যা করছে তা আত্মঘাতী কাজ। কংগ্রেসের মতো নয়, লেফট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থানে অনড় থাকবে। তিনি বলেন, এ রাজ্যে কংগ্রেস এবং বিজেপি হাত ধরাধরি করে চলছে। রাজ্যের মানুষ এদের যোগ্য জবাব দেবেন।
দক্ষিণের জাঠার উদ্বোধনী সমাবেশে ডি রাজা বলেন, গোটা দেশ তাকিয়ে আছে কেরালায় এলডিএফ’র জয়ের দিকে। যে লড়াই কেরালা করছে তা কেরালার মানুষের একক লড়াই নয়, এটা গোটা ভারতের লড়াই। সাম্প্রদায়িকতা এবং বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে প্রকৃত লড়াই করতে পারে বামপন্থীরাই, কেরালার মানুষ সেটা জানেন। আবার প্রকৃতির তাণ্ডবের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিভাবে রাজ্যকে গড়ে তুলতে হয় তারও অনন্য নজির এই কেরালা। সামাজিক সূচকে কেরালার সাফল্য অনন্য। যেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রী উৎসাহের সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দিচ্ছেন, সেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন দৃঢ়ভাবে বলেছেন, তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দরকে বিরাষ্ট্রীয়করণ করতে দেবেন না। এখানে ইউডিএফ সবসময়ই বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক কৌশলকে সমর্থন করেছে।