৫৮ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ১৩ ফাল্গুন, ১৪২৭
কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদীদের জোটের আধিপত্য খর্ব হচ্ছে
প্রভাত পট্টনায়েক
কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদীদের জোটের আধিপত্য খর্ব করার প্রশ্নে একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করার অবস্থানকেই তুলে ধরেছে কৃষকদের সংগ্রাম। ওই জোটের এই আধিপত্য গত কয়েক বছর ধরে ভারতের বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। কৃষক, আর তাঁদের সাথে সাথে হস্তশিল্পী, কুমোর, মৎস্যজীবীদের মতো ছোটো ছোটো উৎপাদক - নয়া-উদারবাদী নীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দলে এঁরা সকলেই পড়ে। তাঁদের নিজের নিজের উৎপাদন ক্ষেত্রের জন্যে যে সমস্ত বিধি নিষেধ গড়ে তোলা হয়েছিল বৃহৎ পুঁজির স্বতঃস্ফূর্ত প্রবৃত্তি থেকে জন্ম নেওয়া আগ্রাসনকে ঠেকানোর লক্ষ্যে, যে বিধি-নিষেধগুলি বৃহৎ পুঁজির না-পসন্দ, সেগুলিকেই ধাপে ধাপে হঠিয়ে দিয়েছে নয়া-উদারবাদী ব্যবস্থা। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নয়া-উদারবাদের আক্রমণ সুবিদিত, প্রায় সকলেই জানেন; কিন্তু ছোটো ছোটো উৎপাদন ব্যবস্থাগুলির ওপরে তার যে সামগ্রিক আঘাত, সেই প্রসঙ্গটি কমই আলোচিত হয়।
আগে, অর্থনীতিতে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করত এমন যুগে, নানান ধরনের বহু বিধি-নিষেধ ছিল যেগুলি ছোটো ছোটো উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত ক্ষেত্রগুলিতে পুঁজিবাদের যে কোনো ধরনের আক্রমণকে ঠেকিয়ে রাখত। হস্তচালিত তাঁতে চালানো উৎপাদন ব্যবস্থার পক্ষে কিছু পণ্যকে সংরক্ষিত করে রাখার নীতি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ও সংগ্রহ মূল্যের মাধ্যমে কৃষক সমাজ ও তাঁদের ‘বাইরের’ জগতের মধ্যে রাষ্ট্রের মধ্যস্থতা গড়ে তোলা, বিভিন্ন ধরনের ভরতুকি প্রদান - ইত্যাকার নানান পদ্ধতির মাধ্যমে সেই হস্তক্ষেপ চালানো হতো।
এটা ঠিকই যে, একই উৎপাদন ক্ষেত্রের ভিতরে ভিন্ন ভিন্ন ছোটো ছোটো উৎপাদকদের মধ্যে গড়ে ওঠা ভেদাভেদকে এই বন্দোবস্তগুলি ঠেকাতে পারত না, যেমন তা অপারগ ছিল এই ক্ষেত্রগুলিতে একটা পুঁজিবাদী ঝোঁক গড়ে ওঠার বিষয়টিকে ঠেকানোর প্রসঙ্গে। তথাপি, এটাও আবার সত্যি ছিল যে, ছোটো ছোটো এধরনের উৎপাদন ব্যবস্থাগুলি পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার গ্রাসে চলে যাওয়ার পথে এই ধরনের বন্দোবস্তগুলি একটা বাধার প্রাচীর গড়ে তুলেছিল।
নয়া-উদারবাদী নীতি যখন চালু করা হয়, সেই সময়েও এই রক্ষাকবচগুলিকে পুরোপুরি খারিজ করে দেয়নি তখনকার কংগ্রেস সরকার। ভরতুকির পরিমাণ ছেঁটে কেটে ছোটো করে দেওয়া হয়েছিল এবং সংগ্রহমূল্য বৃদ্ধি করার প্রয়োজন থাকলেও সেই কাজ করা হয়নি; একইসাথে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল বাজার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার বন্দোবস্তগুলিও। এই ধরনের পদক্ষেপগুলির ফলে কৃষিতে লাভের পরিমাণ নিদারুণভাবে কমে যায়, কৃষকরা জড়িয়ে পড়ে পরিশোধ-অসাধ্য এক ঋণের ফাঁদে। ১৯৩০ দশকের মহামন্দার সময়ে কৃষকরা যেভাবে ভয়ঙ্কর আঘাতে জর্জরিত হয়েছিল, এই ঘটনাবলি ছিল ঠিক যেন তারই পুনরাবৃত্তি। এভাবে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ার ফলশ্রুতি হিসাবে লক্ষ লক্ষ কৃষকের আত্মহননের ঘটনা সামনে আসতে লাগল নয়া-উদারবাদী নীতিগুলি চালু হওয়ার পরে। তবুও বলার মতো বিষয় হলো, কৃষি উৎপাদনক্ষেত্রকে (এবং ছোটো ছোটো অন্যান্য উৎপাদন-ক্ষেত্রগুলিকেও) অবাধ বাজার ব্যবস্থার দয়া-দাক্ষিণ্যের হাতে তখনও পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া হয়নি - কৃষক সমাজের ওপরে তখন যে নিষ্পেষণ নেমে এসেছিল, তা ছিল পুরনো বন্দোবস্তের ঘেরাটোপের মধ্যেই; যদিও বা সেই আক্রমণগুলি ছিল নয়া-উদারবাদের অন্তর্নিহিত প্রবৃত্তির সাথে পুরোদস্তুর সাযূজ্যপূর্ণ।
নয়া-উদারবাদ নিজেই সঙ্কটে পড়ল যখন, ‘হিন্দুত্ব’বাদের সাথে সে তখন একটা জোট গড়ে তুলতে চাইল। তার কারণ, আর্থিক বৃদ্ধি নিজেই তখন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ায় ‘আর্থিক বৃদ্ধি চূড়ান্ত পর্যায়ে সকলেরই মঙ্গল করবে’ - এই পুরনো বুলি সেই সময়ে তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে; ফলে তাকে একটা নতুন ঠেকনা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ল। এই জোটের হাত ধরে ছোটো ছোটো উৎপাদনক্ষেত্রগুলিতে একটা আগ্রাসী চেহারায় আক্রমণ নেমে এসেছে। মোদী সরকার ধারাবাহিকভাবে খোলাখুলি আক্রমণ শানিয়েছে ছোটো ছোটো উৎপাদনক্ষেত্রগুলিতে - প্রথমে তাদের ইতিমধ্যে হ্রাসপ্রাপ্ত লাভের পরিমাণকে আরও সঙ্কুচিত করে, তারপরে নোটবন্দির মাধ্যমে, তুলনামূলকভাবে বেশি হারে জিএসটি লাগু করার মাধ্যমে এবং শেষপর্যন্ত কৃষিক্ষেত্রের জন্যে বর্তমানে আলোচিত তিনটি বিল আনার মধ্যে দিয়ে। এই বিলগুলি পুরনো সমস্ত বন্দোবস্তগুলিকে - ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ও সংগ্রহ মূল্য ব্যবস্থা এবং গণবণ্টন ব্যবস্থা - সম্পূর্ণত ধ্বংস করে দেবে। খাদ্যে দেশের স্বনির্ভরতাকে নিশ্চিত করতে পারে এমন পরিমাণ খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটা ব্যাঘাত ঘটাবে এই বিল তিনটি (যদিও বা এখনও পর্যন্ত খাদ্যের ক্ষেত্রে যে আত্মনির্ভরতা অর্জন করা গেছে তাতে ভীষণ স্বল্প পরিমাণ ভোগ সম্ভব)। আর তার সাথে সাথে, এই বিলগুলির হাত ধরে দেশের কৃষিক্ষেত্র বৃহৎ পুঁজির দখলদারির সামনে উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
একটা প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব নিয়ে নয়া-উদারবাদী অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে এই বিলগুলি। আর, এটাও বিস্ময়কর নয় যে, মার্কিন প্রশাসন থেকে শুরু করে আই এম এফ পর্যন্ত সর্বত্রই মোদীর এই বিল তিনটির পক্ষে যথেষ্ট মদত রয়েছে; যদিও বা মোদী সরকার কৃষকদের প্রতিরোধকে যেভাবে মোকাবিলা করছে তা নিয়ে তাদের সমালোচনা আছে।
নয়া-উদারবাদের সূচনালগ্ন থেকে কৃষকরা ও ছোটো ছোটো উৎপাদকরা এভাবেই তার আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক যেভাবে রয়েছে শহুরে শ্রমিকরা। এই শ্রমিকদের ওপরে নেমে আসা আঘাত আজ সুবিদিত, আরও বেশি ভালোভাবে বোঝা গিয়েছে, ফলে সেক্ষেত্রে প্রতিরোধের ধারাবাহিক কর্মসূচি নেমে এসেছে। নিপীড়িত জনগণের অন্যান্য অংশের মতোই কৃষকরাও শুরুর দিকে ধৈর্য ধরে, শান্তভাবে এই আঘাত সহ্য করে গেছে। তাঁরা হাজারে হাজারে আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু নয়া-উদারবাদের আঘাতের বিরুদ্ধে সেভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেনি। যাই হোক, এই তিনটি কৃষি বিল হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রবাদের সেই শেষ খড়কুটো।
কৃষকদের এই সংগ্রাম ঋজু ও দৃঢ়চেতা হওয়ার পাশাপাশি আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত।
প্রথমটা হচ্ছে, চরিত্রগতভাবে এই লড়াই সর্বভারতীয়। আগেকার বহু কৃষক-আন্দোলন সুনির্দিষ্টভাবে কিছু অঞ্চলে আবদ্ধ ছিল, অথবা নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে। পাশাপাশি সেগুলি গড়ে উঠেছিল নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপের বিরোধিতায়, যেমন সেচের জলের দাম বৃদ্ধি বা বিদ্যুৎ মাসুল বৃদ্ধি বা এই ধরনের অন্য কোনো কিছুর বিরুদ্ধে। কিন্তু এই সংগ্রাম ভৌগোলিকভাবে প্রধানত উত্তর ভারতে হলেও, যে সমস্ত দাবি এক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে, তাতে একটা সহমর্মী প্রতিক্রিয়া দেশজুড়েই দেখা যাচ্ছে। তার প্রমাণ, মহারাষ্ট্র, ওডিশা, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানাসহ অন্যান্য অনেক বহু জায়গায় কৃষকদের বিরাট বিরাট পদযাত্রা।
দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো, এই লড়াই কৃষকদের মনোভাবেই বিপুল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। যে কোনো উল্লেখযোগ্য গণ-আন্দোলনের এটাই স্বকীয় সোনালী বৈশিষ্ট্য যে, সেই লড়াই তার অংশগ্রহণকারীদের বৈপ্লবিক চেতনায় সমৃদ্ধ করে। বাস্তবতা হলো, এই কৃষক ও খেতমজুররা ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম ও জাতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এই কয়েকদিন আগেও তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল; আর আজ তাঁরা এই তিনটি বিলের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই চালাচ্ছে - ভারতীয় রাজনীতিতে এটা একটা বিপুল পরিবর্তনকেই তুলে ধরে। এটা স্মরণ করা যেতে পারে যে, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি’র জয় সম্ভব হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ থেকে তাদের বিপুল সংখ্যক আসনে জেতার কারণে, এখানেই ক’দিন আগে হওয়া রায়টের ফলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিভাজন তীব্র হয়ে উঠেছিল। হিন্দু জাঠ ও মুসলিমদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তখন থেকেই তীব্র হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই দ্বন্দ্ব আজ পিছনের সারিতে চলে গেছে, কেননা এই সংগ্রাম তাঁদের ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য করেছে।
ইউএপিএ’র মতো যত দানবীয় আইনকে ব্যবহার করে যে সমস্ত মানুষকে জেলবন্দি করেছিল এই বিজেপি সরকার, তাঁদের প্রতি কৃষকরা যেভাবে সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সেটাকেও একই ধরনের একটা পরিবর্তন হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া মানুষদের প্রতি আন্দোলনরত কৃষকদের সবিশেষ কোনো হেলদোল ছিল না ক’দিন আগেও, কিন্তু আজ সেই মানুষগুলোর জন্যেই তাঁরা সমব্যথী। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি থেকে, আশেপাশের শিল্পকেন্দ্রের শ্রমিকদের থেকে আন্দোলনরত কৃষকরা যে ব্যাপকহারে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে তাতে ফুটে উঠছে এক বাস্তবতা - লড়াই-সংগ্রাম মানুষের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলে।
তৃতীয় উল্লেখনীয় বৈশিষ্ট্য হলো, এই সংগ্রাম হচ্ছে নয়া-উদারবাদের ক্ষমাহীন বিরুদ্ধতা। এটা অবশ্যই যে, এই সংগ্রাম ওই তিনটি বিল বাতিলের দাবি জানিয়েছে, কিন্তু যে বিলগুলির কথা এতক্ষণ বলা হলো, সেগুলি তো নয়া-উদারবাদী অ্যাজেন্ডাকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওই বিলগুলি তো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চাহিদা মোতাবেক তৈরি; আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির কণ্ঠলগ্না গুটিকয়েক কর্পোরেট সংস্থাকেই সেগুলি সুবিধা করে দেবে; আর, ছোটো ছোটো উৎপাদনক্ষেত্রগুলিকে গুঁড়িয়ে না দিতে পারুক ক্ষীণকায় করে তোলার জন্যে সেগুলি ব্যাপকভাবে কাজে লাগবে। এই সমস্ত কিছুই সেখানে রাখা হয়েছে নয়া-উদারবাদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সাযূজ্য রেখে।
এই বিলগুলি বাতিল করা মানে নয়া-উদারবাদী ব্যবস্থাকে পিছু হঠতে বাধ্য করা; নিদেনপক্ষে এই ক্ষেত্রগুলির পরিপ্রেক্ষিতে তা বলা যায়। আর, নয়া-উদারবাদী ব্যবস্থা চালু করার প্রশ্নে গতিমন্থরতা একটা বিষয়; কিন্তু নয়া-উদারবাদী ব্যবস্থাকে পিছু হঠতে বাধ্য হওয়া, তা সে যতই জটিলক্ষেত্র হোক না কেন, সেটা সম্পূর্ণত ভিন্ন একটা বিষয়।
মোদীর ফুলে-ফেঁপে ওঠা ইগো; কৃষকদের কিসে ভালো আর কিসে মন্দ সে প্রসঙ্গে তিনিই সবচেয়ে ভালো বোঝেন, এমন একটা মিথকে টিকিয়ে রাখার জন্যে তাঁর তীব্র আকাঙ্ক্ষা - এ প্রসঙ্গে তাঁর অনড় অবস্থানকে ইন্ধন জোগাচ্ছে। এই অভিযোগ নিঃসন্দেহে সত্যি। কিন্তু, এই মিথকে টিকিয়ে রাখার বিষয়টি শুধুমাত্র যে মোদীর কিছু মনস্তাত্ত্বিক চাহিদাকে পূর্ণ করে, তা নয়; নয়া-উদারবাদী অ্যাজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা হাতিয়ারও বটে। মোদী যদি বুঝে থাকেন, কিসে প্রত্যেকের ভালো হবে, আর মোদী যদি ভেবে থাকেন, নয়া-উদারবাদী অ্যাজেন্ডাতেই সকলের ভালো হবে, তাহলে সেটা হতেই হবে। এভাবে মোদীর অগাধ পাণ্ডিত্যের মিথ তাঁর ইগোকে সুড়সুড়ি দেওয়ার সাথে সাথে নয়া-উদারবাদের ক্ষেত্রেও একটা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। নয়া-উদারবাদ এটাকেই সযত্নে বাঁচিয়ে রাখতে চায়। কৃষকরা যেটা করেছে তা হলো, মোদীর এই মিথের বেলুনে পিন ফুটিয়ে দিয়েছে। আর, ওই আইনগুলি বাতিল করে দেওয়া মানে, বেলুনটা যে ফুটো হয়েছে তার অনুমোদন দেওয়া। একইসাথে এর অর্থ, নয়া-উদারবাদের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি থেকে পিছু হটা; আর, একবার পিছু হটে গেলে, সেগুলি আর চালু করা যাবে না।
সেই কারণেই এই আইনগুলিকে বাঁচিয়ে রেখে, তার মধ্যে থেকেই শুধুমাত্র কিছু পরিবর্তন, কিছু বিষয় মেনে নিতে সরকার আগ্রহ দেখালেও, ওই তিনটি বিল পুরোপুরি বাতিলের বিরোধিতা করছে। এই আইনগুলি যতদিন টিকে থাকবে, আইনের মধ্যে এই ধরনের পরিবর্তন কাজের ক্ষেত্রে চলতে গেলে নয়া-উদারবাদের একটা অনুমোদনের মুখাপেক্ষী হয়েই থাকবে। কৃষকরা যে দাবি জানাচ্ছে তা হলো, বিপদের সময়ে জাহাজ থেকে মাল ফেলে দিয়ে যেভাবে ভার লাঘব করা হয়, যেন ঠিক সেই চেতনা থেকেই সামগ্রিকভাবে নয়া-উদারবাদের এই অ্যাজেন্ডাটিকে বাতিল করা। এটা সামগ্রিকতায় হলো, ছোটো ছোটো উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে একচেটিয়া পুঁজির দখলদারি কায়েমের বিষয়ভুক্ত অ্যাজেন্ডাকে বাতিল করার দাবি। ঠিক এই কারণেই কর্পোরেট-হিন্দুত্ববাদীদের জোট নয়া-উদারবাদের নামে কসম খেয়ে কৃষকদের দাবিগুলিকে এভাবে বিরোধিতা করছে। এটা করতে তারা বাধ্য হচ্ছে, কেন না তাদের চোখের সামনেই তাদের আধিপত্য খর্ব হয়ে যাচ্ছে।
ভাষান্তরঃ জয়দীপ ভট্টাচার্য