E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ১৩ ফাল্গুন, ১৪২৭

একের পর এক সরকারি শিল্প বেচে দিচ্ছেন আবার ভোট প্রচারে এসে শিল্পের স্বপ্ন ফিরি করছেন

গৌতম রায়


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত দু তিন মাসে যেভাবে দিল্লি টু পশ্চিমবঙ্গের ডেইলি প্যাসেনজারে পরিণত হয়েছেন, এমনটা রাজ্যবাসী আগে কোনো প্রধানমন্ত্রীকে দেখেননি। মোদীর দলের অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনও পশ্চিমবঙ্গে ভোট হয়েছে। বাজপেয়ীও এসেছেন ভোট প্রচারে, নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগে, সরকারি মঞ্চকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তিনি কম যান নি, তবু নরেন্দ্র মোদী এখনই সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন।সরকার আর দলকে মিলিয়ে মিশিয়ে দিয়ে ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীকে কিন্তু এক এবং অনন্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতেই হয়।

প্রধানমন্ত্রী কেবল ভোটের দিকে চোখ রেখে এই ধারাবাহিক পশ্চিমবঙ্গ সফরে ধারাবাহিক প্রতিশ্রুতির বন্যা ছোটাচ্ছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি (‘২১) তাঁর সর্বশেষ পশ্চিমবঙ্গ সফরে তিনি দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত মেট্রোর উদ্বোধন করলেন। মেট্রোর এই সম্প্রসারণ ঘিরে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে দমদমের তৎকালীন সিপিআই(এম) সাংসদ প্রয়াত অমিতাভ নন্দীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। প্রথম ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবকে এই মেট্রো সম্প্রসারণের জন্যে রাজি করানোর ক্ষেত্রে প্রয়াত অমিতাভ নন্দী, বাসুদেব আচারিয়া প্রমুখ বামপন্থী সাংসদের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। মহম্মদ সেলিম, সুধাংশু শীল মেট্রো সম্প্রসারণ ঘিরে যথেষ্ট সচেষ্ট ভূমিকা সেই সময়ে নিয়েছিলেন। তবে দক্ষিণ কলকাতার সাংসদ হিসেবে মেট্রো সম্প্রসারণের জন্যে সেই দৌড়ঝাঁপে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু কখনওই বিন্দুমাত্র ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেননি।

ভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকার সময়ে যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি মানুষ গণআন্দোলনের ভিতর দিয়ে আদায় করেছে, সেইসব প্রকল্পগুলিকে উদ্বোধনের ভিতর দিয়ে নিজেদের বলে চালানোর ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদী আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একে অপরের পরিপূরক। মমতা যেমন বামফ্রন্ট সরকারের আমলে উদ্বোধন হওয়া প্রকল্পগুলিতে পুরনো উদ্বোধন ফলক খুলে ফেলে নিজের নাম খোদাই করা ফলক সেঁটে কৃতিত্বের ভাগীদার হন, ঠিক সেভাবেই বামপন্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের ভিতর দিয়ে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে গৃহীত প্রকল্প, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা বিষয়টির কৃতিত্ব নিজে নিতে চেয়েছেন।

বিজেপি এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে এখানে তাঁদের নির্বাচনী রণকৌশলে কিছুটা ভিন্নধারা দেখাবার চেষ্টা করছে। দাঙ্গা লাগিয়ে, মানুষকে আড়াআড়িভাবে বিভক্ত করে, সেই বিভাজনের ফসল ভোট রাজনীতিতে প্রয়োগ ঘটিয়ে ভোটে জেতা বিজেপি’র চিরন্তন কৌশল। সেই পথে যে নিজেদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি-কে ঠিক এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে পরিচালিত করতে চায় না আরএসএস, এটা প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক বেশ কয়েকবারের পশ্চিমবঙ্গ সফর থেকে একদম পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদী এই রাজ্যে যে কটা প্রাক নির্বাচনী সফর করলেন, তার একটিতেও তাঁর চিরন্তন বিভাজনের অস্ত্রটিকে তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেখান নি। বিভাজনের অস্ত্রটিকে আস্তিনের ভিতর লুকিয়ে রেখে উন্নয়নের পসরা তুলে ধরতেই মোদী সবিশেষ ব্যস্ত থেকেছেন। আর ব্যস্ত থেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতার দুর্নীতি নিয়ে।

গত দশ বছরে এই রাজ্য যে কর্মসংস্থানের দিক থেকে একদম তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর না জানার কথা নয়। ছাঁটাই এখন লকডাউনউত্তর সময়কালে কার্যত দ্বিতীয় অতিমারী। কোভিড ১৯-এর জেরে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতে যে খাদ্য সঙ্কট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে, তার কড়াল গ্রাস থেকে পশ্চিমবঙ্গেরও যে নিস্তার মিলবে না, দেশের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তা না জানাটাই অস্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন এখানেই যে, এইসব আগামীর বিপদ জেনে, তাকে ভোট রাজনীতিতে নিজের দল বিজেপি’র পক্ষে ব্যবহার করা ছাড়া এই বিপদ মোকাবিলার জন্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সঙ্কটকালে মোদীর ভূমিকা কী? পশ্চিমবঙ্গের শিল্পসঙ্কট আর সেই সঙ্কট থেকে উঠে আসা তীব্র বেকারি, মেধার ড্রেনেজ-এইসব সমস্যার জন্যে কী মোদী নিজেও দায়ী নন? সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে বিতাড়িত করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেসব কৃতকর্ম, সেগুলির পিছনে কী মোদীর দল বিজেপি’র মদত ছিল না? মমতার ধর্মতলাতে নাটুকে অনশনে তো অন্যতম শীর্ষ বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং নিজে হাজির ছিলেন। সেদিনই তো পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পচিত্র কী হতে চলেছে তা নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। তাহলে আজ মোদীর এই রাজ্যের শিল্প ঘিরে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন কী নিছক ভোটের স্বার্থে আরও উন্নত অভিনয়ের নাটক নয়?

দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের জমির উপর আরএসএস অনুগত হনুমানগড়ি আখড়া পরিচালিত রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছেন। এই ঘটনা গান্ধী, নেহরু, আজাদের ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদী ভারতে রূপান্তরিত করবার একটি পর্যায় হিসেবে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে নিজের পরিচয় রেখেছে। দেশের সংখ্যালঘু মুসলমান সমাজের উপর আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার যে কোনো অবস্থাতেই আর নিছক সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদে নিজেদের আবদ্ধ রাখবে না, নিজেদের তারা রূপান্তরিত করে ফেলেছে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদে, দ্বিতীয় দফার মোদী সরকারের কার্যকলাপের ভিতর দিয়ে তা ক্রমশ আন্তর্জাতিক স্তরে চিহ্নিত হতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি অনেকটা গুজরাট গণহত্যার সময়কালে আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে যেমনটা হয়ে গিয়েছিল মোদীর, ঠিক তেমনটা হতে শুরু করেছে।

তারপরও ঘটেছে দিল্লি গণহত্যা। দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের সঙ্গে শাসক বিজেপি এবং তাদের পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার কী ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক , সাংস্কৃতিক বৈষম্যমূলক আচার আচরণ ধারাবাহিকভাবে করে চলেছে, আজকে ইন্টারনেটের যুগে হিন্দুত্ববাদী শক্তি তা যতই চেপে রাখার চেষ্টা করুক না কেন, বাস্তবে সেটা কোনো অবস্থাতেই সম্ভবপর হচ্ছে না। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র নানাভাবে হেনস্তা করছে মুসলমানদের। অহেতুক মুসলমানদের উপর পুলিশি জুলুম করা হচ্ছে বিজেপি’র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্যে। এইসব বিষয়গুলি আর চাপা থাকছে না আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কাছে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে দিল্লি - উত্তরপ্রদেশের লাগোয়া মুজফ্‌ফরনগরে আরএসএস - বিজেপি দাঙ্গা করে। সেই দাঙ্গার ফলে যে ধর্মীয় এবং সামাজিক মেরুকরণ তৈরি হয়েছিল, তা সেই ভোটে বিজেপি-কে একক গরিষ্ঠতা নিয়ে কেন্দ্রে সরকার গড়তে সাহায্য করে। তবে সেই দাঙ্গা দমনে সঠিক প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে না পারার জন্যে উত্তরপ্রদেশে সেই সময়ে ক্ষমতাসীন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ সিং যাদব এবং কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার ইউপিএ সরকার ঘরে বাইরে দারুণভাবে সমালোচিত হয়।

তাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার আসন্ন ভোটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদ কায়েমের দায়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়াতে দারুণ সমালোচিত নরেন্দ্র মোদী নিজের মুখে ধর্মীয় বিভাজন, সামাজিক বিভাজনে প্ররোচনা হতে পারে , তেমন কোনো কথা এই রাজ্যে কোনো সভা থেকে বলেননি। মোদীর দল ভোটে জিততে এই রাজ্যেও তাদের শেষ অস্ত্র দাঙ্গার পথে হাঁটবে কী না, তা এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে দাঙ্গার প্রাথমিক পর্যায় একদম ভূমিস্তর পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে সংক্রমিত করা, সেই কাজটি পশ্চিমবঙ্গে কিন্তু আরএসএস, তাদের হাজারো রকমের শাখা সংগঠন, সঙ্ঘের ছত্রছায়ায় থাকা নানারকমের এনজিও এবং তাদের অতি বিশ্বস্ত বন্ধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভিতরেই পুরোমাত্রায় করে রেখেছেন। তাই সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কোনো দায় যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরে না পড়ে, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর আরএসএস এবং স্বয়ং মোদীর। সেই নজরদারির ফলস্বরূপই মোদী এই রাজ্যে ভোট ঘোষণার আগে পর্যন্ত যতবার এসেছেন, ততবারই সরাসরি কোনো সাম্প্রদায়িক কথা বলেন নি। প্রত্যক্ষভাবে বিভাজনে উসকানি দেন নি। ব্রান্ড গুজরাটের স্বপ্নিল ফানুসই এখানে ওড়াতে চেয়েছেন। ছাত্র-যুবদের কাছে কর্মসংস্থানের ফানুস উড়িয়েছেন। যেমনটা একদিন উড়িয়েছিলেন মমতা।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি (‘২১) প্রধানমন্ত্রী মোদী হুগলির সাহাগঞ্জে একটি দলীয় সভা করেছেন। সেই সভাতেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ঘিরে নিজের হতাশার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে তাঁরা সরকার করলে, সেই হতাশা কাটিয়ে কিভাবে ‘সোনার বাংলা’ গড়বেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। সাহাগঞ্জের অদূরেই ডানলপ। যেখানে টায়ার কারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে গত দু’বছর ধরে বিজেপি’র সাংসদ। সাহাগঞ্জে দাঁড়িয়ে শিল্পের প্রতিশ্রুতির ফোয়ারা ছোটালেও প্রধানমন্ত্রী মোদী কিন্তু বন্ধ ডানলপের কারখানা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। স্থানীয় সাংসদও গত দুই বছরে ডানলপ খোলা নিয়ে সংসদে একটি শব্দও উচ্চারণ করেছেন, এমন কোনো খবর সংবাদমাধ্যমের নজরে আসেনি।

যে হুগলির মাটিতে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী আসন্ন বিধানসভা ভোটের মুখে মানুষের সামনে শিল্প সম্ভাবনার রঙিন ফানুস ওড়ালেন, বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের আশা দেখালেন, সেই হুগলির সিঙ্গুরেই এক দশক আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এই রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের চাকরির আশার গঙ্গাযাত্রা ঘটিয়েছিলেন, এই মোদী এবং তাঁর দল ছিল সেই শ্মশানযাত্রার সঙ্গী। টাটার মোটর কারখানাকে পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে নিয়ে মোদীর গুজরাটের সানন্দে নিয়ে যাওয়ার যৌথ ষড়যন্ত্রী ছিলেন কিন্তু মোদী এবং মমতা।

সেই হুগলির মাটিতে দাঁড়িয়ে শিল্প সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মোদী। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন প্রায় সাত বছর হতে চলল। এই সাত বছরে পশ্চিমবঙ্গ তো কোন্ ছাড়, গোটা দেশের লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পগুলি মোদী নিজের এবং অবশ্যই তাঁর দলের তাঁবেদার আদানি, আম্বানি ইত্যাদিদের কাছে বেচে দিতে শুরু করেছেন। শিল্পের কোনো নতুন সম্ভাবনা পশ্চিমবঙ্গে তো নয়ই, গোটা দেশেই দেখতে পাওয়া যায় নি। বস্তুত মধ্যস্বত্বভোগী ফড়েদের প্রতিনিধি হিসেবে নিজেদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করে আরএসএস-এর বিভিন্ন সময়ের বিবর্তিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলি, হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় জনসঙ্ঘ, ভারতীয় জনতা পার্টি, এরা সবাই-ই চিরকাল বৃহৎ শিল্পের থেকে ট্রেডিংটাকেই সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রেডার্স পার্টি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিজেপি, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের দৌলতে এখন বৃহৎ বুর্জোয়াদের খুব কাছের লোক হয়ে উঠলেও, যেসব বৃহৎ বুর্জোয়াদের তারা কাছের মানুষ হয়েছে, তাদের মূল চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যে শিল্পের থেকে ট্রেডিংটাই সবথেকে বেশি গুরুত্ব পায়। তাই নতুন শিল্পের দিকে তারা তাদের শ্রেণিবন্ধু বিজেপি-কে কখনওই পরিচালিত হতে দেয় না। তারা চায় বৃহৎ শিল্পের পরিবর্তে বিদেশি বহুজাতিকদের সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে ভারতের অর্থনীতিকে ট্রেডিং নির্ভর করে তুলতে। এই ট্রেডিং নির্ভর অর্থনীতি কিন্তু নয়া-উদার অর্থনীতিরও একটা বিশেষ উল্লেখযোগ্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।

নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের আগে এসে বন্ধ কলকারখানা খোলা নিয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করছেন না। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেচা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটে থাকছেন। এই বেচার সপক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে কিছু বলছেন না। কারণ, তিনি বা তাঁর সতীর্থরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে, নেহরু মডেলের শিল্পের সমাধি রচনা করে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেচে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে মোদীর সরকার চালাচ্ছে, প্রত্যক্ষভাবে সেই প্রবণতাকে যে সংসদের ভিতরে-বাইরে মমতার দল মদত দিচ্ছে, তা এই রাজ্যের মানুষ, এমন কী তৃণমূল বা বিজেপি’র সমর্থকেরাও কোনো অবস্থাতেই সমর্থন করতে পারছে না। তাই অত্যন্ত সচেতনভাবেই আরএসএস-র লোক মোদী নিজেদের ট্রেডিং পার্টির সত্তাটিকেই বজায় রেখে চলেছেন এখানে তাঁর প্রতিশ্রুতির বন্যার ভিতর দিয়ে।