৫৮ বর্ষ ২৮ সংখ্যা / ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ / ১৩ ফাল্গুন, ১৪২৭
বিজেপি এবং তৃণমূল জবাব দাও
সুপ্রতীপ রায়
বৃদ্ধির হার নামলেও জিনিসের দাম বাড়ে
লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে ডিজেল, পেট্রোল, রান্নার গ্যাসের দাম। ভারতের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নামলেও বৃদ্ধি পাচ্ছে জিনিসের দাম। রান্নার গ্যাসের দাম এখন বেড়ে হয়েছে ৮২০ টাকা। গত ডিসেম্বরেই রান্নার গ্যাসের দাম দু’বার বাড়ানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির ফলে কেরোসিন তেলের দাম গরিব মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে।
২০১৪ সালে সরকারে আসার পর থেকে পেট্রোলিয়ামজাত জিনিসের দাম কমানোর নীতি নেয়নি মোদী সরকার। আসলে কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ডিজেলকে আয় বাড়ানোর একটি ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। বিশ্বের বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমলেও তেলের উপর ধারাবাহিক এক্সাইজ ডিউটি বাড়িয়ে তেলের দাম বাড়িয়ে চলেছে বর্তমান ভারত সরকার।
লকডাউনে মানুষ যখন বিপর্যস্ত, তখনও ডিজেল, পেট্রোলের উপর এক্সাইজ ডিউটি বাড়ানো হয়েছিল। গত মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে পেট্রোল ও ডিজেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি যথাক্রমে ১৩ টাকা ও ১৬ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৪-র নভেম্বর থেকে ২০১৬-র জানুয়ারি - ১৫ মাসে ৯ বার এক্সাইজ ডিউটি বেড়েছিল। ২০২০-র মার্চে লিটারে ৩ টাকা ও গত মে মাসে এক ধাক্কায় পেট্রোলে লিটারে ১০ টাকা ও ডিজেলে ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেলেও ভারতের বাজারে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কমেনি। শুধু তাই নয়, গত জুন মাসে প্রায় প্রতিদিন পেট্রোল, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল বিশ্বের বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির থেকেও বেশি হারে। কিন্তু কেন ভারতে তেলের দাম বাড়ছে?
ভারতে তেলের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাস্টমস ডিউটি, কাউন্টার ভেইলিং ডিউটি, ন্যাশনাল ক্যালামিটি অ্যান্ড কন্টিনজেন্সি ডিউটি, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সারচার্জ, রোড সেফটি সেস ইত্যাদি। ১ লিটার পেট্রোলের দামের মধ্যে বড়ো অংশই কেন্দ্র ও রাজ্য আরোপিত বিভিন্ন কর ও শুল্ক। পেট্রোপণ্যের দাম বাবদ যে অর্থ ক্রেতারা ব্যয় করেন তার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই যায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ভাণ্ডারে।
২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে তেলের উৎপাদন শুল্ক বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের আয় প্রায় ৫ গুণ বেড়েছিল। ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরে তেলের উৎপাদন শুল্ক থেকে কেন্দ্রীয় সরকার আয় করেছিল ৪৬,৩৮৬ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭-তে তা বেড়ে হয় ২ লক্ষ ৪২ কোটি টাকা ও ২০১৭-১৮ সালে ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৪ সালের জুন মাসে পেট্রোলের উপর কেন্দ্রের কর ছিল ১০ টাকা ৩৯ পয়সা, ২০২১-র ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় কর দাঁড়ায় ৩২ টাকা ৯৮ পয়সা। একই সময়ে রাজ্যের কর ১১ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৯ টাকা ৯২ পয়সা।
তেলের মতো পণ্যের দাম বাড়লে জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে এটা স্বাভাবিক। জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ বা কয়লার মতো পণ্যের দাম বাড়লে সমস্ত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। জিনিসের দাম বেড়ে চলেছে। পরপর কয়েক দফায় পেট্রোপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে যাতায়াত ও যোগাযোগ খরচ ক্রমবর্ধমান।
অর্থনীতির বেহাল দশা - কী জবাব দেবেন মোদী?
দেশের অর্থনীতির অবস্থা সঙ্কটজনক। অতিদ্রুত এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। শিল্প ও কৃষিতে অধোগতি বিদ্যমান। ম্যানুফ্যাকচারিং ও খনি ক্ষেত্রে চরম দুরবস্থা। ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে শিল্প উৎপাদন সূচক ৭৭.৬৩ শতাংশ অবদান রাখে। এনএসও প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে - এই ক্ষেত্রটি নভেম্বর মাসে সংকুচিত হয়েছে ১.৭ শতাংশ হারে। একই সময়ে খনি সংকুচিত হয়েছে ৭.৩ শতাংশ হারে।
সিএমইআই প্রকাশিত কর্মসংস্থান সম্পর্কিত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, গত ডিসেম্বরে ১.৭ কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ২০২০-২১-এ অক্টোবর-ডিসেম্বরের মধ্যে গত বছরের সাপেক্ষে ২.৮ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ডিসেম্বরে কর্মহীনতার হার ছিল ৯.১ শতাংশ। শহরাঞ্চলেও কর্মসংস্থানের হার কমেছে। গত নভেম্বরে যে কর্মহীনতার হার ছিল ৬.২ শতাংশ, তা ডিসেম্বরে বেড়ে দাঁড়ায় ৯.২শতাংশ। এই সময়কালে শহরাঞ্চলে যুবক বিশেষত মহিলা আর বেতনভুক কর্মীরা ব্যাপক পরিমাণে কাজ হারিয়েছেন। লকডাউনের ফলে আর্থিক বিপর্যয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মহিলারা। সমগ্র শ্রমশক্তির ১২শতাংশ নারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে কর্মহীনতার হার ৫২ শতাংশ।
শহরাঞ্চলে কাজ না পাওয়ার ফলে গ্রামাঞ্চলে ভিড় বাড়ছে। গত অক্টোবরে ‘মনরেগা’ প্রকল্পে কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৯১.৩ শতাংশ। গ্রামীণ মজুরির হার নিম্নগামী। সেপ্টেম্বর ২০২০-তে প্রকৃত মজুরির হার ছিল গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম।
মানুষকে বাঁচানোর বদলে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দিচ্ছেন মোদী
মোদী জমানায় শুধু কৃষকরা আত্মঘাতী হচ্ছেন তা নয় - দিন মজুররাও আত্মঘাতী হচ্ছেন। এনসিআরবি’র তথ্য অনুযায়ী - ২০১৯ সালে যতজন আত্মঘাতী হয়েছেন তার মধ্যে দিন মজুরদের হার ২৩.৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে এই মৃত্যুর হার ছিল ১২ শতাংশ, ২০১৯-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৩.৪ শতাংশ। সবচেয়ে দরিদ্র অংশের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি যাদের উপার্জন বছরে একলাখের কম। ২০১৯ সালে মোট আত্মঘাতী ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৩ জনের মধ্যে ৯২ হাজার ৮৩ জন (৬৬.২শতাংশ)-র বার্ষিক আয় এক লক্ষেরও কম। যাঁরা আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ২৯.৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪১ হাজার ১৯৭ জনের বাৎসরিক আয় এক লক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা।
করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ দু’টি সরকার
লকডাউন ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন - ভারত করোনা যুদ্ধে জয়লাভ করবে। কিন্তু করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় চরম ব্যর্থ মোদী সরকার। তৃণমূল সরকার অতিমারী পরিস্থিতি মোকাবিলায় দায় এড়ানোর রাজনীতি করে গিয়েছেন। তথ্য অনুযায়ী, কোভিডের ফলে মৃত্যুহারের নিরিখে ভারত দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। অর্থাৎ ভারত দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে মৃত্যুহারে সর্বোচ্চ।
প্রতি মিলিয়ন জনসংখ্যা পিছু মৃত্যুহারে ভারতে ১১০, ইন্দোনেশিয়ায় ৯৭, মালদ্বীপে ৯০, নেপালে ৬৭, আফগানিস্তানে ৬০, মায়ানমারে ৫৫, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫, মালয়েশিয়ায় ১৯, শ্রীলঙ্কায় ১৩, মরিসাসে ৮, সিঙ্গাপুরে ৫, চীনে ৩, ভুটানে ১, তাইওয়ানে ০.৮, ভিয়েতনামে ০.৪।
কোভিড ১৯ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ভারতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল অবস্থা। ভারত সরকারের বিমা ভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল গলদ প্রমাণিত হয়েছে। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে একটি লাভজনক ব্যবসায় পর্যবসিত করার কারণে ভারত অতিমারী মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ভ্যাকসিনেশন, শিশু ও মায়েদের পুষ্টি দেওয়া বা স্কুলে মিড-ডে মিল দেওয়ার মতো মৌলিক স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্পগুলি ভেঙে পড়েছে। কোভিড আক্রান্ত রোগীরা সরকারি হাসপাতালগুলিতে কার্যত কোনো চিকিৎসা পাননি।
আমাদের দেশে যখন করোনা সংক্রমণ বাড়ছিল তখন প্রচুর আক্রান্ত মানুষ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন নি। ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন অনুযায়ী মোদী সরকার সব ক্ষমতা হাতে নিয়ে নিলেও বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কোনো সাযূজ্যপূর্ণ নীতি নিতে পারেননি।
২৫ মার্চ, ২০২০ কঠোরতম লকডাউন হওয়ার পরও কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা চক্রাকারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। অতিমারী মোকাবিলায় কোনো বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। লকডাউনের সময় মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে বা মৃত্যু কমানোর জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার ছিল তা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কেউই গ্রহণ করেনি। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মূল জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা করে যথাযথ চিকিৎসা কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে মৃত্যুহারকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়েছে কেরালা সরকার।
ভারতের ভাইরাসজনিত বিপদ ও দারিদ্র্যের মধ্যে সম্পর্ক আছে। ব্যাপক স্বাস্থ্য সঙ্কটের মুখে দেশবাসী। করোনার অভিঘাতে সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষ তাঁদের উপার্জন ও জীবিকা হারিয়েছেন। এর প্রভাব আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উপরও পড়ছে। গ্লোবাল হেলথ ইনডেক্সে ১১৭টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশের স্থান ১০২। দেশজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। অতিমারী গরিব মানুষকে সবচেয়ে আঘাত করেছে। যে গরিব মানুষ এমনিতেই ক্ষুধা ও অপুষ্টির শিকার, তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে।
লকডাউনকে ব্যবহার করে কেন্দ্র বা বাংলার সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজনীয় সম্প্রসারণ করেনি। এমনকি টেস্টিং করার ক্ষমতাকেও শক্তিশালী করা হয়নি। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করার জন্য প্রশাসন লকডাউনের সময়ে মহল্লায় বা জনগোষ্ঠীর মধ্যে কর্মীনিয়োগের কাজও করেনি। লকডাউনের সময় বিপুল সংখ্যক সংক্রমিতকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত পরিকাঠামো তৈরি করেনি। করোনা আক্রান্তদের জন্য আলাদা করে হাসপাতালগুলিতে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট, অক্সিজেন সরবরাহ, ভেন্টিলেটর জোগান দেওয়ার ব্যবস্থাকে অবহেলা করা হয়েছে।
অতিমারী নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রস্তুতি ছিল হতাশাব্যঞ্জক। লকডাউনের সময় উভয় সরকারের কর্মকাণ্ডই ছিল দিশাহীন। সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর সময় যে কাজগুলি করা দরকার ছিল তার কোনোটিই করা হয়নি। সরকারি হাসপাতালে রোগীর শয্যা, আইসিসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের প্রয়োজন মাফিক ব্যবস্থা না থাকায় বিপুল অংশের করোনা আক্রান্ত মানুষকে দুর্ভোগের কবলে পড়তে হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় যাঁরা সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টি ছিল অবহেলিত। বিপুল পরিমাণে স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্স, হাসপাতাল কর্মী ও সাফাই কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। পিপিই ছিল অপ্রতুল। দেশে ৯ লক্ষ আশা কর্মী আছেন। এঁরাই গোষ্ঠী নজরদারি করার সামনের সারিতে আছেন। এঁদের কাউকেই সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে সুরক্ষামূলক দ্রব্যাদি দেওয়া হয়নি।
কোভিড ১৯ অতিমারী ও আমফান সুপার সাইক্লোনের সময় পশ্চিমবাংলার তৃণমূল সরকারের জনবিরোধী চরিত্র আরও একবার উন্মোচিত হয়েছে। করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর অনেক ঘটনা রাজ্য সরকার চেপে দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ কম করে দেখাতে টেস্টিং আনুপাতিকহারে বাড়ানো হয়নি। র্যাপিড টেস্টিংয়ের ব্যবস্থাও ছিল না। একবার নমুনা দিলে রিপোর্ট পেতে সময় লেগেছে চার থেকে পাঁচ দিন। ফলে কোভিড রোগীদের চিহ্নিত করতে দেরি হয়েছে। এর ফলে সংক্রমণ কম করে দেখাতে সুবিধা হয়েছে মমতা সরকারের।
প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকায় ব্যাহত হয়েছে চিকিৎসা। ফলে বেড়েছে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা। টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূনতম মাপকাঠির থেকেও পিছিয়ে ছিল বাংলা। কোভিড মোকাবিলার নাম করে মুখ্যমন্ত্রী শুধুই মিথ্যাচার করে গিয়েছেন। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়েছে রাজ্য সরকার।
নানা অজুহাতে সরকারি হাসপাতালগুলি থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চূড়ান্ত হেনস্তা হতে হয়েছে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা নিয়ে। সরকারি ব্যবস্থার গাফিলতির জন্য বেসরকারি হাসপাতালে যেতে বাধ্য হয়েছেন অনেক আক্রান্ত। বেসরকারি ক্ষেত্রে কোভিড টেস্ট ও চিকিৎসার জন্য নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিকে বিপুল ব্যয়ের ধাক্কা সামলাতে হয়েছে। পরীক্ষা ও রোগী ভরতির নামে চূড়ান্ত হেনস্তা হতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। কোভিড মোকাবিলায় পঞ্চায়েতগুলির কোনো ভূমিকা ছিল না। যদিও শাসকদলের মাতব্বরেরা বিভিন্ন জায়গায় আমফানের টাকা লুট করেছে।
ধাপ্পাবাজিতে সেরা মোদী সরকার
সামনে বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে মিথ্যাচার। কৃষকদের সর্বনাশ করে এখন কৃষক বন্ধু সাজছেন। ‘কৃষক সম্মাননা’ প্রকল্প বা ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প কৃষকের কোনও উপকারে আসছে না। ‘পি এম কিষান’ প্রকল্পের ধাপ্পাবাজি, পক্ষপাতিত্ব ধরা পড়ছে। অনুদান পাওয়ার কথা নয় এমন ২০.৪৮ লক্ষ ‘চাষি’র কাছে চলে গেছে ১,৩৬৪ কোটি টাকা!
৯ জানুয়ারি, ২০২১-এ ‘এক মুঠো ভাত’ নামে এক অভিযান শুরু করেছিল বিজেপি। তা ছিল এক ভণ্ডামি। বিজেপি’কে জবাব দিতে হবে বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার যে কাজ ‘প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র আওতায় লকডাউনের মধ্যে শুরু হয়েছিল তা নভেম্বর ২০২০-তে বন্ধ করে দেওয়া হলো কেন?
ধাপ্পাবাজিতে সমান দক্ষ তৃণমূল সরকার
ধাপ্পাবাজিতে বিজেপি’র মতোই দক্ষ তৃণমূল সরকার। ‘দুয়ারে সরকার’ অভিযান চূড়ান্ত ধাপ্পাবাজি। ভোটের ঠিক আগে এই সরকার জনগণের দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিগত প্রায় একদশকে তৃণমূল সরকার জনগণের পয়সা লুট করেছে। তৃণমূলকে জবাব দিতে হবে, খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণীত হওয়ার সাত বছর পরেও খাদ্য নিগম কেন তৈরি হয়নি? মনরেগার আওতায় কাজের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার পর্ষদটি অকেজো কেন? প্রতি মহকুমাতে ১টি করে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল গড়ার প্রতিশ্রুতি কোথায় গেল? সরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে অবস্থিত ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানে ওষুধ পাওয়া যায় না কেন?
বাংলার মানুষের কাছে এদের জবাব দিতেই হবে।