৫৮ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৬ মার্চ, ২০২১ / ১২ চৈত্র, ১৪২৭
বাম, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ বিকল্প
১. গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার ও সমস্ত বিরোধীদের মত প্রকাশের অধিকার সুরক্ষিত করা হবে। সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি কঠোরভাবে অনুসৃত হবে। প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িকতা নয়। শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থায়িত্ব চাই।
২. এক বছরের মধ্যে সরকারি-আধা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে সমস্ত শূন্যপদ পূরণ। সমস্ত নিয়োগ হবে নিয়মানুযায়ী, মেধার ভিত্তিতে।
৩. বেকার যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর করার ওপর জোর দেওয়া হবে। স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্প পুনরায় শক্তিশালী করা হবে।
৪. কর্মসংস্থানের মূল তিনটি ক্ষেত্র-কৃষি, শিল্প ও পরিষেবায় কাজের সুযোগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি।
৫. অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পুনরুজ্জীবন। সহজ ঋণের ব্যবস্থা করা।
৬. চাষের খরচ কমিয়ে, কৃষকের কাছে উৎপাদিত ফসলের দাম বাড়ানো। চাষকে লাভজনক করতে সরকারের তরফে মিনিকিট, সার ও সেচের জলের প্রসার। কৃষিপণ্যের কেনাবেচার জন্য সমবায় সংস্থাগুলির পুনরুজ্জীবন। কৃষকের জন্য কেবল এককালীন ঋণ মকুব নয়, ফসলের দেড়গুণ দামের নিশ্চয়তা, ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষকের কাছ থেকে সরকারের প্রয়োজন মতো ফসল ক্রয় করা হবে।
৭. রাজ্যের এপিএমসি অ্যাক্ট বাতিল। কারণ সেগুলিও কৃষককে কেন্দ্রের কৃষি আইনের মতো একইরকম বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কেন্দ্রের তিনটি কৃষি আইন রাজ্যে কার্যকর হবে না।
৮. ভূমিসংস্কারে জমি পাওয়া গরিব কৃষক যাঁরা উচ্ছেদ হয়েছেন, তাঁদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৯. রেগা-একশো দিন না। ১৫০ দিন। একে শহরাঞ্চলেও প্রসারিত করা হবে।
১০. ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা ও পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রামীণ জনগণ বিশেষত গরিবদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা।
১১. শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি মাসে ২১,০০০ টাকা। প্রবাসী বা পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা দপ্তর। বিশেষ সুরক্ষা প্রকল্প। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের মাসে ২,৫০০ টাকা ভাতা ও সস্তায় রেশন-বন্ধ চটকল, চাবাগান ও অন্যান্য বন্ধ শিল্পের শ্রমিকদের জন্যও এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সমস্ত ধরনের অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত ও সম্প্রসারিত করা হবে। সরকারি প্রকল্পে কর্মরত অস্থায়ী শ্রমিকদের নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো ও সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা হবে। আইসিডিএস, আশা, মিড-ডে মিল সহ প্রকল্প কর্মীদের সম্মানজনক ভাতা প্রদান ও কাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হবে।
১২. খাদ্য সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব ও সর্বজনীন রেশন - গরিবদের জন্য ২টাকা কেজি চাল বা আটা প্রতি মাসে ৩৫ কেজি করে প্রতি পরিবারে সরবরাহ - নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বাজার থেকে কম দামে সরবরাহ - সকলের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা।
১৩. ছোটো ও মাঝারি শিল্পের ওপর গুরুত্ব - বৃহৎ শিল্প গড়ার উদ্যোগ - তথ্য, জৈবপ্রযুক্তি এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের সম্ভাবনাগুলির সদ্ব্যবহার - কৃষিভিত্তিক শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পসহ ইস্পাত, অটোমোবাইল, পেট্রোকেম, বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, চামড়া, বস্ত্রশিল্প স্থাপনের উদ্যোগ।
১৪. সরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সবই বিনামূল্যে। জনস্বাস্থ্যে সম্পূর্ণ দায়িত্ব সরকারের। মহামারী ও রোগ প্রতিরোধে অগ্রাধিকার। ওষুধের দাম যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা।
১৫. বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি - গরিব অংশের মানুষের জন্য বিদ্যুতের দামে ভরতুকি। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিলে সরকারি ভরতুকি।
১৬. শিক্ষাক্ষত্রে বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ বরাদ্দ - নিরক্ষরতা নির্মূল করা - শিক্ষায়তনে গণতন্ত্র - শিক্ষায় বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণ বন্ধ করা - ভর্তির পদ্ধতি স্বচ্ছ করা - শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ - স্বচ্ছতা বজায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শূন্যপদ পূরণ (প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি, এসএলটিএমটি, ওয়ার্ক এডুকেশন, ফিজিক্যাল এডুকেশন সহ) - মাদ্রাসা শিক্ষাকে আরও সুসংহত, উন্নত ও প্রসারিত করা - বৃত্তিমূলক, কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষার ওপর জোর, বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে গবেষণার উপর গুরুত্ব - সমস্ত অস্থায়ী শিক্ষকদের প্রতি সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি - ছাত্র সংসদগুলির নিয়মিতভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন।
১৭. সুস্থ সংস্কৃতির প্রসারে সর্বতো উদ্যোগ গৃহীত হবে। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনাকে উৎসাহিত করা হবে।
১৮. ক্রীড়ার প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া। ক্রীড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যচর্চার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
১৯. সমকাজে সমমজুরি। নারী নির্যাতন, গার্হস্থ্য হিংসা প্রতিরোধে শহরে ওয়ার্ড বা বরোতে এবং গ্রামবাংলায় ব্লক স্তরে বিশেষ সহায়তা কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। তৃতীয় লিঙ্গ ও অন্যান্য প্রান্তিক যৌন এবং লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষদের (LGBTQIA+) জন্য প্রয়োজনীয় যথোপযুক্ত ব্যবস্থা করা হবে।
২০. শারীরিক প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের স্বার্থে আরপিডি অ্যাক্ট-১৬ ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন-১৭ কার্যকর করা হবে। প্রতিবন্ধকতাযুক্ত মানুষদের শিক্ষার আওতায় আনা হবে, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সকলকে এক বছরের মধ্যে শংসাপত্র দেওয়া হবে। মাসিক ভাতা এক হাজার টাকার পরিবর্তে মাসে দু’হাজার টাকা দেওয়া হবে।
২১. সম্পদের বণ্টনের জন্য যে স্টেট ফিনান্স কমিশন ছিল, তার পুনরুজ্জীবন। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নিজস্ব ব্যাঙ্ক। সম্পদের বিকেন্দ্রীকরণ। রাজ্য সরকার পরিচালিত রুগণ্ সংস্থাগুলির পুনরুজ্জীবনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ।
২২. সমবায়ের প্রসার। সমবায়ের পণ্য বিক্রিতে অন-লাইন বিপণন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে উৎসাহিত করা হবে।
২৩. পরিকল্পনা পর্ষদকে আরও কার্যকর করা - বাংলা ভাষাকে প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে উৎসাহিত করার পাশাপাশি হিন্দি, নেপালি, উর্দু, সাঁওতালি ভাষার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা, রাজবংশী-কুরুক-কুরমিসহ পশ্চাদপদ অংশের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে। উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল, সুন্দরবন ও রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিষয়টি বিশেষ করে গুরুত্ব পাবে। রাজ্যের বস্তিগুলির উন্নয়নের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।
২৪. বেআইনি চিটফান্ডগুলির দাপট রোখা - চিটফান্ডের কর্মকর্তা ও তাদের সহযোগীদের দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করা - জনগণের গচ্ছিত টাকা ফেরত দেওয়া।
২৫. কেন্দ্রের সরকারের জনবিরোধী নীতি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম জারি থাকবে - রাজ্যগুলির সাংবিধানিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে রাজ্য সরকার সতর্ক থাকবে - সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর’এর মতো বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব ধারণা রাজ্যে কার্যকর করা হবে না - কেন্দ্রের সংগৃহীত মোট রাজস্বের ৫০ শতাংশ রাজ্যকে দিতে হবে, জিএসটি বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকারকে মিটিয়ে দিতে হবে। - নদীভাঙন, বন্দরের নাব্যতা রক্ষায়, দার্জিলিঙের পার্বত্য এলাকায় পুঁজি বিনিয়োগে কেন্দ্রের ভরতুকির জন্য প্রয়াস - উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে কেন্দ্রের কাছে সাহায্যের দাবি।