৫৮ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৬ মার্চ, ২০২১ / ১২ চৈত্র, ১৪২৭
সংযুক্ত মোর্চার আবেদন
বাংলার ঐতিহ্য রক্ষায় সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়ে তুলুন
ভাঙড়ে জনসমুদ্র...
ভাঙড়ে নির্বাচনী জনসভায় বক্তব্য রাখছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। মঞ্চে সংযুক্ত মোর্চার আইএসএফ প্রার্থী নৌসাদ সিদ্দিকী।
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করার সাথে সাথে বিজেপি-কে রুখে দিতে হবে। বাম-গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বিকল্পকে জয়ী করতে হবে। ২৪ মার্চ মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে এই আবেদন জানানো হয়েছে। এদিন এক সাংবাদিক সম্মেলনে বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ’র নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে রাজ্যের মানুষের কাছে এই আবেদনপত্র প্রকাশ করে বলা হয়েছে - বাম ও সহযোগী, কংগ্রেস ও ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের ঐক্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা সংযুক্ত মোর্চাকে জয়যুক্ত করুন। সাধারণ মানুষের নিজেদের সরকার, সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়ে তুলতে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করার কথা উল্লেখের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ ও সমগ্র দেশের স্বার্থে এই ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে প্রকাশিত আবেদনে বলা হয়েছে - ‘‘বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস যে ব্যক্তি কুৎসা, ব্যক্তি আক্রমণ এবং ধর্মান্ধতার নজির বাংলার মাটিতে আনতে চাইছে তারই বিরুদ্ধে আমাদের সংযুক্ত মোর্চার লড়াই জারি রয়েছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে বাংলাকে গড়ে তুলতে চাই আমরা।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা, দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ সরকার গড়তে সংযুক্ত মোর্চাকে জয়ী করুন। রাজ্যের অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দিতে সংযুক্ত মোর্চাকে সমর্থন করুন। বাংলার ঐতিহ্যরক্ষায় সংযুক্ত মোর্চার সরকার গড়ে তুলুন।’’
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিমান বসু বলেন, বিজেপি-আরএসএস’র পক্ষ থেকে বৈদ্যুতিন মাধ্যমকে ব্যবহার করে কৌশলী প্রচার চলছে। এরাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি বোঝাপড়া করে সাম্প্রদায়িক কার্ড ব্যবহার করছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। কৃষিতে গুরুতর সঙ্কট চলছে, তৃণমূল সরকারও কৃষকবিরোধী আইন চালু করেছে। শিল্পে বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান হচ্ছে না, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের বেহাল দশা। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ। মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাস্ত করার সাথে সাথে বিজেপি-কেও রুখে দিতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে তৃণমূলের ভূমিকা লক্ষ করার কথা উল্লেখ করে বলেন, সেদিন যদি তৃণমূল বিরোধীদের সঙ্গে সহযোগিতা করত, তাহলে এই আইন গৃহীত হতো না। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার কোনোভাবেই সিএএ কার্যকর করতে পারবে না।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিমান বসু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্র, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক মনোজ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য, সিপিআই’র রাজ্য সম্পাদক স্বপন ব্যানার্জি, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা হাফিজ আলম সইরানি এবং আইএসএফ’র পক্ষে সৌমিত্র দস্তিদার।
এদিন সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে প্রকাশিত আবেদনপত্রে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার, বিরোধীদের মতপ্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠা, কৃষি-শিল্প-পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি, কৃষকদের ফসলের লাভজনক দাম ও অন্যান্য সহায়তা প্রদান, অতিক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পুনরুজ্জীবন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, খাদ্য সুরক্ষা, সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা, বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের পরিসর রক্ষা ও বাজেটে এই খাতে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি, সমকাজে সমমজুরি, নারীদের সুরক্ষা, সুস্থ সংস্কৃতির প্রসার, তফশিলি জাতি, আদিবাসী ও অন্যান্য পশ্চাৎপদ অংশের জন্য সংরক্ষণ, বেআইনি চিটফান্ডগুলোর দাপট রোখা, চিটফান্ড কাণ্ডে অপরাধীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরত ইত্যাদি ২৭টি বিকল্প কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।