E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৮ বর্ষ ৩২ সংখ্যা / ২৬ মার্চ, ২০২১ / ১২ চৈত্র, ১৪২৭

নির্বাচকদের দরবারে-২

বরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়


ঘটনা-১: ভোটটা সঠিক ভাবে করানোর চেষ্টা করবেন। তাহলেই দেখবেন মানুষ সবকিছু পালটিয়ে দেবেন।

ঘটনা-২: সিপিএম করার জন্য কী দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আপনাকে কী বলব? আমরা তো কথা বলতে পারিনা। আমফানে এত এত টাকা এসেছে। আমাদের ঘর ভেঙে গেছে। তবু একটাও কিছু পাইনি।

ঘটনা-৩: এই তো আমফান ঝড় গেল। আমরা তো কিছুই পাইনি। আমরা কীসের জন্য ভোট দেব? আমার ঘরে ২৫টা ভোট আছে। ২৫টা ভোট পায় ওরা। কী দিয়েছে আমাদের? কী পেয়েছি আমরা? আমরা কিছু চাইলে আমাদের বলেছে তোমরা সিপিএম-কে ভোট দাও। তোমাদের কিছু দেওয়া হবেনা।

ঘটনা-৪: সিপিআই(এম) প্রার্থীর হাত ধরে কেঁদে ফেললেন বৃদ্ধ। জানালেন, এই কয়েক বছরে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছি শুধু সিপিএম-এর সমর্থক বলে। আমরা তো এখনও পাল্টাতে পারিনি নিজেদের।

ঘটনা-৫: এই এলাকায় কারোর কোনো কাজ নেই। সবাই ভিক্ষা করে খায়। আমফানের সময় এসে ভাঙা ঘরের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। একটাও কিছু আমাদের দেয়নি। এই আমড়াতলা সিংপাড়ায় সবাই ভিখ মেগে খায়। আমাদের কেউ দেখে না।

ওপরের পাঁচটা ঘটনা যে বিধানসভা কেন্দ্রের সেই কেন্দ্রে ভোট দ্বিতীয় দফায়, আগামী ১ এপ্রিল। ঘটনাচক্রে সাড়া দেশের সমস্ত আকর্ষণ কেড়ে নেওয়া এক কেন্দ্রের নাম নন্দীগ্রাম। যেখানে তৃণমূলের মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে প্রাক্তন তৃণমূলী, বর্তমান বিজেপি শুভেন্দু অধিকারীর লড়াই। যদিও এই কেন্দ্রের সাধারণ মানুষ উপরের দু’জন হেভিওয়েট প্রার্থীর কারোর কাছেই এই অভিযোগগুলো জানাননি। তাঁরা এই অভিযোগ জানিয়েছেন নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে মিডিয়া যে প্রার্থীকে বাইনারি তৈরি করতে হিসেবের বাইরে রেখে দিয়েছে সেই মীনাক্ষী মুখার্জিকে। যিনি নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী।

ধর্ম, মত, দল নির্বিশেষে নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে বয়ান উঠে এসেছে তা রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিবেশের গুণগান গাওয়া শাসকদলের জন্য ভয়ঙ্কর। তাঁরা মানুষকে কতটা ত্রাসে রেখেছেন, কতটা সন্ত্রস্ত রাজ্যের সাধারণ মানুষ তার নিট বয়ান উঠে এসেছে নন্দীগ্রাম থেকে। এরকম নয় যে এই ধরনের অভিযোগ এবারই প্রথম। ২০১১ সালের পর থেকে রাজ্যে পঞ্চায়েত, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা সহ যতগুলো নির্বাচন হয়েছে তার সবেতেই মানুষের একই অভিজ্ঞতা। তৃণমূলের আমলে গণতন্ত্রকে বারবার গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে। এই সেদিন পর্যন্ত তৃণমূলে থাকা নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী আজ মমতা ব্যানার্জিকে ‘রিগিং রানি’ সম্বোধন করলেও তাঁর নিজের অপরাধ বিশেষ কিছু কমে না। কারণ এতদিন তিনিও এই সমস্ত অপকর্মের দোসর ছিলেন। তিনিই প্রথমে নন্দীগ্রাম এলাকার সাংসদ ছিলেন, পরে বিধায়ক হয়েছিলেন। এতদিন তাঁর অজ্ঞাতে সবকিছু হয়েছে, আর আজ বিজেপি-তে যোগ দিয়েই তিনি ধোয়া তুলসীপাতা - বিষয়টা এরকম নয় মোটেই। নারদ কাণ্ডে তাঁকেও তো টাকা নিতে দেখা গেছিল। রাজ্যের একাধিক দুর্নীতিতে তাঁর নামও বারবার এসেছে। যে সারদা রাজ্যের লাখ লাখ মানুষকে পথে বসিয়েছে সেই সারদা নন্দীগ্রামে রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে এঁদের চোখ এড়িয়ে তা কী করে সম্ভব? মমতা ব্যানার্জি তো বলেই খালাস - ‘যা গেছে তা গেছে’। কিন্তু যার সত্যি করেই গেছে তিনি জানেন যাবার যন্ত্রণা। মানুষের সর্বস্বান্ত হওয়া নিয়ে তাঁর এই নির্মম দার্শনিক পরিহাস তিনি কতটা অসংবেদনশীল সেটাই প্রমাণ করে। মিডিয়া যাই বাইনারি তৈরি করে দিক না কেন, রাজ্যের অন্যান্য কেন্দ্রের মতো নন্দীগ্রামেও যে এক প্রবল তৃতীয় পক্ষ আছে সেটা মিডিয়াও জানে। গোপন আঁতাতকারী দুই দল যতই মেকি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলুক না কেন, এবার মানুষও সেই ঘৃণ্য খেলা বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর।

দিনকয়েক আগেই কী একটা সোনার বাংলা সঙ্কল্পপত্র নাকি প্রকাশ করেছে বিজেপি। যেখানে বাংলাকে কীভাবে তিলে তিলে সোনা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হবে তা লেখা হয়েছে। এই সঙ্কল্পপত্র নিয়ে কোনো শব্দ খরচ করার আগে একটা সম্পূর্ণ অন্য বিষয়ে একটু নজর দেওয়া যাক। সেটা যদিও সঙ্কল্পপত্র নয়। তবে একটা বিজ্ঞাপন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার যে বিজ্ঞাপন কলকাতার বিভিন্ন হিন্দি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ ও ২৫ তারিখ। বিজেপি’র ট্যাঁকের জোর অনুসারে খবরের কাগজের প্রথম পাতাতেই। সরকারি খরচে বিজেপি’র ভোটের বিজ্ঞাপন বললেও ভুল বলা হবেনা। ওই বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে এক মহিলার ছবি ছাপা হয়। ‘আত্মনির্ভর ভারত, আত্মনির্ভর বংগাল' শীর্ষক ওই বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে ছাপা হয়েছিলো এক মহিলার ছবি। ওই বিজ্ঞাপনে যা লেখা ছিলো তার বাংলা করলে দাঁড়ায় - ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আমি নিজের ঘর পেয়েছি, মাথার ওপর ছাদ পেয়ে প্রায় ২৪ লক্ষ পরিবার আত্মনির্ভর হয়েছে, সঙ্গে আসুন এবং একসাথে মিলে আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নকে সত্যি করি।’

তবে গোল বেঁধেছে বিজ্ঞাপনে ছাপা ছবির মহিলাকে কেন্দ্র করে। জানা গেছে ওই মহিলার নাম লক্ষ্মীদেবী। ৪৮ বছরের ওই মহিলা বিজ্ঞাপনে তাঁর ছবি ছাপার কথা জানতে পেরেছেন। লক্ষ্মী দেবী জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের ৫ সদস্য সহ ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এক ঝুপড়িতে থাকেন। তাঁর নিজের কোনো ঘর নেই। অর্থাৎ বিজ্ঞাপনে যে দাবি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়ো। আপাতত এই খবর নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হলেও আমাদের ‘গোদি মিডিয়া’র নজরে এখনও বিষয়টা পড়েনি। তারা ব্যস্ত বিজেপি তৃণমূলের মারপিট, দলবদল, সেলিব্রিটিদের ভোটে দাঁড়ানো, তাঁরা প্রচারে বেরিয়ে কী খাচ্ছেন, কোন্‌ সানস্ক্রিন মাখছেন গোছের খবর নিয়ে। যে মানুষ ভোট দিয়ে আগামী পাঁচ বছরের জন্য সরকার তৈরি করবে সেখানে সেই মানুষের সমস্যার কোনো খবর নেই। কেন লক্ষ্মীদেবীর ছবির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবি ছাপিয়ে মিথ্যে দাবি করা হলো তা নিয়েও কোনো খবর নেই।

মিথ্যে বিজ্ঞাপন দিয়ে যে দলের, সরকারের প্রচার সারতে হয়, তাদের সোনার বাংলা সঙ্কল্পপত্রও যে মিথ্যে দিয়েই ঠাসা থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। গোরুর কুঁজে সোনা নাকি গোরুর দুধে, সোনার বাংলা নাকি সোনার পাথরবাটি সে তো আলোচনার বিষয়। ২০১৬-র আসাম নির্বাচনেও তো সোনার আসাম গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো। বিগত পাঁচ বছরে আসামে এত সোনা ফলেছে যে এবার আসামের ইস্তাহার থেকে ‘সোনার আসাম’ বেমালুম হাওয়া হয়ে গেছে। এই রাজ্যেও ডবল ইঞ্জিন সরকার হলে রাজ্যের উন্নতি হবে মনে করে যেসব ‘শিক্ষিত’ মানুষও নেচে মরছেন, তাঁরা সম্ভবত ভুলে গেছেন দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যে এখন ডবল ইঞ্জিন সরকার। ত্রিপুরা, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশ (ঘুর পথে ক্ষমতা দখল করা), হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, আসাম, বিহার - সব রাজ্যেই কিন্তু ডবল ইঞ্জিন সরকার। এই রাজ্যগুলোর কোনোটাতেই সোনা ফলছে না। বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে দেশের মতো এই সব রাজ্যের অবস্থাও ভয়াবহ। ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের নাম করে সর্বত্র চলছে দেদার রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি লুঠ।

সাধারণভাবে কোনো লেখার মধ্যে ‘শিক্ষিত’ ‘অশিক্ষিত’ শব্দগুলোকে সচেতনভাবেই এড়িয়ে চলি। কিন্তু এই লেখার আগের প্যারাতেই একবার ‘শিক্ষিত’ শব্দটা ব্যবহার করতে হয়েছে কেরালার একমাত্র বিজেপি বিধায়কের বয়ানের জন্য। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এক সাক্ষাৎকারে বিধায়ক ও রাজাগোপালের কাছে জানতে চেয়েছিলো - কেরালায় এখনও কেন পলিটিক্যাল স্পেস তৈরি করতে পারছে না বিজেপি, যেখানে পশ্চিমবঙ্গে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই তারা নিজেদের মাটি যথেষ্ট শক্ত করেছে। এর উত্তরে রাজাগোপাল জানান, ‘‘কেরালা সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের একটা রাজ্য। এখানে বিজেপি’র জায়গা তৈরি করতে না পারার পিছনে দু-তিনটি কারণ রয়েছে। কেরলে সাক্ষরতার হার ৯০ শতাংশ। এরা নিজেদের যুক্তিবাগীশ ভাবেন। এটা শিক্ষিত মানুষদের অভ্যাস। এটা একটা বিষয়। দ্বিতীয কারণটি হলো এখানে ৫৫ শতাংশ হিন্দু এবং ৪৫ শতাংশ সংখ্যালঘু রয়েছে। যে কারণে কেরালাকে অন্য কোনো রাজ্যের সাথে তুলনা করা যায় না। এখানকার পরিস্থিতি আলাদা।’’ ‘সাক্ষরতা’ এবং ‘শিক্ষিত’ বিষয়দু’টো যদিও এক নয় তবু দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক আবহাওয়ায় কেরলের বিজেপি বিধায়কের মন্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আর এই খবরের সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত করা যায় এক বিজেপি-জেজেপি শাসিত রাজ্য হরিয়ানার কথা। যেখানে ১০৫৭ সরকারি স্কুল বন্ধ হতে চলেছে। যার মধ্যে আছে ৭৪৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ৩১৪ উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। সূত্র অনুসারে এই ১০৫৭ বিদ্যালয়ে ১৩০৪ জন জেবিটি শিক্ষক, ১৬৭জন প্রধান শিক্ষক এবং ৭৬৩ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক আছেন। যাঁদের অন্য স্কুলে বদলি করা হবে। বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলের ছাত্রদের এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্য স্কুলে ভরতির ব্যবস্থা করা হবে। হরিয়ানা সরকারের শিক্ষা দপ্তরের বক্তব্য অনুসারে এই ১০৫৭টি স্কুল সরকারি শর্ত পূরণ করতে পারেনি। দেশের দুই প্রান্তের দুই রাজ্য কেরালা এবং হরিয়ানার এই দুই খবরের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে কোনো যোগসূত্র না থাকলেও সূত্র তো আছেই। একটু ভাবা প্র্যাক্টিস করলেই তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

যাকগে এসব কথা। যেখান থেকে শুরু করে অন্য কথায় চলে এসেছিলাম সেই সোনার পাথরবাটি সংকল্প পত্র নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। বিজেপি’র ইস্তাহার আর বাস্তব - বিচার তো করতেই হবে। আমাকে, আপনাকে সকলকেই। বিশ্বাস, অবিশ্বাস - সে তো অনেক দূরের কথা। বিজেপি’র ওই সংকল্প পত্রে বলা আছে রেশন ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করার কথা। অথচ, এই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলেই রেশনে গ্রাহকের সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‘তাঁরা’ বলছেন সরকারি চাকরিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সংরক্ষণ। যার উত্তরে বলা যায় কোনো বিজেপি-শাসিত রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারে এখনও পর্যন্ত এই সংরক্ষণ নেই। আর মহিলাদের সম্পর্কে আরএসএস-বিজেপি’র মনোভাব বোঝার জন্য একটু কষ্ট করে নেট ঘেঁটে মোহন ভাগবত গোছের দু’চারজন ‘মহান পুরুষ’-এর মন্তব্য দেখে নিলেই হবে। তাহলেই মহিলা সংরক্ষণের ভাঁওতাটা বুঝতে সুবিধে হবে।

একইরকমভাবে ‘তাঁদের’ প্রতিশ্রুতি প্রতি পরিবারে নাকি একজনের চাকরি হবে। অথচ কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর আমলে গত এক বছরে চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ১৩ কোটি মানুষ। পশ্চিমবাংলার ঘরে ঘরে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেবার আগে তো ওই ১৩ কোটি মানুষের চাকরি ফেরান মাননীয় সংকল্প রচয়িতারা। ঠিক এভাবেই চিট ফান্ড, ২০০ দিনের জন্য রেগা, শরণার্থী পরিবারের জন্য টাকা, ফসলের দাম নিশ্চিত করা, অরণ্যাঞ্চলে পাট্টা দেওয়া গোছের যেসব প্রতিশ্রুতির কথা বলা আছে তা নিয়ে আলোচনা যত কম করা যায় তত ভালো। কারণ, যে কোনো বিজেপি-শাসিত রাজ্যের দিকে চোখ রাখলেই এইসব প্রতিশ্রুতির বাস্তব অবস্থা ঠিক কী তা বোঝার জন্য নতুন করে কিছুর লেখার প্রয়োজন পড়বে না।

সোনার পাথরবাটি সংকল্পপত্রে গুচ্ছ গুচ্ছ প্রতিশ্রুতি থাকলেও রাজ্যের মানুষের কর্মসংস্থান কীভাবে হবে তা নিয়ে কোথাও একটি শব্দ নেই। অবশ্য অমিত শাহ বলেই দিয়েছেন ‘বেনিয়া’রা নাকি জানেন কীভাবে কী করতে হয়। যদিও বিগত কয়েক বছরে ‘বেনিয়া’রা দেশ চালালে কী হতে পারে তার হাতে গরম উপলব্ধি মানুষের হয়ে গেছে। আর কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, বাম জমানায় শ্রমিক আন্দোলন ও তার জেরে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে বারবারই বিরোধীরা অভিযোগ করতো। যদিও তাঁরা স্বীকার করেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য টাটাকে এনে বাংলায় শিল্প সম্ভাবনা তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূল, উগ্র বাম এবং তাদের তৎকালীন দোসর বিজেপি’র বাধায় তা এগোতে পারেনি। মমতা ব্যানার্জির ধরনা মঞ্চে রাজনাথ সিং-এর ছবি নেটে একটু খুঁজলেই পাওয়া যায়। তাই এখন বাংলার শিল্প নিয়ে এই দুই দলের কুমিরের কান্না কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। গত দেড় দশকে বাংলায় কোনো বড়ো বিনিয়োগ বা বড়ো কোনো কারখানাও হয়নি। বড়ো শিল্প না এলে রাজ্যে কর্মসংস্থান বাড়বে কীভাবে? বিজেপি ইস্তাহার প্রকাশের পর সেই প্রশ্নই ঘুরছে সাধারণের মনে।

২৭ তারিখ, শনিবার থেকে রাজ্যে শুরু হয়ে যাচ্ছে ভোটগ্রহণ পর্ব। বাংলার ভবিষ্যৎ, রাজ্যবাসীর ভবিষ্যৎ - সবকিছুই নির্ভর করছে এই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। রাজ্যকে টুকরো টুকরো করে বালি মাফিয়া, কয়লা মাফিয়া, তোলাবাজ, ঘুষখোর, কাটমানি খোর, চাল চোর, ত্রিপল চোররা শাসন করবে, নাকি রাম রহিমের নামে মানুষকে ভাগ করা, ‘আত্মনির্ভর’ ভারতের নাম করে দেশের সবকিছু বেচে দেওয়া বেনিয়ারা অথবা রাজ্যের হাল ফেরাতে মানুষের অধিকারের কথা বলা, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিসর ফিরিয়ে আনার লড়াইয়ে থাকা সংযুক্ত মোর্চা বামজোট ফিরবে সে সিদ্ধান্ত তো একান্তই আপনার। সময় বড়ো কম।