E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৬ মে, ২০২৩ / ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০

নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় আতঙ্কিত অভিষেকের কনভয়কে লক্ষ করে বাঁকুড়ায় ‘চোর’ স্লোগান


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ চলতি মাসের ২০ তারিখ নিয়োগ দুর্নীতিতে সিবিআই’র জেরার পর থেকেই গ্রেপ্তারির আতঙ্কে ভুগছেন অভিষেক ব্যানার্জি। জেরার পরদিন ২১ মে তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন আইনি রক্ষাকবচের জন্য দ্রুত শুনানির আবেদন নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সাংসদ, মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো সাংসদের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি ২১ মে সুপ্রিম কোর্টে একথা জানিয়েছেন। সিবিআই’র তরফে যাতে কোনো ‘কড়া পদক্ষেপ’ না নেওয়া হয় তার জন্যই এই আবেদন। রক্ষাকবচের আবেদন মঞ্জুর হয়নি, ২৬ মে শীর্ষ আদালতে শুনানি হবে এ প্রসঙ্গে।

এর আগে কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় অভিষেক ব্যানার্জিকে সিবিআই বা ইডি জেরা করতে পারে বলে হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যে রায় দিয়েছিলেন, তা বহাল রাখার পাশপাশি বিচারপতি অমৃতা সিনহা আদালতে সময় নষ্ট করার অভিযোগে একই সঙ্গে অভিষেক ব্যানার্জি ও কুন্তল ঘোষকে ২৫ লক্ষ টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দিয়েছিলেন। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেও আলাদা ভাবে পিটিশন দায়ের করা হয় অভিষেক ব্যানার্জির তরফে। আবার ২০ তারিখের জেরা আটকাতে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ‘দয়া করে’ শুনানি সম্পন্ন করে স্থগিতাদেশ চাইতে আবেদন করেছিলেন ভাইপো সাংসদ।

জেরার পর আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই সিবিআই অফিস চত্বরে সাংবাদিক সম্মেলন করে ভাইপো সাংসদ যে কয়েকটি বিষয়ে মন্তব্য করেন তার মধ্যে রয়েছে, ‘নব্বই শতাংশ প্রশ্নই বোগাস’, ‘এই জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস শূন্য’ ইত্যাদি। যে জিজ্ঞাসাবাদের নির্যাস শূন্য এবং যে দশ শতাংশ প্রশ্ন ‘বোগাস’ নয়, যার সারবত্তা আছে, সেই প্রশ্নের এমন কী তীক্ষ্ণতা এবং প্রভাব থাকতে পারে যার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে হয় - প্রশ্ন করছেন মানুষ। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর শেষবার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখনও তাঁকে এতটা বিচলিত দেখায়নি।

জানা গেছে, জেলায় জেলায় নিয়োগ দুর্নীতির এজেন্ট চক্র সম্পর্কে দফায় দফায় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে অভিষেক ব্যানার্জিকে। তা প্রকারান্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে স্বীকারও করেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি উল্লেখ করেছেন, যে সমস্ত নাম তদন্তকারী আধিকারিকরা জিজ্ঞেস করেছেন, তার বেশিরভাগটাই পূর্ব মেদিনীপুর এবং মুর্শিদাবাদের। অর্থাৎ, কার্যত তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, তৃণমূল জমানায় যাবতীয় নিয়োগ-দুর্নীতি ঘটেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির জমানায় এই নিয়োগ দুর্নীতি শুরু। প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টার জেরার পর ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয় ভদ্র সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কিছুটা বিরক্ত হন অভিষেক ব্যানার্জি। এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতেও অস্বীকার করেন।

নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে যে চার্জশিট দায়ের হয়েছে তাতেই স্পষ্ট, ২০১২ সাল থেকেই প্রাইমারিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার অন্যতম প্রধান কুশীলব কুন্তল ঘোষকে ২০২২ সালে যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক পদে বসান ভাইপো সাংসদ। কুন্তল ঘোষ এবং একইসঙ্গে ধৃত বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহা ও আরেক ব্যক্তির সঙ্গে তার মোবাইলের কথোপকথনের যে তথ্য রয়েছে সিবিআই’র কাছে লাগাতার প্রশ্নের মুখে সেসব অস্বীকার করেছেন অভিষেক ব্যানার্জি। সিবিআই’র দাবি সিংহভাগ প্রশ্নের বিভ্রান্তিকর উত্তর মিলেছে।

ওদিকে জেরার পরই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে বাঁকুড়ায়। দলের ‘নব জোয়ার’ কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে ২৩ মে ‘চোর চোর’ স্লোগান শুনতে হয় অভিষেক ব্যানার্জিকে। ওই দিন রাতে বাঁকুড়ার খাতড়া-বাঁকুড়া রাজ্য সড়ক ধরে তাঁর কনভয় যাওয়ার পথে ইন্দপুরের বাংলা জয়েন্ট মোড়ে ভিড়ের মধ্য থেকে কেউ বা কারা অভিষেক ব্যানার্জিকে উদ্দেশ্য করে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেয়। তদন্তের মুখে অভিষেকের এই নাজেহাল দশায় কাঁপুনি ধরেছে তৃণমূলের শীর্ষস্তরে। আর দলের ভিত আলগা হচ্ছে জনমানসে এটা এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার রাজ্যের খেটে খাওয়া মানুষের কাছে।