৬০ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৬ মে, ২০২৩ / ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০
ডাক বিভাগের প্রধান কর্মচারী সংগঠনের স্বীকৃতি বাতিলের সরকারি নির্দেশ প্রত্যাহার করতে হবে
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ গত এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে এক কালা নির্দেশ জারি করে ডাক বিভাগের সর্ববৃহৎ কর্মচারী ফেডারেশন NFPE (ন্যাশনাল ফেডারেশন অফ পোস্টাল এমপ্লয়িজ) এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শতাব্দী প্রাচীন ইউনিয়ন AIPEU (অল ইন্ডিয়া পোস্টাল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন)-এর স্বীকৃতি বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই দুই সংগঠনের বিরুদ্ধে আরএসএস পরিচালিত ট্রেড ইউনিয়ন বিএমএস অভিযোগ করে যে, এই সংগঠন দু’টি দিল্লির উপকণ্ঠে সংঘটিত ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের সংগঠকদের অর্থ সাহায্য করেছে এবং এর পাশাপাশি সিআইটিইউ এবং সিপিআই(এম)-কে অর্থ সাহায্য করেছে, যা কিনা আইনানুগ নয়। এনএফপিই নেতৃত্ব জানিয়েছেন যে, কৃষকদের আন্দোলনে সংহতি জানানো কোনো অপরাধ নয়। শ্রমজীবী মানুষ যেখানেই আন্দোলন করেন সেই আন্দোলনে সংহতি জ্ঞাপন করা সরকারি কর্মী সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নগুলির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। ডাক বিভাগের উল্লিখিত দু’টি সংগঠনই কনফেডারেশন অফ সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স-এর অন্যতম সদস্য। দেশের হাজার হাজার কৃষক যখন করপোরেট স্বার্থবাহী কৃষি আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, তখন এই গণসংগ্রামের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কনফেডারেশনের পক্ষ থেকে সমস্ত শ্রমিক কর্মচারীকে আহ্বান জানানো হয়। স্বভাবতই ডাক বিভাগের এই দুই সংগঠন সেই ডাকে সাড়া দিয়ে কৃষক সংগ্রামের জন্য ৩০ হাজার টাকা সংগঠনের তহবিল থেকে অর্থ সাহায্য করে। একেই অন্যায় বলে সাব্যস্ত করছে জনবিরোধী মোদি সরকার। অন্যদিকে এই দুই সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়নস (WFTU)-এর সদস্য। সেই সদস্যপদ বাবদ চাঁদা ডব্লিউএফটিইউ-র আরেক সদস্য সংগঠন সিআইটিইউ মারফত জমা দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনাকেও রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দেওয়া বলে অভিহিত করেছে সরকার। অন্যদিকে ডাক বিভাগের সংগঠনগুলি জানিয়েছে যে, সিপিআই(এম)-কে চাঁদা দেওয়া বলে যা বলা হচ্ছে তা আসলে সিপিআই(এম) দপ্তরে অবস্থিত বইয়ের স্টল থেকে বই কেনার খরচ।
এটা জলের মতো স্পষ্ট যে, সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসের নিয়মাবলি ভঙ্গ করবার যে অভিযোগ উঠেছে পোস্টাল ইউনিয়নগুলির বিরুদ্ধে তা আসলে ভিত্তিহীন। তা সত্ত্বেও এইরকম চরম পথ বেছে নিয়ে ডাক বিভাগের প্রায় পঁচাত্তর শতাংশ কর্মচারী যার সদস্য সেই দুটি কর্মচারী ইউনিয়নের স্বীকৃতি বাতিল করে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই ভয়ংকর অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে দেশের দশটি প্রধান কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে তারা চিঠি দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই অন্যায় পদক্ষেপ ডাক বিভাগের কর্মচারীদের মতামত প্রকাশকে সম্পূর্ণরূপে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। আইএলও-র অন্যতম সদস্য হিসেবে ভারত সরকার যে কোনো সংস্থার সমস্যা মেটাতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের শর্ত মানতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে আগামীদিনে যদি কর্মচারীদের ইউনিয়নের স্বীকৃতি না থাকে তাহলে কীভাবে এই বৈঠক সম্ভব হবে? আসলে মোদি সরকার ডাক বিভাগকে দুর্বল করার অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে বেসরকারিকরণ এবং কর্পোরেটকরণের যে চক্রান্ত করেছে তাকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে এই কর্মচারী ইউনিয়নগুলি লাগাতার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। গত ১৫ আগস্ট, ২০২২ থেকে ডাক বিভাগকে ছয় ভাগে ভাগ করে ভবিষ্যতে বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্ত করার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। দু’দিনের ধর্মঘট করে কর্মচারীরা এই চক্রান্ত ব্যর্থ করে। তাই প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আইনের অপব্যাখ্যা করে ডাক বিভাগের কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করবার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
ডাক বিভাগের ইউনিয়নগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিকতম এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রের জন্য এক অশনি সংকেত। শ্রমজীবী মানুষের লড়াইকে স্তব্ধ করতে গেলে এই সরকার যে যেকোনোরকম দমনমূলকপন্থা গ্রহণ করতে পারে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন তীব্রতর করার মধ্য দিয়ে এই স্বৈরাচারকে প্রতিহত করতে হবে।