E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৬ নভেম্বর, ২০২১ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

সংগ্রামী কৃষক আন্দোলনের সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়েছে সিপিআই(এম)


নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কৃষক আন্দোলনের চাপে কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন বাতিলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন বামপন্থী দল সহ শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর, ছাত্র সংগঠন। তারা জানিয়েছে, কৃষি আইন বাতিলে কেন্দ্রকে বাধ্য করায় তা দেশের সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামেরই জয় হয়েছে। এই জয় সূচনা করে দিল আগামীদিনে কেন্দ্রের যাবতীয় অন্যায়, অবিচারের ও জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আরও বড়ো আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিতে। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, তিন কৃষি আইন চাপিয়ে দেওয়ার মতো প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাচারী পদক্ষেপের জন্য তাঁকে দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

কৃষকদের সংগ্রাম যে ঐতিহাসিক জয় অর্জন করেছে তাকে সেলাম জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।১৯ নভেম্বর এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো জানিয়েছে, সারা বছর ধরে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে কৃষকদের বলিষ্ঠ সংগ্রাম যা দেশের অন্য আন্দোলনকেও প্রেরণা জুগিয়েছে তাকে সেলাম জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো। এই কৃষক সংগ্রাম প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের চরম অনমনীয় মনোভাবকে মাথা নোয়াতে বাধ্য করেছে। তবুও মোদি সরকার তার কালা কৃষি আইনের যৌক্তিকতা নিয়ে সাফাই গেয়ে চলেছে। বলা হচ্ছে, কিছু কৃষককে এনিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। এদিকে লাগাতার আন্দোলনে শাসক দল, সরকারের হামলায় বহু কৃষক প্রাণ হারালেন তা নিয়ে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা করতে দেখা গেল না। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৬৭৫জন কৃষক মৃত্যুবরণ করে শহিদ হয়েছেন। আন্দোলনরত কৃষকরা বার বার বিজেপি শাসকের পুলিশ প্রশাসনের হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়েছেন। সেনা-প্রশাসন দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে বিজেপি প্রশাসন। চলেছে লাগাতার প্রাণনাশের হুমকি। অনবরত আক্রমণ চলছে। যারা এই আক্রমণ চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। সংযুক্ত কিষান মোর্চা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি কার্যকর হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবে এবং তা কার্যকর হলে তবেই গ্রামে ফিরবে বলে যে অবস্থান নিয়েছে তাকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে সিপিআই(এম)। এরই সঙ্গে পলিট ব্যুরো সংসদের আগামী অধিবেশনেই কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের দাবি জানাচ্ছে।

কৃষকের সাহসী সংগ্রামই কেন্দ্রকে কালা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে বলে জানিয়েছেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি বলেন, এই আন্দোলন চালাতে গিয়ে নানা দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে কৃষকদের। তাঁদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হয়েছে। প্রধামন্ত্রী তার ধান্দার কর্পোরেটদের সুবিধা দিতেই স্বৈরতান্ত্রিক পথে তিন কালা কৃষি আইন এনেছেন। তাতেই কৃষকদের জীবনে এই দুর্ভোগ নেমে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী তা প্রত্যাহারের ঘোষণার পর এখন উচিত তাঁর সেই কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া।

তিনি কৃষকদের ঐতিহাসিক লড়াইয়ের প্রতি কুর্ণিশ জানিয়ে বলেছেন, এই আন্দোলন চালাতে গিয়ে যাঁরা শহীদ হলেন তাঁদের ভুলে গেলে চলবে না। এমএসপি নিয়ে কমিটি গঠন প্রসঙ্গে ইয়েচুরি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছিলেন। ফলে কমিটি গঠনের প্রয়োজনই নেই। কমিটি মানেই বিলম্ব। এরই সঙ্গে বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল সহ কৃষকদের অন্যান্য দাবি অবিলম্বে মেটানোর দাবি জানান।

ইয়েচুরি এদিন বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, তিনি এবং তাঁর বাহিনী কৃষকদের খালিস্তানি, সন্ত্রাসবাদীর তকমা দেগে দিয়েছিলেন। তিনি নিজে আন্দোলনজীবী বলে কটাক্ষ করেছিলেন। কৃষকদের ওপর হামলায় মদতও জোগানো হয়েছে প্রত্যক্ষভাবে। যারা কৃষকদের ওপর হামলায় জড়িত তাদের শাস্তির দাবি তুলে তিনি বলেছেন, লখিমপুর খেরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এখনই বরখাস্ত করা প্রয়োজন।

সিআইটিইউ এক বিবৃতি জানিয়েছে, কৃষকরা কালা তিন কৃষি আইন বাতিলে যে লাগাতার সংগ্রাম সংগঠিত করেছে তাতে সক্রিয় সমর্থন জানিয়ে এসেছে শ্রমিকরা। শ্রমিক কৃষকের এই যৌথ লড়াই-আন্দোলনই কেন্দ্রকে বাধ্য করেছে কালা আইন প্রত্যাহারে। তবে কালা কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করা হলেও এখনও সব দাবি মানেনি কেন্দ্র। কৃষি আইনের সঙ্গে নয়া বিদ্যুৎ বিল বাতিলের দাবি জানানো হয়েছিল তা এখনো বাতিল করা হয়নি। এছাড়া ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে আইন প্রণয়নের দাবি মানা হয়নি। সেই সব দাবিতে শ্রমিক-কৃষকের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সিআইটিইউ।

সারা ভারত খেতমজদুর ইউনিয়ন কৃষকদের জয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিবৃতিতে ইউনিয়ন জানিয়েছে, কৃষক আন্দোলন কেন্দ্রকে বাধ্য করেছে কালা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে। এটা শুধু কৃষকদের জয় নয়। এতে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী কর্পোরেট স্বার্থমুখী কৃষি নীতি পরাস্ত হয়েছে।

এদিন এসএফআই এক বিবৃতিতে জানিয়েছে কৃষক আন্দোলনের প্রতি বরাবর সহমর্মিতা জানিয়ে এসেছেন ছাত্ররা। কৃষকদের কালা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণাতেই আন্দোলন শেষ হবে না। তা আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন কৃষকরা।

জনবাদী লেখক সংগঠন কৃষক আন্দোলনের জয়কে অভিনন্দন জানিয়েছে। সংগঠন বিবৃতিতে জানিয়েছে, কৃষকদের আন্দোলন নয়া তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবি কেন্দ্রকে মেনে নিতে বাধ্য করায় প্রমাণ হয়েছে, যদি আন্দোলনের লক্ষ্য স্থির থাকে এবং সংকল্প অটল থাকে তবে জনতার সংগঠিত শক্তির সামনে স্বৈরতান্ত্রিক শক্তিকেও ঝুঁকে পড়তে বাধ্য করা যায়।