E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ১৫ সংখ্যা / ২৬ নভেম্বর, ২০২১ / ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪২৮

ত্রিপুরায় পুর ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক বিজেপি’র সন্ত্রাস


নির্বাচনে রি‍‌গিং ও সন্ত্রাসে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সিপিআই(এম) কর্মীরা।

পশ্চিমবঙ্গে বিগত পুর এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক তৃণমূলের যে সন্ত্রাস প্রত্যক্ষ করেছিল রাজ্যবাসী, পুর নির্বাচনকে ঘিরে সেই একই ঘটনার সাক্ষী রইল ত্রিপুরা। ২৫ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুরভোটের ভোটগ্রহণ শুরু হবার পরেই ত্রিপুরা জুড়ে চলছে অবাধ সন্ত্রাস। সন্ত্রাসের অভিযোগ পেয়ে পুরভোট চলাকালীন নজিরবিহীনভাবে এদিন সুপ্রিম কোর্ট আরও বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয়।

এর আগে গত বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ত্রিপুরায় সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করানোর জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও বৃহস্পতিবার ত্রিপুরার ভোট সন্ত্রাস দেখিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই সার। ভোটের আগে তো বটেই, এমনকী ভোটপর্ব শুরু হয়ে যাওয়ার পরও স্বমহিমায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে বিজেপি কর্মীরা। এদিন সকাল ৭টা থেকে ত্রিপুরা পুর নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ শুরু হয়। রাজ্যের প্রধান বিরোধী বামেদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন বিজেপি’র কর্মীরা বাইক নিয়ে এলাকাগুলোতে টহল দিচ্ছে এবং ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছে। তাঁদের প্রার্থীদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সিপিআই(এম)’র অভিযোগ, সুপ্রিম কোর্টের কোনো নির্দেশই মানছে না বিপ্লব দেবের সরকার। আগরতলা মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল অঞ্চলে বিপুলসংখ্যক বহিরাগত দুষ্কৃতী ঢুকেছে। বাইকে করে গোটা এলাকা টহল দিচ্ছে তাঁরা। সকলেই মাস্ক এবং হেলমেট পরে আছে। বাড়ি বাড়ি ঢুকে ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে এই বহিরাগতরা। ভোটারদের বাড়িতে থাকার জন্য সতর্ক করা হচ্ছে। বিরোধী সমর্থকদের ভয়ংকর পরিণতি হবে বলে ভয় দেখাচ্ছে। গতকাল রাত থেকেই এটা শুরু হয়েছে।

গতকাল বুধবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে আগরতলা পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিআই(এম) প্রার্থী ফুলন ভট্টাচার্য জানান, ত্রিপুরার মানুষ এর আগে কখনো এই ছবি দেখেননি। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানান। তিনি আরও বলেন, প্রচার শেষ। তারপর একদল লোক বাড়ি বাড়ি ঢুকছে রাত্তিরবেলা। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলছে, ভোট দিতে যাবেন না। আপনাদের যাবার দরকার নেই। আমরা ভোট দিয়ে দেব। অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আমরা কমিশনের কাছে সেই দাবি জানাচ্ছি। আমাদের আগে কখনও মনে হয়নি এই রাজ্যে এভাবে মানুষের জন্য নিরাপত্তার দাবি করতে হবে।

বৃহস্পতিবার সকালেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সন্ত্রাসের অভিযোগ আসতে শুরু করে। বিলোনিয়ায় অবাধ রিগিং ও বুথ দখল করে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার অভিযোগে এদিন সিপিআই(এম) কর্মী সমর্থকরা এসডিএম অফিস ঘেরাও করেন। সেখানে গিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিপিআই(এম) প্রার্থী। আগরতলা পুর নিগমের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক বুথে এক যুবককে অন্যের ভোট দিয়ে দেবার ভিডিও সামনে এসেছে। মেলাঘরে ভোট দিতে যাবার সময় রাস্তা থেকেই ভোটারদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিআই(এম)। অভিযোগের নিশানা বিজেপি’র বিরুদ্ধে। বিজেপি’র সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এদিন আগরতলার রাস্তায় দলে দলে বাম কর্মী সমর্থকরা নেমে পড়েন। এক বিরাট মিছিল শহর পরিক্রমা করে।

পুর নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই বিজেপি’র প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে ত্রিপুরায়। পশ্চিমবঙ্গে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেভাবে সন্ত্রাস করে বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি তৃণমূল, সেই একই কায়দায় সন্ত্রাসের জেরে ত্রিপুরাতেও বহু জায়গায় মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বিরোধীরা। বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া থেকে আটকাতে খোয়াই এবং উদয়পুরের এসডিএম অফিসেই তালা লাগিয়ে রাখার অভিযোগ ওঠে বিজেপি’র বিরুদ্ধে। ক্ষমতাসীন বিজেপি আগরতলা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এএমসি) এবং অন্যান্য ১৯টি শহুরে পুর ওয়ার্ডের ৩৩৪টি আসনের মধ্যে ১১২টি আসন ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে। বিজেপি ইতিমধ্যেই পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়া, রানির বাজার, মোহনপুর, বিশালগড়ের সাতটি নাগরিক সংস্থায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। দক্ষিণ ত্রিপুরার শান্তির বাজার ও উদয়পুর এবং উত্তর ত্রিপুরার কমলপুরেও একইভাবে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার ভোট নেওয়া হয়েছে বাকি ২২২টি আসনে। এই সমস্ত আসনে ৭৮৫ জন প্রার্থী থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বাম কর্মী সমর্থকরাই। ত্রিপুরায় ভোট গণনা হবে আগামী ২৮ নভেম্বর।