E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৫৯ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৭ আগস্ট, ২০২১ / ১০ ভাদ্র, ১৪২৮

রাজ্য সরকারের প্রতিহিংসাপরায়ণ এবং স্বেচ্ছাচারী ভূমিকার নগ্ন প্রকাশ শিক্ষিকাদের প্রতি অমানবিক আচরণে


রাজ্য সরকারের অমানবিকতার প্রতিবাদে গলায় বিষ ঢালার আগের মুহূর্তে শিক্ষিকা। অনড় পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষার ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল ২৪ আগস্ট। বেআব্রু হয়ে গেল রাজ্য সরকারের অগণতান্ত্রিক এবং অসহিষ্ণু চেহারা। শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি না মেনে আন্দোলনে নাজেহাল মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল সরকার চূড়ান্ত অমানবিকভাবে আন্দোলনকারীদের একাংশকে প্রতিহিংসামূলক বদলি করে। দাবি দাওয়া সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও এই দিন সরকারের এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন পাঁচ শিক্ষিকা। ওই এসএসকে-এমএসকে শিক্ষিকারা শিক্ষা মন্ত্রকের সদর দপ্তর বিধান নগরের বিকাশ ভবনের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে ‘আমাদের বাঁচার কোনো সুযোগ নেই...’ বলতে বলতে গলায় বিষ ঢালেন। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ওই পাঁচ শিক্ষিকা হলেন শিখা দাস, জ্যোৎস্না টুডু, পুতুল জানা মন্ডল,ছবি চাকি দাস এবং অনিমা নাথ।

ধারাবাহিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ওই পাঁচজন শিক্ষিকা এখন চিকিৎসাধীন। তার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ২৪ আগস্ট রাতেই তাঁদের সিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এনআরএস হাসপাতালে থাকা শিখা দাস ও জ্যোৎস্না টুডুকে সিসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছে, আরজি কর-এ ভরতি থাকা নামখানার শিক্ষিকা পুতুল জানা মণ্ডলকে আইসিইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

বিধাননগর উত্তর থানার তরফে আন্দোলনকারী পাঁচ শিক্ষিকার বিরুদ্ধেই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার মধ্যে জামিন অযোগ্য ধারাও রয়েছে। সরকার, পুলিশ এত তৎপরতা দেখালেও হাসপাতালে ভরতি শিক্ষিকাদের খোঁজ নেওয়া, কেন রাজ্যের পাঁচ শিক্ষক এমন চরম পথে যেতে বাধ্য হলেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য, প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এমনকি ঘৃণ্য প্রতিহিংসার বদলির সিদ্ধান্ত বদলের কোনও ইঙ্গিতও মেলেনি।

২৫ আগস্ট হাসপাতালে শিক্ষিকাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে যান সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু। সাংবাদিকদের কাছে সুজন চক্রবর্তী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী অন্য রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখন আন্দোলনকারী শিক্ষকদের অন্য দল বলে দেগে দিচ্ছেন, ওনারা তো আগে শিক্ষক। আর শিক্ষামন্ত্রীর জানা উচিত গত ৪ ফেব্রুয়ারি কসবায় মুখ্যমন্ত্রীর মিটিঙে এই শিক্ষকরা গিয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী ডেকে নিয়ে কথা বলেছিলেন, ভোট হয়ে যাক তারপর আপনাদের সব দেখে দেবো। ১৪ ফেব্রুয়ারি রানি রাসমণি রোডে এই শিক্ষকদের সভায় বক্তব্য রেখেছিলেন আগের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি, তাহলে তিনি কি বিজেপি’র সভায় গিয়েছিলেন? ১৮ ফেব্রুয়ারি অমিত শাহের সভায় বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন এই শিক্ষিকারাই, দুই সরকারের নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন, এখন তাদের নির্দিষ্ট দলের নাম করে দেগে দিয়ে দায় এড়াতে চাইছে মন্ত্রী। আত্মঘাতী হওয়া পথ নয়, ঠিকই। কিন্তু কেন বাধ্য হলো সরকার তা দেখবে না?’

শিশু শিক্ষা কেন্দ্র ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রে কর্মরত শিক্ষিকাদের বদলির নজির নেই। কিন্তু স্রেফ প্রতিবাদকে স্তব্ধ করতে গত ১৯ তারিখে নজিরবিহীনভাবে একেকজনকে তাঁদের বাসস্থান থেকে ৭০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে বদলির নির্দেশ ধরানো হয়। এরাজ্যে একেকজন এসএসকে শিক্ষকের ভাতার পরিমাণ মাত্র দশ হাজার টাকা। এই টাকায় বাড়ি থেকে ৭০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে বদলি হলে কার্যত না খেতে পেয়ে মরতে হবে, বারেবারে সেই কথাই বলেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষিকারা।

নিজের সরকারের দায় এড়াতে বামফ্রন্ট সরকারের সময় এসএসকে, এমএসকে’র শিক্ষক-শিক্ষিকারা নামমাত্র সাম্মানিক পেতেন এবং কাজের ও আর্থিক নিরাপত্তা ছিল না বলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অভিযোগ করেছেন। তথ্যই বলছে শিক্ষামন্ত্রী নিজের দপ্তর সম্পর্কেই সেভাবে অবহিত নন, না জেনেই দলীয় সংস্কৃতি মেনে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অপমান করছেন। ২০০৯ সালে বামফ্রন্ট সরকারের সময় এসএসকে, এমএসকে সহ রাজ্যের সমস্ত ধরনের অস্থায়ী শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীদের ৬০ বছর পর্যন্ত কাজের নিরাপত্তা দিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বামফ্রন্টের এই রক্ষাকবচ বিজ্ঞপ্তির কারণে এখনও পর্যন্ত কাউকে ছাঁটাই করা যায়নি। ২০১০ সালে বিধানসভায় বামফ্রন্ট সরকার বিল এনেছিল, এসএসকে, এমএসকে’গুলিকে নিয়ে পৃথক একটি পর্ষদ গড়ার। তার জন্য বামফ্রন্ট সরকার রাজ্য বাজেটে আলাদা করে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দও করেছিল। কিন্তু সেসময় তৃণমূল বিধানসভার মধ্যে সেই বিল ছিঁড়ে ফেলে এবং তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী সই না করায় বিলটিকে কার্যকর করা যায়নি। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য কমিটির সভানেত্রী অঞ্জু কর ও সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ এক বিবৃতিতে রাজ্য সরকারের প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছেন।