৫৯ বর্ষ ৩ সংখ্যা / ২৭ আগস্ট, ২০২১ / ১০ ভাদ্র, ১৪২৮
বিহারে প্রশাসনিক অব্যবস্থায় নাজেহাল মানুষ
বন্যা মোকাবিলায় চূড়ান্ত ব্যর্থ এনডিএ সরকার
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বিধ্বংসী বন্যায় বিহারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের বন্যাকবলিত এলাকায় বড়ো মাত্রায় পরিকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন হাইওয়ের ধারে এবং উঁচু জমিগুলিতে। বন্যাক্লিষ্ট মানুষ নিরন্ন অবস্থায় তেষ্টার জলটুকুও পাচ্ছেন না। পাচ্ছেন না জরুরি প্রয়োজনের কোনো জিনিসও। তাদের জন্য বিহার সরকার খাবার জল সহ কোনো জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থাও করেনি। অসহায় মানুষ কোনোরকমে টিঁকে আছেন।
বিহারের বন্যা আক্রান্ত ১৬টি জেলার মধ্যে ভাগলপুরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। রাজধানী পাটনার সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। জলমগ্ন এই জেলার সড়ক ব্যবস্থা। রাজধানী পাটনা এবং ভাগলপুরের সংযোগকারী জাতীয় সড়কটিও জলে ডুবে রয়েছে। বন্যার মোকাবিলা করার জন্য যে তথাকথিত প্রশাসনিক প্রস্তুতির কথা শোনা গিয়েছিল তার কোনো অস্তিত্ব বন্যাক্রান্ত মানুষের চোখে পড়ছে না। জরুরি প্রয়োজন মেটাতে রাজ্য সরকারের তরফে মাত্র কয়েকটি কমিউনিটি কিচেন এবং অন্যান্য যে অল্পস্বল্প ব্যবস্থা করা হয়েছে তা একেবারেই যথেষ্ট নয়। বন্যার মোকাবিলায় নীতিশকুমারের সরকারের তরফে কার্যত কোনও সংগঠিত ব্যবস্থাই চোখে পড়ছে না।
নিরাপদ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে এবং অন্যত্রও পরিস্রুত জলের অভাব থাকায় জলবাহিত রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রে অবিলম্বে প্রশাসনের নজরদারির প্রয়োজন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী আকাশপথে বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলির অবস্থা সরেজমিনে দেখেছেন কিন্তু জেলা প্রশাসনগুলি ছন্নছাড়া অবস্থার দরুন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না।
বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে পার্টি। দ্বারভাঙ্গা, সমস্তিপুর, বেগুসরাই, ভাগলপু্র, নালন্দা এবং অন্যান্য জেলায় স্থানীয়স্তরের বন্যাক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রশাসনের কাছে দাবি দাওয়ার জন্য আওয়াজ তুলেছে সিপিআই(এম)।
এটা খুবই হতাশাজনক যে, বন্যাক্রান্ত মানুষের জন্য খাবার, আশ্রয় এবং অন্যান্য সাহায্য দেবার ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রচেষ্টা যখন দ্রুততার সঙ্গে করা উচিত সেখানে জেডি(ইউ) গোটা বিষয়টি ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রচারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রহসনের স্তরে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি নীতিশ কুমার দুই সন্তান নীতি, পেগাসাস স্পাইওয়্যার সংক্রান্ত নজরদারিকাণ্ডে এবং জাতভিত্তিক জনগণনার ইস্যুতে বিজেপি’র বিরুদ্ধে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন। নীতীশ কুমারের এই অবস্থান দুই দলের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে দুই শরিকের মধ্যেই।
সিএজি রিপোর্ট যা বিধানসভার দু’টি কক্ষেই পেশ করা হয়েছে সেখানে নির্দিষ্টভাবে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অব্যবস্থা ও ত্রুটির জন্য রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে। রিপোর্টে রাজ্যের এনডিএ সরকারের গাফিলতির জেরে ৩৬৫৮.১১ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে একথা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, বিভিন্ন ফান্ডের টাকা অপব্যয় করা হয়েছে এবং ব্যাপক হারে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ঘটেছে সমাজের মহাদলিত এবং প্রান্তিক অংশের মানুষের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প ব্যয়ের ক্ষেত্রে।
এমএনরেগা কার্যকর করার ক্ষেত্রে বিহারে ট্র্যাক রেকর্ড অত্যন্ত শোচনীয়। সিএজি তার রিপোর্টে এমএনরেগা কর্মীদের রেজিস্ট্রেশন-এর ক্ষেত্রে অবিলম্বে গতি বাড়াতে সুপারিশ করেছে।
বিহারে ভূমিহীন মানুষ এবং কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৮৮.৬১ লক্ষ। এই ব্যাপক সংখ্যক ভূমিহীন মানুষের মধ্যে ৬০.৮৮ লক্ষ মানুষকে সমীক্ষার আওতায় আনা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে মাত্র ৩.৩৪ শতাংশের জন্য জব কার্ড দেওয়া হয়েছে। তারপর সমীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিকভাবে অসুরক্ষিত অংশের মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কোনো স্কিম চালু করা হয়নি। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিহার সরকারের সার্বিক ব্যর্থতার পর ব্যাপক সংখ্যক মানুষ দলে দলে রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র কাজের সন্ধানে গেছেন।
মাত্র ১ শতাংশ শ্রমিক এমএনরেগা প্রকল্পের ১০০ দিনের কাজ পেয়েছেন। আর এই অবস্থার দরুন বন, কৃষিক্ষেত্র এবং পঞ্চায়েত রাজ ব্যবস্থায় উন্নয়ন ভীষণভাবে ব্যাহত হয়েছে।
নীতীশ কুমারের অত্যন্ত উচ্চাভিলাষপূর্ণ প্রকল্প মহাদলিত উন্নয়ন মিশন সম্পর্কে জানা যাচ্ছে, কিভাবে এই প্রকল্পের বরাদ্দকৃত অর্থ অন্যত্র সাইফন হয়ে যাচ্ছে। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে পাঠানো ভরতুকির ১.৪৯ কোটি টাকা কোন্ অ্যাকাউন্টে দেওয়া হলো তার কোনো হদিস নেই। কেউ জানিনা এই টাকার কী গতি হলো।
বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, কৃষি একটি ব্যবস্থাগত সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিহারে। অন্যান্য রাজ্যের কৃষকদের তুলনায় বিহারের কৃষকদের দুর্দশা অনেক বেশি। তারা বছর পিছু মাত্র ৪৫ হাজার ৩১৭ টাকা গড়ে আয় করেন। গোটা দেশের মধ্যে বিহারের কৃষকরাই দরিদ্রতম। অর্থাৎ, গড়ে এখানকার কৃষকরা মাসে ৩ হাজার ৫৫৮ টাকা আয় করেন, যেখানে জাতীয় ক্ষেত্রের হিসাব অনুযায়ী ৬ হাজার ৪২৬ টাকা মাসিক আয়ের মাপ। একদিকে যেমন আয় এতটাই কম তেমনি অন্যদিকে কৃষির উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে বেশ কয়েক গুণ, যেখানে এমএসপি বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের কোনো নিশ্চয়তা নেই তাদের জন্য।