E-mail: deshhitaishee@gmail.com  | 

Contact: +91 33 2264 8383

৬০ বর্ষ ২৪ সংখ্যা / ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ / ১২ মাঘ, ১৪২৯

সিআইটিইউ’র সপ্তদশ সর্বভারতীয় সম্মেলনের ডাক

বিজেপি-কে ক্ষমতা থেকে সরানোই দেশের শ্রমিক আন্দোলনের সামনে প্রধান কাজ

শংকর মুখার্জি ● বেঙ্গালুরু


সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশের একাংশ।

শ্রমজীবী মানুষের জীবনজীবিকা, অধিকারের ওপর বিজেপি সরকারের আক্রমণ নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকারের অর্থনৈতিক নীতির অভিমুখই হচ্ছে জনবিরোধী এবং করপোরেটমুখী। এটাই নয়া-উদারনীতির সারকথা। এরই আগ্রাসী প্রয়োগ চলছে আজ দেশে। দেশ এবং দেশের জনগণকে বাঁচাতে তাই এই সরকারের পরিবর্তন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেই লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক–সাংগঠনিক প্রস্তুতি এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে দেশের শ্রমজীবী মানুষকে। সিআইটিইউ’র ১৭তম সর্বভারতীয় সম্মেলনের এটাই আহ্বান। ১৮-২২ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সম্মেলন চলেছে বেঙ্গালুরুতে।

এই সময়ের দুটি আশু কাজ নির্ধারিত হয়েছে সম্মেলনে। প্রথম, আগামী ৫ এপ্রিল দিল্লিতে মজদুর-কিষান সংঘর্ষ র‌ালি। ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক মহাঅধিবেশনে সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষক সভা এবং সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন যৌথভাবে এই সমাবেশ ডেকেছে। সমাবেশের দাবিসনদে রয়েছে ১৪ দফা দাবি। এর আগেও ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মজদুর-কিষান সংঘর্ষ র‌ালি হয়েছিল এই দিল্লিতেই। দেশের সমস্ত সম্পদ উৎপাদন-নির্মাণে রয়েছে এই তিন শ্রেণিরই মূল অবদান। আর এঁরাই আজ সবচেয়ে বঞ্চিত–শোষিত, এঁরাই আক্রমণের শলা-মুখে। সমাবেশের মধ্যদিয়ে তাই জোর ধাক্কা দিতে হবে দিল্লির মসনদকে। সম্মেলন ঠিক করেছে তিন লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের সমাবেশ করতে হবে। বার্তা পৌঁছে দিতে হবে এক কোটি শ্রমজীবী মানুষের ঘরে। সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগে হওয়া রাজ্য সম্মেলনগুলিতে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে এই সমাবেশ নিয়ে, নেওয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। মজদুর-কিষান সংঘর্ষ র‌ালি নিয়ে সেই অংশ-অংশ পরিকল্পনাগুলিকেই এক ক্যানভাসে নিয়ে আসা হয়েছে সর্বভারতীয় সম্মেলনে।

দ্বিতীয় আশু কাজ আগামী ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির জাতীয় কনভেনশন। কয়েকটি সাধারণ দাবির ভিত্তিতে ২০০৯ সালে গড়ে উঠেছিল এই যৌথ মঞ্চ। এই মঞ্চের নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে চলেছে দেশজুড়ে আন্দোলন, সংগঠিত হয়েছে একাধিক সফল ধর্মঘট। সবটাই মসৃণভাবে চলেছে, তা একেবারেই নয়। ওঠা-নামা ছিল। যেমন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের শ্রমিক শাখা ভারতীয় মজদুর সংঘ এই মঞ্চে নেই। বলা যায়, তারা এই মঞ্চের বিরোধী অবস্থানেই রয়েছে। এই যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলায় এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে সিআইটিইউ। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সিআইটিইউ’র স্লোগান ছিলঃ ‘শ্রেণিসমঝোতার বিরুদ্ধে লড়াই এবং শ্রমিকশ্রেণির ঐক্য ও সংগ্রাম’। সেই মতাদর্শগত অবস্থান থেকে এক বিন্দুও বিচ্যুতি ঘটেনি সিআইটিইউ’র। ঐক্য ও সংগ্রামের মতাদর্শিক অবস্থানকে আরেকধাপ এগিয়ে দিতে সর্বাত্মক সফল করতে হবে ৩০ জানুয়ারি শ্রমিকদের জাতীয় কনভেনশনকে। এটা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত।

জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করা, বিভাজনের রাজনীতিকে মদত দেওয়া - আরএসএস-বিজেপি’র আরেকটা হাতিয়ার। সাম্প্রদায়িক ও বিভাজনের রাজনীতি শ্রমিকশ্রেণির ঐক্য ও সংগ্রামের সবচেয়ে বড়ো শত্রু। ১৯৭০ সালে সিআইটিইউ’র প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই গত ৫২ বছর ধরে এই লড়াই জারি রেখেছে সিআইটিইউ। নয়া-উদারনীতির সাথে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকেও যেকোনো মূল্যে পরাস্ত করার ডাক দেওয়া হয়েছে সম্মেলনে। ৩০ জানুয়ারি গান্ধীজির আত্মবলিদান দিবস। ওই দিন কনভেনশনে সংবিধান রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাস্ত করারও শপথ নেবে দেশের শ্রমিকশ্রেণি। সম্মেলনে সাতদফা সাংগঠনিক এবং তেরো দফা প্রচার ও আন্দোলনের কাজ নির্ধারিত হয়েছে।



পুঁজিবাদী ব্যবস্থা গভীর ব্যবস্থাগত সংকটে। শোষণ এবং জাতীয় ও প্রাকৃতিক সম্পদের বেপরোয়া লুঠ ছাড়া তার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। নয়া-উদারবাদ সারা বিশ্বেই ব্যর্থ হয়েছে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধ বাড়ছে। এমনকী আইএমএফ-ও মেনে নিয়েছে, ১৯৭০ সালে পুঁজিবাদের সংকটকে মোকাবিলায় যে নয়া-উদারবাদকে নিয়ে আসা হয়েছিল, তা এখন অন্তিম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

নয়া-উদারনীতির অন্যতম মূল লক্ষ্য হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ, বেসরকারিকরণ। গত তিন দশক ধরে এর বিরুদ্ধে এক গৌরবজনক লড়াই চালিয়েছে দেশের শ্রমিকশ্রেণি। পুরোভাগে থেকেছে সিআইটিইউ এবং বামপন্থী দলগুলি। এই আন্দোলনে একটা নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যা চিহ্নিত হয়েছে সম্মেলনে। যখন শিল্পভিত্তিতে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন, তখন শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ব্যাপক এবং সর্বাত্মক। যখন কয়েকটা সাধারণ দাবির ভিত্তিতে দেশজোড়া ধর্মঘট ডাকা হয় তখন সেই উৎসাহ, অংশগ্রহণে ভাটা পড়ে। এটা একেবারেই ইতিবাচক নয়। সর্বব্যাপী দেশজোড়া আন্দোলন-ধর্মঘটই একমাত্র পারে নয়া-উদারনীতির স্টিমরোলারকে রুখতে। এক্ষেত্রে সিআইটিইউ’র বিগত সম্মেলনগুলিতে যে আহ্বান ছিল তা খুবই প্রণিধানযোগ্যঃ ‘‘আমরা যে ইস্যুগুলি নিয়ে আন্দোলন করি সরকারের নীতির সাথে তাকে যুক্ত করতে হবে। উন্মোচিত করে দিতে হবে সেই রাজনীতিকে যা এই নীতির পিছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।’’ সম্মেলনের অভিমতঃ এই কাজে দুর্বলতা রয়েছে বলেই ধর্মঘটে কিছু কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ দুর্বল হয়েছে। এই কাজ যদি তৃণমূলস্তরে শ্রমিকদের মধ্যে না করতে পারি, তাহলে শিল্পভিত্তিক আন্দোলনের সফলতা সব বেকার হয়ে যাবে।

সমস্ত বেসরকারি ক্ষেত্রে ঠিকাশ্রমিক/চুক্তিশ্রমিক দিয়ে উৎপাদন এবং অন্যান্য কাজ চলছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতেও একই ছবি। অনেক জায়গায় স্থায়ীশ্রমিকের থেকে এই ধরনের অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। সম্মেলনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেখানে তাঁদের সংগঠিত করা গেছে, সিআইটিইউ’র ডাকা আন্দোলন-সংগ্রামে তাঁরা ভালো সংখ্যায় অংশ নিয়েছেন। কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে চুক্তিশ্রমিকদের সংগঠনের বিকাশ হয়েছে। কিন্তু, তা সমগ্রর থেকে অনেক দূরে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে শুধু চুক্তিশ্রমিকই বাড়ছে না, বিরাট সংখ্যায় নিয়োগ হচ্ছে অ্যাপরেনটিক্স, ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়ি প্রভৃতি। এঁরা সবাই অস্থায়ী। এঁদের সংগঠিত করার কাজে অবহেলা আত্মহত্যার শামিল। কেননা এঁরা না আন্দোলনে এলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাঁচানোর লড়াই শক্তিশালী হবে না। ভারতীয় রেলে বর্তমানে চুক্তিশ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭ লক্ষ। এঁদের মধ্যে সিআইটিইউ’র উপস্থিতি খুবই যৎসামান্য। শ্রমিক আন্দোলনের এই বিরাট শক্তিকে কখনই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ফেলে রাখা যায় না।



সিআইটিইউ’র ৬২.৫ লক্ষ সদস্যের সিংহভাগই অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত। নয়া-উদারনীতির যুগে এই ক্ষেত্র দ্রুত বর্ধনশীল। সরকারের নীতি, অবহেলার কারণে এঁদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাট। বহুক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, এই ক্ষোভ সরকার, সরকারের নীতির বিরুদ্ধে না গিয়ে, ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এটা যথেষ্ট মনোযোগের বিষয়। না হলে শাসকশ্রেণি এই ক্ষোভকে ব্যবহার করবে শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে।

আবার নির্মাণ, বিড়ির মতো অনেকগুলি অসংগঠিত ক্ষেত্রে সরকারি কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু আছে। সম্মেলন মনে করে, সেখানে ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান কাজ হবে এটা দেখা যে, শ্রমিকদের কাছে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে কী-না। এই কাজ সদস্য বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে।

বর্তমান সময়ে অসংগঠিত ক্ষেত্রের নতুন সদস্য হচ্ছেন গিগ শ্রমিকরা। অর্থাৎ অ্যাপ বেসড শ্রমিক। ‘নিতি আয়োগে’র অনুমান শীঘ্রই দেশে এই শ্রমিকসংখ্যা ২ কোটি ছুঁয়ে যাবে। এঁরা ভয়ংকর শোষণের শিকার। গিগ অর্থনীতি শ্রমিকের সমস্ত সংজ্ঞাকে বদলে দিচ্ছে। এই গিগ শ্রমিকদের সংগঠিত করার বিষয়টিকে সিআইটিইউ-কে আগামীদিনে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গিগ অর্থনীতি যেমন পুঁজিবাদের শোষণের নয়া-মৃগয়া ক্ষেত্র, তেমনি সংগঠিত করা সম্ভব হলে এঁরাই বড়ো শক্তি হতে পারে শ্রমিক আন্দোলনের।



ভারত সরকারের বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্পে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষ। এর মধ্যে আইসিডিএস, আশা, মিড-ডে মিল প্রকল্পে শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৬০ লক্ষ। এঁদের বেশিরভাগই মহিলা। এই তিনটি প্রকল্পে সিআইটিইউ’র ইউনিয়ন আছে। শক্তিশালী ইউনিয়ন তবে মোট শ্রমিকের তুলনায় এখানে সিআইটিইউ’র সদস্য সংখ্যা অনেক অনেক কম। প্রকল্প শ্রমিকদের পেশাগত দাবি নিয়ে আন্দোলনে অনেক রাজ্যেই সিআইটিইউ’র ইউনিয়নের সফল কাহিনি রয়েছে। তাই বিরাট সুযোগ রয়েছে। প্রকল্প শ্রমিকদের মধ্যে সংগঠন প্রসারে বিশেষকরে এমজিএনরেগা’র শ্রমিকদের ইউনিয়নের মধ্যে নিয়ে আসার বিষয়টি। কয়েকটা রাজ্যে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

প্রকল্প শ্রমিক এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের ট্রেড হিসেবে সংগঠিত করার কাজে প্রচুর প্রশিক্ষিত ক্যাডার চাই। প্রশিক্ষিত ক্যাডারের অর্থ যাঁদের রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত বোঝাপড়া পরিষ্কার। প্রশিক্ষিত ক্যাডার তৈরির বিষয়টিও সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে।

ট্রেড ইউনিয়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হলো শ্রমজীবী মহিলা। কর্মস্থলে, তা সংগঠিত কিংবা অসংগঠিত যে ক্ষেত্রই হোক - সবচেয়ে বেশি শোষণ-লাঞ্ছনার শিকার হন মহিলা শ্রমিকরা। তাই শিল্পভিত্তিক আন্দোলনে তাঁদের ইস্যুগুলিকে যেমন, সমকাজে সমবেতন, যৌনপীড়ন প্রভৃতি সামনে নিয়ে আসতে হবে। একইভাবে ইউনিয়নের অভ্যন্তরে মহিলাদের নেতৃত্বের পদে অবশ্যই তুলে আনতে হবে। বিগত সময়ে কিছুটা অগ্রগতি অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ নয়।

পরিযায়ী শ্রমিকদের সংগঠিত করার বিষয়টি গত সিআইটিইউ সর্বভারতীয় সম্মেলনে আলোচনা হয়েছিল। করোনা অতিমারী বিষয়টিকে একেবারে শ্রমিক আন্দোলনের সামনে এনে দিয়েছে। গত সম্মেলনে আলোচনা অনুযায়ী কেরালা, তেলেঙ্গানা, কর্নাটকে এই কাজ কিছুটা এগিয়েছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের সংগঠিত করতে গেলে দক্ষতা সম্পন্ন ক্যাডার দরকার, বিশেষকরে সংগঠকদের ভাষাগত সমস্যাকে তাঁদের অতিক্রম করতে হবে।

বর্তমান সময়ে, শ্রমিক আন্দোলনে আরেকটি চ্যালেঞ্জিং জায়গা হচ্ছে দে‍শের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা নতুন আধুনিক শিল্পগুলি। এখানে শ্রমআইন একেবারেই মানা হয় না। সরকারই শ্রমআইন না মানতে উৎসাহ দেয়। কিছু কিছু শিল্পে সিআইটিইউ’র ইউনিয়ন গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে ইউনিয়ন সফলও হয়েছে। তবে দেশের বিস্তীর্ণ জায়গায় এখনো পৌঁছনোই যায়নি। ন্যূনতম মজুরি, শ্রমিকরা, সুরক্ষা প্রভৃতি ইস্যু নিয়ে এখানে আন্দোলন গড়ে তোলার বিরাট সুযোগ রয়েছে। সিআইটিইউ’র এবারের সম্মেলনে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পৃথক কমিশন করে প্রতিনিধিরা আলোচনা করেছেন।

সিআইটিইউ’র সপ্তদশ সর্বভারতীয় সম্মেলন

নতুন কমিটি

সিআইটিইউ’র সপ্তদশ সর্বভারতীয় সম্মেলন থেকে ৩৯ জনের সম্পাদকমণ্ডলী সর্বসম্মতিতে নির্বাচিত হয়েছে। কে হেমলতা সভাপতি, তপন সেন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন এম সাঁইবাবু। সম্পাদকমণ্ডলীতে ১৩ জন সহ-সভাপতি এবং ২৩ জন সম্পাদক রয়েছেন। এছাড়াও বাসুদেব আচারিয়া এবং জে এস মজুমদার স্থায়ী সদস্য হিসেবে সম্পাদকমণ্ডলীতে আছেন। সম্মেলন থেকে ৪২৫ জনের জেনারেল কাউন্সিল এবং ১২৫ জনের ওয়ার্কিং কাউন্সিল গঠিত হয়েছে।

সম্মেলনে উপস্থিত ১৪৭৬ প্রতিনিধি

সিআইটিইউ’র সপ্তদশ সর্বভারতীয় সম্মেলনে দেশের ২৫টা রাজ্য থেকে ১৪৭৬ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি পরিচিতিপত্র জমা দিয়েছেন ১৪৩২ জন। এর মধ্যে মহিলা ৩২৬ (২৩ শতাংশ)। সাতজন প্রতিনিধি সিআইটিইউ’র ১৭টি সম্মেলনেই উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন ১৩ জন ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিনিধিও। প্রতিনিধিদের মধ্যে তিন জন ছিলেন, যাঁদের বয়স ৮৫ বছর। এঁরা হলেন কেরালার এ. আনন্দন, কে. পি. সাহাদেবন এবং কর্ণাটকের ভি. জে. কে. নায়ার। সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা প্রতিনিধি ছিলেন তামিলনাডুর এস. মোহানা (৭৫ বছর)। সর্বকনিষ্ঠ জয়প্রকাশ শর্মা (২৬ বছর) এবং মহারাষ্ট্রের কাশীনাথ পাদালয়ার (মহিলা, ২৯ বছর)। সবচেয়ে বেশি জেলজীবন কর্নাটকের আর শ্রীনিবাসের, ৫ বছর। আত্মগোপনে থাকার অভিজ্ঞতা সবচেয়ে বেশি পশ্চিমবঙ্গের রমাপদ দাস, ৭ বছর ২ মাস। সম্মেলনে ১৮টা রাজ্যের ৪৫,৯৮০ সদস্যের নতুন ১৪৮টি ইউনিয়নের সিআইটিইউ’র অনুমোদনের আবেদন জমা পড়ে।

প্রতিনিধিদের মধ্যে ৭১৯ জন সর্বক্ষণের কর্মী, ১৪৪ জন অবসরপ্রাপ্ত, ২৫৫ জন স্থায়ী চাকরি করেন, ২৩১ জন অস্থায়ী চাকরি করেন। শ্রেণি উৎসের বিচারে ৭৮৭ জন শ্রমিকশ্রেণি থেকে এসেছেন। কর্মরতদের মধ্যে ১২০ জন ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে, ২১০ জন পরিষেবা ক্ষেত্রে এবং ১৪১ জন প্রকল্প শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সম্মেলনে তিন জন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী ছিলেন, ২ জন কেরালার এবং একজন ঝাড়খণ্ডের।