৬০ বর্ষ ২৪ সংখ্যা / ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩ / ১২ মাঘ, ১৪২৯
ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
জ্যোতির্ভূষণ দত্ত
নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, বর্তমান সময়কালে ফ্যাসিবাদ নানা ধরনের ‘দক্ষিণপন্থী আদর্শ’-এর মোড়কে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আত্মপ্রকাশ করছে এবং করপোরেট পুঁজির সাথে এই ফ্যাসিবাদের একটা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠছে। ডঃ প্রভাত পট্টনায়েক যথার্থই বলেছেন যে, নয়া-ফ্যাসিবাদ এখন একটি ‘গণতান্ত্রিক বর্ম’-র আড়ালে অনেকটা ছদ্মবেশে কাজ করছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রশক্তি শক্তিশালী সহায়কের ভূমিকা পালন করছে। করপোরেট শক্তি এবং ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সংস্থাগুলিও পৃষ্ঠপোষক হিসাবে সক্রিয়। সরকারের ‘ডোল অর্থনীতি’ বা জনমোহিনী প্রকল্পের ব্যবস্থা উক্ত ‘ছদ্মবেশী গণতান্ত্রিক’ মানবিক মুখের আড়াল সৃষ্টিতে এবং করপোরেট পুঁজি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম এই ব্যবস্থার অনুকূলে প্রচারের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, এক্ষেত্রে ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’-এর একটি বড়ো অংশের ভূমিকাকে উপেক্ষা করা যাবে না। এই ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’-রা কার্ল মার্কস বর্ণিত ‘লুম্পেন প্রলেতারিয়েত’ নাও হতে পারে। এরা বিপুল অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে কোনো উৎপাদনশীল কাজ নয়, এরা অন্য পথ গ্রহণ করে, যেমন গোরু পাচার, কয়লা পাচার, মাদকের ব্যবসা, চাকরি বিক্রয়, ব্যাঙ্ক জালিয়াতি ইত্যাদি। এরা ধনবান ও ‘শিক্ষিত’ও হতে পারে কিন্তু এরা নীতি নৈতিকতা বর্জিত এবং সমাজমনস্কতাহীন একধরনের লোভী, স্বার্থপর ও বিবেকহীন মানুষ।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বর্তমান সময়ে সাধারণ মানুষের আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপন্নতা অভূতপূর্বভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বিপন্নতা তো মানুষকে বামপন্থার দিকেই নিয়ে যাবার কথা, দক্ষিণপন্থার দিকে নয়। কিন্তু এর উলটোটাই ঘটছে। কিন্তু কেন? এই কেন-র উত্তর সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে না পারলে একে প্রতিহত এবং প্রতিরোধ করাও সম্ভব হবে না।
এ সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারেঃ
প্রথমত, বামপন্থীরা যে সব নীতি এবং কার্যক্রমের পক্ষে সওয়াল করেন এবং সেগুলি রূপায়িত করার স্বার্থে আন্দোলন করে থাকেন, বর্তমানে বহু ক্ষেত্রে দক্ষিণপন্থীরা সেইসব নীতি বাস্তবায়নের ব্যাপক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেগুলি রূপায়িতও করছে। দক্ষিণপন্থী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির সেবামূলক কাজগুলির কথাও এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। এই ধরনের কাজের ব্যাপক প্রচারের ফলে সাধারণ মানুষজন বিভ্রান্তও হচ্ছে। বলাইবাহুল্য, বামপন্থীরা এগুলিকে মানুষের অধিকার হিসাবে গণ্য করে। যদিও এক্ষেত্রে তাদের সাধ্য অপ্রতুল। কিন্তু দক্ষিণপন্থীদের এক্ষেত্রে সরকারের এবং করপোরেট শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় সক্ষমতা অনেক বেশি, যদিও তারা এই কাজগুলিকে ‘নেতা’-র দয়া ও অনুগ্রহ হিসাবে প্রচারের মাধ্যমে নেতাদের মহাশক্তিধর হিসাবে তুলে ধরছে।
দ্বিতীয়ত, দুনিয়া জুড়েই বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনগুলির শক্তি তীব্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ডেলিভারি বয় ও ক্যাব ড্রাইভারের মতো ‘গিগ’ শ্রমিক এবং অনলাইনে কাজ করা ‘প্ল্যাটফর্ম’ শ্রমিকদের মতো অসংগঠিত শ্রমিকদের ব্যাপক সংখ্যা বৃদ্ধি বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের এই শক্তি হ্রাসের একটি বড়ো কারণ হিসাবে গণ্য করা যায়। সেই সঙ্গে আইটি সেক্টরের এবং অন্যান্য করপোরেট সেক্টরের ‘বেশি বেতন’-এর শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র শোষণ থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের Sense of exploitation-র ঘাটতিও শ্রমিক সংগঠনগুলির শক্তি হ্রাসের একটি বড়ো কারণ।
আরও একটি বিষয়ও দক্ষিণপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির কারণ। দক্ষিণপন্থীরা নানাভাবে প্রচার করছে যে, প্রগতিশীল ও উদারবাদীরা, সেই অর্থে বামপন্থীরা, সংখ্যালঘু এবং শরণার্থীদের বা অভিবাসীদের স্বার্থ সম্পর্কে অবাঞ্ছিতভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং তাদের তোষণ করে। করপোরেট পরিচালিত বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যমের প্রচারের ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের একটা বড়ো অংশ বামপন্থীদের বিরুদ্ধে এই প্রচারকে বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে গ্রহণ করছে। তাছাড়া দক্ষিণপন্থীরা বহু পুরনো ইতিহাস ও পৌরাণিক তথ্য ঘেঁটে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে বিদ্বেষের বাতাবরণ সৃষ্টিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে এবং বিকৃত ইতিহাস সৃষ্টির মাধ্যমে জনমানসে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
দক্ষিণপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধি এবং বামপন্থীদের জনভিত্তি হ্রাসের কারণ হিসাবে আরও কয়েকটি বিষয়কেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা প্রয়োজনঃ
প্রথমত, জনজাতি রাজনীতি এবং হিন্দিভাষার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াসকে বামপন্থীরা এতাবৎকাল যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেনি বলে একটা প্রচার বিদ্যমান।
দ্বিতীয়ত, বামপন্থী দলগুলির মধ্যে উদারপন্থী এবং মানবতাবাদী মতবাদ প্রয়োগের ক্ষেত্রে যে মতপার্থক্য সেটিও সামগ্রিকভাবে দক্ষিণপন্থীদের শক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি অনুকূল বাতাবরণ সৃষ্টিতে অনুঘটকের কাজ করে চলেছে।
তৃতীয়ত, বামপন্থীদের ধর্ম সম্পর্কে উদাসীনতা, দক্ষিণপন্থীদের ধর্মান্ধতা ও বিবেকানন্দ প্রমুখ ব্যক্তিদের তুলে ধরে দক্ষিণপন্থা প্রচারে যথেষ্ট সাহায্য করেছে, এই বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না।
চতুর্থত, সরকারে বামেদের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেও ভয়ে অথবা প্রলোভনে মানুষজনের একটি বড়ো অংশ বামপন্থী পরিচালিত গণসংগঠনগুলির প্রতিও বিমুখ হয়েছে।
বর্তমানে সারা দেশে অর্থনীতি ও রাজনীতির ভাগ্য সম্পূর্ণভাবে করপোরেট অর্থনীতির খপ্পরে। নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের শাসনকালে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নীতিবোধ ও আদর্শবোধ পুরোপুরি জলাঞ্জলি দেওয়া হয়েছে। অস্বচ্ছ পথে সংগৃহীত হিসাব বহির্ভূত অঢেল অর্থশক্তির পদতলে আজ ভারতের রাজনীতি।
ভারতে করপোরেট পুঁজির প্রভাব অতীতেও ছিল কিন্তু আজকের মতো তার এতটা নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ছিল না। বর্তমানে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত বিজেপি সরকার অকাতরে সমস্ত দিক থেকে পুরোপুরি করপোরেটের সেবায় আত্মনিয়োগ করে চলেছে এবং তার বিনিময়ে করপোরেট শক্তি দু’হাতে টাকা ঢালছে শাসকদলের স্বার্থে। ভারতের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ও নিয়মতান্ত্রিক জনকল্যাণমুখী শাসন ব্যবস্থাকে গ্রাস করে ফেলেছে করপোরেট ও শাসকশ্রেণির অশুভ আঁতাত।
করপোরেট অর্থ সংগ্রহের জন্য সরকারি কাঠামোর মধ্যে পিএম কেয়ার নামে তথাকথিত বেসরকারি তহবিল গঠিত হয়েছে। মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তার পরিচালক। এখানে কারা টাকা ঢালছে এবং সেই টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে তার কোনো হিসাব সাধারণ মানুষ জানতে পারছে না। অনুরূপ আর একটা অত্যন্ত সন্দেহজনক ব্যবস্থা ‘ইলেকশন বন্ড’। নির্বাচনে এবং অন্যান্য দলীয় রাজনীতির কাজে বিজেপি এইসব টাকা অকাতরে খরচ করছে।
বর্তমান বিজেপি সরকার করপোরেটদের এই বার্তা দিয়ে রেখেছে যে, এই সরকার থাকলে তাদের কোনো প্রত্যাশা অপূর্ণ থাকবে না। করপোরেট কর হ্রাস, বেইল আউট ও বেইল ইন প্রক্রিয়ায় করপোরেটদের সমস্তরকম আর্থিক সুবিধা প্রদান করা, তাদের ইচ্ছা অনুসারে শ্রমআইন পরিবর্তন, জলের দামে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি ও জাতীয় সম্পদ করপোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া, জনস্বার্থের বদলে করপোরেটদের সরকারি সাহায্য প্রদানে অগ্রাধিকার দেওয়া, এসবই বিজেপি সরকার নিষ্ঠার সাথে পালন করে চলেছে। বিনিময়ে বিজেপি সরকার টিকিয়ে রাখতে এবং কার্যত বিরোধীমুক্ত বিজেপি’র ভারত গড়তে যত টাকা দরকার সবটাই সরবরাহ করতে করপোরেট শক্তি সর্বতোভাবে সক্রিয়। ভারতের রাজনীতিকে সম্পূর্ণভাবে করপোরেট পুঁজির কাছে বন্ধক রেখেছে বিজেপি। এরই সাথে চলছে আমেরিকার নেতৃত্বে পরিচালিত সাম্রাজ্যবাদীদের জুনিয়র পার্টনার হিসাবে মোদি সরকারের দেশবিরোধী বহুমুখী কার্যকলাপ।
এইসব কর্মকাণ্ডের ফলশ্রুতিতে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ যখন সমস্যায় আকণ্ঠ নিমজ্জিত তখন করপোরেট মালিকের সম্পদ বৃদ্ধি পায় প্রায় উল্কার গতিতে। করোনা অতিমারীর সময়কালে ভারতে কোটিপতি ও শত কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে বিশ্বের যে কোনো দেশের থেকে বেশি।
কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যেমন করপোরেটদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে তেমনি রাজ্যে তৃণমূল সরকার আত্মবিক্রয় করেছে দুর্নীতিপরায়ণ দাঙ্গাবাজদের কাছে এবং নয়া লুম্পেন প্রলেতারিয়েতদের কাছে, তাই তো আমাদের মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে, ‘কেষ্টাকে বীরের সম্মানে ফিরিয়ে আনতে হবে’।
জাতপাতের তাণ্ডব চালিয়ে ও ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়িয়ে বিজেপি এবং আরএসএস দেশের জনসাধারণের মৌলিক সমস্যা ও সংকটকে আড়াল করার চক্রান্তসহ বিভাজনের রাজনীতি চালাচ্ছে। অনুরূপভাবে খেলা, মেলা ও ধর্মীয় কাজকর্ম এবং ডোল-অর্থনীতিতে সম্বল করে তৃণমূল সরকার মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলি থেকে সাধারণ মানুষজনের দৃষ্টি আড়াল করে ব্যাপকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির বাতাবরণ সৃষ্টি করে চলেছে।
এ প্রসঙ্গে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, বর্তমানের সংগ্রাম নিছক গণতন্ত্রের সাথে স্বৈরতন্ত্রের সংগ্রাম নয়। এই সংগ্রাম একচেটিয়া পুঁজি ও নয়া বিশ্বায়নে সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনসাধারণের মঙ্গল এবং আদর্শবাদের সাথে আদর্শহীনতার সংগ্রাম। মানবতার সাথে অমানবিক কর্মকাণ্ডের এক ঐতিহাসিক লড়াই। এই সংগ্রামের ক্ষেত্রে সব থেকে বড়ো বিপদ দ্রুত শক্তিসঞ্চয়কারী দক্ষিণপন্থা, যাকে সর্বতোভাবে মদত দিচ্ছে একচেটিয়া পুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ। মনে রাখতে হবে দক্ষিণপন্থার স্বাভাবিক মিত্র নৈরাজ্যবাদী রাজনীতি ও অপসংস্কৃতি। এই কারণে সমগ্র ভারতভূমিতে ঘৃণার রাজনীতি এবং মৌলবাদী সংস্কৃতি একটা জাতীয় চরিত্র পরিগ্রহ করছে। বিভিন্ন মিথ ও পৌরাণিক কাহিনি ভারতে হিন্দুত্ববাদের নির্মাণে মুখ্য উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুরাণ আর ইতিহাসের পার্থক্য রেখা মুছে দেবার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা চলছে। যাবতীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং ভাষাগত পরিচিতি সত্তার বৈচিত্র্য সুকৌশলে মুছে দিয়ে একই প্রকৃতি, একই চরিত্রের ছাঁচে গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। কারণ এই ব্যবস্থা নয়া উদারবাদী করপোরেট শক্তির পক্ষে অনুকূল। তাই কবি, শিল্পী, লেখক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের ভিন্ন স্বরকে রুদ্ধ করতে জামিন অযোগ্য দেশদ্রোহীমূলক আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। বিনা বিচারে তাঁদের বন্দি করে রাখা হয়। বর্তমানে এই পথে ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের ছায়া প্রলম্বিত হচ্ছে।
বারাণসীর শংকরাচার্য পরিষদ নাকি তৈরি করে ফেলেছে হিন্দুরাষ্ট্রের নতুন সংবিধান। সেই অখণ্ড ভারত রাষ্ট্রে বর্ণাশ্রম প্রথা থাকবে এবং ভোটাধিকার থাকবে শুধু হিন্দুদের। বিজেপি-র নেতা-নেত্রীরা এই সংবিধানের নিন্দা বা প্রতিবাদ করছেন না। তাঁদের দলের প্রধানমন্ত্রী ভারতের বর্তমান সংবিধানসম্মত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেবল অযোধ্যার রামমন্দির স্থাপনে উদ্যোগী হন না, বা কাশীতে সগৌরবে পুজো দিতে বসেন না, তিনি নতুন সংসদ ভবনে জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভ স্থাপনের সময় হিন্দুমতে পূজা দেন। কী বিচিত্র এই দেশ! এখানে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান থাকা সত্ত্বেও ইউজিসি-র তরফ থেকে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলিকে মকরসংক্রান্তি অনুষ্ঠান পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে যে, বিজেপি সম্পূর্ণভাবে আরএসএস নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক দল। উক্ত দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ হিসাবে যে হিন্দুত্ববাদের পরিচয়, সেটা আরএসএস-এর সরবরাহ। আরএসএস-এর আদর্শ ও লক্ষ্যপূরণের প্রায়োগিক শক্তি ও কর্তৃপক্ষ হচ্ছে বিজেপি। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি তাদের উপজীব্য হলেও বা তারা উদার গণতন্ত্রের বিরোধী হলেও অর্থনীতির প্রশ্নে কিন্তু ঘোরতর পুঁজিবাদী তথা ধনতান্ত্রিক। অর্থনীতির প্রশ্নে তারা সমতার বিরোধী। আরএসএস-এর এই অর্থনৈতিক দর্শন বৃহৎ একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থবাহী। যে অর্থব্যবস্থায় অসাম্য বৃদ্ধি পায়, বৃহৎ করপোরেটের সম্পদ ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠান নির্মূল হয়, তারই পৃষ্ঠপোষক আরএসএস। রাজনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যেমন তারা স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থা প্রমোট করে, সেই সঙ্গে গণতন্ত্রের পরিসরকে সংকুচিত করে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। নাগরিকদের তারা অনুগত ভক্তে পরিণত করতে চায়। চিন্তাশীলদের তাই পছন্দ করেন না বিজেপি-র মোদি সরকার এবং আরএসএস-এর মোহন ভাগবত।
[আগামী সংখ্যায় সমাপ্য]