৫৯ বর্ষ ৪১ সংখ্যা / ২৭ মে, ২০২২ / ১২ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৯
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে মিছিল সমাবেশ
হাওড়ায় জনসভামুখী প্রতিবাদ মিছিল।
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতি ও পদক্ষেপের পরিণতিতে আজ বিপর্যস্ত গরিব সাধারণ মানুষ। একদিকে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, অন্যদিকে তীব্র বেকারি-কর্মহীনতার ফলে নাভিশ্বাস উঠছে আমজনতার। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি-কেলেঙ্কারি,অপশাসনের পাশাপাশি মানুষের জীবন-যন্ত্রণার সুযোগে আরএসএস-বিজেপি'র মতো সাম্প্রদায়িক শক্তি বিভাজনের চক্রান্তে মত্ত। এমন একটি পরিস্থিতিতে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের আন্দোলন সংগঠিত করছে সিপিআই(এম) সহ বামপন্থী দলগুলি। একই সঙ্গে বামপন্থী বিভিন্ন গণসংগঠনের উদ্যোগেও নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এই সমস্ত কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে মিছিল, সমাবেশ, বিক্ষোভ ইত্যাদিতে জেলায় জেলায় অগণিত মানুষ অংশ নিয়ে তাঁদের দাবি উত্থাপন করছেন । ফলে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদী আন্দোলনের এক জোরালো আবহ তৈরি হয়েছে।
মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, দুর্নীতি রোধের দাবিতে ডেবরায় লাল ঝান্ডার সুবিশাল মিছিল।
সম্প্রতি হাওড়ায় সিপিআই(এম) জেলা কমিটির ডাকে ধুলাগোড়ি ও বাগনানের বাইনানে দুটি বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ মে ধুলাগোড়ির সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম,এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। এর আগে ২২ মে বাইনানের সভায় মহম্মদ সেলিম,শ্রীদীপ ভট্টাচার্য ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য মীনাক্ষী মুখার্জি, পরেশ পাল,জেলা পার্টির নেতা সাবির উদ্দিন মোল্লা। দুটি সভাতেই সভাপতিত্ব করেছেন পার্টির জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ। এই দুটি সভাতেই আমতার শহিদ ছাত্র নেতা আনিস খানের হত্যার উপযুক্ত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
হাওড়ায় বাইনানে আনিস খানের হত্যাকারীদের শাস্তি, মূল্যবৃদ্ধি রোধ সহ অন্যান্য দাবিতে সমাবেশে বক্তা মহম্মদ সেলিম।
হাওড়ার দুই সভায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ধর্মের নামে আবেগ তৈরি করে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করছে আমাদের দেশের ও রাজ্যের সরকার। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার লুঠপাট চালাচ্ছে সারা দেশে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জন্য প্রতিদিন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। রাজ্য সরকারও জিনিসের দাম কমানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা ২৫ থেকে ৩১ মে দেশজুড়ে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করায় কেন্দ্রের সরকার যে বর্ধিত শুল্ক কমিয়েছে তাতেও পেট্রোলের দাম একশো টাকার উপরে। কেন্দ্রের মতো রাজ্য সরকারও মিথ্যাচার করে দাম কমানোর কথা বলছে। রাজ্যজুড়ে তোলাবাজির পাশাপাশি চাকরি প্রার্থীদের চাকরিও চুরি করে নিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, চিটফান্ডের টাকা থেকে চাকরি নিলামের টাকা,গ্রামোন্নয়নের টাকা লুট করে যারা মুখ্যমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় বেঁচে যাবে ভাবছে তাদের বিচার করতে হবে। আদালতে না হলে জনগণের আদালতে বিচার করতে হবে। তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করতে আরও বেশি মানুষকে শামিল করার আহ্বান জানান।
ধূলাগোড়িতে সমাবেশে বলছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য।
শ্রীদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, আমাদের দেশের ইতিহাসকে বিকৃত করছে আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার। সাম্প্রদায়িক বিভাজনের জন্য নতুন করে ইতিহাস রচনা করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির জন্যই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কর্পোরেটদের স্বার্থে কাজ করে চলেছে কেন্দ্রের সরকার। দেশের সংবিধান আক্রান্ত। তিনি বলেন,আমাদের রাজ্যে গণতন্ত্র বিপন্ন। রাজ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দিচ্ছে না শাসকদল। মহিলাদের নিরাপত্তা নেই রাজ্যে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে বুথে বুথে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আন্দোলনকে তীব্র করার ডাক দেন তিনি।
মূল্যবৃদ্ধির প্রতীকী প্রতিবাদ।
বাইনানের সভায় মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন,রাজ্য সরকারের অনৈতিক কাজের প্রতিবাদে চোখে চোখ রেখে লড়াই করছে ছাত্র-যুবরা। এ লড়াই দমন করতে আনিস খানের মতো বহু কর্মীকে খুন করেছে শাসকদল। রাজ্যের ছাত্র-যুবরা দুর্নীতির মৌচাকে ঢিল মেরেছে। দুর্নীতিতে যুক্ত কেউ পার পাবে না। তিনি বলেন,আমাদের আরও শক্তি অর্জন করে লাগাতার লড়াই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আনিস খানের খুনিদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
এদিন বাইনানের সভায় শহিদ আনিস খানের বাড়ির সামনে সীমানাগোড়া থেকে একটি বিশাল মিছিল আসে কড়িয়া গ্যারেজ মোড়ের সমাবেশে। এই মিছিলে অংশ নেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য সহ আনিস খানের বাবা সালেম খান ও দাদা সাবির খান। আরেকটি মিছিল বাইনান ষষ্ঠীতলা থেকে শুরু হয়ে সমাবেশস্থলে আসে। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে সভাস্থল ছাপিয়ে যায়।
২৩ মে পাট্টা সহ জমির পাট্টার দাবিতে কৃষক সভার ডাকে ডেবরার বিএলআরও দপ্তরে বিশাল মিছিল করে এসে বিক্ষোভ দেখান বর্গাদার, ভাগচাষি সহ গরিব আদিবাসী, তফশিলি জনজাতির মানুষ। এই মিছিলে অংশ নেন কৃষক নেতা ও পার্টির জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ, কৃষক সভার জেলা সম্পাদক মেঘনাদ ভূঁইয়া,সভাপতি সুভাষ দে প্রমুখ। এই মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে খাস জমিতে বসবাস করছিলেন। এখানে বিক্ষোভরত মানুষদের চাপে বিএলআরও জানাতে বাধ্য হন যে, ৬ জুন থেকে প্রতি সপ্তাহে চারশো জনের হাতে জমির কাগজ তুলে দেবেন।
ডেবরা ব্লক ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ সভায় সুশান্ত ঘোষ বলেন, এই সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি চলছে। এসবে যুক্ত শাসকদলের নেতা-কর্মীরা। শুধু এসএসসি, গ্রুপডি-তে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে এমন নয়,রাজ্যজুড়ে পাট্টাজমি থেকে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে পুরনো জোতদার-জমিদার পরিবারের হাতে জমির মালিকানা হস্তান্তরিত হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। এদিন পঞ্চায়েতের নানা দুর্নীতি ও অপকীর্তির বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোনের ডাক দেন নেতৃবৃন্দ।
এদিকে গত ২৫ মে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি, নিয়োগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ বিভিন্ন জেলায় সিপিআই(এম)'র ডাকে প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ ইত্যাদি সংগঠিত হয়েছে।